ঝলমলে পর্দার নেপথ্যে রক্ত-ঘাম: মনিরের মৃত্যু ও স্টান্টম্যানদের ব
Published: 4th, May 2025 GMT
রুপালি পর্দার ঝলমলে আলোয় যখন দর্শকরা ‘ডিসুম ডিসুম’ ফাইট আর বহুতল ভবন বা বিশাল সেতু থেকে লাফানোর দৃশ্য দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন, তখন খুব কম মানুষই প্রশ্ন করেন, এই সাহসিকতার আসল নায়ক কে। পর্দায় যেসব ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যে তারকাদের দেখা যায়, আসলে তা ঝুঁকি নিয়ে বাস্তবায়ন করেন একজন স্টান্টম্যান। এসব দৃশ্যের প্রকৃত নায়ক নেপথ্যের এই মানুষগুলো।
রাজশাহীতে বহুল প্রতীক্ষিত ‘তাণ্ডব’ সিনেমার শুটিং সেটে ঘটে গেল এক বেদনাবিদূর ঘটনা। অভিজ্ঞ স্টান্টম্যান মনির হোসেন শুটিং চলাকালে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এই নীরব যোদ্ধার মৃত্যু যেন বাংলা সিনেমার স্টান্টম্যানদের দুঃখ-বেদনার চিত্রকে আরো একবার জনসমক্ষে টেনে আনল।
মনির হোসেন ছিলেন সেই মানুষ, যে দর্শকদের রোমাঞ্চকর অনুভূতি দিতে গিয়ে পর্দার পেছনে নিজের জীবন বাজি রাখতেন। নায়করা বাঁচতেন, দর্শকরা উল্লাস করতেন, কিন্তু মনির হোসেনের মতো মানুষেরা থেকে যান নীরবে! তার মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, নায়কদের সুরক্ষা দিতে গিয়ে প্রকৃত নায়কেরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
আরো পড়ুন:
উর্দু ভাষায় পাকিস্তানে মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশের ‘জংলি’
মেট গালার লাল গালিচায় হাঁটবেন শাহরুখ, উড়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে
এই ঘটনা মনে করিয়ে দেয়, আরেক স্টান্টম্যান আমিনুলের জীবনযুদ্ধের গল্প। নব্বইয়ের দশকে ঢাকায় এসে তিনি ফাইট গ্রুপে কাজ শুরু করেন। সুঠাম দেহ আর সাহসিকতার কারণে দ্রুত হয়ে ওঠেন ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যের অপরিহার্য নাম। প্রায় ৪০-৫০টি সিনেমায় স্টান্টম্যান এবং আরো ৭০টি সিনেমায় ফাইট দৃশ্যে অভিনয় করেন। কিন্তু ২০১৪ সালে শাকিব খান প্রযোজিত ‘হিরো দ্য সুপার স্টার’ সিনেমার শুটিংয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হন। জাম্প দিতে গিয়ে ঘাড়ে আঘাত পান এবং সেখানেই তার জীবন থমকে যায়। হাসপাতালের বিল সেই সময় শাকিব খান দিলেও, এরপরের প্রতিদিনের ব্যয় আর জীবনযুদ্ধে আমিনুল একাই লড়েছেন। এফডিসির প্রতিশ্রুতি অপূর্ণ রয়ে যায়, আর বাচ্চার দুধ কেনার টাকাও জোগাড় করতে পারতেন না তিনি।
বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পে স্টান্টম্যানদের জন্য নিরাপত্তা বলতে গেলে নেই বললেই চলে! উন্নত বিশ্বে যেখানে তাদের ইনস্যুরেন্স, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক, আমাদের দেশে এখনো এসবের ঘাটতি প্রকট। মনির হোসেন অসুস্থ হলেও কাউকে কিছু না বলে শুটিং চালিয়ে গেছেন। আর এটাই হয়তো তার জীবনের জন্য মারাত্মক হয়ে দাঁড়াল।
এই সাহসী মানুষদের কাজের স্বীকৃতি বাংলা সিনেমায় নেই বললেই চলে। দর্শক যখন নায়কের অ্যাকশন দৃশ্যে উল্লসিত, তখন খুব কমজনই ভাবেন এই দৃশ্যের নেপথ্যে কারা ছিলেন। আজও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে স্টান্টম্যানদের জন্য কোনো আলাদা বিভাগ নেই। তাদের প্রতি এই অবজ্ঞা শুধু সামাজিক নয়, প্রাতিষ্ঠানিকও।
অভাব-অনটন যেন তাদের নিত্যসঙ্গী। কোটি টাকা বাজেটের সিনেমায় যেখানে নায়ক-নায়িকারা ৩ লাখ থেকে কোটি টাকা পারিশ্রমিক পান, সেখানে একজন স্টান্টম্যান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পান খুবই সামান্য পারিশ্রমিক। কাজও প্রতিদিন থাকে না, দুর্ঘটনা হলে সহায়তা তো দূরের কথা, অনেকে পঙ্গু হয়ে ঘরে বসে আছেন অর্থাভাবে। ঝলমলে আলোর পেছনে এই মানুষদের জীবন সত্যিই অন্ধকারে ঢাকা।
