জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে এবং তাদের ওপরে দায় চাপানোর যে চেষ্টা করা হয়েছে সেটা স্রেফ অপচেষ্টা এবং সত্যকে আড়াল করার পাঁয়তারা।

বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।

পোস্টে সারজিস আলম লেখেন, আমাদের ভাই সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং প্রক্টর স্যারের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে এবং তাদের ওপরে দায় চাপানোর যে চেষ্টা করা হয়েছে সেটা স্রেফ অপচেষ্টা এবং সত্যকে আড়াল করার পাঁয়তারা।

তিনি বলেন, প্রথমত, ঘটনা ঘটেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শৃঙ্খলার দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের না। দ্বিতীয়ত, এই উদ্যানের মাদক সেবন, হেনস্তা, চাঁদাবাজিসহ যাবতীয় অপকর্ম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নয় বরং ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা কিংবা প্রভাব খাটানো বিভিন্ন সংগঠন এবং তাদের ছত্রছায়ায় থাকা বিভিন্ন সিন্ডিকেট করে থাকে।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, উদ্যানের গেট এবং উদ্যানের বেতরের অংশে ভাসমান দোকান দিয়ে বস্তি বানানো, মন্দিরের গেটের আশপাশে এবং পুরো ক্যাম্পাসে শতাধিক ভাসমান দোকান ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্টের অন্যতম কারণ। এই দোকানগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বসায়নি বরং ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা কোনো না কোনো সংগঠনের কিছু চাঁদাবাজ নেতাকর্মীরা বসিয়েছে। তারা এর ভাগ নেয় এবং প্রটেকশন দেয়।

‘এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসব অপকর্মে প্রশ্রয় দেয় এবং নিজের ভাগ বুঝে নেয়। কেউ ভালো উদ্দেশ্যে কাজ করতে চাইলে তাকে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা বিভিন্ন নেতাকর্মীর দ্বারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।’

তিনি আরও বলেন, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এগুলো উচ্ছেদ করতে যায় তখন তাদের বাধা দেওয়া হয়, ক্ষমতার দাপট দেখানো হয়। উদ্যানের গেট যখন বন্ধ করা হলো তখন এই গেট খুলে যারা গেটের ভেতরে ও বাইরে পঞ্চাশের অধিক দোকান বসিয়েছে তারা এই হত্যার পরিবেশ সৃষ্টির পেছনে অন্যতম দায়ী। 

সারজিস আলম আরও বলেন, মেট্রোরেল স্টেশন এবং শহীদ মিনারকে ব্যবহার করে যারা সেখানে শতাধিক ভাসমান দোকান বসিয়ে, চাঁদাবাজি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করছে তারা এমন হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ সৃষ্টির পেছনে দায়ী। যারা উদ্যানের ভেতরে মাদকের সিন্ডিকেট চালায়, মাদক সাপ্লাই দেয়, মাদকসেবনের পরিবেশ তৈরি করে এবং সেখান থেকে চাঁদাবাজি করে তারা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে পরোক্ষভাবে দায়ী। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কখনো একটা শহরের মানুষের চা, পান, সিগারেট খাওয়ার, আড্ডা দেওয়ার কিংবা অবাধ মেলামেশার জায়গা হতে পারে না।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য টিএসসির বেতরের ক্যাফেটেরিয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য যাবতীয় চা, কফি, নাস্তা কিংবা দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা থাকবে‌। কিন্তু সেই ক্যাফেটেরিয়াকে অকার্যকর করে টিএসসিতে প্রায় ৩০টা চা দোকানের আসর বসানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগুলো বন্ধ করতে যাক, দেখবেন একদল ভণ্ড এবং সো-কল্ড লিবারেল সুশীল শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের বদহজম শুরু হয়েছে। তাদের চেতনা থেকে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মতো লাভার নির্গমন শুরু হয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে অনেকটাই অপ্রয়োজনীয় এই চা দোকানগুলোতে প্রতিদিন পুরো ঢাকা শহর থেকে হাজার হাজার ছেলে মেয়ে আসে। সঙ্গে কিছু বখাটে মাদকসেবীও আসে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করে। যারা টিএসসির এই দোকানগুলো রাখতে বাধ্য করেছে এবং যারা চাঁদাবাজি করছে তারাও এই হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দায়ী।

তিনি আরও বলেন, দোয়েল চত্বরের একপাশে প্রায় ৩০টার মতো বিভিন্ন কারুকার্যখচিত পণ্যের দোকান এবং অপরপাশে প্রায় ২০টা গাছের দোকান বসানো হয়েছে। দেখতে সুন্দর লাগলেও এখানেও প্রতিদিন হাজার হাজার খদ্দের ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে এবং পুরো ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা বৃদ্ধি করে। যানজট সৃষ্টি করে। অবৈধভাবে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতি মাসে কারা এখান থেকে চাঁদাবাজি করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। তারাও এই হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ সৃষ্টিতে পরোক্ষভাবে দায়ী।

