বাগেরহাটে সড়কের জমি দখলমুক্ত করতে দুই দিনে হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার বাগেরহাটের টাউন নোয়াপাড়া থেকে বলেশ্বর সেতুর পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়কের এই অভিযান চলে। তবে ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ের আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের বেশ কিছু কার্যালয় অক্ষত রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, দরিদ্র চা বিক্রেতা বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাঠের ছোট ঘর ভাঙতে কঠোরতা থাকলেও প্রভাবশালীদের বেলায় নিরব ছিলো দায়িত্বশীলরা। রাজনৈতিক দল, শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ব্যানারে থাকা অনেক কার্যালয়ই সড়কের জমি দখল করে আছে। যার বেশিরভাই ছিল আগে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কার্যালয়।

তবে সড়ক বিভাগ বলছে, জমি পুনরুদ্ধার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ওই অভিযানে বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়কের দু’পাশে থাকা প্রায় ৫০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। দুই দিনব্যাপী অভিযানে ৪০ কিলোমিটার এলাকার পুরোটাই দখলমুক্ত হয়েছে।  

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগেরহাট শহরের দশানী থেকে সিএনবি বাজার পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়কের পাশে এমন অন্তত ১০টি কার্যালয় দেখা গেছে। আগে আওয়ামী লীগের কার্যালয় হলেও এগুলো এখন বিএনপি ও তাদের সমর্থিতদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রেস সোসাইটি ও মানবাধিকার সংস্থা, ব্লাড ব্যাংক, শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারের কিছু স্থাপনাকে অক্ষত দেখা গেছে। সেগুলোও বিএনপি এবং জামায়াত সমর্থিত নেতাদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়, বলছেন স্থানীয়রা। 

বছর দুই আগে হযরত খানজাহান (রহ.

)-এর মাজার মোড়ে সড়কের জমি দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে মহাধুমধামে উদ্বোধন করা হয়েছিল বাগেরহাট সদর উপজেলার আওয়ামী লীগের কার্যালয়। অভিযানে ভাঙা হয়নি সেই ভবন। তবে আশপাশে থাকা অন্যসব কাঠ-বাঁশের স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই কার্যালয়টির সামনে এখন আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদ প্রধান কার্যালয় বাগেরহাট জেলা লেখা ব্যানার। আছে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাসহ নেতাদের ছবি।

ইজিবাইক চালক মহিদুল হক বলছিলেন, ‘এগুলো ভাঙ্গে না, খালি পারে গরিবের প্যাটে লাথি মারতি। সবগুলো আওয়ামী লীগের অফিস ছিল। এট্টাও ভাঙ্গিনি। সব এহন অন্য দলের রূপান্তর হয়ে গেছে।’ 

স্থানীয়রা এই কার্যালয়গুলোকে বলছেন, ‘রূপান্তরিত আওয়ামী লীগ অফিস’। কখনেই এসব স্থাপনা ভাঙা হয়না বলেও অভিযোগ তাদের।

সদর উপজেলার শ্রীঘাট মোড় এলাকায়ও আশপাশের সবগুলো দোকান-ঘর ভেঙে দেওয়া হলেও অক্ষত একটি মাত্র ঘর। যেখানে বিএনপি, ছাত্রদল ও সেচ্ছাসেবক দল লেখা এবং দলীয় নেতাদের ছবিযুক্ত তিনটি ব্যানান। ছবি তোলার সময় ওই এলাকার ষাটোর্ধ এক প্রবীণ এগিয়ে এসে বলেন, ‘ছবি তুলে কী হবে, আগে আওয়ামী লীগের অফিস ছিল, এহন বিএনপির। যহন যার ক্ষমতায়, বোঝ না। সাধারণ মানুষের তা সব ভাঙ্গিছে ভালো মত।’

শ্রীঘাটের মত দশানী, মেঘনিতলা, মাজার, বারাকপুর, সিএনবি বাজার মোড়ের চিত্রও একই। এসব স্থানে অস্থায়ী দোকান থেকে শুরু করে সাপ্তাহিক হাটের জন্য বসানো চৌকি, খুটিও ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে নানা নেতার ছবিযুক্ত দলীয় কার্যালয়গুলো ভাঙা হয়নি। কেবল দশানী মোড়েই এমন তিনটি স্থাপনা ভাঙা হয়নি। তবে এগুলোর কোনটিতেই বাইরে থেকে কোন দলীয় ব্যানার বা নেতাদের ছবি দেখা যায়নি।

