চৈত্রের খাঁ-খাঁ রোদ্দুর। প্রখর সূর্যের তাপ, গোসলের আগের সময়টা। নাওঘাটার ওপাশ থেকে ভেসে আসছে ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা ডাক। চাম্পা ফুফুদের কাইডা থেকে একটা বিরক্তিকর মোরগ মাঝেমধ্যেই কুক্কুরু কুঁউউ করে ডেকে উঠছে। বাড়ির উঠানে সফেদা গাছের ফাঁক দিয়ে রোদের ছায়া পড়ে আছে, যেন সূর্যের টুকরা মাটিতে বিছিয়ে রাখা হয়েছে।
খালপাড়ের দিকে তাকাতেই চোখ পড়ল রুবেলের শ্বশুরের দিকে। অত্যন্ত পরিশ্রমী মানুষ। আজ তাঁর অনেক কাজ। ঘামে ভেজা শরীর, হাতে হাতুড়ি। ট্রলার মেরামতের কাজে ব্যস্ত। একটার পর একটা আঘাত করে যাচ্ছেন, যেন কাঠের ভেতর জীবন ঢেলে দিচ্ছেন। বাড়ির উঠানের ঠিক মাঝখানে আমরা। আমি, ফাগুন কাকা, রাফি, সমির, সাজিদ ক্রিকেট খেলায় মত্ত। চারদিকে খাঁ-খাঁ রোদ্দুরেও কারও যেন কিছুই হচ্ছে না। রোদের আলোতে গাছের ছায়ায় নতুন এক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। উভয় দৃশ্য যেন ছবির মতো। সাজিদ আউট হয়ে ব্যাটটা মাটিতে ছুড়ে দিয়ে ফিল্ডিংয়ে যাচ্ছে আর রাফি ব্যাট হাতে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঠিক তখনই অর্ধনির্মিত বিল্ডিং থেকে ছোট কাকি চিৎকার করে উঠলেন, ‘এত চিল্লাচিল্লি কর কেন? এই গরমে এত খেলা কিসের! বাসায় গিয়ে পড়াশোনা কর। আমার ছেলেটা একটু ঘুমাচ্ছে। উঠে গেলে সবার খবর আছে।’ আমরা তাঁর কথায় কান দিলাম না। খেলেই যাচ্ছি। শেষ ম্যাচ বলেছিলাম কিন্তু ইতোমধ্যে ছয়টা ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে। আরও খেলা হবে। যতক্ষণ দম আছে।
সে বছরটা যেন চৈত্রে আটকে গিয়েছিল। চৈত্রের দহন তীব্র থেকে তীব্রতর হলো। আমরা খেলা থামায়নি। দারুণ এক সময় কেটেছে মাঠে-ঘাটে-জলে-জঙ্গলে।
ইশ সেই মুহূর্তগুলো! সময় কত দ্রুত চলে যায়। এখন আর উঠান দখল করে খেলতে পারি না। রোদে পুড়ে বকাঝকা খেয়ে খেলাধুলা করার দিনগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। সেই উঠান এখন দখল করেছে ছোট কাকির সেই ছেলেটি কিংবা বাড়ির অন্য ছোট শিশুরা।
তারাও কি আমাদের মতো বকা খায়? কোনো ঘরের টিনের ওপর বল পড়লে তারাও কি আমাদের মতোই দৌড়ে ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে যায়। তারাও কি উপভোগ করছে আমাদের সেই চিৎকারমাখা শৈশব? সময় বদলায়, উঠানের গল্প বদলায়। কিন্তু স্মৃতির উঠান? সেটা ঠিক আগের মতোই রয়ে যায়। v
সুহৃদ বরিশাল (স্বরূপকাঠি)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠায় আইন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট
সারা দেশে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
প্রস্তাবে জেলা জজদের মধ্য থেকে বাণিজ্যিক আদালতের বিচারক নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক হাইকোর্ট বিভাগে বাণিজ্যিক আপিল বেঞ্চ গঠনের বিষয়টিও প্রস্তাবে উঠে এসেছে। প্রস্তাবে মামলা দায়েরের আগে মধ্যস্থতাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে মামলা দায়েরের আগেই অনেক বিরোধ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হবে এবং আদালতের ওপর মামলার ক্রমবর্ধমান চাপ অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোনো বাণিজ্যিক মামলা বা আবেদনের মূল্যমান ৫০ লাখ টাকা হলে তা বাণিজ্যিক আদালতে বিচার্য হবে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার সময়ে সময়ে এই নির্ধারিত মূল্যমান সীমা পুনর্নির্ধারণ করতে পারবে।
সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ব্যবসায়ী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বণিকদের সাধারণ লেনদেন থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, বিমান ও নৌপরিবহন, নির্মাণ ও অবকাঠামোগত প্রকল্প, ফ্র্যাঞ্চাইজ চুক্তি, বিতরণ ও লাইসেন্সিং, প্রযুক্তি উন্নয়ন, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ডোমেইন নাম, ভৌগোলিক নির্দেশক, বিমা এবং অংশীদারত্ব চুক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পরিষেবা খাত এবং শেয়ারহোল্ডার বা যৌথ উদ্যোগ–সম্পর্কিত বিরোধকে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালতের এখতিয়ারভুক্ত করার কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে। এর ফলে আধুনিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ–সম্পর্কিত প্রায় সব ধরনের বিরোধ একটি বিশেষায়িত আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায়।
বিচারপ্রক্রিয়াকে দ্রুত ও কার্যকর করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিচার কার্যক্রম শেষ করার বিষয়ে প্রস্তাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চূড়ান্ত শুনানি অবশ্যই ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়াতে সংক্ষিপ্ত বিচারের সুযোগও প্রস্তাবে রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবে আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আর বলা হয়, বাণিজ্যিক আপিল আদালত ছয় মাসের মধ্যে এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তিন মাসের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। প্রস্তাবে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, বিচারক ও আইনজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।