রাজধানীর মতিঝিলে একটি তিন তলা ভবনের তৃতীয় তলায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শনিবার (১৭ মে) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে, তাৎক্ষণিক আগুন লাগার কারণ ও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এর আগে, সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে তারা।

আরো পড়ুন:

মতিঝিলে ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট

ক্ষতিগ্রস্ত শ্রীনগর বাজার পরিদর্শন করলেন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান

আরো পড়ুন: মতিঝিলে ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট

ঢাকা/এমআর/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আগ ন আগ ন ন মত ঝ ল

এছাড়াও পড়ুন:

পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ব্যয় পরিবীক্ষণ জরুরি

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার নারীর অগ্রগতি, উন্নয়ন ও নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে রাষ্ট্র নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসন, নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ সরকার নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠায় একটি বহুস্তরীয় কাঠামো স্থাপন করেছে।
নারীর অগ্রগতি নিশ্চিত করার প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব কেবল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নয় বরং এটি সরকারের সব মন্ত্রণালয়ের যৌথ দায়িত্ব। নারীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে ক. জেন্ডার সংবেদনশীল পরিকল্পনা, খ. জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটিং, গ. নারী-পুরুষ ভেদে উপাত্ত সংগ্রহ এবং ঘ. নারী-পুরুষের সমতা বিষয়ে কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন। নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করতে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলোতে নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নারী-পুরুষের সমতা-উন্নয়নে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। প্রকল্প প্রণয়ন ছকে এ সম্পর্কিত নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জাতীয় জরিপ ও জনশুমারিতে সময়োপযোগীভাবে নারী-পুরুষ ভেদে সূচক সংযোজন করেছে। যেমন– জেন্ডার পরিসংখ্যান প্রতিবেদন, গৃহস্থালি আয় ও ব্যয় জরিপ এবং শ্রমশক্তি জরিপে নারী-পুরুষভিত্তিক মডিউল সংযোজিত হয়েছে। 
নীতিনির্ধারণে জেন্ডার সংবেদনশীলতা নিশ্চিত করতে ২০০৯ সালে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর অধীনে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া চালু হয়। প্রাথমিকভাবে চারটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে–মন্ত্রণালয়গুলোর বাজেটের নির্দিষ্ট অংশ জেন্ডার সংবেদনশীল কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ, নারী-উন্নয়ন ও নারী-পুরুষের সমতার অর্জনে সুনির্দিষ্ট বাজেট-বরাদ্দ এবং বাজেট বাস্তবায়নের ফলাফল ও প্রভাব সম্পর্কে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে এই বাজেট বরাদ্দ শুরু হয়ে, ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট বাজেটের ৩৪.৩৭ শতাংশ এবং জিডিপির ৫.২৩ শতাংশ জেন্ডার বাজেটে বরাদ্দ হয়। জেন্ডার বাজেট কার্যকর করতে এর সুষ্ঠু ব্যবহার, কার্যকর নজরদারি ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটিং প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত রিকারেন্ট, ক্যাপিটাল, জেন্ডার অ্যান্ড পভার্টি (আরসিজিপি) মডেল পরবর্তী সময়ে আইবিএএস++ এর সঙ্গে একীভূত করা হয়নি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আইবিএএস++ এর আওতায় নতুন জেন্ডার ফাইন্যান্স ট্র্যাকিং মডেল প্রবর্তিত হয়েছে, যাতে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক বাজেট থেকে জেন্ডার সম্পর্কিত বরাদ্দ পৃথক করা যায়। মডেলটি প্রযুক্তিগতভাবে প্রশংসিত হলেও এর কার্যকারিতা মূল্যায়ন এখনও সম্পন্ন হয়নি। 
জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটিং এখনও অনুমিত মানবণ্টনের ওপর নির্ভরশীল, যার ফলে বাজেট বরাদ্দে অসামঞ্জস্য ও বিশ্লেষণে বিভ্রান্তি হতে পারে। মানবণ্টনের মানসম্পন্ন পদ্ধতি না থাকায় মন্ত্রণালয়গুলোর ব্যাখ্যায় অসংগতি দেখা দেয়। নারী-পুরুষ বিভাজিত তথ্যের অভাবে বাজেট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সমস্যা সৃষ্টি করে।
অনেক মন্ত্রণালয় জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটিংকে শুধু প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক বা দায়সারা পদক্ষেপ হিসেবে দেখে। সংশোধিত বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার বাজেটের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল ব্যয় না হওয়া বা কমে যাওয়া একটি সাধারণ বিষয়। যেমন– ২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ২৫৯,৬৯০.৯০ কোটি টাকা, যেখানে ২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট কমে দাঁড়ায় ২,৩৮,১৮৮ কোটি টাকায়– যা প্রায় ৮ শতাংশ কম। সংশোধিত বাজেটে জেন্ডার বাজেটের অর্থ অন্য খাতে স্থানান্তরিত হওয়ায় জেন্ডার সংবেদনশীল কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নারী অধিকার সংগঠনগুলো বাজেটের প্রকৃত ব্যয় অনুসরণের দাবি জানালেও অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। 
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একটি প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ হিসেবে জেন্ডার বাজেটিংয়ের অংশ হিসেবে ব্যয়ের পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে সুপারিশ করেছে। অর্থ বিভাগের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় জানা গেছে যে, আইবিএএস++ সিস্টেমে প্রয়োজনীয় কোড প্রবর্তনের মাধ্যমে এ ধরনের ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব।
পরিশেষে, জেন্ডার বাজেটকে অর্থবহ করতে হলে এটিকে সামগ্রিকভাবে দেখতে হবে। খাতুন, নওরিন, কবির ও নীলর্মী (২০২৩) প্রস্তাব করেছেন যে বর্তমান জেন্ডার বাজেট কাঠামোতে চারটি মূল স্তম্ভ অন্তর্ভুক্ত করে পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। এগুলো হলো– লিঙ্গ বিভাজিত তথ্যের ব্যবহার, বাজেটসংক্রান্ত বিষয়ে অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বাজেট ব্যয়ের উন্নত পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন এবং বর্ধিত অর্থ সংগ্রহ ও যথাযথ ব্যবহার। এ চারটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে বাজেটের প্রক্রিয়া ও ব্যবহার হবে নারীবান্ধব ও ফলপ্রসূ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