ডিএনসিসির অভিযানে আসলে কয়টি ব্যাটারিচালিত রিকশা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল
Published: 14th, May 2025 GMT
রাজধানীর প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে মঙ্গলবার বিকেলে অভিযান চালায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অভিযানে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক ও জব্দের পাশাপাশি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। রিকশা গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
পরে রাতেই নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আজকে যে তিনজনের রিকশা ভাঙা হয়েছে, তাঁদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। মেইন রোডে (প্রধান সড়ক) না আসার জন্য তিনটি রিকশা ভাঙা হয়েছিল। আমরা পরিবারগুলোকে আয়ের বিকল্প ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিচ্ছি।’
অভিযানে জব্দ করা অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো গাবতলী এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটির আমিনবাজার কাঁচাবাজারের জায়গায় ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়। বুধবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচাবাজার এলাকার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ঢাকা উত্তর সিটির একটি ‘অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট’ রয়েছে। সেই প্ল্যান্টটি ঘিরে রাখা হয়েছে নীল রঙের টিনের বেড়া দিয়ে। ওই বেড়ার বাইরেই জব্দ করা ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো ফেলে রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফেলে রাখা ওই সব রিকশার সব কটিই ভেঙে গেছে। কোনো রিকশার হুডের অংশটুকু ভেঙে গেছে। কোনো রিকশার আবার হুড, যাত্রীর বসার আসন, চালকের আসন—সবই ভেঙে গেছে। কয়েকটি রিকশার আবার পুরোটাই—চাকা, হাতল থেকে শুরু করে পুরো কাঠামোই ভেঙে গেছে।
ওই কাঁচাবাজার এখনো চালু না হওয়ায় ঢাকা উত্তর সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বর্জ্যবাহী যানবাহন সেখানে পার্কিং করে রাখা হয়। পুরো জায়গায় নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন আনসার সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযানে জব্দ করা মোট ১৮টি ব্যাটারিচালিত রিকশা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডাম্প ট্রাকে করে সেখানে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ১৬টি রিকশাই ভেঙে গেছে। এ ছাড়া দুটি রিকশা অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, আনসার সদস্যরা ওই দুটি রিকশা কাঁচাবাজারের মার্কেট ভবনের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রেখেছেন, যাতে কেউ চুরি করে নিয়ে যেতে না পারে। পরে কাঁচাবাজারের দক্ষিণ ভবনের নিচতলার এজি-১২ নম্বর দোকানের ভেতরে রিকশা দুটি দেখা যায়।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযানে ভেঙে দেওয়া রিকশার তিনজন চালককে বুধবার বিকেলে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ওই তিন চালকের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। এ ছাড়া করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে ওই তিনজনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে।
অভিযানে ১৬টি ব্যাটারিচালিত রিকশা গুঁড়িয়ে দেওয়া হলেও মাত্র তিনজনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের কাছে। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নম্বর নিয়ে ওদের (রিকশাচালক) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি আরও এমন ক্ষতিগ্রস্ত রিকশাওয়ালা পাওয়া যায়, যাঁদের নিজের রিকশা, তাঁদেরও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। তবে রিকশাওয়ালা পাওয়া যাচ্ছে না। ভাঙা বেশির ভাগ রিকশাই ব্যবসায়ীদের বলে জানান তিনি।
ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক আরও বলেন, একজন রিকশাওয়ালার সম্বল, তাঁর কিস্তির টাকা—এই যে বয়ান তৈরি হয়েছে, এটা ভুল। এগুলো বাণিজ্যিক রিকশা, ব্যবসায়ীদের রিকশা। এখন হয়তো ওই রিকশাচালকেরা আরেক মালিকের রিকশা ভাড়ায় চালাবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শতাধিক রিকশা জব্দের তথ্য ভুল
