রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলায় ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিয়া হক টিনার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

শুক্রবার (৯ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।

ফারিয়া হক টিনার পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক এ কে এম মঈন উদ্দিন।

আবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া পারভেজকে ছুরিকাঘাতে হত্যার কারণে প্রাইম ইউনিভার্সিটিসহ বনানী থানা এলাকা ও আশেপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তা বর্তমানেও চলছে। ফারিয়া হক টিনা এবং তার বান্ধবী ফাতেমা তাহসিন ঐশীর ইন্ধন ও মদদে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। আদালতে মাহাথির হাসানের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে টিনার সংশ্লিষ্টতার কথা আসে। ঘটনায় টিনার জড়িত থাকার বিষয়ে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এটি চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর হত্যা মামলা।

ফারিয়া হক টিনাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রকৃত ও সঠিক তথ্য উদঘাটিত হওয়াসহ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ ও গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এজন্য তার পাঁচ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।

রাষ্ট্রপক্ষে কাইয়ুম হোসেন নয়ন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। ফারিয়া হক টিনার পক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ফারিয়া হক টিনার কাছে জানতে চান, ‘কিছু বলার আছে কি না।’ টিনা বলেন,‘না।’ পরে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে রাজধানীর ভাটারা থানাধীন জগন্নাতপুর থেকে ফারিয়া হক টিনাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ এপ্রিল বিকেল ৪টার পর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। ওই ঘটনার এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাতে জাহিদুল ইসলাম পারভেজ নিহত হন। 

এ ঘটনার পরের দিন ২০ এপ্রিল পারভেজের ফুফাতো ভাই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আট জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরো ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত ২১ এপ্রিল এ মামলায় গ্রেপ্তার আল কামাল শেখ, আলভী হোসান জুনায়েদ ও আল আমিন সানির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাদের মধ্যে গত ২৩ এপ্রিল আসামি কামাল আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। একই দিনে আসামি মো.

হৃদয় মিয়াজীর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গ্রেপ্তারের পর ২৪ এপ্রিল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মাহাথির হাসান আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। গত ২৫ এপ্রিল এ মামলার প্রধান আসামি মেহেরাজ ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ২৭ এপ্রিল রিমান্ড শেষে আলভী ও সানিকে এবং ২৯ এপ্রিল হৃদয় মিয়াজী ও মেহেরাজ ইসলামকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা/এম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হক ট ন র র কর ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন সংবিধানের দাবি পাশ কাটিয়ে গেছেন অধ্যাপক ইউনূস: আখতার হোসেন

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস জুলাই ঘোষণাপত্রে ‘সংস্কারকৃত সংবিধান’ শব্দ ব্যবহার করে গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধানের দাবিকে পাশ কাটিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আখতার হোসেন এ মন্তব্য করেন।

আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র পেয়েছি। একটা অপূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্ট। সেই জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রস্তাবে বলা হলো, আগামী নির্বাচনের পর সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এই ঘোষণাপত্র যুক্ত করা হবে। সংস্কারের বিষয়গুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সেই বিষয় নিয়ে যখন আলোচনার দাবি জানানো হলো, তখন কমিশন তাদের (এনসিপি) সঙ্গে বসবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেই বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছে কমিশন। জুলাই সনদের এখনো চূড়ান্ত খসড়া এনসিপি পায়নি। ঠিক সেই মুহূর্তেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই ঘোষণাপত্রে “সংস্কারকৃত সংবিধান” শব্দবন্ধের মধ্য দিয়ে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দাবিকে পাশ কাটিয়ে গেছেন।’

নতুন সংবিধানের আলোচনাকে পাশ কাটিয়ে যাঁরা বিদ্যমান সংবিধানকে সংশোধনের কথা বলছেন, তাঁদের উদ্দেশে এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন তো সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে দিয়েছে। এই বিষয়গুলো বিদ্যমান সংবিধানে সংশোধনীর মতো করে বসিয়ে একটা ড্রাফট (খসড়া) করে দেখেন যে বর্তমান সংবিধানের আর কিছু অবশিষ্ট থাকে কি না। আমরা বারবার এ কথা বলেছি।’

সংবিধান সংশোধনে অতীতের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, এই সংবিধান অনেকবার কাটাছেঁড়া হয়েছে। সংশোধনী হয়েছে। পার্লামেন্টেই হয়েছে। তারপর যখন সেটা হাইকোর্টে গিয়েছে, হাইকোর্ট সেগুলো বাতিল করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, যে বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা তৈরি হয়েছে, ঐকমত্য কমিশন যে সিদ্ধান্তগুলো দিয়েছে, সেগুলোকে টেকসইভাবে পেতে হলে নতুন সংবিধানের আর কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশকে আগের ব্যবস্থার মধ্যে রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আবার রক্তের মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্য শহীদেরা জীবন দেননি বলেও মন্তব্য করেন আখতার হোসেন।

এনসিপির এই নেতার ভাষ্য, তাঁরা যখন গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলেন, তখন অনেকে এনসিপি জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায় বলে একধরনের বক্তব্য বাজারে নিয়ে আসছেন। তাদের (এনসিপি) প্রস্তাব, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একইসঙ্গে গণপরিষদের সদস্য এবং সংসদের সদস্য হিসেবে কাজ করবেন। তাঁরা সংবিধান নতুন করে প্রণয়ন করবেন। তাঁরা সরকারও পরিচালনা করবেন।

আখতার বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারি মাসের কথা বলেছেন। এতে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। নির্বাচন যেকোনো সময় আয়োজিত হতে পারে। কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচন যেন বাংলাদেশের পুরোনো ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার নির্বাচন না হয়। নতুন ব্যবস্থার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন আয়োজন করার আহ্বান জানান এই নেতা।

একমাত্র সমাধান গণপরিষদ নির্বাচন

সভায় দলের মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের একমাত্র পথ গণপরিষদ নির্বাচন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি নতুন সংবিধান ছাড়া স্থিতিশীল রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারব না। জনগণের রক্তের ত্যাগকে সম্মান জানাতে হলে গণপরিষদ নির্বাচন জরুরি।’

এনসিপির এই নেতা বলেন, জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে সামরিক ফরমান জারি করে গণপরিষদের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তাহলে কেন আজ গণপরিষদের কথা উঠলেই কিছু মহল আপত্তি তোলে? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রশ্নে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, জুলাই সনদ ঘিরে ঐকমতত্য কমিশন কার্যত দিশাহারা। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমেই জুলাই সনদের সংস্কার বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

আরও পড়ুনআসন দিয়ে এনসিপি নেতাদের কেনা সম্ভব নয়, আমরা বিক্রি হতে আসিনি: হাসনাত আবদুল্লাহ১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