জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ছিল দেশে চরম রাজনৈতিক শূন্যতা। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আওয়ামী লীগ পলাতক। পনেরো বছর আন্দোলন করেও শেখ হাসিনাকে হটাতে পারেনি বিএনপি। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ছাত্ররা সেটি ঘটিয়ে ফেলল। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন খেলোয়াড়দের আগমনে বিএনপি কিছুটা অপ্রস্তুত।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীকে দেখে মনে হচ্ছিল, তারা দারুণভাবে উজ্জীবিত। তাদের উদ্‌যাপনের কারণও ছিল। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক দিন আগে শেখ হাসিনা জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেন। আওয়ামী লীগের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করে সেই নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল করে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা এবং জুলাই আন্দোলনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে জামায়াত-শিবিরের অংশগ্রহণ ও উপস্থিতি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। বলা যায়, জামায়াতে ইসলামী তাদের পুনরুজ্জীবনের সময়টা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে।

প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়, বিভিন্ন সভা-সমিতি ও সংবাদমাধ্যমে তাদের দাপুটে উপস্থিতি। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.

শফিকুর রহমান ও কেন্দ্রীয় নেতারা সারা দেশে ঘুরে দলীয় সভা ছাড়াও জনসংযোগমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা শুরু করলেন। হিন্দুদের মন্দিরে গিয়ে অভয় দিলেন। সব সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর প্রতিনিধিকে নিয়ে মিটিং করে তাঁদের জামায়াতের ব্যানারের নিচে থাকতে অনুরোধ জানালেন। জামায়াতের অধীন নির্বাচন করারও প্রস্তাব দিলেন।

আরও পড়ুনমাহফুজ আলম কি টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন১৫ মে ২০২৫

মনে হচ্ছিল, দেশের জনগণের অনেকেই জামায়াতের পুরোনো রাজনীতি ভুলে গিয়ে তাদের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে—কেউ সমীহ করে, কেউ ভয়ে, কেউ সমর্থন জানিয়ে, আবার কেউবা ভবিষ্যৎ সুবিধার কথা ভেবে। জামায়াতকে ঘন ঘন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসতেও দেখা গেল।

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ স্বৈরশাসনামলে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি ছিল কিছুটা বিএনপির ছত্রচ্ছায়ায়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর তাদের স্বাতন্ত্র্য রাজনীতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। আওয়ামী লীগের অবর্তমানে বিএনপির সঙ্গেও এখন যৌথ কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনীতি করতে হচ্ছে না তাদের। বরং বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতি এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায়ও জড়িয়ে পড়েছে।

এক সময়কার দীর্ঘ দিনের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে কটাক্ষ করে ২০২৪ সালের অক্টোবরে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কিছু কিছু রাজনৈতিক দল আছে, তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হবে, তারাই ক্ষমতায় আসছে।’ জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান গত ২৭ ডিসেম্বর দলটির কর্মী সম্মেলনে বলেন, ‘একদল চাঁদাবাজ পালিয়েছে, আরেকদল চাঁদাবাজিতে লেগে গেছে।’

বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্যে বিএনপির বিপক্ষে জামায়াতের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠতে আমরা দেখি। সংস্কার বনাম নির্বাচন, নির্বাচনের সময়সূচি, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ, সংবিধান বাতিল বনাম সংশোধন ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ে ভিন্নমত ছিল জামায়াতের। এসব ইস্যুতে দুই দলের নেতাদের বাগ্‌যুদ্ধও আমরা দেখি।

লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে জামায়াতের আমির এই বাগ্‌বিতণ্ডায় কিছুটা রাশ টানলেন এবং খালেদা জিয়ার অনুরোধে নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে জামায়াতের অবস্থান বিএনপির কাছাকাছি আনলেন।

মাঠপর্যায়ে কথার যুদ্ধ কিছুটা থামলেও এই দুই দলের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিন দিন বাড়তেই থাকল। জামায়াত নারী অধিকার সংস্কার প্রস্তাবকে বিরোধিতা করে অন্য ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে জোট বাঁধল। তারা জানাল, এর মধ্যেই জামায়াত ৩০০ আসনে তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে ফেলেছে।

জামায়াতের এই প্রবল উপস্থিতি ও নানা কর্মসূচিতে বিভিন্ন বক্তব্যের কারণে দলটির একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা আবারও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান তাঁদের আগের অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করেছেন নতুন ভাষায়।