অভিযান শেষে মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, শতাধিক অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে ওই দিনই ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫ এর কর্মীরা অভিযানে ৩০টির মতো রিকশা জব্দ হয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন। পরে জব্দ হওয়ার রিকশার সঠিক সংখ্যা জানতে চাওয়া হয় ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ফারজানা ববির কাছে। তিনি তখনো শতাধিক রিকশা জব্দ হয়েছে বলেই প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছিলেন।
বুধবার গাবতলীতে গিয়ে ডাম্পিং করে রাখা রিকশার সংখ্যা নিশ্চিত হওয়ার পর এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম বদরুদ্দোজার কাছে। দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেও নিশ্চিত হয়েছেন যে ১৮টি রিকশাই জব্দ করা হয়েছে। মঙ্গলবার গণমাধ্যমগুলোতে জব্দ রিকশার সংখ্যা শতাধিক প্রচার করার কারণেই জনসংযোগ কর্মকর্তা হয়তো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শতাধিক উল্লেখ করেছেন।
পরে জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারজানা ববি প্রথম আলোকে বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই তাঁকে জব্দ রিকশার সংখ্যা শতাধিক বলে জানিয়েছিলেন। তিনি সে অনুযায়ীই মঙ্গলবারের বিবৃতি দেন। তবে বুধবার তিনিও জানতে পেরেছেন ১৮টি রিকশা জব্দ করা হয়েছিল। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল। কোনো সংশোধনী দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুনধানমন্ডি-২৭ থেকে আসাদগেট এলাকায় শতাধিক অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ১৩ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক কর মকর ত জনস য গ হয় ছ ল শত ধ ক ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
দুঃখ প্রকাশ না করা পর্যন্ত শান্তি পাবে না, আওয়ামী লীগকে শফিকুল আলম
আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, সদস্য ও সমর্থকরা যতক্ষণ না জুলাই বিপ্লবে নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো শুরু করে, দুঃখ প্রকাশ না করে-ততক্ষণ পর্যন্ত তারা শান্তি পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার (১ জুলাই) শফিকুল আলম আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন।
তিনি লেখেন, “আমরা মাটি থেকে আপনাদের কুৎসিত প্রভাবের দাগ মুছে ফেলব এবং তা রক্ত দিয়ে ধুয়ে ফেলব। আপনারা কখনও শান্তি পাবেন না—যতক্ষণ না শহীদ ও আহতদের প্রতি সম্মান দেখান। যতক্ষণ না আপনি ‘দুঃখিত’ বলেন।”
প্রেস সচিব বলেন, “আমরা অপেক্ষা করেছি প্রায় দশ মাস—যাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, সদস্যবৃন্দ এবং তাদের সমর্থকরা দুঃখ প্রকাশ করে এবং একটি বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টায় আমাদের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু গত বছরের জুলাই থেকে আপনারা যা করেছেন তা হল শহীদদের নিয়ে উপহাস, আমাদের সংগ্রামকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য এবং ১৭ কোটি মানুষকে ‘জঙ্গি’ বলে কলঙ্কিত করেছেন—এই আশায় যে, আপনার ঔপনিবেশিক প্রভুরা এসে আবারো আপনাদের হাতে দেশ তুলে দেবে, যেন লুণ্ঠন ও বিশৃঙ্খলার আরেকটি অধ্যায় শুরু করতে পারেন।”
“দুঃখিত, এবার আর তা হবে না। জুলাই আমাদের সাহসী করেছে। জুলাই আমাদের শিখিয়েছে প্রতিকূলতার মুখেও মাথা তুলে দাঁড়াতে। জুলাই আমাদের ডিএনএ-তে স্থায়ীভাবে এক বিরল সাহসের জিন প্রবেশ করিয়েছে। আমরা আর আগের মতো নই।”
শফিকুল আলম বলেন, “জুলাই আমাদের শিখিয়েছে হাল না ছেড়ে ঝড়ের মতো গুলির মধ্যেও দাঁড়িয়ে থাকার দৃঢ়তা। জুলাই আমাদের ভুলতে দেয় না আমাদের শহীদদের, যাদের আপনারা নির্মমভাবে হত্যা করেছেন; যাদের চোখ উপড়ে নিয়েছেন, যাদের আত্মাকে ছিন্নভিন্ন করেছেন।”
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, “আপনাদের সঙ্গে কখনও শান্তি হবে না—যতক্ষণ না আপনি ‘দুঃখিত’ বলেন, যতক্ষণ না আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার হাতে রক্ত দেখতে পান।”
মানবতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শফিকুল আলম বলেন, “আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে লড়ব—আমাদের জমিতে, নদীতে, পাহাড়ে। আমরা লড়ব ভার্চুয়াল জগতেও। আপনারা গণহত্যার সহযোগী ও মানবাধিকারের ডাকাত, আমরা আপনাদের মুখোশ খুলে ফেলব।”
ঢাকা/ইভা