সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে আগের বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র (পিএসআর) জমা দিতে হতো। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সীমিত ও মধ্যম আয়ের মানুষ।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র কেনায় পিএসআর দেখানোর বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হতে পারে কিংবা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়া হতে পারে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় এই ঘোষণা দিতে পারেন। ফলে আগের মতোই শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সনদ দেখালেই হবে।

আগামী ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা দেওয়া হবে। এবার জাতীয় সংসদ না থাকায় জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশন বক্তৃতার মাধ্যমে বাজেট দেওয়া হবে।
বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে থাকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। এগুলো হলো পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র; তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র। তবে পরিবার সঞ্চয়পত্রের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। শুধু নারীরা এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। দেশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁদের করযোগ্য আয় নেই, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে মুনাফার টাকায় উপার্জন করেন—এমন করদাতাদের বাধ্য হয়ে রিটার্ন জমা দিতে হয়।

জানা যায়, বর্তমানে দেশে ৪৫টি সরকারি-বেসরকারি সেবা পেতে গেলে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র বা পিএসআর দেখাতে হয়। রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা বাড়াতে এই উদ্যোগ নেয় এনবিআর। অনেক করদাতা শুধু পিএসআর দেখানোর বাধ্যবাধকতার কারণে শূন্য রিটার্ন জমা দেন।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ১৬ লাখ করদাতা অনলাইনের রিটার্ন জমা দেন। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ শূন্য রিটার্ন দিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প এসআর

এছাড়াও পড়ুন:

