যুক্তরাষ্ট্র যেন সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে হত্যা না করে, এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। এটা তিনি দেন গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে শারার বৈঠকের আগে। যুক্তরাষ্ট্রের এক সিনেট সদস্য গত বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের একটি অংশ শারার প্রতি কতটা বৈরী মনোভাব পোষণ করে, ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেট সদস্য জিন শাহিনের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট। তাঁর এই কথার স্বর ট্রাম্পের একটি বক্তব্যও সমর্থন করছে। গত বুধবার (১৪ মে) শারার সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, বিদেশি নেতারা শারাকে একটি সুযোগ দিতে তাঁকে সরাসরি অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর নিজের উপদেষ্টারা এ বিষয়ে সন্দিহান।

গত বৃহস্পতিবার সিনেটের এক শুনানিতে জিন শাহিন বলেন,‘প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি-সংক্রান্ত কিছু মহলে এমন কিছু গুজব শুনেছি, যা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন.

..সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারাকে হত্যা করার একটি বিকল্প প্রস্তাবও এসেছিল।’

শাহিন বলেন, জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ আহমেদ আল-শারাকে হত্যা নিয়ে কথিত প্রস্তাবের কথা জানতে পেরে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।

সিনেট সদস্য শাহিন আরও বলেন, ‘বাদশাহ আবদুল্লাহ আমাদের বলেছিলেন, এই ধরনের নেতৃত্বের পরিবর্তন সিরিয়ায় পুরোদমে গৃহযুদ্ধ বাধাতে পারে। আর তা এই মুহূর্তে দেশটিকে এগিয়ে নেওয়ার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটার জন্য ভালো কিছু হবে না।’

শাহিন মে মাসে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা এবং আল-শারার সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের ঠিক আগেই তাঁদের মধ্যে ওই কথাবার্তা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার সিনেটে শুনানি চলাকালে ট্রাম্প প্রশাসনের নিকট প্রাচ্যবিষয়ক পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডারসেক্রেটারি পদের জন্য ট্রাম্পের মনোনয়নপ্রাপ্ত জোয়েল রেইবার্নকে নানা প্রশ্ন করেন সিনেট সদস্য শাহিন। শুনানির একপর্যায়ে তিনি আল-শারাকে হত্যার পরিকল্পনা-সংক্রান্ত মন্তব্যগুলো করেন।

এই সপ্তাহের ঘটনাবলির পটভূমিতে এই উক্তি তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে এই সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষাপটে তাঁর মন্তব্যগুলো গুরুত্বসহকারে নেওয়ার দাবি রাখে। মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ইসরায়েলকে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন।

তারপর গত বুধবার রিয়াদে শারার সঙ্গে বৈঠকটি করেন ট্রাম্প। বৈঠক শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী উড়োজাহাজ ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’-এ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সেখানে ট্রাম্প শারার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। ট্রাম্প বলেন, শারা একজন ‘তরুণ, আকর্ষণীয় মানুষ। শক্ত মানুষ। অতীত জোরালো। যোদ্ধা।’

আল-শারাকে গুপ্তহত্যার বিকল্প উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জোয়েল রেইবার্ন বলেন, ‘আমি এমন কোনো উদ্যোগের কথা জানি না। তবে স্পষ্টতই তা প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্যের সঙ্গে কিংবা গত কয়েক দিনে তিনি শারাকে নিয়ে যা বলেছেন, তার সঙ্গে মিলছে না।’

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সৌদি আরবের রিয়াদে, ১৪ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহম দ আল শ র স ন ট সদস য আবদ ল ল হ আল শ র ক

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি। 

৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে। 

আরো পড়ুন:

দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে

সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা

২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা। 

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী। 

উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।” 

চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।” 

চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়। 

মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