বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আপাতত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কথা বলে নগদ থেকে টাকা জমা ও উত্তোলন ছাড়া অন্য সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন যারা এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন আগের অর্থে তারা যেন এক্সেস না পান (প্রবেশাধিকার) সে ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদে অন্তত ২ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার জালিয়াতি হয়েছে। ৬৬০ কোটি টাকার জাল ই–মানি ইস্যু এবং সরকারের বিভিন্ন তহবিল বিতরণ না করে ২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আগের পরিচালনার সঙ্গে যুক্তরা। জালিয়াতির সঙ্গে যুক্তদের হাতে এখন আবার প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে।

সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.

আহসান এইচ মনসুর এসব তথ্য জানান।

এ সময় অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বিএফআইইউ প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার কার্যক্রমের অগ্রগতি বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে নগদ ও ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশসহ বিভিন্ন বিষয় ওঠে আসে।

এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, আইন অনুযায়ী– এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এক টাকা ব্যাংকে রেখে তার সমপরিমাণ টাকা ছাড়তে পারে। এটা অমান্য করে জালিয়াতির মাধ্যমে তারা অন্তত ৬৬০ কোটি টাকা ইস্যু করেছে। যে কারণে আমরা তাদের জালিয়াত হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এই জালিয়াতির জন্য তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দরকার আছে। বিষয়টি এখন আইনগতভাবে সমাধানের অপেক্ষায় আছে। আমরা আশা করি দ্রুত সমাধান হবে।

গভর্নর বলেন, ব্যাংক রেজুলেশন একটি শক্তিশালী অধ্যাদেশ। এই অধ্যাদেশ আমরা প্রয়োগ করতে যাচ্ছি। একবারে সব ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে না। ধাপে–ধাপে নেওয়া হবে। ব্যাংকিং খাত যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে জন্য অত্যন্ত কার্যকর ভাবে এটা করা হবে। কোনো তড়িঘড়ি হবে না। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ানো হবে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে নগদ পরিচালনায় যুক্তরা সবাই পলাতক। এরকম অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসক ও একটি ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠন করে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের ওপর চেম্বার জজ আদালতে আপিল করেন তারা। গত ৮ মে এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও আকস্মিকভাবে গত ৭ মে একতরফা শুনানি করে ৮ সপ্তাহের জন্য হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত। এরপর আগের সিইও তানভীর এ মিশুক ই-মেইল যোগে নতুন করে সাফায়েত আলম নামের একজনকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ করেছেন। সাফায়েত নগদের ৬৬০ কোটি টাকার জাল ই–মানি ইস্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলার ৪ নম্বর আসামি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড আহস ন এইচ মনস র নগদ

এছাড়াও পড়ুন:

উপসাগরীয় দেশগুলো ইসরায়েলকে থামাতে পারবে?

গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর ছিল বিভ্রান্তির এক মহড়া। যুক্তরাষ্ট্র এবং এই অঞ্চলের মধ্যকার সম্পর্কে পুনরায় ভারসাম্য নিয়ে আসা ও দ্বিধাগ্রস্ত ধারণা; উভয় ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য। রিয়াদে তিনি সৌদি রাজপরিবারকে বলেছিলেন, ‘কীভাবে জীবন যাপন করতে হয়, সে ব্যাপারে আর কোনো বক্তৃতা’ দেওয়া হবে না। তিনি সিরিয়া থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন, যাতে দেশটি ‘নতুনভাবে শুরু’ করতে পারে এবং তিনি উট ও বিলাসবহুল স্থাপত্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। ‘একজন নির্মাণকারী হিসেবে ‘তিনি কাতারি প্রাসাদের ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘এটি নিখুঁত মার্বেল’।

জো বাইডেন জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড এবং ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি সরকারের ভূমিকার জন্য কঠোর অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর মনে হয়েছিল, তিনি তা ভুলে গেছেন অথবা বুঝতে পেরেছেন– তিনি কথা রাখতে পারবেন না। ট্রাম্পের কাছ থেকে এমন কোনো মিশ্র ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। যেমন: আপনি ধনী, আমাদের আপনাকে প্রয়োজন। আপনি আপনার মতোই থাকতে পারবেন।
ফলাফল হলো সমান লেনদেন নিয়ে আসা; বিলিয়ন ডলারের চুক্তি এবং লাভের বিনিময়ে দু’পক্ষের সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী লেনদেন বিন্যাস করা। ট্রাম্প তিনটি উপসাগরীয় দেশ সফর করেছিলেন। এগুলো হলো কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব। দেশ তিনটির অর্থনৈতিক রূপান্তরে বিশাল জাতীয় প্রকল্প এবং বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতি ট্রাম্পের স্বীকৃতি দেওয়ায় তাদের সেটি দেখার আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছিল। এই বাসনা কেবল ধনী অজ্ঞ হিসেবেই নয়, বরং নিজেদের প্রচেষ্টায় ক্ষমতার অত্যাধুনিক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য।

