যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিতে হুমকির মুখে পোশাক খাত, উৎকণ্ঠায় শ্রমিকরা
Published: 6th, May 2025 GMT
বাংলাদেশের জন্য এ বছরটি সব দিক থেকেই বেশ কঠিন। গত গ্রীষ্মে অর্থনৈতিক ভঙ্গুর পরিস্থিতির মধ্যে বিক্ষোভকারীরা একজন অত্যাচারী শাসককে উৎখাত করে এবং দেশে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। অন্তর্বর্তী সরকারের হাত ধরে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অগ্রগতির মধ্যে এক ভয়াবহ খবর আসে। মাসখানেক আগে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া শুরু হলে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের শুল্ক স্থগিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই শুল্ক পুনরায় কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশের লাখ লাখ পোশাক শ্রমিককে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের
পাঁচ বছর ধরে পোশাক কারখানায় সেলাইয়ের কাজ করে পরিবার চালাচ্ছেন মুর্শিদা আখতার (২৫)। তাঁর বাড়ি দেশের উত্তরাঞ্চলে। বর্তমানে তিনি ঢাকার উপকণ্ঠে সাভারে বসবাস করেন। সম্প্রতি তিনি এবং তাঁর আরও ২০০ সহকর্মী (তাদের ৭০ শতাংশই নারী) সাভারের ৪এ ইয়ার্ন ডাইং নামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেছেন।
মুর্শিদা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় পার করছেন তিনি। বর্তমান চাকরি থেকে তিনি প্রতি মাসে ১৫৬ ডলার (প্রায় ১৯ হাজার টাকা) পাওয়ার আশা করছেন। তবে তাঁর আশঙ্কা, কারখানায় কাজের ক্রয়াদেশ কমে যেতে পারে। আর ক্রয়াদেশ কমে গেলে কাজের সঙ্গে সঙ্গে কমে যাবে তাঁর আয়-রোজগারও।
১৭ কোটি মানুষের ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। এটি যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের আকারের একটি বদ্বীপ। ১৯৭০-এর দশকে এক রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়। তবে ১৯৮০-এর দশকে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দেয় তৈরি পোশাক খাত। এই খাতে নারী শ্রমিকদের বিশেষ অবদানের কারণে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক দেশগুলোর মধ্যে প্রধান শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ।
মুর্শিদা আখতারের মতো দেশটির প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পোশাক তৈরিতে যুক্ত। সম্ভবত তাঁর ছেলে ও স্বামীর মতো আরও পাঁচ গুণ মানুষ এই শ্রমিকদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল।
ট্রাম্পের আগের আরোপিত শুল্ক এবং চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্কের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের মতো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থমকে যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, দীর্ঘ কয়েক দশকের ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধির পর যখন দেশটি মন্দার মুখে পড়েছে এবং এক প্রকার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, ঠিক তখনই শুল্কের হুমকি এসেছে।
বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের ৮৫ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। এই পণ্য সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। স্থগিত আদেশ শেষ হওয়ার পর যদি ট্রাম্প ৩৭ শতাংশ শুল্ক নাও আরোপ করেন, তবুও বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের মতো ১০ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে। তবে পোশাকের মতো কম মার্জিন ব্যবসায় এই পরিমাণ শুল্কও অনেক কঠিন। তাছাড়া পোশাক খাতে রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে চীনের পাশাপাশি ভারত, কম্বোডিয়া ও শ্রীলঙ্কার অবস্থান বেশ শক্ত। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের তীব্র প্রতিযোগিতাও রয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন পশ্চিমা দেশের উদার গণতন্ত্রের সমর্থকদের কাছে আশার প্রতীক হিসেবে দেখা দেয়। ড.
ঢাকাভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, জ্বালানির দাম বাড়াতে এবং ভর্তুকি কমিয়ে দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পক্ষ থেকে আমাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র প রব দ ধ
এছাড়াও পড়ুন:
উপকারভোগীর জন্য উৎকণ্ঠা
সরকার আগামী ছয় মাসের জন্য সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার যেই হারে হ্রাস করিয়াছে, উহা মধ্যবিত্তের অস্বস্তি তৈয়ারের জন্য যথেষ্ট। নূতন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পাঁচ বৎসর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ মুনাফার হার পাওয়া যাইবে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যাহা পূর্বে ছিল ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অনুরূপ মেয়াদ কম অনুসারে মুনাফার হারও আনুপাতিক হারে হ্রাস পাইবে। একদিকে দাবি অনুযায়ী বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি হয় নাই, অন্যদিকে দেশে দুই বৎসরের অধিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলমান। এই অবস্থায় জীবিকা নির্বাহে সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় নির্ভরশীলগণ আরও হিমশিম খাইতে থাকিবেন।
সঞ্চয়পত্র এক প্রকার নিরাপদ বিনিয়োগরূপে অনেকে চাকুরি হইতে অবসর গ্রহণ করিয়া পেনশনাররূপে তাঁহার অর্থ সরকারের নিকট জমা রাখিয়া থাকেন। উহা হইতে প্রাপ্ত মুনাফাই ঐ সকল ব্যক্তির আয়ের প্রধান উৎস হইয়া থাকে। অনুরূপ পারিবারিক সঞ্চয়পত্রও রহিয়াছে এবং বলা বাহুল্য, এই মুনাফার উপর সমগ্র পরিবার নির্ভরশীল। নির্দিষ্ট মুনাফার উপর জীবিকা নির্বাহ ইহাদের কঠিন হইলেও অনেকের বিকল্প উপায়ও থাকে না। কিংবা অন্যান্য ব্যবসা বা বিনিয়োগের সামর্থ্যও থাকে না। তাহারা সরকার নির্দিষ্ট মুনাফা দেখিয়াই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করিয়া থাকেন এবং সেই অনুপাতে ব্যয় নির্বাহ করেন। কিন্তু অকস্মাৎ মুনাফার হার হ্রাস পাইলে ব্যয়ের খাতে চাপ পড়া স্বাভাবিক।
স্মরণে রাখিতে হইবে, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি যথোপযুক্ত নহে। তদুপরি রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের বেকার ভাতাসহ কল্যাণমূলক অনেক ব্যবস্থাপনাই অনুপস্থিত। সাধারণত ব্যক্তির অবসরের পর পেনশন কিংবা দীর্ঘদিনের জমানো অর্থ একত্র করিয়াই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হইয়া থাকে। অনেক সময় জ্যেষ্ঠ নাগরিকগণও তথায় বিনিয়োগ করেন, যেই সময়ে তাহাদের উপার্জনের অন্যান্য সামর্থ্য থাকে না। এমতাবস্থায় সরকারের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ যেইভাবে নাগরিক কল্যাণে অধিক মুনাফার মাধ্যমে হইতে পারিত, দুঃখজনক হইলেও সত্য, উহা ততটা আকর্ষণীয় নহে। ইহার মধ্যেও যদি নূতন করিয়া মুনাফার হার হ্রাস করা হয়, তাহা হতাশাজনক বৈ কি।
আমরা মনে করি, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা আকর্ষণীয় হওয়া উচিত, যাহাতে বিনিয়োগকারীগণ কিঞ্চিৎ হইলেও স্বস্তিতে জীবন যাপন করিতে পারেন। অল্প পরিমাণ ও স্বল্প সময়ে বিনিয়োগের জন্যও অনুরূপ মুনাফা থাকা দরকার। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সঞ্চয় আমানত-সংশ্লিষ্ট তথ্য-সংবলিত সহায়ক লিফলেটে মুদ্রিত– ‘সঞ্চয় সমৃদ্ধি আনে’। কীরূপে মুনাফার হার বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায় তজ্জন্য জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরকে আরও তৎপর হইতে হইবে। এই ছয় মাসের জন্য সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে সরকারের যুক্তি– ট্রেজারি বন্ডের সুদহার হ্রাস পাইয়াছে। অভিযোগ রহিয়াছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাজারভিত্তিক করিবার শর্ত ছিল। যাহার ফলে ট্রেজারি বিলের সুদহারের সহিত সঞ্চয়পত্রের সুদহার যুক্ত করা হয়। আমরা মনে করি, সরকারের আর্থিক নীতি নির্ধারণে অবশ্যই দেশের মানুষের স্বার্থ সর্বাগ্রে বিবেচনায় লইতে হইবে।
সর্বোপরি, জনসাধারণের কথা চিন্তা করিয়া বাজার সহনশীল রাখিবার বিষয়ও জরুরি। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকিলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কিছুটা হ্রাস পাইলেও সমস্যা হইবার কথা নহে। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নাগালের বাহিরে থাকিলে তাহা সবাইকেই প্রভাবিত করিয়া থাকে। ইহাও বলা দরকার, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হ্রাস-বৃদ্ধি অপেক্ষা স্থিতিশীল থাকাই জরুরি। ছয় মাস অন্তর হ্রাস-বৃদ্ধিতে উহার উপকারভোগীদের এক ধরনের অনিশ্চয়তায় ফেলিয়া দিতে পারে। সরকার স্থিতিশীলতা চাহে সর্বক্ষেত্রেই; সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার উহার বাহিরে থাকিবে কেন?