গত ২০ এপ্রিল প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত ‘প্রকৌশলী এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কোটার যৌক্তিকতা কী’ লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর আমার সঙ্গে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাকটররা যোগাযোগ করেন। তাঁদের কথা শুনতে গিয়ে এ দেশে আরেকটি অবহেলিত শ্রেণির কথা জানতে পারি।

সরকার তাঁদের মূলত সরকার শিক্ষক হিসেবে মর্যাদা দিলেও তাঁরা হয়ে গেছেন ‘ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট মামা’। যদিও যাঁরা ‘মামা’ বলছেন, তাঁদের চেয়ে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাকটররা শিক্ষাগত যোগ্যতায় মান হিসেবে এগিয়েই থাকেন। যেহেতু সংখ্যায় কম এবং সরকারে ভূমিকা রাখতে পারছেনও কম, তাই তাঁদের সমস্যার কথা কোথাও আসে না।

১৯৮৩ সালের গেজেট অনুযায়ী ক্র্যাফট ইনস্ট্রাকটর পদটি নন-গেজেটেড শিক্ষক পদ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গেজেট অনুযায়ী পদটি ‘ব্লক’ নয়। সেই হিসেবে শিক্ষক সংস্থার বিন্যাস বা অরগানোগ্রাম অনুযায়ী হওয়া উচিত। প্রচলিত সংস্থার বিন্যাস এই রকম—ক্র্যাফট ইনস্ট্রাকটর (১৩)-জুনিয়র ইনস্ট্রাকটর (১০)-ইনস্ট্রাকটর (৯)-ভাইস প্রিন্সিপাল-প্রিন্সিপাল। ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে অধিকাংশই নির্দিষ্ট ট্রেডে লেভেল-১ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে লেভেল-২-এর প্রশিক্ষণ চলমান।

২০২০ সালের খসড়া অধ্যাদেশে পদোন্নতির বিধান থাকলেও চূড়ান্ত কপিতে অজানা কারণে বিধানটি উল্লেখ করা হয়নি। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাকটরদের আবেদন দুবার খারিজ করেছিল কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।

২০২১ সালের নিয়োগে ২ হাজার ১৮২ পদে আবেদন নেওয়া হয়। সেখানে প্রায় ৫০০ প্রকৌশলী, ১ হাজার ১০০ জন ফিজিকস-কেমিস্ট্রির স্নাতক ও ৪৫০ জন ডিপ্লোমাধারী যোগদান করেন। লক্ষ করুন, ১৩তম গ্রেডেও এখন প্রকৌশলীরা যাচ্ছেন, যা দেশের চাকরি সমস্যাকে প্রবলভাবে তুলে ধরে।

সমস্যা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের আমলে অন্যান্য নিয়োগের মতো এখানেও প্রশ্ন তুলেছেন ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা। বাস্তবতা হচ্ছে, এটা ধরলে তো গত ১৫ বছরের সব নিয়োগ নিয়েই প্রশ্ন করতে হয়। এখন এই ২ হাজার ১০০ জন তাঁদের পরিবার ও চাকরি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছেন। অনেকেই কর্মক্ষেত্রে যেতে পারছেন না। এমনকি অনেকে হুমকির শিকারও হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

পরবর্তী সময়ে ১৮ জন ক্র্যাফট ইনস্ট্রাকটর উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আদালত গত বছরের ১৮ মার্চ রায় দেন। সেই রায়ে যোগ্যতা অনুসারে টেকনিক্যাল ডিগ্রিধারী ক্র্যাফটদের জুনিয়র ইনস্ট্রাকটর (টেক), নন-টেকনিক্যালদের জুনিয়র ইনস্ট্রাকটর (নন-টেক) পদে পদোন্নতির আদেশ দেওয়া হয়। এরপর ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের এই নিয়োগ বাতিলের আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলন ঠেকাতে আদালত এই রায় গত ২০ এপ্রিল স্থগিত করেন। এসব ব্যাপার আদালতের বিচারাধীন। আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে বিশ্বাস রাখি। তবে মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত করতে হবে—এ দাবি পুরোপুরি অসাংবিধানিক। রিট করার অধিকার সবারই আছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাকটর পদ থেকে পদোন্নতি দশম গ্রেডে জুনিয়র ইনস্ট্রাকটর ও নবম গ্রেডে ইনস্ট্রাকটর পর্যন্ত হয়েছে এবং তা কারিগরি শিক্ষা বিভাগেই। আদালতের রায় ও অন্যান্য নথিতে কোথাও ৩০ শতাংশ কোটার কথা নেই।