সব মিলিয়ে বলা যায়, জামায়াতে ইসলামী এখন ব্যাকফুটে। তাদের যারা গত এক দেড় দশক কোণঠাসা করে রেখেছিল, তারা এখন পরাজিত এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের বাইরে। আর একাত্তর প্রশ্নে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা নতুন কিছু নয়। এখন সেই প্রশ্ন আবারও জোরালো হওয়ায় তাদের অগ্রগতি কিছুটা মন্থর হতে পারে। তবে মনে হয়, জামায়াতে ইসলামী সম্ভবত তাদের নিজস্ব রাজনীতিই করে যাবে। একাত্তর প্রশ্নের সমাধান তারা কীভাবে করবে বা আদৌ করবে কি না, সেটির ওপরও নির্ভর করবে তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির অনেক কিছু।

ডেইলি স্টারকে এক সাক্ষাৎকারে এবং লন্ডনে এক সফরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দলের কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন, তবে এর জন্য সাংগঠনিকভাবে জামায়াতকে দায়ী করা যাবে না। একাত্তরে জামায়াত কোনো ভুল করলে, সেটি যদি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়, তাহলে তাঁরা জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন।

আরেকবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘এই সব পুরোনো ইতিহাস আর তুলবেন না।’ যাহোক, মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে রুহুল কবির রিজভী ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দু–একবার প্রশ্ন তুললেও বিএনপি থেকে এ নিয়ে খুব সমালোচনা আসেনি।

জুলাই অভ্যুত্থানে সব পক্ষের মতো জামায়াত-শিবিরেরও জোরালো ভূমিকা থাকায় একাত্তর প্রশ্নটি নিয়ে তখন কেউ ঘাঁটায়নি। ছাত্রনেতারাও জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা সমালোচনা থেকে দূরেই ছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে তাঁদের কারও কারও বক্তব্য বা লেখা বিতর্ক তৈরি করল। তাঁদের কেউ বললেন, মুক্তিযুদ্ধে এত লোক পাকিস্তানিরা মারে নাই। কেউ বললেন, রবীন্দ্রনাথের গানকে জাতীয় সংগীত করা ঠিক হয়নি।

আরও পড়ুনএক কোটি ‘সৎ মানুষের’ খোঁজ পাবে কি বিএনপি১০ মে ২০২৫

এর মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠিত হলো। আস্তে আস্তে রাজনৈতিক অঙ্গনে শত্রু-মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী নিয়ে নতুন করে হিসাব–নিকাশ শুরু হলো। বিভিন্ন ইস্যুতে বিপরীত অবস্থান তৈরি হওয়ায় বিএনপির সঙ্গে নানা তর্ক-বিতর্কেও জড়াল তারা। তবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর রাজনীতির হিসাব-নিকাশে নতুন উপাদান যোগ হলো।

জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা, যাঁদের মনে করা হয়েছিল জামায়াত-সহিষ্ণু, তাঁরাই ক্রমান্বয়ে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করলেন। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করল। যার ফলে জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির আদর্শিক ফারাক স্পষ্ট হয়ে উঠল। জুলাই বিপ্লবের ছাত্রনেতাদের জামায়াত নিয়ে এই নতুন উপলব্ধি ও মত পরিবর্তনের পেছনে ভিন্ন তাৎপর্যও রয়েছে।

আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে কোনটি হবে বিএনপির পর দ্বিতীয় দল? জামায়াত যেভাবে সংঘটিত হচ্ছে এবং অন্যান্য ইসলামী দলকে নিয়ে জোট তৈরির সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তাতে নির্বাচনী রাজনীতিতে এনসিপিকে পেছনে ফেলে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ ছাড়া যেসব জামায়াতপন্থী বা তাঁদের সাবেক ছাত্রনেতারা এনসিপি নেতাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং এনসিপিতে যুক্ত থাকার কথা ছিল, তাঁদের মধ্যে সম্পর্কে ছেদ ঘটেছে এবং তাঁরা নিজেরাই ভিন্ন সংগঠন তৈরি করেছেন।

এসব কারণ সম্প্রতি এনসিপিপন্থী নেতাদের তীব্র জামায়াত বিরোধিতায় উদ্বুদ্ধ করেছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে শাহবাগে জামায়াতপন্থীদের জাতীয় সংগীতের বিরোধিতা এবং গোলাম আযমকে নিয়ে বিতর্কিত স্লোগান। এই ঘটনা ছিল সবার জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট বা সন্ধিক্ষণমুহূর্ত। এ ঘটনার মধ্য দিয়েই একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকার বিষয়টি আবারও আলোচনা-সমালোচনার ইস্যু হয়ে উঠল রাজনীতিতে। অভ্যুত্থানপন্থী ছাত্রনেতারা বা এনসিপি এ ব্যাপারে বিবৃতিও দিল।

একাত্তরে যাঁরা জনযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল, তারা অবস্থান ব্যাখ্যা করবে, এমন প্রত্যাশা থেকে এনসিপি এক বিবৃতিতে বলছে, ‘যেসব আপত্তিকর স্লোগান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তার দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পক্ষটিকেই বহন করতে হবে।’ এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী একাত্তরকে বাংলাদেশের ভিত্তিমূল উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যদি কোনো গোষ্ঠী বা কোনো পক্ষ একাত্তরকে বাইপাস করে রাজনীতি করতে চায়, তাদের রাজনীতিটা বুমেরাং হবে।’

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা লেখক-বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব ফরহাদ মজহার স্পষ্টভাবে জামায়াত রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। যুগান্তরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর জামায়াতে ইসলামী নামে বাংলাদেশে রাজনীতি করা উচিত না। এটা আমাদের এই বাংলাদেশের তার যে জাতিগত সত্তা, বাংলাদেশের যে ইতিহাস, এটা কিন্তু তার বিরোধী। কেন? কারণ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইকে সমর্থন করে নাই।’

একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করে সরকারের উপদেষ্টা ও জুলাই বিপ্লবের আরেক মুখ্য সংগঠক মাহফুজ আলম সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্ট দেন। যে বক্তব্যের পর জামায়াত–শিবির মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। মাহফুজ বলেছেন, ‘৭১-এর প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। ইনিয়ে-বিনিয়ে গণহত্যার পক্ষে বয়ান বন্ধ করতে হবে।’

আপাতত সব তিরই ছুটছে জামায়াতকে লক্ষ্য করে। সব মিলিয়ে বলা যায়, জামায়াতে ইসলামী এখন ব্যাকফুটে। তাদের যারা গত এক দেড় দশক কোণঠাসা করে রেখেছিল, তারা এখন পরাজিত এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের বাইরে। আর একাত্তর প্রশ্নে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা নতুন কিছু নয়। এখন সেই প্রশ্ন আবারও জোরালো হওয়ায় তাদের অগ্রগতি কিছুটা মন্থর হতে পারে। তবে মনে হয়, জামায়াতে ইসলামী সম্ভবত তাদের নিজস্ব রাজনীতিই করে যাবে। একাত্তর প্রশ্নের সমাধান তারা কীভাবে করবে বা আদৌ করবে কি না, সেটির ওপরও নির্ভর করবে তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির অনেক কিছু।

সালেহ উদ্দিন আহমদ শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

ই-মেইল: [email protected]

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রন ত র র অবস থ ন র জন ত র র র জন ত ব এনপ র ইসল ম র বল ছ ন ত ক দল ন র পর র আম র এনস প আওয় ম রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ মুজিবের মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া মাহফিল, গ্রেপ্তার ৪ 

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। পরে দোয়া মাহফিলের আয়োজক দুই যুবলীগ নেতা এবং দোয়া পরিচালনা করা স্থানীয় মসজিদের ঈমাম ও মুয়াজ্জিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাতে উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া জামে মসজিদ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার (১৬ আগস্ট) নোয়াখালী ৯নং আমলি আদালতের বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন, উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের রামেশ্বপুর গ্রামের বাসিন্দা ও মসজিদের ঈমাম মেহেদী হাসান সুমন, একই গ্রামের বাসিন্দা ও মসজিদের মুয়াজ্জিন আব্দুল করিম, বাহার উদ্দিনের ছেলে যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম ও ছদিক মিয়ার ছেলে যুবলীগ নেতা নিজাম উদ্দিন। 

আরো পড়ুন:

কিশোরগঞ্জে শেখ মুজিবের মৃত্যুবার্ষিকী পালন, ২ শিক্ষক জেলে

মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য, দুপুরে ভাঙচুর

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকালে চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া এলাকার ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মরহুম স্বপন মোল্লার বাড়িতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাদের পরিবারের নিহত সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করা হয়। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা স্বপন মোল্লা স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ব্যানারে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।    

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাতবাড়িয়া জামে মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন ওই মিলাদ ও দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন। দলীয় নেতাকর্মীরা  মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার দেন। এটি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে এলে তারা ভিডিও দেখে অভিযানে নামে। 

একই দিন রাত ৮টার দিকে অভিযান চালিয়ে ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং দুই যুবলীগ নেতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে কবিরহাট থানা পুলিশ। কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের কর্মসূচির প্রতিবাদে রাতেই উপজেলার চাপরাশিরহাট বাজারে যুবদল ও জামায়াতের যুব বিভাগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।  

কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন মিয়া জানান, দোয়া মাহফিলের ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। ৪০-৪৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

ঢাকা/সুজন/বকুল   

সম্পর্কিত নিবন্ধ