ঢাকাসহ আরও কয়েক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে, হতে পারে বজ্রপাতও
Published: 17th, May 2025 GMT
ঢাকা ও আশপাশের এলাকার আকাশ আজ শনিবার আংশিক মেঘলা থেকে মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি হালকা বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
ঢাকা ও আশপাশের এলাকার জন্য আজ শনিবার সকাল সাতটা থেকে পরবর্তী ছয় ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর এমন আভাস দিয়েছে।
পূর্বাভাসে অধিদপ্তর বলেছে, দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। সকাল ছয়টায় তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৭৭ শতাংশ। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট—এই পাঁচ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বাতাসসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু–এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
একই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে এক আজ এক বার্তায় জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বলেছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
তাপপ্রবাহ সম্পর্কে পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, ঢাকা, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর, বান্দরবান, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর ও ঝিনাইদহ—এই জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের সফর মধ্যপ্রাচ্যকে কতটা বদলে দেবে
এই সপ্তাহে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফরে বের হয়েছেন, তখন তিনি আগের চেনা জায়গাটা আর আগের মতো নেই দেখে অবাক হচ্ছেন—কারণ, এবার তিনি যে মধ্যপ্রাচ্য দেখছেন, সেটা তাঁর প্রথম প্রেসিডেন্ট থাকার সময়কার মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনেকটাই বদলে গেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন হলো—ইসরায়েলের একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আবির্ভাব।
আরব বিশ্ব এখনো গভীর বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। অন্তত পাঁচটি আরব দেশ নিজেদের দেশের ভেতরে গভীর সংকটে পড়েছে। এর ফলে তারা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে বা রাষ্ট্র হিসেবে ব্যর্থতার পথে রয়েছে। এই ক্ষমতাশূন্যতার মধ্যে দুটি বিকল্প শক্তিকেন্দ্র গড়ে উঠেছে।
প্রথমত, পারস্য উপসাগরের ধনী দেশগুলো—বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের কথা বলা যায়। আরব বসন্তে তারা তুলনামূলকভাবে অক্ষত থেকেছে এবং তেল-গ্যাস ও সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের কারণে তারা শক্তিশালী ও স্থিতিশীল কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশেষ করে সৌদি আরব এখন মধ্যপ্রাচ্যে বড় ভূমিকা নিতে শুরু করেছে।
দ্বিতীয়ত, আরব নয়—এমন তিনটি দেশ ইসরায়েল, তুরস্ক ও ইরানের কথা বলা যায়। এই তিন দেশই এমন শক্তি, যাদের নিজেদের সীমান্তের বাইরে সামরিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা আছে। তারা সবাই কোনো না কোনো সময় অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার মুখোমুখি হলেও শেষ পর্যন্ত নিজেদের স্থিতিশীলতা ধরে রেখেছে। এদের রয়েছে বড় অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, নিজস্ব অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা এবং উন্নত নিরাপত্তা, সামরিক ও গোয়েন্দা শক্তি।
এই তিন দেশের মধ্যে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য এবং সিরিয়ায় নতুনভাবে প্রভাবশালী এক শক্তি হয়ে উঠেছে। আর ইরান, যদিও তার মিত্রগোষ্ঠী হামাস ও হিজবুল্লাহকে ইসরায়েল ধ্বংস করে দিয়েছে, তবু এখনো যথেষ্ট প্রভাবশালী। বিশেষ করে তার পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে ইরান আজও ইসরায়েল ও আমেরিকার নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এই তিন আরব নয়—এমন রাষ্ট্রকে আরব দেশগুলো সন্দেহ ও অবিশ্বাসের চোখে দেখে; কিন্তু কেউই তাদের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক করতে