বর্ষাকালে ত্বক ভালো থাকবে কোন ফেসপ্যাক ব্যবহারে
Published: 3rd, July 2025 GMT
বর্ষাকাল শুরু হওয়ার সাথে সাথে, বৃষ্টি এবং আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে চুল ও ত্বকে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
ত্বক সুস্থ রাখতে ফেসপ্যাকগুলি খুবই কার্যকর। বাজারে বিভিন্ন ধরণের ফেসপ্যাক পাওয়া গেলেও, ঘরে তৈরি ফেসপ্যাক ব্যবহার করাই ভালো। বর্ষাকালে ত্বক ভালো রাখতে যেসব ঘরোয়া ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন-
মুলতানি মাটি এবং গোলাপ জলের প্যাক
মুলতানি মাটি অতিরিক্ত তেল শোষণ করে এবং ত্বকের ছিদ্র খুলে দিতে সাহায্য করে, যা বর্ষার সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। গোলাপ জলের প্রদাহ-বিরোধী এবং শীতল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সাথে ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন।
নিম এবং হলুদের ফেসপ্যাক
নিমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য বর্ষাকালে ব্রণ এবং ত্বকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। হলুদ প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা দেয় এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তাজা নিম পাতা বেটে নিন অথবা নিমের গুঁড়ো ব্যবহার করতে পারেন। এর সঙ্গে এক চিমটি হলুদ এবং পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
বেসন, দই এবং হলুদের প্যাক
এই ফেসপ্যাকটি ত্বক এক্সফোলিয়েট এবং তেল নিয়ন্ত্রণ করে। বর্ষাকালে মিশ্র বা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী। ২ টেবিল চামচ বেসন, ১ টেবিল চামচ দই এবং এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে মুখে লাগান। শুকালে পানি দিয়ে আলতো করে ঘষে ঘষে মুছে ফেলুন।
চন্দন এবং গোলাপ জলের প্যাক
চন্দনের অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য বর্ষাকালের সাধারণ ফুসকুড়ি এবং ত্বকের ব্রণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। গোলাপ জল ত্বক হাইড্রেট এবং সতেজ করে। গোলাপ জলের সাথে চন্দনের গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। শুকানোর পরে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালোভেরা এবং শসার কুলিং প্যাক
আর্দ্র আবহাওয়ায় জ্বালাপোড়া বা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এই ফেসপ্যাকটি আদর্শ। অ্যালোভেরা ত্বককে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে, অন্যদিকে শসা ত্বককে প্রশমিত করে । তাজা অ্যালোভেরা জেল এবং শসার রস মিশিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ ল প জল র বর ষ ক ল ত বক র
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)