বিএনপির রাজনীতি চলে আওয়ামী লীগের টাকায়: হাসনাত আব্দুল্লাহ
Published: 16th, May 2025 GMT
বিএনপির রাজনীতি এখন আওয়ামী লীগের টাকায় চলে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে পেরেছি, কিন্তু দলটির অর্থ ব্যবস্থা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুমিল্লায় আহত, শহীদ ও বীর সন্তানদের সম্মানে জুলাই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, কুমিল্লায় অনেক উপজেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতি যেমন আওয়ামী লীগের টাকায় চলে, তেমনি বিএনপির রাজনীতিও আওয়ামী লীগের টাকায় চলে। এখানে যারা বিএনপির নেতা রয়েছেন আপনারা আমাদের শত্রু মনে করবেন না। এটা আপনাদের ভালোর জন্য বলছি। কুমিল্লায় অনেক উপজেলা আছে, যেখানে সব দলের রাজনীতি এখন আওয়ামী লীগের টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।
আইন উপদেষ্টা ড.
এনসিপির এ নেতা বলেন, হত্যাকাণ্ডের যারা জড়িত, তারা জামিনে বের হয়ে শহীদদের বাড়ির সামনে ঘুরাফেরা করছে। শহীদের পরিবার এসে এমন অভিযোগ করেছেন। এটা যেমন আমাদের ব্যর্থতা, তেমনি আসিফ নজরুল স্যারেরও ব্যর্থতা। আমরা আপনার ( আসিফ নজরুল) কাছে জানতে চাই, কথা ছিল জানুয়ারি মাসেই দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। এখন পর্যন্ত কেন ট্রাইবুনাল গঠন হয়নি?
হাসনাত বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি মনে করে খুনিদের বিচার ও আওয়ামী লীগের বিচারের চেয়ে অন্য কোনো বড় সংস্কার রয়েছে তাহলে ভুলের মধ্যে রয়েছেন। খুনিদের বিচার হচ্ছে এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান ও প্রথম সংস্কার।
তিনি আরও বলেন, আমরা সংস্কার ও নির্বাচন দুইটাই চাই। এই সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগের সহযোগী ১৪ দলের বিষয়েও অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ১৪ দলের বিষয়ে এ সরকার কী চিন্তা করছে সেটি স্পষ্ট করতে হবে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু আমরা আশাহত। অনেক কাজে আমরা এখনও বিচার দেখছি না, আহতদের এখন পর্যন্ত পুনর্বাসন-কর্মসংস্থান হয়নি, বিচারের কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত না রাস্তায় না নামছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের কোনো পদক্ষেপ দেখি নেই।
কুমিল্লা জেলা ও মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে জুলাই সমাবেশে যোগ দেন এনসিপি, বিএনপি, খেলাফতে মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
জুলাই সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- ফেস দ্য পিপলের সম্পাদক সাইফুর রহমান সাগর, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান ওয়াসিম, সচেতন রাজনৈতিক ফোরাম কুমিল্লার প্রধান সমন্বয়ক ড. শাহ মো. সেলিম, এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত রশিদ, এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক নাভিদ নওরোজ শাহ, জয়নাল আবেদীন শিশির, এবি পার্টি কুমিল্লা মহানগরের সভাপতি জিএম গোলাম সামদানী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক সাকিব হোসাইন, মহানগরীর আহ্বায়ক আবু রায়হান, সদস্য সচিব মুহাম্মদ রাশেদুল হাসান। সমাবেশ সঞ্চালনা কুমিল্লা মহানগরের মুখ্য সংগঠক আরাফ ভূইয়া।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র র জন ত ব এনপ র আম দ র সরক র আওয় ম এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কার শুধু সাংবিধানিক জায়গায় আটকে আছে: হোসেন জিল্লুর রহমান
