পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমানের বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে হওয়া কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এ ঘটনা ঘটে। আগেও গলাচিপার ইউএনওর বদলি ঘিরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হয়েছে।

ইউএনওর পক্ষে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া গলাচিপা পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সুবিধাবঞ্চিত একটি পক্ষ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া ইউএনওকে তাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, যার নেতৃত্বে আছেন পটুয়াখালী জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যক্ষ শাহ আলমের ছেলে শাহ জুবায়ের আবদুল্লাহসহ তাঁর লোকজন। তিনি আরও বলেন, বদলির কারণে ইউএনওর চলে যাওয়ার খবর উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে তাঁকে এখানে রাখার জন্য আমরা মানববন্ধন করি। এতে প্রায় ৪০০ মানুষ অংশ নেন; কিন্তু কর্মসূচি শেষে অংশ নেওয়া লোকজন ফেরার পথে একটি গ্রুপ তাঁদের ভীতি ও অপদস্থ করে। এ সময় তাঁদের হাতে লোহার রড ও লাঠিসোঁটা ছিল। তবে কোনো আহতের ঘটনা ঘটেনি।’

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল সোবাহান মিয়া বলেন, ‘এমনিতেই গলাচিপা উপজেলায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, এসি ল্যান্ডসহ অনেক পদ শূন্য আছে। এরপরে যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ইউএনওকে তাড়াই, তাহলে উপজেলা পরিষদের সেবা দেওয়ার লোক থাকবে না। বর্তমান ইউএনও অত্যন্ত মানবিক ও সহনশীল, তাই তাঁকে এখানে রাখার জন্য মানববন্ধন করি। এ ছাড়া গণস্বাক্ষর তুলে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের কাছে দেওয়া হবে।’

মানববন্ধনে বাধার বিষয়ে আবদুল সোবাহান মিয়া বলেন, ‘মানববন্ধন শেষে কিছু ছেলে ব্যানার নিয়ে যান। এ সময় আমরা তাঁদের প্রতিরোধ ও প্রতিহত করি।’

মানববন্ধনে বাধা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম সদস্যসচিব তরিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গলাচিপার ইউএনও এর আগে রাঙ্গাবালী ছিলেন। এখানে এসেও তিনি অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন। সেবাপ্রত্যাশীদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। যে কারণে তাঁকে এখান থেকে বদলি করা হয়েছে। অথচ আজ সোমবার আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপি সেজে তাঁর বদলির আদেশ ঠেকাতে মানববন্ধন করেন। আমরা ওই মানববন্ধনে বাধা দিয়ে প্রতিহত করি।’

বরিশাল বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার মো.

সোহরাব হোসেন স্বাক্ষরিত একটি আদেশে দেখা যায়, গত ১০ এপ্রিল গলাচিপার ইউএনও মিজানুর রহমানকে বরগুনার পাথরঘাটার ইউএনও পদে বদলি করা হয়। একই আদেশে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ইউএনও আবদুল কাইয়ুমকে গলাচিপায় বদলি করা হয়। পরবর্তী সময়ে মঠবাড়িয়ার লোকজন ইউএনও আবদুল কাইয়ুমকে একই স্থানে রাখতে তাঁর পক্ষে আন্দোলন করেন। যে কারণে আবদুল কাইয়ুমের বদলির আদেশ স্থগিত হয়। গত ২৯ এপ্রিল অতিরিক্ত কমিশনার মো. সোহরাব হোসেন স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে আমতলীর ইউএনও মাহমুদুল হাসানকে গলাচিপায় বদলি করা হয়।

ইউএনও মো. মিজানুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি গত ৭ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ১০ এপ্রিল তাঁর বদলির আদেশ হওয়ার সময় তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় আইসিইউতে ছিলেন। সুস্থ হওয়ার পরে বদলির আদেশ জানতে পারেন তিনি। তাঁর পক্ষে-বিপক্ষে হওয়া কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তিনি দাবি করেন, ‘কিছুদিন আগে চালের ডিলারশিপ বণ্টন নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। যাঁরা ডিলারশিপ নিতে পারেননি, তাঁরা হয়তো ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া কোনো কারণ দেখি না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র রহম ন উপজ ল ল কজন আবদ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি নেতা–কর্মীদের মানববন্ধন, স্মারকলিপি

কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) সংসদীয় আসনকে ভেঙে ত্রিখণ্ডিত করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রকাশ করা খসড়া তালিকা বাতিল এবং বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

‘কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা পুনরুদ্ধার বাস্তবায়ন কমিটি’–এর ব্যানারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারী বিএনপির নেতা–কর্মীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপি, কুমিল্লা মহানগর দক্ষিণের ৯ ওয়ার্ড ও লালমাই উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের কয়েক শ নেতা–কর্মী অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতার হোসাইন, সদস্যসচিব ওমর ফারুক চৌধুরী, লালমাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাসুদ করিম, সদস্যসচিব ইউসুফ আলী মীরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এ সময় ‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত, মানি না, মানব না’, ‘আসন পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত, বাতিল করো, করতে হবে’, ‘সাবেক কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা, ফিরিয়ে দাও, দিতে হবে’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতা–কর্মীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বৃহত্তর কুমিল্লা সদর দক্ষিণ এলাকা নিয়ে সাবেক কুমিল্লা-৯ আসনটি ফিরিয়ে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের এই খসড়া বাতিল করতে হবে। যদি আসন ফিরিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতার হোসাইন বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ও পৌরসভা (বর্তমানে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলা এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ড) নিয়ে বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসনের সীমানা ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরী এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে মনিরুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসনটি বিলুপ্ত করে কুমিল্লা-৬, কুমিল্লা-৮ ও কুমিল্লা-১০ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। চার থেকে পাঁচ দফা পরিবর্তনের পর বর্তমানে কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনে রয়েছে বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসনটি। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন, আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু সেই দাবি মেনে নেওয়া হয়নি।

আখতার হোসাইন বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যেখানে কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহাল করার কথা, সেখানে সেটি না করে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসনকে ভেঙেচুরে ত্রিখণ্ডিত করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ২০০৮ সালের মতো এবারও ষড়যন্ত্র করে মনিরুল হক চৌধুরীকে আটকানোর জন্য ইসি এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

লালমাই উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ আলী মীর বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগপর্যন্ত কুমিল্লায় ১২টি আসন ছিল, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় একটি আসন কমিয়ে কুমিল্লায় হযবরল অবস্থার সৃষ্টি করেছে ইসি। সেই থেকেই তাঁরা কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন। ইসির ঘোষিত খসড়া তালিকা বাতিল করতে হবে। সেটি না করা হলে নেতা–কর্মীরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন।

কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লা-১০ আসনের নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত খসড়া বাতিল এবং বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে একটি স্মারকলিপি পেয়েছেন। এটি ইসি সচিবের কাছে পাঠানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিপির প্রোগ্রামে বাধা দেওয়ায় কথা কাটাকাটি, জিডি করলেন এসিল্যান্ড
  • সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ–সংলগ্ন সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
  • ইবি শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যা: সিসি ক্যামেরা ফুটেজ নিয়ে ধোঁয়াশা, প্রতিবাদে মানববন্ধন
  • কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি নেতা–কর্মীদের মানববন্ধন, স্মারকলিপি
  • রূপগঞ্জে ঈদগাহ মাঠে ‘মেলা’ আয়োজন ঘিরে উত্তেজনা, সংঘর্ষের আশঙ্কা 
  • আওয়ামী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ছবিসহ তালিকা প্রদর্শন করবে রাবি ছাত্রদ
  • ইবি শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যার বিচার দাবিতে রাবিতে মানববন্ধন
  • খেলার মাঠে মার্কেট করছে কাটাখালী পৌরসভা, প্রতিবাদে মানববন্ধন
  • সদর উপজেলার নতুন ইউএনও তাছলিমা শিরিন, পদোন্নতি পেলেন সাদিক
  • ঝালকাঠিতে কর্দমাক্ত রাস্তায় কচুগাছ লাগিয়ে প্রতিবাদ