৩১ মে পর্যন্ত রাতের আকাশে যেসব গ্রহ ও মহাজাগতিক দৃশ্য দেখা যাবে
Published: 16th, May 2025 GMT
জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকে সন্ধ্যার পর আকাশ বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। শুধু তা–ই নয়, মধ্যরাতের আকাশ এখন বেশ রঙিন দেখা যায়। তাই খালি চোখে বা ছোট টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলারের সাহায্যে সহজেই বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন আগ্রহী ব্যক্তিরা। ৩১ মে পর্যন্ত দেশের আকাশে যেসব চমক দেখা যাবে, সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
১৬ মেশুক্র গ্রহ এদিন পশ্চিমের ভোরের আকাশে দেখা যাবে। মধ্যরাত থেকে ভোরের আকাশে দৃশ্যমান থাকবে শুক্র গ্রহ।
১৭ মেবৃহস্পতি গ্রহ সৌর সংযোগস্থলে সূর্যের পেছনে চলে যাবে। পশ্চিম দিগন্তে সন্ধ্যার আকাশে দেখা যাবে বৃহস্পতি গ্রহ।
১৮ মেমঙ্গল গ্রহ সন্ধ্যার পরপরই দেখা যাবে। পশ্চিম দিগন্তের ৬৩ ডিগ্রিতে অবস্থান করায় বেশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাবে মঙ্গল গ্রহ। দিগন্তের দিকে রাত ১১টা ৫৪ মিনিটে অস্ত যাবে মঙ্গল গ্রহ। ইউরেনাস এদিন সৌরজগতের পৃথিবী থেকে দূরবর্তী প্রান্তে অবস্থান করবে।
১৯ মেরাত ৯টা ১৩ মিনিট থেকে আকাশে এম৭ তারামণ্ডল দেখা যাবে। সন্ধ্যার আকাশে এনজিসি৫১২৮, এম৮৩, এম৯৪ দেখা যাবে।
২০ মেসন্ধ্যার পর আকাশে গ্লোবুলার ক্লাস্টার এম২২, এম৪, এম১২, এম১৫ দেখা যাবে।
২১ মেসন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাতে আকাশে এম৮৩, এম১০১ দেখা যাবে।
২২ মেসন্ধ্যার আকাশে মঙ্গল গ্রহ, বৃহস্পতি গ্রহ স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।
২৩ মেএদিন মধ্যরাতে আকাশে চাঁদ ও শনি গ্রহ প্রায় কাছাকাছি অবস্থান করবে।
২৪ মেএদিন চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহ সবচেয়ে কাছে অবস্থান করবে।
২৫ মেরাত ১টা ৫২ মিনিটে আকাশে নেপচুন গ্রহ দেখা যাবে।
২৬ মেপেরিজি অবস্থানে থাকবে চাঁদ। এদিন চাঁদ তুলনামূলক বড় দেখাবে।
২৭ মেরাত ৮টার পর এম৭ ও এম৬ ওপেন ক্লাস্টার তারকামণ্ডল দেখা যাবে।
২৮ মেতারকামণ্ডল এম৪ সন্ধ্যার আকাশে ভালোভাবে দেখা যাবে।
২৯ মেশনি গ্রহ মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত দেখা যাবে।
৩০ মেনেপচুন গ্রহ মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত দেখা যাবে।
৩১ মেসূর্যের চারপাশে বুধ গ্রহ ৮৮ দিনের নিজের কক্ষপথ একবার আবর্তন করে। আর তাই এদিন সূর্যের সবচেয়ে কাছের বিন্দু পেরিহেলিয়নে অবস্থান করবে বুধ গ্রহ।
সূত্র: বিবিসি স্কাই অ্যাট নাইট ম্যাগাজিন, অ্যাস্ট্রোনমি, স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ, ইন দ্য স্কাই ও স্কাই ম্যাপস
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবস থ ন করব
এছাড়াও পড়ুন:
আমার প্রতিবেশী
জীবন-বৃত্তান্ত
