গোলের লড়াই বললে একসময় সবার আগে আসত লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম। লম্বা সময় পর্যন্ত দুজন একে অপরের বিপক্ষে লড়েছেন। প্রায় এক দশকের বেশি সময় দুজনের আশপাশে খুব কম খেলোয়াড়ই ঘেঁষতে পেরেছেন, তবে সেসব দিন এখন অতীত।

গত দশকে মেসি-রোনালদোর একচ্ছত্র দাপট ভেঙেছে এই দশকে। দুজনই ইউরোপিয়ান ফুটবলের মঞ্চকেও বিদায় জানিয়েছেন। তাঁদের রেখে যাওয়া মসনদে এখন বসেছেন অন্যরা। তবে চলতি দশকে গোলের লড়াইটি মেসি-রোনালদোর লড়াইয়ের মতো দুজনে আটকে নেই। এই লড়াইয়ে সেরা হওয়ার দৌড়ে আছে একাধিক নাম। দশক শেষ হতে হতে তাই বদলে যেতে পারে সব হিসাব–নিকাশও।

ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাব বলছে, চলতি দশকে অর্থাৎ ২০২০-২১ মৌসুম থেকে এখন পর্যন্ত ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে গোল করায় সবার ওপরে আছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এই ৫ বছরে এমবাপ্পে করেছেন ২৩৭ ম্যাচে ২০৫ গোল। তাঁর ম্যাচপ্রতি গোল ০.

৮৬টি।

আরও পড়ুনমাদ্রিদে বসে ব্রাজিল নিয়ে যা বললেন আনচেলত্তি৫ ঘণ্টা আগে

২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জিতে সবাইকে চমকে দেওয়া এমবাপ্পে এই সময়ে পিএসজির হয়ে জিতেছেন তিনটি লিগ, দুটি ফ্রান্স কাপ এবং দুটি ফ্রেঞ্চ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এরপর রিয়ালে যোগ দিয়ে জিতেছেন একটি উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা আন্তমহাদেশীয় কাপ।

২০২০-২১ মৌসুম থেকে শীর্ষ ৫ লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা

তালিকায় দ্বিতীয় রবার্ট লেভানডফস্কি। পোলিশ এই স্ট্রাইকার এ সময়ে খেলেছেন বায়ার্ন মিউনিখ ও বার্সেলোনায়। দুই ক্লাব মিলিয়ে তিনি ২৩০ ম্যাচে করেছেন ১৯৭ গোল। যেখানে লেভার ম্যাচপ্রতি গোল ০.৮৫টি। গোলগুলো করার পথে বায়ার্ন ও বার্সার হয়ে জিতেছেন ১০টি শিরোপা।

এই দশকে আরেক গোল মেশিন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি তারকা স্ট্রাইকার আর্লিং হলান্ড। গোলের অনেক রেকর্ড এরই মধ্যে ভেঙে দিয়েছেন হলান্ড। এই দশকে এখন পর্যন্ত ২১০ ম্যাচে হলান্ড করেছেন ১৯০ গোল। ম্যাচপ্রতি গোল ০.৯০টি। ম্যাচপ্রতি গোল বিবেচনায় হলান্ডের অবস্থান অবশ্য এমবাপ্পে-লেভাদেরও ওপর। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য দুজন হচ্ছেন হ্যারি কেইন (২৩৮ ম্যাচে ১৭৩ গোল) এবং মোহাম্মদ সালাহ (২৪৭ ম্যাচে ১৫০ গোল)।

আরও পড়ুনহলান্ড নাকি এমবাপ্পে, রোনালদোর গোলের রেকর্ড ভাঙবেন কে২৪ জানুয়ারি ২০২৫

ক্লাব বিচারে এ সময় সবচেয়ে বেশি গোল ম্যানচেস্টার সিটির। ইংলিশ ক্লাবটি ২৯৩ ম্যাচে করেছে ৬৯০ গোল। এ সময়ে সিটি চারটি প্রিমিয়ার লিগ এবং একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে। সিটির পরই আছে বায়ার্ন। জার্মান ক্লাবটি ২৪৫ ম্যাচে করেছে ৬৭০ গোল। এ সময়ে বায়ার্ন ঘরোয়া লিগের চারটি শিরোপাও জিতেছে। এ তালিকায় পরের তিনটি নাম হচ্ছে পিএসজি (২৬৫ ম্যাচে ৬২৩ গোল), লিভারপুল (২৮০ ম্যাচে ৬০৯ গোল) এবং রিয়াল মাদ্রিদ (২৮৩ ম্যাচে ৫৯৪ গোল)।