ত্বত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সংস্কার টপ প্রায়োরিটি হওয়া দরকার। সংস্কার আলোচনা শুধু সাংবিধানিক জায়গায় আটকে আছে। জনগণের প্রাত্যহিক জীবন নির্বিঘ্ন করার বিষয়গুলো বিশেষত পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট এক পাশে ফেলে দেওয়া আছে, জনপ্রশাসন রিপোর্টটাও একই।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে 'গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সিভিল মিলিটারি সম্পর্ক' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপ্রধানের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘ইউনিটি ফর বাংলাদেশ' সংগঠনের আয়োজনে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবির, লেখক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দর্শন বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ নিজার আলম।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সংস্কার টপ প্রায়োরিটি হওয়া দরকার। এটার পলিটিক্যাল ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই। কক্সবাজার একজন কাউন্সিলরকে মেরে ফেলছে, অন ক্যামেরায় পাওয়া যাচ্ছে। ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির রিপোর্ট হবে ইন্টেলিজেন্ট কিন্তু অনেক রিপোর্ট শুধুমাত্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ইন্টেলিজেন্ট নয়। কাজে এটা সংস্কার হতে হবে। আমার মনে হয়, সংস্কার আর্মির নেতৃত্বেও এটি হতে পারে। এটা অবশ্যই হতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। এটা রাষ্ট্রের জন্য জরুরি। সক্ষম রাষ্ট্রের জন্য চারটি বিষয় জরুরি। সার্বভৌমত্ব বলতে আমরা বুঝি জিওগ্রাফিক, এটার অন্যতম হলো নীতি সার্বভৌমত্ব। স্বৈরাচারের সময় দেখেছি নীতি নেওয়া হচ্ছে, তবে সার্বভৌমভাবে নেওয়া হচ্ছে না। পলিটিক্যাল সার্বভৌমত্ব আছে তবে ভেতরে অন্তঃসারশূন্য।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে হবে। সিভিল মিলিটারি সম্পর্ক তার একটি অংশ। রিফর্ম নিয়ে একধরনের সাংবিধানিক বিষয়গুলোর আলোচনাই প্রাধান্য পাচ্ছে। কিন্তু জনগণের প্রাত্যহিক জীবনের বিশেষ করে পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট পাশে ফেলে দেওয়া আছে। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনায় রিপোর্টটাই নাই। প্রশাসন সংস্কারের রিপোর্টটাই একইভাবে পড়ে আছে।
সাংবিধানিক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতার ভারসাম্য জরুরি মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নতি, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের প্রয়োজন যদি মেটানো না যায়, আইনশৃংখলা/নিরাপত্তার বিষয়গুলো যদি মেটানো না যায়, তাহলে আজাদী মিথ্যা হয়ে উঠতে পারে এমন মনে হবে। এদিকে নজর দেওয়া দরকার।
নূরুল কবির বলেন, ‘সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করা ঠিক না' এটা হচ্ছে সবচেয়ে বেঠিক কথা। সেনাবাহিনী যদি রাজনীতি না বুঝে তাহলে তারা দেশের ক্রান্তিলগ্নে সিভিলিয়ানদের সাথে একযোগে কাজ করতে পারবে না। আপনারা রাজনীতিকরণ ও দলীয়করণকে এক করে মিলাবেন না।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য একটি ভালো সেনাবাহিনী দরকার কিন্তু সেনাশাসন দরকার নেই। সিভিল এবং মিলিটারি সম্পর্ক একটি বাইনারি অপজিশন। সেনাপ্রধান যখন এরশাদকে বলে মিলিটারি আর আপনার সঙ্গে নেই, তখনই এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। আবার গত ৩ আগস্ট যখন বর্তমান সেনাপ্রধান জুনিয়র অফিসারদের দাবির মুখে হাসিনাকে সেনাবাহিনীর অপারগতার কথা জানিয়ে দেন, তখনই হাসিনার পতন তরান্বিত হয়। ২০১৪ সাল নির্বাচন পরবর্তী সময়েই যদি বাংলাদেশের সেনাবাহিনী অসন্তোষ প্রকাশ করতো, তাহলে জুলাইয়ে দেড় হাজার মানুষের প্রাণ দেওয়া লাগতো না।
সৈয়দ নিজার আলম বলেন, মিলিটারি সম্পর্কে একটি বাইনারি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ এ সম্পর্ক দ্বান্দ্বিক হওয়ার কথা না। কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক থেকে শুরু করে মিলিটারি সবাই আমরা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রজন। তাই সবাইকে এক কাতারে থেকে দেশের সেবা প্রদান করতে হবে।