সাততলা ভবন থেকে নিচে নেমে কিছু কেনার চিন্তা থেকেই যাত্রা শুরু হয় একটি স্টার্টআপের। প্রথমে এই স্টার্টআপ ছিল বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালি পণ্য আনা-নেওয়া বা ফ্যামিলি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেবা প্রদানের। শুরুতে এটির নাম ছিল ‘রোবট ডাকো’। অর্থাৎ আপনার বাসার জন্য কোনো পণ্য কিনতে হবে, তাহলে রোবট ডাকো থেকে লোক ভাড়া করে সেই কাজ করা। এই সেবা নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো হয়, তখন অনেকেই এটিকে গৃহকর্মী সরবরাহের সেবা মনে করতে থাকেন। গ্রাহকেরা তাই গৃহকর্মীর খোঁজে রোবট ডাকোতে খোঁজ নিতে শুরু করেন। আর তাতেই নতুন ব্যবসার ধারণা পেয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর রোবট ডাকো সেবা বদলে চালু করে ‘হ্যালো টাস্ক’ নামে গৃহকর্মী সহায়তা সেবা। এই উদ্যোগ দুই ভাই মাহমুদুল হাসান ও মেহেদি স্মরণের চেষ্টার ফসল।

২০১৮ সালে হ্যালো টাস্ক নামের নতুন স্টার্টআপটির যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি তিন কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। তবে ২০২২ সালে এসে প্রতিষ্ঠানটি সিদ্ধান্ত নেয় বিনিয়োগ কমিয়ে মুনাফার লক্ষ্যে হাঁটবে তারা। তাই শুরুতে স্টার্টআপ হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও এখন এটিকে নিয়মিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করছে এটির দুই উদ্যোক্তা। প্রতিষ্ঠানটিতে এখন নিয়মিত কাজ করছে ১৬ জন কর্মী। মুঠোফোনের হ্যালো টাস্ক নামে পাওয়া যায় প্রতিষ্ঠানটির অ্যাপ। এই অ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকার মধ্যে যেকেউ গৃহস্থালি নানা কাজের জন্য ভাড়া করতে পারেন গৃহকর্মী। ঘণ্টা ও মাসিক—দুই পদ্ধতিতে এই সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

যেভাবে শুরু

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য ২০১৭ সালে মেহেদি স্মরণ ব্যবসায়ী বাবার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নেন। সেই টাকায় চালু করেন এই স্টার্টআপ। এখন তাদের বার্ষিক আয় কোটি টাকার কাছাকাছি। ২০১৮ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উদয়ন নামের একটি অর্থায়ন প্রকল্প থেকে ৪০ লাখ টাকার ঋণসহায়তা পায় স্টার্টআপটি। শুরুতে রোবট ডাকো নামে তাঁরা তাঁদের স্টার্টআপটি পরিচালনা শুরু করেন। পরে ভোক্তাদের গৃহকর্মী খোঁজার আগ্রহ দেখে চালু করা হয় হ্যালো টাস্ক।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগ নিয়ে কথা হয় সহপ্রতিষ্ঠাতা মেহেদি স্মরণের সঙ্গে। তিনি জানান, একসময় মোহাম্মদপুরের ছিল তাঁর বাসা। সেখানে রাস্তায় আসা-যাওয়ার পথে অনেক পোশাক কারখানা চোখে পড়ত। মাসের শুরুতে অনেক নারী শ্রমিক কাজের সন্ধানে এসব কারখানায় ভিড় করতেন। কিন্তু বেশির ভাগই চাকরি পেতেন না। চাকরি না পাওয়া এসব নারী শ্রমিককে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি তখন মাথায় আসে। আবার মানুষের গৃহকর্মী নিয়ে ব্যাপক আগ্রহের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল। তাই শুরুতে চাকরি খোঁজে থাকা ১০ শ্রমিককে মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এসব গৃহকর্মীর কর্মস্থলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কেনা হয় দুটি পুরোনো মোটরসাইকেল। ২০১৮ সালে প্রতিদিন গৃহকর্মীর খোঁজে ৭০০ থেকে ৮০০ আবেদন আসতে শুরু করল। একসময় এটি পূরণ করতে গিয়ে গৃহকর্মীর সংকট দেখা দেয়। তখন প্রতিষ্ঠানটির জন্য আশার আলো হয়ে ওঠে নারী মৈত্রী নামের বেসরকারি অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান। নারী মৈত্রী, অক্সফাম, ইউসেপ স্কুল ও বাংলাদেশ শ্রম গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিলস) মতন কিছু অলাভজনক প্রতিষ্ঠান মিলে ‘সুনীতি প্রজেক্ট’ নামের একটি গণসাক্ষরতা প্রকল্পের আয়োজন করেছিল। সেখানে প্রায় ১৬ হাজার নারীকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এ প্রকল্পে হ্যালো টাস্কের দায়িত্ব ছিল প্রশিক্ষিত নারী কর্মীদের চাকরির ব্যবস্থা করা।

