রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে দুই নারীর রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা হলেন– বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম (৬১) ও তাঁর বোন সুফিয়া বেগম (৫২)। গতকাল শুক্রবার রাতে তাদের লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। পুলিশের ধারণা, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। তবে কে বা কারা এতে জড়িত; কী কারণে হত্যা করা হয়েছে– তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।

যে ভবনে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেটির মালিক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহানের বাবা। ছয়তলা বাড়ির চতুর্থ তলায় সচিব তাঁর বাবার সঙ্গে থাকেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, মরিয়ম বেগম ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন। তাঁর স্বামী বন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী আলাউদ্দিন। তাদের সঙ্গে দুই মেয়েও বাসায় থাকেন। আর কিছুদিন ধরে সুফিয়াও বোনের বাসায় থাকতেন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পশ্চিম শেওড়াপাড়ার তোরাব আলী মসজিদের পাশে ৬৪৯ নম্বর বাড়ি ‘নার্গিস’। এর দোতলার বি-১ ফ্ল্যাটে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন মরিয়ম। গতকাল সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন তাঁর মেয়ে অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নুসরাত জাহান। তিনি রাত ৮টার দিকে ফিরে ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরে তালা খুলে ঘরে ঢুকে তিনি দেখেন, মা ও খালার রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে আছে। তাঁর চিৎকার শুনে অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা এগিয়ে যান। তারা ৯৯৯ নম্বরে কল করে বিষয়টি জানিয়ে পুলিশি সহায়তা চান। রাত ৯টার পর ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পরে সিআইডি, র‍্যাব ও পিবিআইর আলাদা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ঘটনার সময় মরিয়মের স্বামী কাজী আলাউদ্দিন তাঁর গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জের বাসায় ছিলেন। খবর পেয়ে তিনি রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
মিরপুর থানার এএসআই মোহাম্মদ মহসীন বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পরে ওই ফ্ল্যাটে দুই নারীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। নিরাপত্তাকর্মী মো.

রাজু জানান, কখন-কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে, তিনি বুঝতে পারেননি। পরিবারের সদস্যরা বাসায় ঢুকে লাশ দেখে চিৎকার শুরু করলে তিনি সেখানে যান। 
পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। দ্রুত হত্যাকাণ্ডের রহস্য ভেদ ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল শ উদ ধ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা

বাংলাদেশে পুলিশে পেশাদারি মনোভাব গড়ে না ওঠার জন্য এই বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারকে দায়ী করছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, বিভাজিত সমাজে ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’—এমন নানা তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। যৌথভাবে এ বৈঠক আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।

নিজের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি দুই সরকারপ্রধানের (সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেই কাজ করেছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে একটা ভদ্রতা, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হয়। দেখা করলে অনেক কথার পরও বা অল্প কথার পরও ‘এ কি আমাদের?’—এমন কথা শুনলে প্রথমেই বিব্রত বোধ করতে হয়।’

সরকারের পরিবর্তনে পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে প্রভাবিত হওয়ার উদাহরণ দিয়ে মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বাড়ি ফরিদপুর যদি হয় বা ফরিদপুরের আশপাশে হয়, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট হবে না। আবার আরেক সময় বগুড়ায় বাড়ি, ঝিনাইদহে বাড়ি, দিনাজপুরের বাড়ি, তাহলে চাকরিতে নেওয়া যাবে না বা ক্ষেত্রবিশেষে পদোন্নতি হবে না।’ এ ধরনের মনোভাব থেকে বের হতে না পারলে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার বা পেশাদারি মনোভাব ফেরানো কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘এক অদ্ভুত ব্যাপার। এখানে দুই হাজারের মতো লোক মারা গেল। অথচ বিহেভিয়ারে চেঞ্জ নেই।’

দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার অন্তরায় হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতি এবং সমাজে বিভাজনকে চিহ্নিত করেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই যে প্রচুর সংখ্যার লোক পয়সা দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে বা এখানে হলে...অনেক পয়সা হয়, এই অ্যাটিচিউড (আচরণ) থাকলে তো ল এনফোর্সমেন্ট (আইনশৃঙ্লা নিয়ন্ত্রণ) মুশকিল। আর ল এনফোর্সমেন্টের আরেকটা বড় জিনিস হচ্ছে আমি যে সমাজে কাজ করতে যাচ্ছি, সেই সমাজ কতখানি বিভাজিত।’

সংস্কারের পটভূমিতে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কর্মপদ্ধতি জানতে চেয়েছেন নুরুল হুদা। পুলিশ রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এই গোলটেবিল বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান বক্তব্য দেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম বৈঠকে অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
  • পুলিশ লাইনসগুলো গোপন কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছিল: নূর খান
  • মাঝে মধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কী আমাদের লোক’: আইজিপি
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • মবের ঘটনা নানাভাবে রাজনীতিকরণ করা হয়: এনসিপি নেতা আদীব