চায় না। এই তিন দেশের মধ্যে পরস্পরের উদ্দেশ্য ও স্বার্থ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তারা একে অন্যকে প্রতিহতও করছে। কিন্তু তারা মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তবতায় স্থায়ীভাবে থেকে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। আরব বিশ্বের বিভক্তির কারণে ভবিষ্যতে এদের প্রভাব আরও বাড়বে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পরপরই মনে হচ্ছিল ফিলিস্তিন সমস্যা আবারও মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। যাঁরা বলছিলেন ফিলিস্তিন ইস্যু গুরুত্ব হারিয়েছে, তাঁরা তখন গাজার বেসামরিক মানুষের প্রতি বিশ্বজুড়ে সহানুভূতি ও সমর্থনের জোয়ার দেখে চুপ হয়ে গিয়েছিলেন। ইসরায়েল যখন হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায়, তখন যে মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়, সেটাই এই সহানুভূতির মূল কারণ ছিল।
জাতিসংঘ যুদ্ধ থামাতে বলেছে এবং এ নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তাবও পাস করেছে। পৃথিবীর অনেক দেশ ও মানুষ ইসরায়েলকে এবং এই যুদ্ধকে তীব্রভাবে নিন্দা করেছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) খতিয়ে দেখছেন ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা করছে কি না। আর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও হামাসের এক শীর্ষ নেতার (যিনি পরে মারা গেছেন) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনি জাতীয় আন্দোলনও সম্পূর্ণ বিভক্ত ও দুর্বল। এখন ফিলিস্তিনিদের সামনে দুটি অপছন্দনীয় বিকল্প—একদিকে হামাস, অন্যদিকে বহুদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা ও কার্যত নিষ্ক্রিয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সম্ভাবনা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ক্ষীণ।
এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে এটা স্পষ্ট, তারা ইসরায়েলপন্থী অবস্থান নিয়েছে। ট্রাম্প বলেছিলেন, গাজাকে রিভিয়ারার মতো পর্যটনকেন্দ্র বানানো যায়। তিনি গাজা থেকে জিম্মি মুক্ত করতে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ করেছেন; কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা দেননি। বরং গাজা–পরিস্থিতি ইসরায়েলের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন, যারা আবারও সেখানে সামরিক অভিযান শুরু করেছে।
ট্রাম্প লেবানন ও সিরিয়া সীমান্তে ইসরায়েলের আগ্রাসী নিরাপত্তানীতিও মেনে নিয়েছেন এবং পশ্চিম তীরে দখলদারি ও বসতি স্থাপনেও সমর্থন দিয়েছেন।
তবে ট্রাম্প একেবারে অনিশ্চিত চরিত্র। নেতানিয়াহুর পাশে বসেই তিনি ঘোষণা করেছেন, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে আলোচনা শুরু করবে। যদিও নেতানিয়াহু চান ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সমাধান হোক সামরিকভাবে। কিন্তু যদি এই আলোচনায় অগ্রগতি হয়, কিংবা ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রতি ট্রাম্পের আগ্রহ বাড়ে, তাহলে তাকেও গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা ও ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে হতে পারে।
এই সম্ভাবনাগুলো ইতিমধ্যে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি করছে। এবার মধ্যপ্রাচ্য সফরে ট্রাম্প ইসরায়েল যাবেন না, আর নেতানিয়াহুও অনমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছেন। কিন্তু যেহেতু রিপাবলিকান দলে ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণ একচেটিয়া, তাই হোয়াইট হাউস যদি ইসরায়েলের বিপক্ষে কিছু নীতির প্রস্তাব দেয়, তাহলে নেতানিয়াহুর হাতে বিকল্প তেমন থাকবে না। আর ট্রাম্প কিছু চাইলে তা পেতে চাপ প্রয়োগ করতে তিনি কুণ্ঠাবোধ করেন না—এটা বিশ্বের সব মিত্রদেশই ইতিমধ্যে জেনে গেছে।
আরন ডেভিড মিলার কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর একজন জ্যেষ্ঠ গবেষক এবং
লরেন মর্গানবেসার কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর একজন জুনিয়র ফেলো
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