বাঁশ ঘিরে দেড় হাজার কর্মসংস্থান

ভাটার সময় নদীপথে শুরু হয় যাত্রা। ছয় ঘণ্টা ভেসে চলার পর জোয়ার এলে তীরে বেঁধে রাখা হয়। ফের ভাটা হলে যাত্রা শুরু। এভাবে বাঁশ নিয়ে ১৬টি জোয়ার-ভাটা পেরিয়ে অন্তত ৫০ মাইল পাড়ি দিয়ে দুই দিনে খুলনায় পৌঁছান শ্রমিকরা। নদীর মধ্যেই চলে খাওয়া, ঘুমানোসহ নিত্যদিনের সব কাজ। নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত বাঁশ বিক্রির জন্য এভাবে নদীপথে নেওয়া হয় খুলনায়।
শ্রমিকরা জানান, প্রতি চালানে মালিকপক্ষ দূরত্ব অনুযায়ী বাঁশপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা দেন। এক এক চালানে গড়ে ৭০০ থেকে দুই হাজারটি বাঁশ থাকে। এ কাজে তেমন ঝুঁকি না থাকলেও অনেক সময় রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে গন্তব্যে যেতে হয়। 
যাওয়ার সময় কোনো ট্রলার, কার্গো বা লঞ্চে যাতে আঘাত না লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয় তাদের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এভাবে ২০টি হাটে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
২০ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত সদরের চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের ফেদি গ্রামের বাদশা মিয়া, চালিতাতলা গ্রামের টুলু মোল্যা ও মহিষখোলা গ্রামের বাবু শেখ। তারা বলছিলেন, তাদের জীবনটা জোয়ার-ভাটার সঙ্গে বাঁধা। শতাধিক মানুষ এ পদ্ধতিতে খুলনায় বাঁশ নিয়ে যান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নড়াইলের মাটি বাঁশ উৎপাদনের জন্য বেশ উপযোগী। এলাকায় তল্লা, ভালকো ও কুড়য়া জাত বেশি হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলায় ২৯১ হেক্টরে ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ৯৮৪টি বাঁশ উৎপাদন হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৯৬ হেক্টরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৬৭০টি।
জেলার বিভিন্ন স্থানে বাঁশের হাট গড়ে উঠেছে। এসব বাজারের অধিকাংশই নবগঙ্গা ও চিত্রা নদীর তীরে। বাঁশগ্রাম, চাঁচুড়ী, পলইডাঙ্গা, সীমানন্দপুর, ভুমুরদিয়া, চন্দ্রপুর, চৌগাছা, তুলারামপুর, নলদী, রায়খালি, ফেদী, চাপুলিয়া, পাইকমারি, রতডাঙ্গা, আউড়িয়া, এড়েন্দা, বল্লারটোপ, ভবানিপুরসহ বিভিন্ন স্থানে হাট রয়েছে।
সদরের ভদ্রবিলা ইউনিয়নের পলইডাঙ্গা গ্রামে চিত্রা নদীর পারে প্রায় ১২ একর জায়গা নিয়ে রয়েছে বড় একটি বাঁশের হাট। এখানে প্রতি রোববার ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার কেনাবেচা হয়। যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যাপারীরা আসেন কেনার জন্য। এখানে প্রায় দেড়শ শ্রমিক ট্রলার, নৌকা বা জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে বহনের কাজ করেন। স্থানীয় শ্রমিক রহমান ফকিরের ভাষ্য, দূর-দূরান্ত থেকে আসা বাঁশ পরিবহন থেকে নামানো এবং ভুর (স্তূপ) সাজানোর কাজ করেন তারা। এ জন্য একজন শ্রমিক দিনে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা পান। 
খুলনার পাইকগাছা থেকে আসা ব্যবসায়ী হোসেন ব্যাপারী ১২ বছর ধরে এ হাট থেকে পাইকারি বাঁশ কিনে নদীপথে ট্রলারে অথবা জোয়ার-ভাটার সাহায্যে খুলনায় নিয়ে যান। সেখান থেকে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় নিয়ে বিক্রি করেন। নদীপথে পরিবহন ব্যয় কম হওয়ায় লাভ হয় জানিয়ে তিনি বলছিলেন, প্রতিটি বাঁশ পাইকারি ১২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় কেনেন। বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৪০০ টাকায়। নদীপথে বহন সহজ, ঝুঁকিমুক্ত ও ব্যয় কম হওয়ায় সময়সাপেক্ষ হলেও ব্যবসায়ীরা এ পন্থা গ্রহণ করেন।
স্থানীয় ব্যাপারী এবং ভদ্রবিলা ইউপির সদস্য রেজাউল ইসলাম বলেন, এখন তাদের এলাকায় কোনো বেকার নেই। বাঁশ ওঠানো-নামানো এবং বিভিন্ন ঝাড় থেকে কাটার কাজ করে সবাই কমবেশি দিনে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নড়াইল উঁচু জেলা হওয়ায় এখানকার মাটি বাঁশ চাষের জন্য উপযোগী। এ কারণে জেলায় বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ প্রচুর উৎপাদন হয়। যদিও তা অপরিকল্পিতভাবে চাষ হচ্ছে। চাষিরা যাতে পরিকল্পিতভাবে চাষ করেন, সেজন্য কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
নড়াইলের চাহিদা মিটিয়ে অনেক বাঁশ খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় যায় জানিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসরণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জসীম উদ্দীন বলেন, দেশের সর্বত্র গৃহনির্মাণসামগ্রীর কাজ ছাড়াও পানের বরজ ও সবজি চাষে মাচাং তৈরিতে বাঁশের ব্যবহার রয়েছে। জেলেদের মাছ ধরার সরঞ্জাম, হস্তশিল্প তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খালেদা জিয়ার ভাগনে শাহরিনের জামিন মঞ্জুর, মুক্তিতে বাধা নেই
  • ডিজিটাল পরিচয়পত্র পাচ্ছেন সুন্দরবনের বনজীবীরা, নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকলেই আসবে খুদে বার্তা
  • সীমান্তে পরিচয়পত্রহীন ৯৬ জনকে পুশইন
  • অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা ১৬ লাখ ছাড়াল
  • বিদেশের সঙ্গে লেনদেনের ভারসাম্যে আরও উন্নতি
  • অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল ১৬ লাখ ছাড়াল
  • রপ্তানি প্রণোদনা কমবে থাকবে বিকল্প সুবিধা
  • বাঁশ ঘিরে দেড় হাজার কর্মসংস্থান
  • সমাবর্তন ঘিরে চবিতে নিরাপত্তা জোরদার, পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার নির্দেশ