সভাপতি হুয়ান লাপোর্তে অনেক আশা ভরসা করেই বার্সেলোনার সাথে যুক্ত করেছিলেন জার্মান ম্যানেজার জান্সি ফ্লিককে। উদ্দেশ্য দীর্ঘদিনের চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপার ক্ষরা ঘোচানো। প্রথম মৌসুমেই লক্ষ্যের প্রায় কাছাকাছিই চলে গিয়েছিলেন ফ্লিক। তবে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৭ ব্যবধানের হারে শিরোপার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।

সান সিরোতে ৪-৩ গোলের থ্রিলার শেষে অবশ্য ফ্লিক বেশ অসন্তষ্ট ম্যাচ অফিশিয়ালদের প্রতি। এই জার্মান ম্যানেজারের বিশ্বাস সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে বার্সেলোনার পরাজয়ের কারণ রেফারিদের। তারা  রেফারিদের ফিফটি-ফিফটি কলগুলো ইন্টারের পক্ষে দিয়েছেন।

বার্সা প্রথম লেগের মতোই সান সিরোতেও শুরুতে দুই গোল পিছিয়ে যায়। তবে দারুণ প্রত্যাবর্তনে ফিরে আসে। ম্যাচের ৮৭তম মিনিটে রাফিনহার গোলে মনে হচ্ছিল অতিথিদের জয় নিশ্চিত। কিন্তু যোগকরা সময়ে ফ্রান্সসেকো আচেরবির অসাধারণ সমতাসূচক গোল করে বসেন। এরপর অতিরিক্ত সময়ে দাভিদে ফ্রাত্তেসি গোল করে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন। ইন্টার নিশ্চিত করে মিউনিখের টিকিট।

আরো পড়ুন:

সোমারের দেয়ালে ধাক্কা খেয়েই ডুবল বার্সার তরী

ইন্টার পরীক্ষায় ফেল বার্সা

তবে ব্যপারগুলোকে ভিন্নভাবে দেখছেন ফ্লিক। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই জার্মান ম্যানেজার জানান, দলের পারফরম্যান্সে তিনি হতাশ নন। তবে ম্যাচে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি স্পষ্টভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ফ্লিক কেন রেফারির ওপর ক্ষুব্ধ সেদিকে তাকানো যাক। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে ভিএআর যাচাইয়ের পর ইন্টারকে একটি পেনাল্টি দেওয়া হয়। রেফারি শিমন মারচিনিয়াক পুনরায় লাওতারো মার্তিনেজকে করা পাউ কুবারসির ফাউলের ঘটনা পর্যালোচনা করেন এবং পেনাল্টির নির্দেশ দেন। হাকান চালহানোয়লুর স্পট কিক থেকে গোল করতে ভুল করেননি।

বিরতির পর বার্সেলোনাও একটি পেনাল্টি পায়, যখন হেনরিখ মিখিতারিয়ান ফাউল করেন লামিন ইয়ামালকে। ভিয়াআর পর্যালোচনা করে রেফারি সিদ্ধান্ত দেযন যে, ফাউলের শুরুর স্থান বক্সের বাইরে, যদিও তা দেখে মনে হচ্ছিল সংঘর্ষ বক্সে গিয়েও চলেছিল, ফলে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়।

এই ব্যাপারগুলো মেনে নিতে না পেরে ফ্লিক ম্যাচ শেষে বলেন, “আমি খুব হতাশ যে আমরা বাদ পড়েছি, কিন্তু আমার দলের পারফরম্যান্সে আমি হতাশ নই। ওরা সবকিছু দিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা সত্যিই ভালো খেলেছি। আমি রেফারি নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। প্রতিটি ফিফটি-ফিফটি সিদ্ধান্ত তাদের (ইন্টার) পক্ষেই গিয়েছে। আমরা আমাদের সবকিছু দিয়েছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এমনই হলো। সেটাই আমাকে একটু কষ্ট দিয়েছে।”

ফ্লিক প্রতিপক্ষের প্রশংসা করতে ভুললেন না, একই সাথে জানিয়ে গেলেন সামনের মৌসুমে আরও শক্রিশালী হয়ে ফিরবেন, “আমরা এখন বাদ পড়েছি, তবে আগামী বছর আবার শুরু করব। আমাদের সমর্থকদের, ক্লাবকে ও চারপাশের সবাইকে খুশি করব। ইন্টার সত্যিকারের শক্তিশালী দল। খুব ভালোভাবে রক্ষণ সামলায় এবং তাদের দলে দুর্দান্ত স্ট্রাইকারও আছে।”

মিউনিখে ফাইনালে আর্সেনাল ও পিএসজির মধ্যে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের বিজয়ী দলের মুখোমুখি হবে ইন্টার।

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ য ম প য়নস ল গ ইন ট র ম ল ন ফ ইন ল ইন ট র

এছাড়াও পড়ুন:

লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা

লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা

চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।

তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।

শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।

তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।

তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।

ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।

রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।

“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”

“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”

“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”

টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”

“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।” 

সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দ. আফ্রিকা সিরিজে ভারতের দল ঘোষণা: টেস্টে ফিরলেন পন্ত
  • হেলিও ৪৫: বাজেটের মধ্যে ফ্ল্যাগশিপের ছোঁয়া
  • ‘তুচ্ছ কারণে’ও শিরোনাম হওয়া কনস্টাস নেই অস্ট্রেলিয়া দলে
  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা