বাগেরহাটে রাজনৈতিক দলের কার্যালয় বাদ দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান
Published: 16th, May 2025 GMT
বাগেরহাটে সড়কের জমি দখলমুক্ত করতে দুই দিনে হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার বাগেরহাটের টাউন নোয়াপাড়া থেকে বলেশ্বর সেতুর পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়কের এই অভিযান চলে। তবে ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ের আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের বেশ কিছু কার্যালয় অক্ষত রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, দরিদ্র চা বিক্রেতা বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাঠের ছোট ঘর ভাঙতে কঠোরতা থাকলেও প্রভাবশালীদের বেলায় নিরব ছিলো দায়িত্বশীলরা। রাজনৈতিক দল, শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ব্যানারে থাকা অনেক কার্যালয়ই সড়কের জমি দখল করে আছে। যার বেশিরভাই ছিল আগে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কার্যালয়।
তবে সড়ক বিভাগ বলছে, জমি পুনরুদ্ধার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ওই অভিযানে বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়কের দু’পাশে থাকা প্রায় ৫০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। দুই দিনব্যাপী অভিযানে ৪০ কিলোমিটার এলাকার পুরোটাই দখলমুক্ত হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগেরহাট শহরের দশানী থেকে সিএনবি বাজার পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়কের পাশে এমন অন্তত ১০টি কার্যালয় দেখা গেছে। আগে আওয়ামী লীগের কার্যালয় হলেও এগুলো এখন বিএনপি ও তাদের সমর্থিতদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রেস সোসাইটি ও মানবাধিকার সংস্থা, ব্লাড ব্যাংক, শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারের কিছু স্থাপনাকে অক্ষত দেখা গেছে। সেগুলোও বিএনপি এবং জামায়াত সমর্থিত নেতাদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়, বলছেন স্থানীয়রা।
বছর দুই আগে হযরত খানজাহান (রহ.
ইজিবাইক চালক মহিদুল হক বলছিলেন, ‘এগুলো ভাঙ্গে না, খালি পারে গরিবের প্যাটে লাথি মারতি। সবগুলো আওয়ামী লীগের অফিস ছিল। এট্টাও ভাঙ্গিনি। সব এহন অন্য দলের রূপান্তর হয়ে গেছে।’
স্থানীয়রা এই কার্যালয়গুলোকে বলছেন, ‘রূপান্তরিত আওয়ামী লীগ অফিস’। কখনেই এসব স্থাপনা ভাঙা হয়না বলেও অভিযোগ তাদের।
সদর উপজেলার শ্রীঘাট মোড় এলাকায়ও আশপাশের সবগুলো দোকান-ঘর ভেঙে দেওয়া হলেও অক্ষত একটি মাত্র ঘর। যেখানে বিএনপি, ছাত্রদল ও সেচ্ছাসেবক দল লেখা এবং দলীয় নেতাদের ছবিযুক্ত তিনটি ব্যানান। ছবি তোলার সময় ওই এলাকার ষাটোর্ধ এক প্রবীণ এগিয়ে এসে বলেন, ‘ছবি তুলে কী হবে, আগে আওয়ামী লীগের অফিস ছিল, এহন বিএনপির। যহন যার ক্ষমতায়, বোঝ না। সাধারণ মানুষের তা সব ভাঙ্গিছে ভালো মত।’
শ্রীঘাটের মত দশানী, মেঘনিতলা, মাজার, বারাকপুর, সিএনবি বাজার মোড়ের চিত্রও একই। এসব স্থানে অস্থায়ী দোকান থেকে শুরু করে সাপ্তাহিক হাটের জন্য বসানো চৌকি, খুটিও ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে নানা নেতার ছবিযুক্ত দলীয় কার্যালয়গুলো ভাঙা হয়নি। কেবল দশানী মোড়েই এমন তিনটি স্থাপনা ভাঙা হয়নি। তবে এগুলোর কোনটিতেই বাইরে থেকে কোন দলীয় ব্যানার বা নেতাদের ছবি দেখা যায়নি।
স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই তিনটি অফিসের একটিতে থাকা যুবদলের ব্যানার আগের দিন খুলে রাখা হয়েছে, তবে তা ভাঙেনি। ওই স্থানে ৫ আগস্টের আগে শ্রমিক লীগের অফিস ছিল। দশানী ব্লাড ব্যাংক লেখা আরেকটি অফিসও অভিযানে ভাঙা হয়নি। এটি ছিল আওয়ামী লীগের অফিস। ৫ আগস্ট বিকেলে পুড়িয়ে দেওয়ার পর সেখানে নতুন করে ঘর তুলে জামায়াত নেতাদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর অপর একটিতে আন্তঃজেলা ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, মিনিট্রাক চালক শ্রমিক ইউনিয় লেখা ব্যানার আছে।
ছোট ছাপড়া দোকান করে সংসার চালানো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের সবকিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলেও অনেক স্থাপনা রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ অভিযোগ তুলছেন, অনেক পাকা স্থাপনা বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মাজার মোড়ের সবজি বিক্রেতা মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘সপ্তাহে দু’দিন হাট। বিকেলে কয়ডা শাকপাতা নিয়ে আইসে বসি, বেচা হরি চলে যাই। আমরা তো কিছু দখল করিনি। চাইরখেন বাঁশ পোতা তাও ভাইঙ্গে দিছে। বড় লোকগো কিছু ভাঙ্গে না।’
শহরের নতুন কোর্টের সামনের দোকানি নামজা আক্তার বলেন, ‘ছোট একটা হোটেল করে কোন রহমে মেয়ে দুডোর মুহি কয়ডা ভাত দেই। ভাঙবে শুনে সব সরায় নিচ্ছিলাম। হাত-পাও ধরলাম ১০টা মিনিটও সময় দেলো না।’
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের খুলনা জোনের এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী সচিব পিযুষ চন্দ্র দে’র নেতৃত্বে ওই অভিযান পরিচালিত হয়।
কিছু স্থাপনা না ভাঙা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সওজ’র বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম মুঠোফোনে সমকালকে বলেন, ‘এরকম তো হওয়ার কথা না। এখানে কোন পার্টি বা কিছু দেখা হয় নাই।’ পরে এলাকা ধরে স্থাপনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় বিএনপির যে পার্টি অফিস, আমরা যখন ওখানে ভাঙতে গেছি, কনসার্ন যে ওয়ার্ড বা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা এসে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে খুলে নেওয়ার জন্য সময় নিয়েছেন। এজন্য সরাসরি বুলডোজার লাগানো হয়নি। পার্টি অফিস, একটা পারপাসের পার্থক্য আছে।’
আবার ‘কাউকে ফেবার করা হয়নি। উচ্ছেদের বিষয়ে কোন চাপ ছিল না’ বলেও দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব গ রহ ট ল গ র অফ স ব এনপ আওয় ম সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কার শুধু সাংবিধানিক জায়গায় আটকে আছে: হোসেন জিল্লুর রহমান
ত্বত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সংস্কার টপ প্রায়োরিটি হওয়া দরকার। সংস্কার আলোচনা শুধু সাংবিধানিক জায়গায় আটকে আছে। জনগণের প্রাত্যহিক জীবন নির্বিঘ্ন করার বিষয়গুলো বিশেষত পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট এক পাশে ফেলে দেওয়া আছে, জনপ্রশাসন রিপোর্টটাও একই।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে 'গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সিভিল মিলিটারি সম্পর্ক' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপ্রধানের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘ইউনিটি ফর বাংলাদেশ' সংগঠনের আয়োজনে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবির, লেখক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দর্শন বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ নিজার আলম।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সংস্কার টপ প্রায়োরিটি হওয়া দরকার। এটার পলিটিক্যাল ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই। কক্সবাজার একজন কাউন্সিলরকে মেরে ফেলছে, অন ক্যামেরায় পাওয়া যাচ্ছে। ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির রিপোর্ট হবে ইন্টেলিজেন্ট কিন্তু অনেক রিপোর্ট শুধুমাত্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ইন্টেলিজেন্ট নয়। কাজে এটা সংস্কার হতে হবে। আমার মনে হয়, সংস্কার আর্মির নেতৃত্বেও এটি হতে পারে। এটা অবশ্যই হতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। এটা রাষ্ট্রের জন্য জরুরি। সক্ষম রাষ্ট্রের জন্য চারটি বিষয় জরুরি। সার্বভৌমত্ব বলতে আমরা বুঝি জিওগ্রাফিক, এটার অন্যতম হলো নীতি সার্বভৌমত্ব। স্বৈরাচারের সময় দেখেছি নীতি নেওয়া হচ্ছে, তবে সার্বভৌমভাবে নেওয়া হচ্ছে না। পলিটিক্যাল সার্বভৌমত্ব আছে তবে ভেতরে অন্তঃসারশূন্য।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে হবে। সিভিল মিলিটারি সম্পর্ক তার একটি অংশ। রিফর্ম নিয়ে একধরনের সাংবিধানিক বিষয়গুলোর আলোচনাই প্রাধান্য পাচ্ছে। কিন্তু জনগণের প্রাত্যহিক জীবনের বিশেষ করে পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট পাশে ফেলে দেওয়া আছে। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনায় রিপোর্টটাই নাই। প্রশাসন সংস্কারের রিপোর্টটাই একইভাবে পড়ে আছে।
সাংবিধানিক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতার ভারসাম্য জরুরি মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নতি, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের প্রয়োজন যদি মেটানো না যায়, আইনশৃংখলা/নিরাপত্তার বিষয়গুলো যদি মেটানো না যায়, তাহলে আজাদী মিথ্যা হয়ে উঠতে পারে এমন মনে হবে। এদিকে নজর দেওয়া দরকার।
নূরুল কবির বলেন, ‘সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করা ঠিক না' এটা হচ্ছে সবচেয়ে বেঠিক কথা। সেনাবাহিনী যদি রাজনীতি না বুঝে তাহলে তারা দেশের ক্রান্তিলগ্নে সিভিলিয়ানদের সাথে একযোগে কাজ করতে পারবে না। আপনারা রাজনীতিকরণ ও দলীয়করণকে এক করে মিলাবেন না।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য একটি ভালো সেনাবাহিনী দরকার কিন্তু সেনাশাসন দরকার নেই। সিভিল এবং মিলিটারি সম্পর্ক একটি বাইনারি অপজিশন। সেনাপ্রধান যখন এরশাদকে বলে মিলিটারি আর আপনার সঙ্গে নেই, তখনই এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। আবার গত ৩ আগস্ট যখন বর্তমান সেনাপ্রধান জুনিয়র অফিসারদের দাবির মুখে হাসিনাকে সেনাবাহিনীর অপারগতার কথা জানিয়ে দেন, তখনই হাসিনার পতন তরান্বিত হয়। ২০১৪ সাল নির্বাচন পরবর্তী সময়েই যদি বাংলাদেশের সেনাবাহিনী অসন্তোষ প্রকাশ করতো, তাহলে জুলাইয়ে দেড় হাজার মানুষের প্রাণ দেওয়া লাগতো না।
সৈয়দ নিজার আলম বলেন, মিলিটারি সম্পর্কে একটি বাইনারি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ এ সম্পর্ক দ্বান্দ্বিক হওয়ার কথা না। কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক থেকে শুরু করে মিলিটারি সবাই আমরা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রজন। তাই সবাইকে এক কাতারে থেকে দেশের সেবা প্রদান করতে হবে।