ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) আমাদের ছোট ভাই শাহরিয়ার আলম সাম্য। মঙ্গলবার ইনস্টিটিউটের নবীনবরণ অনুষ্ঠানেও ছেলেটা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। অথচ রাতেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হলো! ফেসবুকে আইইআর গ্রুপে প্রথমে তার প্রাণহানির খবর শুনি। সংবাদমাধ্যমেও খবর হয়। এরপর থেকে সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-সংলগ্ন সেহারাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সাম্য নিহত হয়। ২৫ বছরে তেজোদীপ্ত ছেলেটা যেভাবে ক্যাম্পাসের কাছেই প্রাণ হারালো, তাতে প্রথমেই প্রশ্ন জাগছে– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কোথায়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবার জন্য উন্মুক্ত। এর ভেতর দিয়ে সাধারণ পরিবহনও চলাচল করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদিও গত বছর ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, কিন্তু অনেকের বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একেবারেই উন্মুক্ত। সাম্যর ঘটনায় খবর বলছে, রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল সে। এ সময় অন্য একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায় অপরপক্ষ। বাস্তবে কী ঘটেছিল এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এটা সত্য, ছেলেটি নেই। মঙ্গলবার রাতেই তার পরিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে দেখতে যায়। সন্তানের নিথর দেহ দেখে প্রিয়জন কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাবার প্রশ্ন, বহিরাগতরা কেন মারল তাঁর সন্তানকে? পরিবার এ হত্যার বিচার চায়।

হত্যাকারীদের বিচারই এখনকার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। শাহরিয়ার আলম সাম্য ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও সক্রিয় ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্যার এএফ রহমান হলের ছাত্রদলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতেন। ছাত্রদল সহযোদ্ধা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে, উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করছে; কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান শাহবাগ থানার অধীনে, সেখানকার নিরাপত্তার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরই প্রথমে জানা উচিত। উদ্যান ঘিরে নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, থানার নাকের ডগায় থেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড কীভাবে চলছে? উদ্যানটিতে রাতের বেলায় ন্যূনতম আলোর ব্যবস্থাও নেই। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এর প্রতিবেশের নিরাপত্তা নিয়েও যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ভাবতে হবে, সাম্যর হত্যাকাণ্ড তাই প্রমাণ করছে। শাহরিয়ার আলম সাম্য পড়াশোনা করতে এসে লাশ হয়ে ফিরল। তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। স্বজন হারানোর কষ্ট সংশ্লিষ্টরাই বোঝেন। দূর থেকেও সেই বেদনা আমরা অনুভব করি। তবে সাম্য ক্যাম্পাস নিরাপত্তার যে প্রশ্ন রেখে গেছে, তার সমাধান করতেই হবে। আইনশৃঙ্খলার এই সংকট দূর করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টররা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন। তা ছাড়া আগে রাজনৈতিক কারণেও আমরা দেখেছি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। সেই দুর্বৃত্তপনাও যেন কোনো ক্যাম্পাসে ফিরে না আসে, সে জন্য সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকতে হবে।


মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com
 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

জবিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদদের নিয়ে গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্বদের জীবন, গবেষণা ও তত্ত্ব নিয়ে রচিত গ্রন্থ ‘নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম’ এর মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।

বুধবার (২ জুলাই) প্রধান অতিথি হিসেবে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম রচিত এই গ্রন্থে বিভিন্ন সময়ে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ৩৮ জন অর্থনীতিবিদের জীবনী, গবেষণা কার্যক্রম এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের প্রভাব ও অবদান তুলে ধরা হয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে অপেরা পাবলিকেশন।

আরো পড়ুন:

ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দিতে চিঠি

চবিতে প্রথমবারের মতো হাল্ট প্রাইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, “অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া ব্যক্তিত্বদের তত্ত্ব ও গবেষণা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অসাধারণ অনুপ্রেরণা। এই বইটি শুধু শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াবে না, বরং গবেষণার ক্ষেত্রেও দিকনির্দেশক ভূমিকা রাখবে।” তিনি লেখক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলামকে এমন একটি সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক গ্রন্থ রচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।

অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শরীফ মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সানজিদা ফারহানা এবং বিশিষ্ট ফাইন্যান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট, কলামিস্ট জনাব সাইফুল হোসেন।

বক্তারা বলেন, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এমন গবেষণামূলক বই কেবল পাঠ্যচর্চার জন্য নয়, অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিশ্লেষণেও সহায়ক হবে। এতে শিক্ষার্থীদের মৌলিক চিন্তা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা বিকশিত হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