ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কোথায়?
Published: 14th, May 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) আমাদের ছোট ভাই শাহরিয়ার আলম সাম্য। মঙ্গলবার ইনস্টিটিউটের নবীনবরণ অনুষ্ঠানেও ছেলেটা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। অথচ রাতেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হলো! ফেসবুকে আইইআর গ্রুপে প্রথমে তার প্রাণহানির খবর শুনি। সংবাদমাধ্যমেও খবর হয়। এরপর থেকে সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-সংলগ্ন সেহারাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সাম্য নিহত হয়। ২৫ বছরে তেজোদীপ্ত ছেলেটা যেভাবে ক্যাম্পাসের কাছেই প্রাণ হারালো, তাতে প্রথমেই প্রশ্ন জাগছে– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কোথায়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবার জন্য উন্মুক্ত। এর ভেতর দিয়ে সাধারণ পরিবহনও চলাচল করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদিও গত বছর ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, কিন্তু অনেকের বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একেবারেই উন্মুক্ত। সাম্যর ঘটনায় খবর বলছে, রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল সে। এ সময় অন্য একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায় অপরপক্ষ। বাস্তবে কী ঘটেছিল এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এটা সত্য, ছেলেটি নেই। মঙ্গলবার রাতেই তার পরিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে দেখতে যায়। সন্তানের নিথর দেহ দেখে প্রিয়জন কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাবার প্রশ্ন, বহিরাগতরা কেন মারল তাঁর সন্তানকে? পরিবার এ হত্যার বিচার চায়।
হত্যাকারীদের বিচারই এখনকার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। শাহরিয়ার আলম সাম্য ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও সক্রিয় ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্যার এএফ রহমান হলের ছাত্রদলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতেন। ছাত্রদল সহযোদ্ধা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে, উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করছে; কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান শাহবাগ থানার অধীনে, সেখানকার নিরাপত্তার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরই প্রথমে জানা উচিত। উদ্যান ঘিরে নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, থানার নাকের ডগায় থেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড কীভাবে চলছে? উদ্যানটিতে রাতের বেলায় ন্যূনতম আলোর ব্যবস্থাও নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এর প্রতিবেশের নিরাপত্তা নিয়েও যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ভাবতে হবে, সাম্যর হত্যাকাণ্ড তাই প্রমাণ করছে। শাহরিয়ার আলম সাম্য পড়াশোনা করতে এসে লাশ হয়ে ফিরল। তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। স্বজন হারানোর কষ্ট সংশ্লিষ্টরাই বোঝেন। দূর থেকেও সেই বেদনা আমরা অনুভব করি। তবে সাম্য ক্যাম্পাস নিরাপত্তার যে প্রশ্ন রেখে গেছে, তার সমাধান করতেই হবে। আইনশৃঙ্খলার এই সংকট দূর করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টররা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন। তা ছাড়া আগে রাজনৈতিক কারণেও আমরা দেখেছি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। সেই দুর্বৃত্তপনাও যেন কোনো ক্যাম্পাসে ফিরে না আসে, সে জন্য সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকতে হবে।
মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক
গত জুলাই মাসে শনাক্ত হওয়া রহস্যময় ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে থাকা বস্তুটি এমন আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। কারও ধারণা এটি ধূমকেতু, আবার কারও মতে ভিনগ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান। উৎস ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে না পারলেও বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয় বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভি লোব অভিযোগ করেছেন, নাসা বস্তুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছে। বিশাল আকারের অতিদ্রুতগামী মহাজাগতিক বস্তুটি অস্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করছে, যা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেকের ধারণা, ৩আই/অ্যাটলাস কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এবার এই বিতর্কে নাম লিখিয়েছেন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।
জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সে ইলন মাস্ক ৩আই/অ্যাটলাস নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বস্তুটি কোনো ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি এটিকে সম্পূর্ণ নিকেল দিয়ে তৈরি করেন, তবে তা হবে একটি অত্যন্ত ভারী মহাকাশযান। এটি এমন একটি যান হতে পারে, যা একটি মহাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটাতে পারে। যদি আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনার অনুষ্ঠানে আসব। আর এখানেই তা প্রকাশ করব।’
অভি লোবের দাবি, আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুটি পৃথিবীর ওপর নজরদারি করতে পাঠানো ভিনগ্রহের কোনো মহাকাশযান হতে পারে। অস্বাভাবিক লেজযুক্ত বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে; যদিও সেখানে কোনো লোহার উপস্থিতি নেই। ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন আচরণ আগে দেখা যায়নি।
জো রোগান তাঁর আলোচনায় ধূমকেতুর রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দেন। ধূমকেতুর গ্যাসের মেঘে নিকেলের উপস্থিতি উল্লেখ করেন। এই ধাতু পৃথিবীতে প্রধানত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংকর ধাতুতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইলন মাস্ক নিকেলের উপস্থিতির একটি পার্থিব ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু প্রাথমিকভাবে নিকেল দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে যেখানে নিকেলখনি দেখা যায়, সেখানে আসলে অতীতে নিকেলসমৃদ্ধ কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করেছিল।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া