মেহেদি স্মরণ জানান, এসব প্রশিক্ষিত কর্মী থেকে ৫০ জন গৃহকর্মী নিয়োগ দেয় হ্যালো টাস্ক। মাসিক বেতন ধরা হয় ১২ হাজার টাকা। এভাবে কয়েক বছর ব্যবসা চলতে থাকে। তারপর আসে করোনা মহামারি। মহামারির দুই বছর তাঁদের ব্যবসা ধাক্কা খায়। এ সময় প্রতিষ্ঠানটি তাদের অ্যাপ, ব্যবসার মডেল ও সেবার মানোন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। তৈরি করে নিজেদের আইভিআর (ইন্টারঅ্যাকটিভ ভয়েস রেসপন্স) প্রযুক্তি। মেহেদি স্মরণ আরও জানান, দেশে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এখনো লাভবান প্রতিষ্ঠান না হলেও চলতি বছরের জুলাইয়ে না লাভ, না লোকসান (ব্রেক ইভেন) পর্যায়ে পৌঁছে যাব।

উদ্যোক্তারা জানান, আইভিআর প্রযুক্তি চালুর ফলে একজন গ্রাহক সেবার জন্য আবেদন করলে সরাসরি গৃহকর্মীর মুঠোফোনে কল চলে যায়। গৃহকর্মীরা তাঁদের ফোনে ১ চেপে কাজের আবেদন গ্রহণ করতে পারেন। তারপর মেসেজের মাধ্যমে কোথায় ও কখন যেতে হবে, বিস্তারিত তথ্য তাঁদের মুঠোফোনে চলে যায়। নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে একদিকে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্ষমতা বেড়েছে, অন্যদিকে কমেছে খরচ। গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ প্রযুক্তিতে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।

কোথায়, কীভাবে ও কত টাকায় সেবা

প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমানে রাজধানীতে প্রতি মাসে তিন হাজারের বেশি সেবা প্রদান করছে তারা। প্রায় ১ হাজারের বেশি পাড়া বা মহল্লায় গ্রাহক সেবা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে তাঁদের অ্যাপে ১ লাখ ৩০ হাজার নিবন্ধিত গ্রাহক রয়েছেন। এখন পর্যন্ত হ্যালো টাস্ক ছয় লাখের বেশি সেবা দিয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বেশি গ্রাহক রয়েছে বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, গুলশান ও বনানী এলাকায়। প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধিত মোট গ্রাহকের ৩০ শতাংশ বসুন্ধরা এলাকার বাসিন্দা।

হ্যালো টাস্কের নিবন্ধিত গৃহকর্মীর সংখ্যা এখন প্রায় ৪৫০ জন। যারা ঘণ্টা ও মাসিক ভিত্তিতে গৃহস্থালি কাজের সেবা দিয়ে থাকেন। একজন গ্রাহক তিন ঘণ্টার জন্য একজন গৃহকর্মীর সেবা নিতে হলে দিতে হবে ৬৯০ টাকা। আর দৈনিক তিন ঘণ্টা করে মাসিক সেবা নিতে দিতে হবে ৭ হাজার ৮০০ টাকা। তবে গ্রাহকদের মধ্যে ৭০ শতাংশ দৈনিক সেবা নেন।

উদ্যোক্তারা জানান, প্রতিদিন একজন গৃহকর্মী আট ঘণ্টা কাজ করলে মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। গ্রাহকেরা চাইলে মাত্র ১০ টাকা দিয়ে সেবা নেওয়ার আবেদন করতে পারেন। গৃহকর্মী পছন্দ না হলে দ্রুত পরিবর্তনেরও সুবিধা রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ হকর ম র ন গ হকর ম স ট র টআপ গ র হক র একজন গ র জন য ব যবস স মরণ