কিন্তু ট্রাম্পের সফরে একটি মৌলিক ফাঁক রয়েছে, যা গত সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক ঘোষণার কিছু অংশে ধরা পড়েছে। ইসরায়েল যখন গাজায় তার হামলা তীব্র করে তুলেছে, যার মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনায় তাদের আগ্রহের অভাব নির্দেশ করে। এ সময় চারদিকে জোরালোভাবে হামলার নিন্দা জানানো হয়। যখন ট্রাম্পকে মার্কিন পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়েছিল, তখন একটি স্পষ্ট বিষয় তুলে ধরা হয়নি। আর তিনি এমন একটি দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যারা এই অঞ্চলে সামরিক অভিযানে অস্ত্র সরবরাহ ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। 

পুরো ভ্রমণের বৈশিষ্ট্য ছিল এক বিচ্ছিন্নতা। উদীয়মান শক্তিগুলোর একটি ব্লকের সব জোরালো ভাষা ও চিত্রকল্পের মধ্যে যে প্রশ্নটি রয়ে গেল সেটি হলো, এই উঠতি শক্তি ঠিক কী কারণে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি কি কেবল সেই ক্ষমতা, যা এই রাষ্ট্রগুলো  যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও অনুকূল বাণিজ্যিক সম্পর্কের মাধ্যমে তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী করার অধিকার দেয়? আর তাদের নিন্দা বা ‘বক্তৃতা’ দেওয়ার ভয় ব্যতিরেকে তাদের নিজস্ব জমিতে বৈদেশিক নীতির সুবিধামতো ব্যবহার এবং প্রকল্পগুলো অনুসরণ করার অনুমতি দেয়? নাকি এমন ক্ষমতা যা রাজনৈতিক ফলাফলকে অর্থপূর্ণভাবে প্রভাবিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের পথ পরিবর্তন করতে রাজি করাতে পারে। এটি এমন এক বিষয় যা এখন কেবল মধ্যপ্রাচ্যের নয়, বরং আরব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
যুদ্ধ এখন লেবানন ও সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে; জর্ডান ও মিসর চরম চাপের মধ্যে। ট্রাম্প এখনও গাজা থেকে মানুষকে ‘পুনর্বাসন’ করার লক্ষ্যে তাঁর জাতিগত নির্মূল পরিকল্পনাটি ক্রয় করেই চলেছেন। এখন লিবিয়ার পালা। আর যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে তাঁর প্রশাসনের প্রাথমিক দিনগুলোতে যে গতি দেখা গিয়েছিল, তার এখন অস্তিত্ব নেই। কারণ ইসরায়েল গাজার অন্যান্য অঞ্চল দখল করার জন্য অভিযান তীব্র করছে। একদিকে উপসাগরজুড়ে বিলাসবহুল দৃশ্যের উন্মোচন এবং মার্বেলের গুণমান নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য, অন্যদিকে কয়েক মাস ধরে গাজায় কোনো খাবার, পানি বা ওষুধ প্রবেশ করতে না দেওয়ার ঘটনা। 

যদি এই শক্তিগুলোর এখনও তাদের নিজেদের আঙিনায় কী ঘটছে তা নিয়ন্ত্রণ করা এবং এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ স্থিতিশীল ও নির্ধারণের ক্ষমতা না থাকে; অথবা যেখানে তাদের অন্য আরবদের ক্ষুধা, বাস্তুচ্যুতি ও নির্যাতন থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা এবং দায়িত্ব রয়েছে, সেখানে যদি প্রকৃতপক্ষে তারা নেতৃত্ব গ্রহণ না করে, তাহলে এটি অর্থনৈতিক সাফল্যের একটি বিস্তৃত নাটক। কথার চেয়ে কাজ বড়। প্রকৃতপক্ষে বক্তৃতা দেওয়ার চেয়ে নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ।

নাসরিন মালিক: গার্ডিয়ানের কলাম লেখক;
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর 
ইফতেখারুল ইসলাম

সম্পর্কিত নিবন্ধ