ফ্রাঞ্জ কাফকা জন্মেছিলেন ১৮৮৩ সালের ৩ জুলাই চেকোশ্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগে। তাঁর শিক্ষা শুরু জার্মান স্কুলে। ১৯০৬ সালে তিনি আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পেশা হিসেবে প্রথমে বেছে নেন ইনসিওরেন্স কোম্পানির চাকরি। কিন্তু অচিরেই এই চাকরি ছেড়ে দেন। ১৮৯৮ সালে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। ১৯১৩ সালে তাঁর ছোটগল্পের সংকলন Meditation বের হয়। ব্যর্থ প্রেম, বাবার সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন, সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা, অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণতা তাঁকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। এর মাঝেই ১৯১৭ সালে তিনি নিশ্চিত হন যে, তিনি যক্ষারোগে আক্রান্ত। ১৯২৩ সালে তাঁর দেখা হয় ডোরা ডাইমান্টের সাথে। তারা একত্রে কিছুকাল বার্লিনে বসবাস করেন। রোগের দাপট বেড়ে যাওয়ায় তিনি ভিয়েনার একটি স্বাস্থ্যনিবাসে ভর্তি হন। পরের বছর তিনি পরলোকগমন করেন। জীবদ্দশায় তাঁর মাত্র ৭টি বই প্রকাশিত হয়েছিল। মৃত্যুর পর তাঁর বন্ধু ম্যাক্স ব্রড কাফকার লেখা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। ফলে ১৯২৫ সালে প্রকাশিত হয় The Trial, পরের বছর The Castle, ১৯২৭ সালে Amerika এবং ১৯৩১ সালে ছোটগল্পের সংকলন The Great Wall of China। ‘আমার প্রতিবেশী’ কাফকার My Neighbour গল্পের অনুবাদ।
ব্যবসার সমস্ত দায়-দায়িত্বটা আমার কাঁধে। টাইপরাইটার আর টালিখাতা নিয়ে মহিলা কেরানি দুজন বসে সামনের ঘরে। আমার ঘরে আমার লেখার টবিল, সিন্দুক, কনফারেন্স টেবিল, আরাম কেদারা আর টেলিফোনসহ দরকারি জিনিসগুলো রয়েছে। এগুলো নিয়েই আমি কাজ করি; খুব সহজেই নাড়াচাড়া ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমি বয়সে তরুণ। ব্যবসাটা আমার ভালোই চলছে। আর এ নিয়ে আমার তেমন কোনো উদ্বেগ কাজ করে না।
এ বছরের শুরুতে এক যুবক আমার অফিসের ঠিক পাশের ঘরটা ভাড়া নিল। আমি খুব বোকার মতো কাজ করে ফেললাম। ঘরটা ভাড়া নিতে দোমনা করার ফলে দেরি হলো, আর সেই কারণে তা হাতছাড়া হয়ে গেল। সেখানেও একটা রান্নাঘরসহ আলাদা একখানা ঘর, আর ওপাশে বসবার ঘর আছে। আমার আরো একখানা ঘর ও বসার ঘরের দরকার ছিল, তাতে অন্তত আমার মহিলা কেরানি দুজন খানিকটা খুশি হতো। কিন্তু রান্নাঘর আমার কোন কাজে লাগতো? আমার নাকের ডগা দিয়ে অফিসটা ছিনতাই হয়ে যাওয়ার জন্য আমার এই মামুলি অজুহাতই দায়ী।
বর্তমানে ছেলেটি সেখানে বসছে। নাম 'হ্যারাজ'। সেখানে সে ঠিক কি করে আমার জানা নেই। দরজার উপর লেখা আছে 'হ্যারাজ ব্যুরো'। আমি খোঁজ নিয়েছিলাম। আমাকে জানালো যে, এটা ঠিক আমার ব্যবসার মতই একটা ব্যবসা। আসলে কাউকেতো যেচে উপদেশ দেওয়া যায় না, বিশেষ করে ব্যবসায়ীটি যখন তরুণ এবং নিজের উন্নতি ঘটাতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্ভবতঃ ব্যবসায়ে তার ভবিষ্যত আছে; তথাপি কেউ যেন বেশি ছোটাছুটি না করে সবাই সেই পরামর্শই দিয়ে থাকে, কারণ ছেলেটির চলাফেরা দেখে মনে হয় তার কোনো বিশ্রাম নেই। আর যখন কোনোকিছু ঠিকঠাক মতো জানা যায় না তখন গৎবাঁধা দুয়েকটি কথাই কানে আসে । কখনো কখনো