এছাড়াও পড়ুন:

আবেগে নয়, দূরে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিন, নাহলে বিপদ হতে পারে

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আপনারা অনেক দূরে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিন, নাহলে কিন্তু বিপদ হতে পারে। কোনো ঘটনায় আবেগবশত সিদ্ধান্ত নিয়েন না। শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাত ও ওয়েলফেয়ার খাতে উদ্যোগ নিন।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল একজন মহীয়সী নারী ছিলেন। একজন ধনী পরিবারের মেয়ে হয়ে তিনি সমাজকল্যাণ কাজে নেমে আসেন। তিনি মানুষের সেবার জন্য নার্সিং পেশা চালু করেন। তিনি শত্রু-মিত্র সবার সেবা করেছেন।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে আমাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। সেখানে নার্সিংয়ের যে মহিমান্বিত রূপ দেখেছি, তা মনোমুগ্ধকর। তাদের সেবার কথা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ সেবা, মায়ের সেবা। একজন নার্স মায়ের সেবা হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেন।

নার্সদের বৈষম্যের দৃষ্টিতে দেখা হয় উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, দেশে নার্সদের সামাজিকভাবে হেয় করা হয়। শুধু আমাদের দেশেই নয়, দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই একই অবস্থা। নার্সদের আবাসন সুবিধা নেই। তাদের কাজের কারণে তিন শিফটেও কাজ করতে হয়। কিন্তু ক্যাম্পাসে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। নিজের বেতন থেকে বাসা ভাড়া দিতে হয়। আমাদের যেমন ভালো ডাক্তার দরকার, তেমনি নার্সদের যে লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার সেটিও দিতে হবে।
 
অভিযোগ করে তিনি বলেন, উড়াল সেতু, মেগা প্রজেক্ট কি চিবিয়ে চিবিয়ে খাবো নাকি। যে দেশের হিউম্যান উন্নতি হয় না, সে দেশ কখনো সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। লুটপাট ও পাচার হওয়া টাকার অর্ধেক স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করলে দেশ উন্নতি লাভ করত। করোনার সময় স্বাস্থ্যখাতে অনিময় করেছে, যার নায়ক দরবেশ এখন জেলে আছেন।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জানি না এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাত কীভাবে দেখবে, অথচ অত্যন্ত জরুরি এই সার্ভিসটা। কেন আমি ডলার খরচ করে ইন্ডিয়াতে যাবো? কেন তাদেরকে টাকা দিয়ে আসবো? তারা প্রতিমুহূর্তে আমাদেরকে নিয়ে নেগেটিভ বয়ান তৈরি করে অপপ্রচার করছে। তাদের পেছনে যদি এই আমরা ডলার খরচ না করে, এই টাকাগুলো আমাদের নার্স-ডাক্তারদের পেছনে খরচ করি, তাহলে ইন্ডিয়ায় যাওয়ার তো কোনো কারণই থাকতে পারে না। ডাক্তারদের লজিস্টিক সাপোর্ট ঠিক করতে পারলেই তো কেউ ওই (ভারত) দিকে যেত না । সেই কাজগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের করা দরকার ছিল।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম, কাদের গণি চৌধুরী, জাহানারা পারভিন, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, জাহিদুল কবির, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নড়াইল জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন
  • দূরে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিন, নাহলে বিপদ হতে পারে: সরকারকে রিজভী
  • আবেগে নয়, দূরে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিন, নাহলে বিপদ হতে পারে
  • ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পর আলোচনায় সিন্ধু পানিচুক্তি
  • ‘যাই আর ঘুইরা আহি, ঔষধও পাই না চিকিৎসাও পাই না’
  • যুদ্ধের আবহে এক সপ্তাহে পাকিস্তানের শেয়ার সূচক কমেছে ৬,৯৩৯ পয়েন্ট
  • পুতিনের প্রতি ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান ইউরোপের নেতাদের
  • ন্যায্য মূল্য পান না পেঁয়াজচাষি, মজুতদারদের পোয়াবারো
  • চালের দাম আরও কমেছে ডিম-সবজির বাজার চড়া