স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই তিনটি অফিসের একটিতে থাকা যুবদলের ব্যানার আগের দিন খুলে রাখা হয়েছে, তবে তা ভাঙেনি। ওই স্থানে ৫ আগস্টের আগে শ্রমিক লীগের অফিস ছিল। দশানী ব্লাড ব্যাংক লেখা আরেকটি অফিসও অভিযানে ভাঙা হয়নি। এটি ছিল আওয়ামী লীগের অফিস। ৫ আগস্ট বিকেলে পুড়িয়ে দেওয়ার পর সেখানে নতুন করে ঘর তুলে জামায়াত নেতাদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর অপর একটিতে আন্তঃজেলা ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, মিনিট্রাক চালক শ্রমিক ইউনিয় লেখা ব্যানার আছে।

ছোট ছাপড়া দোকান করে সংসার চালানো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের সবকিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলেও অনেক স্থাপনা রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ অভিযোগ তুলছেন, অনেক পাকা স্থাপনা বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মাজার মোড়ের সবজি বিক্রেতা মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘সপ্তাহে দু’দিন হাট। বিকেলে কয়ডা শাকপাতা নিয়ে আইসে বসি, বেচা হরি চলে যাই। আমরা তো কিছু দখল করিনি। চাইরখেন বাঁশ পোতা তাও ভাইঙ্গে দিছে। বড় লোকগো কিছু ভাঙ্গে না।’ 

শহরের নতুন কোর্টের সামনের দোকানি নামজা আক্তার বলেন, ‘ছোট একটা হোটেল করে কোন রহমে মেয়ে দুডোর মুহি কয়ডা ভাত দেই। ভাঙবে শুনে সব সরায় নিচ্ছিলাম। হাত-পাও ধরলাম ১০টা মিনিটও সময় দেলো না।’

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের খুলনা জোনের এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী সচিব পিযুষ চন্দ্র দে’র নেতৃত্বে ওই অভিযান পরিচালিত হয়।

কিছু স্থাপনা না ভাঙা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সওজ’র বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম মুঠোফোনে সমকালকে বলেন, ‘এরকম তো হওয়ার কথা না। এখানে কোন পার্টি বা কিছু দেখা হয় নাই।’ পরে এলাকা ধরে স্থাপনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় বিএনপির যে পার্টি অফিস, আমরা যখন ওখানে ভাঙতে গেছি, কনসার্ন যে ওয়ার্ড বা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা এসে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে খুলে নেওয়ার জন্য সময় নিয়েছেন। এজন্য সরাসরি বুলডোজার লাগানো হয়নি। পার্টি অফিস, একটা পারপাসের পার্থক্য আছে।’

আবার ‘কাউকে ফেবার করা হয়নি। উচ্ছেদের বিষয়ে কোন চাপ ছিল না’ বলেও দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব গ রহ ট ল গ র অফ স ব এনপ আওয় ম সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

আগামী বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে দেখতে চান আফিদা

গত ম্যাচেই মিয়ানমারকে হারিয়ে এশিয়ান কাপে খেলার টিকিট নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। বাছাইপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে শনিবার (৫ জুলাই) মুখোমুখি হবে তুর্কমেনিস্তানের। জয়-পরাজয়ের হিসাবের চেয়ে ম্যাচটি তাই হয়ে উঠেছে শুধুই নিয়মরক্ষার। তবে বাংলাদেশের ক্যাম্পে কোনোভাবেই গুরুত্ব হারায়নি এই ম্যাচ। এই ম্যাচের আগে দলের সবাই ফুরফুরে মেজাজে আছে। অধিনায়ক আফিদা খন্দকার তো স্বপ্ন দেখছেন বিশ্বকাপে খেলার।

বাফুফের পাঠানো ভিডিওবার্তায় আফিদা বলেছেন, ‘আনন্দ তো বলে বোঝানোর মতো না, এতোটা আনন্দ। বাংলাদেশের ইতিহাসে নারীদের মধ্যে প্রথম বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল এশিয়া কাপে কোয়ালিফাই করেছে। এটা খুবই আনন্দের। আমরা গর্ব করছি যে দেশের মানুষ আমাদের এতো সমর্থন করেছে এটার জন্য। এজন্য খুবই ভালো লাগছে। দলের পরিস্থিতি খুব ভালো। সবাই ফুরফুরে মেজাজে আমরা আজ ট্রেনিং করেছি।’

তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য নিয়মরক্ষার। আফিদার স্বপ্ন আরও বড় কিছুর, ‘আগামীকাল আমাদের শেষ ম্যাচ। এই ম্যাচে সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। সবাই যেভাবে আমাদের সমর্থন করছেন, সেভাবেই সমর্থন জারি রাখবেন। যেন আমরা সামনে আরও এগিয়ে যেতে পারি। দলকে আমি দেখতে চাই বিশ্বকাপের মঞ্চে। সামনে যেহেতু এই সুযোগটা আসছে, আমরা অবশ্যই এই সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