স্বস্তিকার সঙ্গে প্রেম নিয়ে ১৬ বছর মুখ খুললেন পরমব্রত
Published: 4th, May 2025 GMT
পশ্চিমবঙ্গের অভিনয়শিল্পী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমের গল্প কমবেশি সবারই জানা। দুজনের প্রেমের স্থায়িত্ব ছিল প্রায় বছর দুয়েক। ১৬ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে স্বস্তিকার যখন ডিভোর্সের মামলা চলছে, সেই কঠিন সময়েই পাশে পেয়েছিলেন পরমব্রতকে।
সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল ‘স্ট্রেট আপ উইথ শ্রী’–তে পরমব্রত কথা বলেন স্বস্তিকার সঙ্গে বহুল চর্চিত বিচ্ছেদ নিয়ে। পরমব্রত ও স্বস্তিকা নিজেদের সম্পর্ক লুকাননি। এমনকি বিচ্ছেদের পরেও একে অপরকে নিয়ে কথা বলতে দ্বিধা করেন না।
পরমব্রত জানান, স্বস্তিকার সঙ্গে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত তারই ছিল। একটা সময় নিজেই অব্যাহতি চেয়ে প্রেম থেকে সরে আসেন তিনি।
পরমব্রত ও স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়
পরমব্রত ভাষ্য, ‘আমাদের প্রায়ই দেখা হয়, কথা হয়। আমরা দুই বছর একসঙ্গে ছিলাম। সেই দুই বছরের মধ্যে একটা বড় সময় এমন ছিল, যেটা খুব সুন্দর ছিল। সেটাকে আমি সারা জীবন সুন্দর স্মৃতি হিসেবে মনে রেখে দেব। আরেকটা যেটা ছিল, সেটা খুব অশান্ত ছিল। আমার বলতে কোনো বাধা নেই, একটা সময়ে এসে আমি নিজেই অব্যাহতি চাই।’
পরমব্রত বলেন, ‘সেই সময়ের আমি, আর আজকের আমির মধ্যে অনেকটা পার্থক্য আছে। সেই সময় ওর সঙ্গে কথা বলতে একটা অস্বস্তি হতো। স্বস্তিকারও মানুষ হিসেবে অনেক বিবর্তন ঘটেছে। আমি যে স্বস্তিকাকে চিনতাম, যখন আমরা একসঙ্গে ছিলাম, সেই স্বস্তিকা আর এই স্বস্তিকার মধ্যে অনেকটা ফারাক।’
প্রেম ভাঙা মানেই যে বিচ্ছেদ, যোগাযোগ বন্ধ, তিক্ততা জিইয়ে রাখা- এ সবে বিশ্বাসী নন স্বস্তিকা। ২০২৩ সালে ২৭ নভেম্বর মাসে পিয়া চক্রবর্তীকে বিয়ে করেছেন পরমব্রত। বিয়ের মাস তিনেক পর পরমব্রতর বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করে এসেছেন স্বস্তিকা।
পরমব্রতর স্ত্রী পিয়া চক্রবর্তী ও স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়
সেই ছবি শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘আয়, বেঁধে বেঁধে থাকি।’ পাল্টা পিয়াও লেখেন, ‘আমরা চঞ্চল আমরা অদ্ভুত।’
এক সাক্ষাৎকারে স্বস্তিকা বলেন, ‘পরমের কথা ভাবলে, ওর সঙ্গে কাটানো ভাল সময়টাই মনে পড়ে। সেই জন্য হয়তো সে দিন বাড়ি ফেরার সময় ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারলাম যে, ‘ভাল থাকিস’। ও-ও বলল, বাড়িতে ডাকবে। পিয়াকে চক্রবর্তী আমি অনেক বছর ধরে চিনি। আমার খুব ভাল লাগে ওকে। পরমকে বললাম, ‘ডাকিস, তোর জন্য না হলেও পিয়ার জন্য যাব।’ সূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স বস ত ক ম খ প ধ য য়
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত কি চীনের সামুদ্রিক ‘উঠানে’ ঢুকে পড়ছে
গত সপ্তাহে ভারত ও ফিলিপাইন পশ্চিম ফিলিপাইন সাগরে যৌথ নৌ মহড়া চালিয়েছে। এ সাগর আসলে দক্ষিণ চীন সাগরেরই একটি অংশ। এ অংশকে চীন তার নিজের সমুদ্রসীমানা বলে দাবি করে।
অনেক সংবাদমাধ্যম বলেছে, এই প্রথমবার নাকি ভারত ও ফিলিপাইন একসঙ্গে এখানে মহড়া করল। কিন্তু সত্যি কথা হলো ২০২১ সালেও তারা এই একই এলাকায় মহড়া করেছিল।
তবে এবারের মহড়া আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রকাশ পেয়েছে। কারণ, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের ভারতের সরকারি সফরের ঠিক আগেই এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফলে এর রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়ে যায়।
কেন এই মহড়া আলোচনায়ভারত দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সমুদ্র বিরোধে সরাসরি জড়ায়নি। যদিও ভারত সব সময় বলে এসেছে, সমুদ্রপথে অবাধ চলাচল ও আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলা জরুরি। তবু বাস্তবে সে অঞ্চলে তার উপস্থিতি ছিল সীমিত ও অনেকটা প্রতীকী। তাই এবারকার মহড়াকে অনেকে ভারতের নীতি বদলের ইঙ্গিত মনে করছেন।
মনে হচ্ছে যেন ভারত বেইজিংয়ের সামুদ্রিক ‘উঠানে’ পা বাড়াতে যাচ্ছে।
তবে সবাই তা মনে করেন না। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এ মহড়া ভারতের বড় ধরনের কৌশল পরিবর্তন নয়; বরং এটি নিয়মিত বিদেশি নৌ মোতায়েনের অংশ হতে পারে। এ মহড়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বন্ধুত্ব ও সংহতির বার্তা দেওয়া, চীনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা নয়।
