শেরপুরে গিয়েছিলাম গত বছরের মার্চে। উদ্দেশ্য, সেখানকার পাখি ও বন্য প্রাণীদের খোঁজখবর নেওয়া। শেরপুর বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মো. মুগনিউর রহমান ভাই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ১ মার্চ শেরপুরে যাই। পরদিন ২ মার্চ ভোরে মুগনিউর ভাইয়ের মোটরসাইকেলে করে বেরিয়ে পড়ি। ঝিনাইগাতী উপজেলার বগাডুবি ব্রিজের আশপাশে ও রাংটিয়া বনে ঘুরে আমার বন্য প্রাণী তালিকায় দুটি নতুন পাখি ও একটি প্রজাপতি যোগ করতে সক্ষম হলাম। ৩ মার্চ সকালে শহরের কাছে রৌয়া বিলে গিয়ে কয়েকটি পাখির কিছু ভালো ছবি তোলা গেল। ফিরতি পথে একটি পরিত্যক্ত বাগানবাড়িতে গেলাম খ্যাঁকশিয়ালের খোঁজে। কিন্তু প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও খ্যাঁকশিয়ালের দেখা পেলাম না।
খ্যাঁকশিয়াল খুঁজতে খুঁজতে একসময় বাগানবাড়ির পুকুরের পাড়ে গেলাম। পাড়ে বিশাল মেঘশিরীষগাছ। সেই গাছের ডালে গাঢ় কালচে বাদামি রঙের একটি শিকারি পাখি। ছবি তোলার সময় লক্ষ করলাম, পাখিটির পায়ের নিচে সদ্য শিকার করা মুরগির ছানা। বেশ কয়েকটি ছবি তোলার পর হঠাৎ লক্ষ করলাম, গাছের বেশ উঁচুতে একটি পাখির বাসা। সেখানে একই আকার ও গড়নের কিছুটা হালকা কালচে বাদামি রঙের আরেকটি শিকারি পাখি। মনে হলো, পাখিটি ডিমে তা দিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর হালকা রঙের পাখিটি বাসা থেকে নেমে ডালের ওপর দাঁড়াল। এর কিছুক্ষণ পর গাঢ় রঙের পাখিটি বাসায় গিয়ে বসল। আসলে দেহের রং দুই রকম হলেও পাখি দুটি কিন্তু একই প্রজাতির। দুই রূপের পাখিকে সুন্দরবনে বহুবার দেখলেও জোড় বাঁধা অবস্থায় একসঙ্গে এই প্রথম দেখলাম। বেশ কিছু ছবি তুলে আবারও খ্যাঁকশিয়ালের খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম।
এতক্ষণ যে দুটি পাখির গল্প বললাম, ওরা এ দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি—বহুরূপী ইগল। কালো বা শিখাযুক্ত ইগল নামেও পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গে বলে শাবাজ সাদাল। ইংরেজি নাম চেঞ্জেবল বা ক্রেস্টেড হক-ইগল। অ্যাক্সিপিট্রিডি গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Nisaetus cirrhatus। পাখিটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বাসিন্দা।
শেরপুর শহরের কাছে পরিত্যক্ত বাগানবাড়ির মেঘশিরীষগাছে গাঢ় রঙের বহুরূপী ইগল.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হাওরে পড়ে ছিল ইজিবাইকচালকের বস্তাবন্দী মরদেহ
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার একটি হাওর থেকে অটোরিকশাচালকের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জালালপুর হাওর এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ব্যক্তির নাম রাসেল মিয়া (২৫)। তিনি মদন উপজেলার কুলিয়াটি গ্রামের আবুল মিয়ার ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, দুর্বৃত্তরা অটোরিকশাটি ছিনতাই করার জন্য তাঁকে হত্যা করে বস্তায় ভরে ফেলে যায়।
পুলিশ জানায়, আজ দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন হাওরে সাদা রঙের একটি প্লাস্টিকের বস্তা পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন। পরে বস্তার ভেতর থেকে রাসেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ পাওয়ার খবরে তাঁর পরিবারের লোকজন সেখানে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেছেন।
রাসেলের পরিবার জানায়, গত সোমবার সকালে বাড়ি থেকে অটোরিকশা নিয়ে বের হন রাসেল। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি। তাঁরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে রাসেলকে না পেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
কখন, কীভাবে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে—তা তাৎক্ষণিকভাবে বলা যাচ্ছে না জানিয়ে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।