বাংলাদেশে এখনো কোনো পেশাদার স্টান্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই। ফলে যারা এই পেশায় আসেন, তারা নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে হাতে-কলমে শেখেন। এই ঘাটতি তাদের ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়ে দেয়। মনিরের ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটা পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটি সতর্কবার্তা। সময় এসেছে স্টান্টম্যানদের জন্য বাধ্যতামূলক ইনস্যুরেন্স, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার। পাশাপাশি, তাদের কাজের স্বীকৃতি দিতে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার চালু করা জরুরি।
এই নেপথ্যের নায়কেরা যদি নিরাপদ থাকেন, তবে রুপালি পর্দার ঝলক আরো দীপ্তিমান হবে। তাদের জন্য চাই নিরাপত্তা, সম্মান, চাই জীবনের নিশ্চয়তা। না হলে মনির হোসেনের রক্ত-ঘামে ভেজা মাটিতে আরো জীবন অনাদরে হারিয়ে যাবে। এখনই সময় নেপথ্যের নায়কদের সামনে আনার।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র স ট ন টম য ন মন র হ স ন দ র জন য র জ বন পর দ র ন পথ য র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
ভারতীয় সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী লক্ষ্মী মাঞ্চু। তার পরবর্তী সিনেমা ‘ঢাকসা’। এ সিনেমার মুক্তি উপলক্ষে নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ৪৭ বছরের এই অভিনেত্রী। কয়েক দিন আগে গ্রেট অন্ধ্রকে সাক্ষাৎকার দেন লক্ষ্মী। এ আলাপচারিতার পোশাক নিয়ে প্রশ্ন করায় লক্ষ্মী বলেন— “আপনার এত সাহস হয় কী করে!”
মুম্বাইয়ে যাওয়ার ফলে কি আপনার পোশাকের স্টাইলে কোনো প্রভাব পড়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে লক্ষ্মী বলেন, “আমি আমেরিকাতে থেকেছি। সেখান থেকে হায়দরাবাদে, এখন মুম্বাইয়ে আছি। আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি নিজেকে এইভাবে উপস্থাপন করার জন্য। এই পরিশ্রম আমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে, যা আমাকে আমার মতো পোশাক পরতে উৎসাহ দেয়।”
এরপর সাংবাদিক সরাসরি লক্ষ্মীর পোশাক নিয়ে প্রশ্ন করেন, জবাবে এই অভিনেত্রী বলেন, “আপনি কি একজন পুরুষকে একই প্রশ্ন করতেন? আপনার এত সাহস হয় কী করে! আপনি কি মহেশ বাবুকে বলতেন—‘আপনার তো এখন ৫০ বছর বয়স, তাহলে আপনি কেন জামা খুলে ছবি তুলছেন?’ তাহলে একজন নারীকে কেন এই প্রশ্ন? মানুষ আপনার এই প্রশ্ন থেকে কী শিখবে? একজন সাংবাদিক হিসেবে আপনার দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।”
পরে সাংবাদিক স্বীকার করেন যে, এই ধরনের প্রশ্ন একজন অভিনেতাকে করতেন না। প্রশ্নটি করার কারণ ব্যাখ্যা করে সাংবাদিক জানান, তার পোশাক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের চর্চা চলছে, যার কারণে এই প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসা।
লক্ষ্মী মাঞ্চুর অন্য পরিচয় তিনি তেলেগু সিনেমার বরেণ্য অভিনেতা মোহন বাবুর কন্যা। ৫০ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন মোহন বাবু। ব্যক্তিগত জীবনে বিদ্যা দেবীর সঙ্গে ঘর বাঁধেন তিনি। এ সংসারে রয়েছে কন্যা লক্ষ্মী ও পুত্র বিষ্ণু মাঞ্চু। তারা দুজনেই অভিনয়শিল্পী।
তথ্যসূত্র: দ্য ফ্রি প্রেস জার্নাল
ঢাকা/শান্ত