প্রকৃতপক্ষে এ উদ্যোগ এসেছে ফিলিপাইনের দিক থেকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের সঙ্গে ম্যানিলা নিরাপত্তা সম্পর্ক মজবুত করেছে। এবার তারা ভারতকেও সেই তালিকায় আনল। উদ্দেশ্য, সরাসরি সংঘাতে যাওয়া নয়; বরং চীনের আগ্রাসন ঠেকাতে একধরনের ‘বড় জোট’ তৈরি করা।
ফিলিপাইনের সেনাপ্রধান জেনারেল রোমিও ব্রাউনর বলেছেন, এ যৌথ টহল হলো একধরনের প্রতিরোধ কৌশল যাতে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করে সমুদ্রের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য মিত্রদের সঙ্গে ফিলিপাইনের টহল দেওয়ার উদ্দেশ্য যেখানে বেশি সামরিক কৌশলভিত্তিক, ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা সেখানে ভিন্ন। ভারত কোনো সামরিক জোটের অংশ নয়, দেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সেনা রাখে না এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনকে ঘেরাও করার পরিকল্পনাও তার নেই। কিন্তু ভারত পাশে থাকলে ফিলিপাইনের কাছে সেটি একটি প্রতীকী সমর্থন। এতে মনে হবে, প্রচলিত জোটের বাইরে থেকেও ভারত ফিলিপাইনের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
চীন-ফিলিপাইন দ্বন্দ্বচীনের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ শুধু ফিলিপাইনের সঙ্গে নয়, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, এমনকি তাইওয়ানের সঙ্গেও রয়েছে। কিন্তু ফিলিপাইনের ক্ষেত্রে বিরোধটা বেশি জটিল।
চীন মনে করে, ফিলিপাইন ইচ্ছাকৃতভাবে দক্ষিণ চীন সাগরের ইস্যুকে আন্তর্জাতিক করছে। যুক্তরাষ্ট্রকে ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া চীনের কাছে উসকানি। সম্প্রতি ফিলিপাইনের লিথুয়ানিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিকেও চীন অপমানজনক মনে করেছে।
ফলে অবাক হওয়ার কিছু নেই, মহড়ার সময় চীনা জাহাজ ভারত ও ফিলিপাইনের যুদ্ধজাহাজের ওপর নজরদারি করেছে। যদিও কোনো সংঘর্ষ ঘটেনি।
ভারত এ অঞ্চলে কিছুটা আলাদা কৌশল মেনে চলে। ভারত সব সময় বলেছে, সমুদ্রপথে অবাধ চলাচল ও বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান জরুরি। উপস্থিতি দেখানো দরকার হলেও ভারত খুব হিসাব করে পদক্ষেপ নেয়, যেন তা প্ররোচনামূলক না হয়। ভারত জানে, এ বিরোধে তার সরাসরি কোনো অংশ নেই, তাই সংঘাতে জড়াতে চায় না।
ভারত বোঝে চীনের এখানে সামরিক সুবিধা অনেক বেশি। কৃত্রিম দ্বীপে শক্তিশালী ঘাঁটি, গুরুত্বপূর্ণ জলপথের নিয়ন্ত্রণ—এসবের কারণে চীন চাইলে বিদেশি নৌবাহিনীকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে।
ভারত ও চীন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একধরনের ‘ভারসাম্যের চুক্তি’ মেনে চলে। হিমালয় সীমান্ত ও ভারত মহাসাগরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও উভয়েই চেষ্টা করে যেন একে অপরের কাছাকাছি সমুদ্রে উসকানিমূলক পদক্ষেপ না নেয়। এ কৌশল ১০ বছর ধরে মোটামুটি কার্যকর থেকেছে। চীনের ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি বাড়ছে বটে, কিন্তু তা এখনো ভারতের জন্য সরাসরি সংকট নয়।
ফিলিপাইন-ভারত সম্পর্কসম্প্রতি ভারতের সঙ্গে ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক অনেক বেড়েছে। এর বড় উদাহরণ ব্রহ্মস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি। ভারত এখানে নিজেকে চীনের বিরোধী হিসেবে নয়; বরং একজন নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করছে।
মালাক্কা প্রণালি দিয়ে ভারতের প্রচুর পণ্য আনা-নেওয়া হয়। তাই ভারত এ অঞ্চলে নিজের উপস্থিতিকে মূলত বাণিজ্য, যোগাযোগ আর ভালো সম্পর্ক গড়ার বিষয় হিসেবে তুলে ধরে। তবে যদি চীন আন্দামান সাগরে সেনাঘাঁটি বানায় বা ভারত মহাসাগরে স্থায়ী ঘাঁটি গড়ে ফেলে, তখন ভারত অবশ্যই দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে তার নীতি বদলাবে। কিন্তু এখনই এমন হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এ মহড়া মূলত একটি প্রতীকী পদক্ষেপ। এ মহড়া বলে দিচ্ছে, ভারত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা চায় এবং চাপে থাকা এক বন্ধুর পাশে আছে। এটা কোনো যুদ্ধের প্রস্তুতির বার্তা নয়; বরং নৌ অভিনয়ের মাধ্যমে কূটনৈতিক সংহতির প্রকাশ।
অভিজিৎ সিং ভারতের একজন অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনীর কর্মকর্তা এবং ভারতের নয়াদিল্লিভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন বা ওআরএফের সামুদ্রিক নীতি উদ্যোগের সাবেক প্রধান। তিনি মূলত সামুদ্রিক নিরাপত্তা, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এবং নৌ–নীতি নিয়ে লেখালিখি ও গবেষণা করেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