কিন্তু কোটা কি নেই? ২০২০ সালের গেজেট অনুসারে ২৫ শতাংশ ক্র্যাফট ইনস্ট্রাকটর পদে ইলেকট্রিশিয়ান, টেকনিশিয়ান (১৬তম গ্রেড থেকে) পদোন্নতির বিধান রাখা হয়েছে। এই কোটা দিয়েই এ দেশের প্রকৌশল খাতকে মেধাশূন্য করা হচ্ছে, যোগ্য ব্যক্তিরা হচ্ছেন বঞ্চিত। তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি বা প্রথম শ্রেণিতে গ্রেড পরিবর্তন কীভাবে এত সহজ হতে পারে? যেখানে একজন দু-তিন বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে অনেক ধাপ কাটিয়ে আসছেন, সেখানে একজন শুধু অভিজ্ঞতা দিয়েই বেশির ভাগ সিট নিয়ে নিচ্ছেন।

প্রকৌশলী, ডিপ্লোমা বা ক্র্যাফট ইনস্ট্রাকটরদের পুরা সমস্যার মূলে ছিল বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার। ২০০৮ সালে আন্দোলনের মুখে তাঁদের পোস্টকে সুপারভাইজার থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার করে দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে আবারও আন্দোলনের কারণে ওই সরকার অষ্টম বেতন স্কেলে ডিপ্লোমাদের জন্য উপসহকারী প্রকৌশলী নির্ধারিত করে দেয়। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত দশম গ্রেড শুধু প্রকৌশলীদের জন্য ছিল। ১৯৯৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তা প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। যেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দল মাঠে নামতেই পারত না, সেখানে তাঁরা মাঠে নেমে দাবি আদায় করে নিয়েছেন। আগে থেকেই চলে আসা ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ কোটা নবম গ্রেডে তাদের প্রমোশনের জন্য রেখে দেয়, যে পদোন্নতি ক্ষেত্রবিশেষে ৬০ শতাংশও হয়ে যাচ্ছে।

এই রকম ঘটনার উদাহরণসংক্রান্ত নথি আমি পেয়েছি। ফলে এখন নবম গ্রেডে প্রকৌশলীদের নিয়োগ অনেক কমে গেছে। এই জুনিয়র ইনস্ট্রাকটর দশম গ্রেডের ৩ হাজার ১৭৩ জনের বিপরীতে বিসিএসের নবম গ্রেডে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছিল মাত্র ৪ জনের। অনেক নিয়োগে আইডিইবি থেকে চিঠি দিয়ে কোটা বাড়াতে অনুরোধ করেছে। রিট করে নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়ারও নজির আছে।

এভাবে চাকরির একটা গ্রেড ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের জন্য দিয়ে দেওয়ার নজির বিশ্বের কোথাও নেই। ভারত-পাকিস্তানেও প্রকৌশলী, ডিপ্লোমা—সবাই আবেদন করতে পারেন এবং তাই তাঁদের মান আমাদের চেয়ে বেশ উন্নত। এই কোটা অবশ্যই মেধাতান্ত্রিক বাংলাদেশে গঠনের অন্তরায়। প্রকৌশলী ও ক্র্যাফট ইনস্ট্রাকটরদের সাংবিধানিক অধিকার স্পষ্টভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

সরকার এ ব্যাপারে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের ছয় দফা দাবি সমাধানের জন্য কমিটি করেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ছাত্ররা প্রকৌশলীদের তিন দফা দাবির ব্যাপারে এককাট্টা হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাকটররা কারও সাহায্য না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাই ব্যাপারটি এক পক্ষকে নিয়ে সমাধান সম্ভব নয়।

সরকারের উচিত এ জন্য ‘প্রকৌশল ও কারিগরি সংস্কার কমিশন’ গঠন করা। অথবা আদালতে গিয়ে সমাধান হবে, যা আসলে সময়সাপেক্ষ। কিন্তু ৪৫০টির বেশি পলিটেকনিক কলেজের দাপটে রাস্তা আটকিয়ে দুই শ্রেণির মানুষকে দাবিয়ে রেখে দাবি আদায় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ দেশের উন্নয়নে সবার সহযোগিতা দরকার। আর তাতে যেন কারও অধিকার ও দেশের ক্ষতি না হয়, তা দেখার দায়িত্ব সরকারেরই।

সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নবম গ র ড র জন য সরক র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

আমার প্রতিবেশী

জীবন-বৃত্তান্ত

ফ্রাঞ্জ কাফকা জন্মেছিলেন ১৮৮৩ সালের ৩ জুলাই চেকোশ্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগে। তাঁর শিক্ষা শুরু জার্মান স্কুলে। ১৯০৬ সালে তিনি আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পেশা হিসেবে প্রথমে বেছে নেন ইনসিওরেন্স কোম্পানির চাকরি। কিন্তু অচিরেই এই চাকরি ছেড়ে দেন। ১৮৯৮ সালে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। ১৯১৩ সালে তাঁর ছোটগল্পের সংকলন Meditation বের হয়। ব্যর্থ প্রেম, বাবার সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন, সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা, অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণতা তাঁকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। এর মাঝেই ১৯১৭ সালে তিনি নিশ্চিত হন যে, তিনি যক্ষারোগে আক্রান্ত। ১৯২৩ সালে তাঁর দেখা হয় ডোরা ডাইমান্টের সাথে। তারা একত্রে কিছুকাল বার্লিনে বসবাস করেন। রোগের দাপট বেড়ে যাওয়ায় তিনি ভিয়েনার একটি স্বাস্থ্যনিবাসে ভর্তি হন। পরের বছর তিনি পরলোকগমন করেন। জীবদ্দশায় তাঁর মাত্র ৭টি বই প্রকাশিত হয়েছিল। মৃত্যুর পর তাঁর বন্ধু ম্যাক্স ব্রড কাফকার লেখা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। ফলে ১৯২৫ সালে প্রকাশিত হয় The Trial, পরের বছর The Castle, ১৯২৭ সালে Amerika এবং ১৯৩১ সালে ছোটগল্পের সংকলন The Great Wall of China। ‘আমার প্রতিবেশী’ কাফকার My Neighbour গল্পের অনুবাদ।

ব্যবসার সমস্ত দায়-দায়িত্বটা আমার কাঁধে। টাইপরাইটার আর টালিখাতা নিয়ে মহিলা কেরানি দুজন বসে সামনের ঘরে। আমার ঘরে আমার লেখার টবিল, সিন্দুক, কনফারেন্স টেবিল, আরাম কেদারা আর টেলিফোনসহ দরকারি জিনিসগুলো রয়েছে। এগুলো নিয়েই আমি কাজ করি; খুব সহজেই নাড়াচাড়া ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমি বয়সে তরুণ। ব্যবসাটা আমার ভালোই চলছে। আর এ নিয়ে আমার তেমন কোনো উদ্বেগ কাজ করে না।

এ বছরের শুরুতে এক যুবক আমার অফিসের ঠিক পাশের ঘরটা ভাড়া নিল। আমি খুব বোকার মতো কাজ করে ফেললাম। ঘরটা ভাড়া নিতে দোমনা করার ফলে দেরি হলো, আর সেই কারণে তা হাতছাড়া হয়ে গেল। সেখানেও একটা রান্নাঘরসহ আলাদা একখানা ঘর, আর ওপাশে বসবার ঘর আছে। আমার আরো একখানা ঘর ও বসার ঘরের দরকার ছিল, তাতে অন্তত আমার মহিলা কেরানি দুজন খানিকটা খুশি হতো। কিন্তু রান্নাঘর আমার কোন কাজে লাগতো? আমার নাকের ডগা দিয়ে অফিসটা ছিনতাই হয়ে যাওয়ার জন্য আমার এই মামুলি অজুহাতই দায়ী।