২০২০-২১ মৌসুম থেকে শীর্ষ ৫ লিগে সর্বোচ্চ গোল করা ক্লাব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এমব প প হল ন ড এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

পাথর তোলায় রাজনৈতিক দলের ‘ঐকমত্য’, পরে লুট, ঘটল কীভাবে

বড় পাথর, মাঝারি পাথর, ছোট পাথর। তার মধ্য দিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলধারা। সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের সেটাই ছিল আকর্ষণ। পর্যটকেরা গিয়ে পাথরের ওপর বসতেন, ছবি তুলতেন।

অবশ্য এখন তা অতীত। চার মাস ধরে লুট করা হয়েছে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের পাথর। এই লুটের কথা সবাই জানত। কারণ, দিনদুপুরে চলেছে লুটপাট। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তা জোরালো ছিল না। ফলে পাথর লুট ঠেকানো যায়নি।

সরেজমিনে গত মঙ্গলবার দেখা যায়, সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে যেখানে বড় বড় পাথর ছিল, সেখানে এখন গর্ত। সব জায়গায় পাথর তুলে নেওয়ার চিহ্ন। প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর লুট করা হয়েছে। ফলে সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। কমেছে পর্যটকের সংখ্যা।

বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও পাথর উত্তোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য ছিল। কারণ, পাথর উত্তোলন, পরিবহন, মজুত রাখা, ভাঙা ও বিক্রির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

স্থানীয় প্রশাসনও পাথর উত্তোলনের পক্ষে সম্প্রতি মত দিয়েছে। কিন্তু সরকার সাড়া দেয়নি। পরে হয় শুরু গণলুট। লুটের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদেরই দায়ী করছেন পরিবেশকর্মীরা। প্রথম আলোর অনুসন্ধানেও তাঁদের নাম এসেছে। কেউ কেউ আত্মগোপনেও চলে গেছেন।

পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্যসচিব আবদুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পাথর লুট ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। এর সঙ্গে প্রকাশ্যে ও গোপনে জড়িত রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা। তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যেভাবে সভা-সমাবেশে কোয়ারি চালুর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা দুঃখজনক। পাথর লুটের দায় এসব নেতা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

পাথর উত্তোলনে ‘ঐকমত্য’

সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর, বালু ইত্যাদি উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে রয়েছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে আরও ১০টি জায়গায় পাথর রয়েছে। যেমন সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি ও উৎমাছড়া। এসব জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

পাথর আসে সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে। বহু বছর ধরে পানির স্রোতের সঙ্গে এসব পাথর এসে কোয়ারি তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের আটটি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।

বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যেভাবে সভা-সমাবেশে কোয়ারি চালুর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা দুঃখজনক। পাথর লুটের দায় এসব নেতা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্যসচিব আবদুল করিম চৌধুরী

উল্লেখ্য, জাফলং (জাফলং-ডাউকি নদী) পরিবেশ অধিদপ্তর ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)। জাফলংসহ অন্যান্য এলাকা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হলে পরিবেশ আইনে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আবার খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইনেও এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দেশের নির্মাণ খাতে পাথরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে প্রায় ৯৫ লাখ মেট্রিক টন পাথর আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা, যার দাম দেখানো হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। দেশের নির্মাণ খাতে পাথরের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করে মেটানো হয়। বাকিটা চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ হয় দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প ও সিলেট থেকে উত্তোলন করা পাথর দিয়ে।

সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের আগের অবস্থা। ছবিটি গত ৩০ এপ্রিল তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারী আলোকচিত্রীর অনুপ্রেরণার প্রতীক
  • ভারত-চীন সম্পর্কের আসলে কতটা উন্নতি হতে পারে
  • দুর্নীতির মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড
  • বাগ্‌দান সারলেন টেন্ডুলকারের ছেলে অর্জুন, জেনে নিন বাগ্‌দত্তার পরিচয়
  • পাথর তোলায় রাজনৈতিক দলের ‘ঐকমত্য’, পরে লুট, ঘটল কীভাবে