সিঁড়িতে হ্যারাজের সঙ্গে আমার দেখা হয়, তাকে সবসময়ই অস্বাভাবিক ব্যস্ত দেখি। খুব দ্রুত সে আমার পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আমি কখনোই তার তার চেহারাটা ভালোভাবে দেখতে পাইনি। তবে দেখতাম অফিসের চাবিটা সবসময় তার হাতে থাকে। একদিন মুহূর্তের জন্য তার অফিসের দরজাটা খোলা দেখাম। আর ঠিক ইঁদুরের লেজের মতো সুড়ৎ করে সে দরজার আড়ালে চলে গেল। আমি আবার 'হ্যারাজ ব্যুরো' লেখাটার সামনেই দাঁড়িয়ে পড়লাম যেটা ইতোমধ্যে যতবার পড়া উচিত তার চেয়ে বেশিবার পড়ে ফেলেছি।
ঘরের দুর্বল ও পাতলা দেয়ালগুলো সৎ ও যোগ্য লোকের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলেও অসৎ লোককে ঠিকই সুরক্ষা দিয়ে থাকে। আমার টেলিফোনটা যে দেয়ালের গায়ে আছে সেটাই আমাকে আমার প্রতিবেশী থেকে আলাদা করে রেখেছে। কিন্তু সেদিনের ঐ ঘটনাটাকে একটা বিশেষ তামাশার ঘটনা হিসেবেই মনে হলো আমার। এই টেলিফোনটা উল্টোদিকের দেওয়ালে ঝোলানো ছিল, তবুও পাশের ঘরে সবকিছুই শোনা যেত। তাই আমি যখন গ্রাহকদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতাম তখন তাদের নাম উচ্চারণ করতাম না। এভাবেই অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কথাবার্তার ধরনে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পেত তার থেকে তাদের নাম অনুমান করতে খুব বেশি দক্ষতার প্রয়োজন পড়ত না। কোনো কোনো সময় সে সব আশঙ্কা করেই আমি টেলিফোনের চারিপাশে দাপাদাপি-নাচানাচি করতাম যাতে ওপাশে আওয়াজ না যায়। টেলিফোনটা আমার কানেই লাগানো থাকতো, তবে গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে তা কোনো সাহায্যই করতো না।
এইসব কারণে স্বাভাবিকভাবেই আমার ব্যবসার বিগত সিদ্ধান্তগুলো হুমকির মুখে পড়লো এবং আমার গলার আওয়াজ খাটো হয়ে গেল। আমি যখন টেলিফোন করি তখন হ্যারাজ কি করে? আমি ব্যাপারটায় রং চড়াতে না চাইলেও―কেউ কেউ অবশ্যই তা করে থাকেন, আর তাতে বিষয়টা খোলাসা হয়―নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, হ্যারাজের টেলিফোনের প্রয়োজন নেই, সে আমার টেলিফোনটাই ব্যবহার করে। সোফাটা দেওয়ালের দিকে সরিয়ে নিয়ে সে আমার কথাবার্তা শোনে।
যখন দেয়ালের এপাশে টেলিফোন ব্যবহার করি, গ্রাহকদের যাবতীয় কথা শুনি, জটিল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেই, বড় বড় হিসাবগুলো মেলাই, তখন সারা সময় ধরে আমি আমার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক তথ্যগুলো দেয়ালের ওপাশে হ্যারাজকেই সরবরাহ করি। আর সম্ভবত, সে আমার আলাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেনা। কথাবার্তার মাঝখানেই উঠে পড়ে কারণ ততক্ষণে ব্যাপারটা তার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। এবার সে অভ্যস্ত ব্যস্ততায় শহরময় উড়ে বেড়ায় এবং আমি ফোনের রিসিভারটা দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখবার আগেই ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে সে আমার বিরুদ্ধে লেগে তার গন্তব্যে পৌঁছে যায়।
তারা//