শ্রীমঙ্গলে ফুলের সৌন্দর্যে ভাইরাল সড়কে একবার হলেও যাচ্ছেন পর্যটকেরা
Published: 19th, May 2025 GMT
সবুজ চা–বাগানের মাঝখান দিয়ে চলেছে সড়ক। সড়কের দুই পাশ যেন এক ফুলেল স্বপ্নপুরী। কৃষ্ণচূড়ার আগুনরাঙা রং, জারুলের নীল-বেগুনি ছায়া আর সোনালুর ঝুলন্ত হলুদ আভা মিলেমিশে তৈরি করেছে অপূর্ব মেলবন্ধন। ফুলে ফুলে সেজে ওঠা প্রকৃতির এই ক্যানভাসে কেউ ছবি তুলছেন, কেউ দাঁড়িয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া, জারুল, রাধাচূড়া ও সোনালু ফুল। প্রথম দিকে শ্রীমঙ্গলের স্থানীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটররা ফুল আর রাস্তা তাঁদের ক্যামেরায় ধারণ করে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এর পর থেকে শ্রীমঙ্গলসহ মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে এই রাস্তার ছবি তুলতে এখন ভিড় করছেন সবাই। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছেও এখন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জায়গাটি।
গত শনিবার বিকেলে এই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষের ভিড়। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছেন তাঁরা। সেখানে দেখা যায় পর্যটকদেরও।
প্রায় ১০ বছর আগে রাস্তার দুই পাশে নানা ফুলের গাছ লাগান ফিনলে টির ভাড়াউড়া ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক গোলাম মোহাম্মদ শিবলী। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস