নিবন্ধন না থাকলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আব্দুর রহমানেল মাছউদ।

তিনি বলেছেন, “সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে, নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। নিবন্ধনের স্থগিতাদেশ বাতিল বা প্রত্যাহার না হলে দলটি নির্বাচন করতে পারবে না, সুযোগ নেই।” 

সোমাবার (১৯ মে) বেলা ১১টায় রাজশাহী আঞ্চলিক লোক প্রশাসন কেন্দ্রে ‘ভোটার তালিকা হালনাগাদ-২০২৫, পরবর্তী পর্যালোচনা ও টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

কেসিসি নির্বাচন: হাতপাখার প্রার্থীকে জয়ী দাবি করে মামলা

নির্বাচনের সাড়ে ৩ বছর পর জামায়াত নেতা চেয়ারম্যান 

আওয়ামী লীগ ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কি না,  এ নিয়ে কমিশন কী মনে করে এমন প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন কমিশনার বলেন, “এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় এখনো আসেনি।” 

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন প্রধান উপদেষ্টার বেধে দেওয়া সময়ে নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত রয়েছে।” 

কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। এছাড়া, অতিথি হিসেবে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালায় রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ৭০ জন নির্বাচন কর্মকর্তা ও তথ্য সংগ্রহকারী কর্মকর্তা অংশ নেন। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। দলটির নেতা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।

গত ১২ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এসব সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। একই দিনে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে ইসি।

জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলো। 

২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের নিয়ম চালু করে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন নম্বর ছিল ৬, প্রতীক নৌকা।

গত ১৭ বছরে সব মিলিয়ে ৫৫টি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হলেও বিভিন্ন কারণে জামায়াতে ইসলামীসহ পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়।

ঢাকা/কেয়া/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ আওয় ম স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

‘সরকার যাদের বিশ্বস্ত মনে করে, তাদের বেশিরভাগই দুর্নীতি করে’

সুশাসনের জন্য জনগণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি, দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণের সাহসী ভূমিকা আমাদের অনুপ্রাণিত করে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (অনুসন্ধান) অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাফিজ আহসান ফরিদ। 

তিনি বলেন, “দুর্নীতি শোষণের হাতিয়ার, এর শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। দুর্নীতি দেশটার কি পরিমাণ ক্ষতি করেছে সেটি চব্বিশে বোঝা গেছে। সব শেষ করে দিয়েছে। সব শোষণ করে নিয়ে গেছে। সরকার যাদের আমানতদারি ও বিশ্বস্থ মনে করে চেয়ারে বসায় তাদের বেশিরভাগই দুর্নীতি-লুটপাট করে।”

সোমবার (১৯ মে) দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাছন রাজা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। 

আরো পড়ুন:

সাবেক উপাচার্যের দুর্নীতি তদন্তে অসহযোগিতা রাবি প্রশাসনের

সড়ক ছাড়াই অর্ধকোটি টাকার সেতু নির্মাণ, দুদকের অভিযান

হাফিজ আহসান ফরিদ বলেন, “মানুষ এখন দুর্নীতির বিষয়ে অনেক সচেতন হয়েছে। বিভিন্ন অফিস আদালতে মানুষ এখন মন খুলে কথা বলতে পারছেন। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মানুষের হাতের কাছেই এখন সব কিছু মিলছে। বাংলাদেশে বসে মানুষ জানতে পারছে, থ্যাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে কি হচ্ছে। এখন আশেপাশে কোনো অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে অডিও-ভিডিও করে আমাদের কাছে পাঠাবেন। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” 

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিক-রিকশা চালকরা কোনো দিনও ঘুষ খায় না, দুর্নীতি করে না। তারা ২০০-৫০০ টাকাতেই সংসার চালায়।” 

কমিশনার আরো বলেন, “গত ৫ আগস্টের পরে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। যার কারণে প্রতিটি জেলা উপজেলা ও বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন দপ্তরকে জবাবদিহিতার আওয়াতায় আনা হয়েছে।”

হাফিজ আহসান ফরিদ বলেন, “আপনাদের কাছে কেউ ঘুষ চাইলে সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করবেন, মানুষ জড়ো করবেন, প্রতিবাদ করবেন। প্রতিবাদ করতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না, প্রতিবাদ করতে কোনো শিক্ষা লাগে না। প্রতিবাদ করতে লাগে সৎ সাহস। নিজের অবস্থান থেকে সাহসী ভূমিকা রাখবেন, নিজেকেই একজন প্রতিবাদী দুদক মনে করবেন। তাহলেই আমরা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে পারব।” 

গণশুনানিতে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। গণশুনানিতে প্রাপ্ত কয়েকটি অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। কিছু ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সমাধানও হয়েছে। এছাড়া যেসব অভিযোগ গভীর তদন্তের দাবি রাখে, সেগুলো নথিভুক্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো ইলিয়াস মিয়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার তোফায়েল আহাম্মেদ, দুদকের সিলেট সমন্বিত কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রাফি নাজমুস সাদাত, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির (দুপ্রক) সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মহিবুল ইসলাম। এছাড়াও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির নেতারা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/মনোয়ার/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