চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী একজনের পদত্যাগ
Published: 16th, May 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা আদায় ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মাহমুদুর রহমান লিওন নামের এক সদস্য পদত্যাগ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমার কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা বলেন, রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ ও সদস্যসচিব আশফাক আহমেদ জামিল আন্দোলনের আদর্শ ও মূল্যবোধকে অবমাননা করে চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, মামলার তদবির, সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি ও ছাত্র আন্দোলনের নামে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। মাস দুয়েক আগে নগরীর ঘাঘটপারে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমেলায় হাউজি-জুয়ার আসর বসানো হয়। সেখান থেকে ৭ লাখ টাকা চাঁদা নেন সদস্যসচিব আশফাক আহমেদ জামিল। পরে আহ্বায়ক ইমরান আহমেদের মাধ্যমে ঈদের আগে কমিটির অনেক সদস্য সেই টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া লিওন অভিযোগ করেন, রংপুর সিটি করপোরেশনে নিয়োগ-বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা নিয়েছে নেতারা। এ ছাড়া পীরগাছায় নির্মাণাধীন আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ কমিউনিটি লাইব্রেরি ও স্কুল নির্মাণকাজ আটকে দেন জেলা কমিটির আরেক সদস্য রওশন জামিল। তার অভিযোগ, আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা নিতে না পারায় জেলা কমিটির নেতাদের নির্দেশে তিনি এই কাজ বন্ধ করে দেন।
মাহমুদুর রহমান লিওন বলেন, ‘জেলা কমিটির নেতাদের দুর্নীতি নিয়ে এর আগে অনেকবার প্রতিবাদ করেছি। এ জন্য আমাকে হুমকি, ভয়ভীতি দেখানোসহ বহিষ্কারের ভয় দেখানো হয়েছে। আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চুপ থাকতে পারি না। তাই কমিটির পদ থেকে পদত্যাগ করছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘মাহমুদুর রহমান লিওনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে লিগ্যাল অ্যাকশন (আইনগত ব্যবস্থা) নেওয়া হবে। তিনি দোষী। এ জন্য তিনি এখন বিভিন্ন অভিযোগ তুলতে পারেন।’
কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তদন্তসাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা কমিটির মুখ্য সংগঠক রিফাত হাসান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পদত য গ কম ট র আহম দ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সূর্যের সামনে স্কাইডাইভার, তৈরি হয়েছে এক অলীক আলোকচিত্র
প্রাচীন গল্পে আছে, ইকারাস মোমের ডানা নিয়ে সূর্যের খুব কাছে উড়ে গিয়েছিল। তখন মোম গলে গেলে ইকারাস নিচে পড়ে যায়। সৃজনশীল এক ফটোগ্রাফার সম্প্রতি সূর্যের দারুণ এক ছবি তুলে সেই দৃশ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় একজন স্কাইডাইভার মাত্র এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য সূর্যের সামনে দিয়ে নেমে যান। ঠিক তখনই তাঁকে ক্যামেরাবন্দী করেন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি। জ্বলন্ত সূর্যের মুখের ওপর দিয়ে যেন এক মানব প্রতিকৃতি নিচে নেমে গেল, এমন দৃশ্য ধরা পড়ে ক্যামেরা লেন্সে। দৃষ্টিবিভ্রমের এক অসাধারণ কীর্তি তৈরি করেছেন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি।
অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি নিখুঁতভাবে তাঁর ক্যামেরা দিয়ে একজন স্কাইডাইভারকে ক্যামেরার সংকীর্ণ ফিল্ড অব ভিউয়ের মধ্য দিয়ে নেমে যাওয়ার সময় ধারণ করেন। ছবিটি বেশ পরাবাস্তব এক অনুভূতি তৈরি করেছে। ইকারাসকে নিয়ে প্রাচীন মিথের সঙ্গে ছবিটি তুলনা করেছেন অনেকেই।
অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি চাঁদ ও সূর্যের অত্যন্ত সূক্ষ্ম ছবি তোলার জন্য পরিচিত। তিনি সূর্যের সামনে স্কাইডাইভারের এই একটি মাত্র ছবির জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সূর্যের ছবি তোলা এমনিতেই কঠিন কাজ। সেখানে সূর্যের সামনে গতিশীল একটি বিমান বা একজন পতিত মানবকে একই ফ্রেমে আনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন চ্যালেঞ্জ। বিমানটির গতিপথ, সূর্যের কোণ, ক্যামেরার অবস্থান ও স্কাইডাইভারের অবতরণের মতো সব বিষয়কে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে এক করে কাজটি হয়েছে।
অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি বলেন, ‘বলা যায়, একেবারে অযৌক্তিক একটি কাজ করেছি। যদিও চূড়ান্ত ছবিটি দারুণ এক অনুভূতি দেয়। স্কাইডাইভার ছিলেন ইউটিউবার ও সংগীতজ্ঞ গ্যাব্রিয়েল সি ব্রাউন। সে সূর্যের উত্তাল হলুদ পৃষ্ঠের বিপরীতে একটি কালো সিলুয়েট বা ছায়ামূর্তি হিসেবে ছবিতে চলে এসেছে। সূর্যের অবস্থান ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দূরে হলেও ক্যামেরায় দারুণভাবে দেখা যাচ্ছে সব। ইকারাসের সঙ্গে তুলনা করা ছবি অসম্ভব বলে মনে হয়। আগুনের মতো সৌর ক্রোমোস্ফিয়ারের আবহের বিপরীতে একটি সত্যিকারের মানব চিহ্ন আমাদের মুগ্ধ করে। দেখে মনে হবে যেন, মহাকাশে কেউ নিচে পড়ে যাচ্ছে।’
স্কাইডাইভাররা ব্রাউনের ৩ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতা থেকে পতন শুরু করলে প্রায় ১০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করে প্যারাসুট খোলার আগে ছবি তোলার সুযোগ মেলে। ম্যাককার্থি একটি লুন্ট ৬০ মিলিমিটার এইচ–আলফা ক্যামেরায় তার ফ্রি ফলের ছবি তোলেন। একটি এএসআই ১ হাজার ৬০০ মিলিমিটারে একক এক্সপোজার ধারণ করা হয়। আসলে এই বিভ্রমের মূল কারণ হচ্ছে দূরত্বের সামঞ্জস্য। ব্রাউন একটি ছোট বিমান থেকে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ফুট ওপর থেকে লাফ দেন। আর ম্যাককার্থি প্রায় আট হাজার ফুট দূরে অবস্থান করেছিলেন। স্কাইডাইভার অবশ্যই সূর্যের কাছে ছিলেন না। শুধু ক্যামেরার দৃষ্টিকোণ থেকে নিখুঁত অবস্থানের কারণে স্কাইডাইভারকে অসম্ভব কাছাকাছি দেখাচ্ছিল। আসলে লাফ দেওয়ার আগে বিমানটিকে সঠিক অবস্থানে আনার জন্য ছয়বার চেষ্টা করতে হয়েছে। স্কাইডাইভারকে ফ্রেমে ধরার জন্য মাত্র একবারের সুযোগ ছিল। ম্যাককার্থি তাঁর মনিটরে সেই ক্ষুদ্র অবয়বটিকে সূর্যের আলোর সঙ্গে মিলিয়ে একটি নিখুঁত অবয়ব ধারণ করেন।
এই ছবিকে অনেকেই পৌরাণিক রূপকথার সঙ্গে তুলনা করছেন। গ্রিক মিথের ইকারাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ম্যাককার্থির এ ছবিটি সেই আখ্যানকেই একটি আধুনিক ও স্পষ্ট রূপে যেন তুলে ধরছে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া