এনসিপির এ নেতা বলেন, আমার যেকোনো একজন ভাইয়ের হত্যা হওয়া তো দূরের কথা, তার গায়ে অনাকাঙ্ক্ষিত একটা আঘাত আমরা প্রত্যাশা করি না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তাদের কাজগুলো করতে দেব না, নিজেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য অবৈধ দোকান বসাবো, মাদকের ব্যবসা চালাবো, চাঁদাবাজি করবো, বহিরাগত নিয়ে আসার যাবতীয় আয়োজন করবো আর কোনো একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টরের পদত্যাগ চাইবো, এইসব দ্বিচারিতা বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমি আমার মন মতো স্বাধীনতা চাইবো, যা খুশি তাই করতে চাইবো, ক্ষমতার অপব্যবহার করব আবার শৃঙ্খলাও প্রত্যাশা করব, এই দুইটা একসঙ্গে সম্ভব না।

সারজিস বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করবো- ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরের সকল ভাসমান দোকানকে উচ্ছেদ করতে হবে। টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুলভমূল্যে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন মাফিক খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। কার্জন হল, মোকারম ভবন এবং মোতাহার ভবনে ক্যাফেটেরিয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। টিএসসিকে চা দোকানের আখড়া থেকে মুক্ত করতে হবে। ক্যাম্পাসে অবাধে সব প্রকার যান চলাচল এবং বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের ভাই সাম্যের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সাম্যের মতো আর কোনো ভাইকে যেন হারাতে না হয় কিংবা কারও গায়ে আঘাত না লাগে তার যথাযথ ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে অবিলম্বে কার্যকর দেখতে চাই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড র প র পর ব শ স ষ ট ব যবস থ ক ষমত র র ব যবস র জন য ষ ট কর ট এসস

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্তুত জেলেনস্কি, পুতিনের উপস্থিতি অনিশ্চিত

তুরস্কে আয়োজিত রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় কে বা কারা রাশিয়ার পক্ষ থেকে অংশ নেবেন– সেই প্রশ্নের উত্তর গতকাল বুধবারও এড়িয়ে গেছে ক্রেমলিন। মস্কো থেকে এএফপি জানায়, চলমান যুদ্ধের শুরুর দিকে দু’পক্ষের প্রতিনিধিদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত কয়েকটি সাক্ষাৎ হলেও এটি হবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সংঘাতের পর প্রথম সরাসরি আলোচনা। গত সপ্তাহে পুতিন নিজেই এ আলোচনার ডাক দেন।

তবে এ আলোচনায় পুতিন অংশ নেবেন কিনা, কিংবা রাশিয়ার প্রতিনিধি দলে কে কে থাকবেন, সে সম্পর্কে এখনও কিছু জানায়নি মস্কো। বুধবার ক্রেমলিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এএফপির প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিধি দল ১৫ মে ইস্তাম্বুলে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দলের অপেক্ষায় থাকবে।’ তবে সেই দলে কারা থাকবেন– জানতে চাইলে পেসকভ বলেন, ‘এখনও প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা আসেনি।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এর আগে ঘোষণা দেন, তিনি তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন এবং সেখানে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে আলোচনা করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আলোচনায় উপস্থিত থাকলে পুতিনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে বলে ধারণা তাঁর। তুরস্কে যাওয়ার প্রস্তাব ভেবে দেখছেন বলেও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে সিনেটর মার্কো রুবিও উপস্থিত থাকবেন। তিনি শুক্রবার ইস্তাম্বুলে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।  ফলে আলোচনা শুরুর দিন নিয়েও কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এদিকে গতকাল থেকেই তুরস্কের উপকূলীয় শহর আনতালিয়ায় এক বৈঠকে বসছেন ন্যাটো দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এ আলোচনায় সামরিক ব্যয় বাড়ানোর বিষয় উঠে আসবে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন। এই বৈঠক শেষ হওয়ার পরই রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইতোমধ্যে তারা ১৭তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। এতে রাশিয়ার ‘ছায়া জাহাজ বহর’ এবং যুদ্ধ চালাতে সহায়তাকারী  ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এ ছাড়া, চলমান আলোচনার প্রস্তুতির মধ্যেই ইউক্রেনের খারকিভ শহরে রাশিয়ার বিমান হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।

সিএনএন জানায়, জার্মানির কোলন ও কনস্টান্স শহর এবং সুইজারল্যান্ডের থুরগাউ অঞ্চল থেকে তিন ইউক্রেনীয়কে আটক করেছে পুলিশ, যাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে জার্মানিতে পণ্যবাহী পরিবহনে আগুন লাগানোর পরিকল্পনার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যেই ইউক্রেনের ওপর নির্মিত তিনটি তথ্যচিত্র দিয়ে শুরু হয়েছে কান চলচ্চিত্র উৎসব। আয়োজকরা বলছেন, ইউরোপের এই যুদ্ধ নিয়ে শিল্পীদের দায়বদ্ধতা তুলে ধরতেই এই আয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