বর্তমানে ছেলেটি সেখানে বসছে। নাম 'হ্যারাজ'। সেখানে সে ঠিক কি করে আমার জানা নেই। দরজার উপর লেখা আছে 'হ্যারাজ ব্যুরো'। আমি খোঁজ নিয়েছিলাম। আমাকে জানালো যে, এটা ঠিক আমার ব্যবসার মতই একটা ব্যবসা। আসলে কাউকেতো যেচে উপদেশ দেওয়া যায় না, বিশেষ করে ব্যবসায়ীটি যখন তরুণ এবং নিজের উন্নতি ঘটাতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্ভবতঃ ব্যবসায়ে তার ভবিষ্যত আছে; তথাপি কেউ যেন বেশি ছোটাছুটি না করে সবাই সেই পরামর্শই দিয়ে থাকে, কারণ ছেলেটির চলাফেরা দেখে মনে হয় তার কোনো বিশ্রাম নেই। আর যখন কোনোকিছু ঠিকঠাক মতো জানা যায় না তখন গৎবাঁধা দুয়েকটি কথাই কানে আসে । কখনো কখনো সিঁড়িতে হ্যারাজের সঙ্গে আমার দেখা হয়, তাকে সবসময়ই অস্বাভাবিক ব্যস্ত দেখি। খুব দ্রুত সে আমার পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আমি কখনোই তার তার চেহারাটা ভালোভাবে দেখতে পাইনি। তবে দেখতাম অফিসের চাবিটা সবসময় তার হাতে থাকে। একদিন মুহূর্তের জন্য তার অফিসের দরজাটা খোলা দেখাম। আর ঠিক ইঁদুরের লেজের মতো সুড়ৎ করে সে দরজার আড়ালে চলে গেল। আমি আবার 'হ্যারাজ ব্যুরো' লেখাটার সামনেই দাঁড়িয়ে পড়লাম যেটা ইতোমধ্যে যতবার পড়া উচিত তার চেয়ে বেশিবার পড়ে ফেলেছি।

ঘরের দুর্বল ও পাতলা দেয়ালগুলো সৎ ও যোগ্য লোকের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলেও অসৎ লোককে ঠিকই সুরক্ষা দিয়ে থাকে। আমার টেলিফোনটা যে দেয়ালের গায়ে আছে সেটাই আমাকে আমার প্রতিবেশী থেকে আলাদা করে রেখেছে। কিন্তু সেদিনের ঐ ঘটনাটাকে একটা বিশেষ তামাশার ঘটনা হিসেবেই মনে হলো আমার। এই টেলিফোনটা উল্টোদিকের দেওয়ালে ঝোলানো ছিল, তবুও পাশের ঘরে সবকিছুই শোনা যেত। তাই আমি যখন গ্রাহকদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতাম তখন তাদের নাম উচ্চারণ করতাম না। এভাবেই অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কথাবার্তার ধরনে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পেত তার থেকে তাদের নাম অনুমান করতে খুব বেশি দক্ষতার প্রয়োজন পড়ত না। কোনো কোনো সময় সে সব আশঙ্কা করেই আমি টেলিফোনের চারিপাশে দাপাদাপি-নাচানাচি করতাম যাতে ওপাশে আওয়াজ না যায়। টেলিফোনটা আমার কানেই লাগানো থাকতো, তবে গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে তা কোনো সাহায্যই করতো না। 

এইসব কারণে স্বাভাবিকভাবেই আমার ব্যবসার বিগত সিদ্ধান্তগুলো হুমকির মুখে পড়লো এবং আমার গলার আওয়াজ খাটো হয়ে গেল। আমি যখন টেলিফোন করি তখন হ্যারাজ কি করে? আমি ব্যাপারটায় রং চড়াতে না চাইলেও―কেউ কেউ অবশ্যই তা করে থাকেন, আর তাতে বিষয়টা খোলাসা হয়―নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, হ্যারাজের টেলিফোনের প্রয়োজন নেই, সে আমার টেলিফোনটাই ব্যবহার করে। সোফাটা দেওয়ালের দিকে সরিয়ে নিয়ে সে আমার কথাবার্তা শোনে।

যখন দেয়ালের এপাশে টেলিফোন ব্যবহার করি, গ্রাহকদের যাবতীয় কথা শুনি, জটিল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেই, বড় বড় হিসাবগুলো মেলাই, তখন সারা সময় ধরে আমি আমার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক তথ্যগুলো দেয়ালের ওপাশে হ্যারাজকেই সরবরাহ করি। আর সম্ভবত, সে আমার আলাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেনা। কথাবার্তার মাঝখানেই উঠে পড়ে কারণ ততক্ষণে ব্যাপারটা তার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। এবার সে অভ্যস্ত ব্যস্ততায় শহরময় উড়ে বেড়ায় এবং আমি ফোনের রিসিভারটা দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখবার আগেই ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে সে আমার বিরুদ্ধে লেগে তার গন্তব্যে পৌঁছে যায়। 
 

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