বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য হার, ইতিহাস গড়ল আমিরাত
Published: 20th, May 2025 GMT
উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশ ৯ ওভারে তুলেছে বিনা উইকেটে ৯০ রান। আরব আমিরাত বাংলাদেশের চেয়ে এক কাঠি সরেস। উদ্বোধনী জুটিতে ৯ ওভারে তারা তুলেছে বিনা উইকেটে ৯৬। শেষ পর্যন্ত অবিশ্বাস্য ঘটনাই ঘটেছে। টেস্ট খেলুড়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টিতে প্রথম জয় পেয়েছে আমিরাত, সেটিও এই সংস্করণে তাদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে পাওয়া জয়। ১ বল হাতে রেখে ২ উইকেটের এই জয়ে অবশ্য বাংলাদেশের ‘অবদান’ই বেশি!
আরও পড়ুনহেরেই গেল বাংলাদেশ, আমিরাতের নাটকীয় জয়৫ ঘণ্টা আগেজয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে ২৯ রান দরকার ছিল আমিরাতের। শরীফুল ১৯তম ওভারে ১ উইকেট নিলেও ১৭ রান দেওয়ায় শেষ ওভারে ১২ রান দরকার পড়ে স্বাগতিকদের। শেষ ওভারে তানজিম ওয়াইড দিয়ে বোলিং শুরুর পর দ্বিতীয় বলে ছক্কা হজম করায় সমীকরণটা দাঁড়ায় ৪ বলে ৪ রানের। পরের বলেই উইকেট নেন তানজিম। কিন্তু চতুর্থ বলে আসে ১ রান। পঞ্চম বলটি হায়দার আলীর বুকসমান উচ্চতায় করায় ‘নো’ হয়। পরের বলে দৌড়েই ২ রান নিয়ে আরব আমিরাতকে অবিস্মরণীয় এক জয় উপহার দেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি খেলতে নামা হায়দার (৬ বলে ১৫*)।
দ্বিতীয় রানটা নিতে গিয়ে আমিরাতের দুই ব্যাটসম্যান যেমন দ্বিধায় ভুগেছেন, তেমনি ফিল্ডার তাওহিদ হৃদয় দেরি করেছেন থ্রো করতে। অথচ সময়মতো থ্রোটা করতে পারলে রান আউটও হতে পারতেন হায়দার।
টি–টোয়েন্টিতে টেস্ট খেলুড়ে কোনো দলের বিপক্ষে সহযোগী কোনো দেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করা জয় এখন এটিই। আমিরাতের এই জয়ে সিরিজে এখন ১–১ সমতা। বিসিবির অনুরোধে এই সিরিজে আরও একটি ম্যাচ সংযুক্ত করা না হলে সিরিজ জয়ের শেষ সুযোগটাও পেত না বাংলাদেশ। আগের দুই ম্যাচের মতো শারজাতেই বুধবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ।
আরও পড়ুনহর্শাল ও অভিষেকের রেকর্ড, লক্ষ্ণৌকেও ডোবাল আগেই ডুবে যাওয়া হায়দরাবাদ১ ঘণ্টা আগেসিরিজের প্রথম ম্যাচে পারভেজ হোসেনের সেঞ্চুরির পরও দুই শ করতে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে আবার বাংলাদেশ দুই শর দেখা পেলেও সর্বোচ্চ ৫৯ রান এসেছে তানজিদের ব্যাট থেকে। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানই কমবেশি রান পেয়েছেন। তবে অধিনায়ক লিটন দাস ৩২ বলে ৪০ করলেও স্বস্তিতে ব্যাট করতে পারেননি। দুই ছক্কা ও তিন চারে তাওহিদ হৃদয়ের ২৪ বলে ৪৫ ও জাকের আলীর ৬ বলে ১৮ রানে ২৪ ম্যাচ পর দুই শর দেখা পায় বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ের অধারাবাহিকতাটুকু দ্বিতীয় ম্যাচে ভর করে বোলিংয়ে। টি–টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত নাহিদ রানা নিজের প্রথম ওভারেই দেন ১৮ রান, প্রথম দুটি বলই ছিল ‘নো’ (দ্বিতীয়টি বিমার)! নাহিদ নিজের দ্বিতীয় ওভারে দেন ১৪ রান। শরীফুল ইসলাম, রিশাদ হোসেন ও তানজিমদের বাজে বলেও রান তুলেছেন আমিরাতের দুই ওপেনার মুহাম্মদ ওয়াসিম ও মুহাম্মদ জোহাইব।
৩৮ রান করা জোহাইবকে ১১তম ওভারের প্রথম বলে স্পিনার তানভীর ফিরিয়ে দেওয়ার পর ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরেছিল বাংলাদেশ। রিশাদের করা পরের ওভারে রাহুল চোপড়াকে হারায় আমিরাত। ১৪তম ওভারে তানজিম ২০ রান দেওয়ায় জয়ের জন্য শেষ ৬ ওভারে ৬০ রান দরকার ছিল আমিরাতের।
পরের ওভারে শরীফুল মাত্র ৩ রান দিয়ে পথের কাঁটা ওয়াসিমকে (৮২) তুলে নেওয়ার পর কিছুটা দুশ্চিন্তামুক্ত হয় বাংলাদেশ। তবে শঙ্কা তখনো ছিল। আর ছিল ক্যাচ ছাড়ার ক্ষত। ওয়াসিমের ক্যাচ ছাড়ার পর ১৬তম ওভারে সগীর খানের ক্যাচ যৌথ প্রযোজনায় মিস করেন বাংলাদেশের তিন ফিল্ডার!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ২০৫/৫ (তানজিদ ৫৯, লিটন ৪০, নাজমুল ২৭, হৃদয় ৪৫, জাকের ১৮, শামীম ৬*, রিশাদ ২*; জাওয়াদউল্লা ৩/৪৫, সগীর ২/৩৬)।
আরব আমিরাত: ১৯.
ফল: আরব আমিরাত ২ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুহাম্মদ ওয়াসিম।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১–১–এ সমতা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম র ত র উইক ট প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি
ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’
২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।
মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।
অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’
জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখমাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।
আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’
রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’
রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।
জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’
২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ
তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী। স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।
কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।