সোনাদিয়ায় প্যারাবনে চিংড়িঘের, বিএনপি-আওয়ামী লীগের ২০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
Published: 18th, May 2025 GMT
কক্সবাজারের মহেশখালীর প্রতিবেশ সংকটাপন্ন সোনাদিয়া দ্বীপের প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণ ও আগুনে গাছপালা-জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের অভিযোগে স্থানীয় বিএনপি নেতা আলমগীর চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে এজাহারনামীয় ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অধিকাংশ আসামি নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী।
আজ রোববার বিকেলে মহেশখালী থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সিনিয়র কেমিস্ট মো.
মামলার ২০ আসামি হলেন মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী (৩৭), কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামাল (৪০) ও তাঁর ছোট ভাই শেখ আলমগীর (৩০), কুতুবজোম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম (৫০) ও তাঁর ভাগনে আবদুল মোনাফ (৩০), স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইমতিয়াজ উদ্দিন (৩২), আওয়ামী লীগের সদস্য আজিজুল হক (৩৮), সোনাদিয়া দ্বীপের ইউপি সদস্য একরাম মিয়া (৩০), মোহাম্মদ শফিউল আলম (৩৮), জাহাঙ্গীর বাদশাহ (৪০), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (৩২), মোহাম্মদ নকিব (৩০), মোহাম্মদ শফি (৪২), নুরুল আফছার (৫০), নুর হোসেন (৫০), আবু তাহের (৪৫), মোহাম্মদ হোসেন (৫৫), কক্সবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকের ফুপাতো ভাই মোহাম্মদ শমসের উল্লাহ (৩৫), ঘটিভাঙা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক (৪০) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা আনোয়ার (৪৫)। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাইছার হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, আজ বিকেলে সোনাদিয়া দ্বীপে প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণের অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে। পরিবেশ আদালত আইন ২০১০ অনুসারে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করার পর পরবর্তী সময়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার ২ নম্বর আসামি ও ইউপি চেয়ারম্যান শেখ কামাল বলেন, সোনাদিয়ায় তাঁর নামে কোনো চিংড়িঘের নেই। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে তিনি সোনাদিয়ার প্যারাবন নিধন করে চিংড়িঘের নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় চিংড়িঘের উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন। বন বিভাগ ও বেজাকে নিয়ে চিংড়িঘেরে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন। অথচ এলাকার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাঁর নামটি এজাহারে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
মামলার প্রধান আসামি ও বিএনপি নেতা আলমগীর চৌধুরী বলেন, তিনিও প্রতিহিংসার শিকার। বাবার কেনা একটি চিংড়িঘের ছাড়া সোনাদিয়ায় তাঁর কোনো চিংড়িঘের নেই।
আরও পড়ুনসোনাদিয়া দ্বীপে প্যারাবন পুড়িয়ে নতুন চিংড়িঘের১৫ মে ২০২৫গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় ‘প্যারাবন পুড়িয়ে নতুন চিংড়িঘের’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সংকটাপন্ন সোনাদিয়া দ্বীপে নতুন করে অন্তত এক হাজার একরের প্যারাবনের কেওড়া ও বাইনগাছ ধ্বংস করে তৈরি হয়েছে সাতটি চিংড়িঘের। এবার প্রকাশ্যে পেট্রল ঢেলে গাছপালা পুড়িয়ে এই ঘেরগুলো করা হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৩ হাজার একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করে সেখানে নির্মিত হয়েছিল ৩৭টি চিংড়িঘের। এসব ঘের উচ্ছেদ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও গত ছয় মাসে তা কার্যকর হয়নি। গত দুই দিনে কয়েক শ একর প্যারাবন দখল করে আরও চারটি চিংড়িঘের নির্মাণ করা হয়। এখন চিংড়িঘেরের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৮।
মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন (ইসিএ) এলাকা প্রাকৃতিক প্যারাবন ধ্বংস, বাঁধ নির্মাণ, চিংড়িঘের ও লবণ মাঠ তৈরি, প্রাণী, উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীর ক্ষতিকারক কার্যাবলি, ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে আসামিরা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. জমির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুততম সময়ে মধ্যে মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। প্যারাবন দখল করে চিংড়িঘের নির্মাণের সঙ্গে জড়িত কাউকে পাওয়া গেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প য র বন ধ ব স র প য র বন ম হ ম মদ ধ ব স কর আলমগ র ব এনপ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে ‘ঘুষের জন্য ফাইল আটকে রাখা’ মাউশির উপপরিচালককে বদলি
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক (ডিডি) আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে ঘুষের টাকা না পেয়ে ৯১টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পেয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ রোববার তাঁকে মাউশি থেকে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে বদলি করা হয়েছে।
মাউশি রাজশাহীতে যোগ দেওয়ার ৫ মাস ২৯ দিনের মাথায় আলমগীর কবীরকে বদলি করা হলো। তাঁর বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন উপসচিব মো. মাহবুব আলম। একই আদেশে মাউশির রংপুর অঞ্চল থেকে অধ্যাপক মো. উমর ফারুককে আলমগীর কবীরের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। মাউশির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয় পরিচালক অধ্যাপক মোহা. আছাদুজ্জামান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
মাউশি রাজশাহীর উপপরিচালক হিসেবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম যোগ দেন আলমগীর কবীর। তারপর তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম করে এমপিও দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগের তদন্ত চলাকালে তাঁকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সবেতন তিনি পরিচালক হতে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। কিন্তু পরিচালক হতে পারেননি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৮ নভেম্বর তাঁকে আবার মাউশি রাজশাহীর উপপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়। এ নিয়ে ১৯ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘দুর্নীতির অভিযোগে বদলি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ পাওয়া কর্মকর্তাই মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে মাউশির উপপরিচালকের দপ্তরে দুদক পেল আটকে রাখা ১৫১ ফাইল১১ মার্চ ২০২৫রাজশাহী মাউশিতে ফেরার পর আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে ঘুষের জন্য ফাইল আটকে রাখার অভিযোগ আসতে শুরু করে। এ বিষয়ে দুদকের হটলাইনে অভিযোগ গেলে দুবার তদন্ত করে দুদক অভিযোগের প্রমাণ পায় এবং সে মোতাবেক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়।
সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল রাজশাহী মাউশিতে অভিযান চালায় দুদক। তখন দুদক কর্মকর্তারা উপপরিচালক আলমগীরের কাছে ৯১টি ফাইল পেন্ডিং দেখতে পান। তাঁর টেবিলে আটকে থাকা ফাইলগুলো রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের নতুন এমপিওভুক্তির আবেদনের। ‘টাকা ছাড়া ফাইল ছাড়েন না ডিডি’—এমন অভিযোগে দুদকের একটি দল ওই দিন তাঁর দপ্তরে অভিযান চালায়। এ নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে ‘ঘুষ না দেওয়ায় মাউশির ডিডি আটকে রেখেছিলেন ৯১ ফাইল, প্রমাণ পেল দুদক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুনদুর্নীতির অভিযোগে বদলি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ পাওয়া কর্মকর্তাই হলেন মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক১৯ নভেম্বর ২০২৪এর আগে ১১ মার্চ আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একবার অভিযান চালিয়েছিল দুদক। তখন ১৫১টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পেয়েছিল দুদক। এ ব্যাপারে দুদক সদর দপ্তরে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। এ নিয়ে ওই দিন ‘রাজশাহী মাউশির উপপরিচালকের দপ্তরে দুদক পেল আটকে রাখা ১৫১ ফাইল’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এ ছাড়া ২৮ মার্চ ফাইল আটকে রাখাসহ সাত অভিযোগে আলমগীর কবীরকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছিলেন মাউশি রাজশাহীর পরিচালক। আলমগীর শোকজের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠান রাজশাহীর পরিচালক।
আরও পড়ুনঘুষ না দেওয়ায় ৯১টি ফাইল আটকে রেখেছিলেন মাউশি রাজশাহীর ডিডি, প্রমাণ পেল দুদক৩০ এপ্রিল ২০২৫