বোমান ইরানি। বলিউড অভিনেতা ও নির্মাতা। ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের বাণিজ্যিক শাখায় (মার্সে দু ফিল্ম) অনুপম খের পরিচালিত ছবি ‘তানভি দ্য গ্রেট’ প্রদর্শিত হয়েছে। এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন বোমান ইরানি। ছবিটি নিয়েই পৃথিবীর অন্যতম বড় চলচ্চিত্র উৎসবে আসা। কান সাগরপারে কথা হয় তাঁর সঙ্গে....

কানে আপনাকে দেখে সত্যিই ভালো লাগছে। ‘তানভি দ্য গ্রেট’ নিয়ে প্রচুর প্রশংসা হচ্ছে। এই অভিজ্ঞতা কেমন?
(হাসি) কানে আসা সবসময়ই এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। তবে এবার ‘থানভি দ্য গ্রেট’ নিয়ে এসেছি, যেটা আমার বন্ধু অনুপম খেরের প্রথম নির্মাণ। ওর ছবি মানে আমারও ছবি। তাই এই ছবিতে আমি শুধু অভিনেতা নই। এটা আমার আত্মার একটি কাজ। অনুপম খেরের পরিচালনায় কাজ করাটা নিজের ঘরেই অভিনয় করার মতো ছিল। গল্পটা যেমন শক্তিশালী, তেমনি বাস্তব ও স্পর্শকাতর। এমন একটা ছবি কানে প্রদর্শিত হওয়াটা সত্যিই আনন্দের।

আপনি অনেক দেরিতে চলচ্চিত্রে এসেছেন। মুম্বাইয়ের ফটোগ্রাফার থেকে আজ কানের লালগালিচায়– যাত্রাটা কেমন ছিল?
কঠিন, কিন্তু সুন্দর। আমার ক্যারিয়ার শুরু হয় থিয়েটার দিয়ে, তারপর বিজ্ঞাপন, তারপর সিনেমা। ৪০-এর কাছাকাছি বয়সে বলিউডে পা রাখি। প্রথম বড় ব্রেক ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আমি বিশ্বাস করি, বয়স কোনো বাধা নয়। যদি আপনি মনপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেন, সঠিক সময় এলে সঠিক দরজা খুলবেই। আমারও খুলেছে। এখনও বলিউডে কাজ করছি। কানে  সিনেমা নিয়ে ঘুরছি।

সিনেমায় আপনার চরিত্রগুলো সবসময়ই খুব আলাদা হয়– “৩ ইডিয়টস”-এর ভাইরাস, “মুন্নাভাই”-এর ডিন, “হাউজফুল”-এর কৌতুকপূর্ণ চরিত্র… চরিত্র নির্বাচন করেন কীভাবে?
আমি চেষ্টা করি এমন চরিত্র বেছে নিতে, যা মানুষ মনে রাখবে। কমেডি হোক বা সিরিয়াস, চরিত্রে যদি স্তর থাকে, গল্পে যদি প্রাণ থাকে– তবেই করি। আমি স্টার নই, একজন অভিনেতা। আমি মনে করি স্টার হলো আপনি চরিত্র হয়ে উঠতে পারবেন না। কিন্তু যদি অভিনেতা হন তা হলে আপনার সামনে দুয়ার খোলা। তবে এজন্য আমাকে গল্প চাই, সংলাপ চাই, আর একটা ভালো পরিচালক পেতে হবে।

অনুপম খের আপনার খুব কাছের বন্ধু। দারুণ অভিনেতা। তাঁর পরিচালনায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
অনুপম তো একজন দুর্দান্ত অভিনেতা, সেটা আমরা জানি। কিন্তু পরিচালক হিসেবে তিনি আমাকে চমকে দিয়েছেন। প্রতিটি দৃশ্যের গভীরতা, আবেগের সূক্ষ্মতা এবং চরিত্রের ভেতরের দ্বন্দ্ব বোঝাতে উনি যেভাবে আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, তা অনবদ্য। প্রথম দিনেই অনুপম বললেন, ‘এটা অভিনয় নয়, এটা উপলব্ধি করতে হবে।’ তখন বুঝলাম ও দারুণ কিছু বানাবে। বানিয়েছেও।

‘থানভি দ্য গ্রেট’ ছাড়াও কি আপনার কাছে আরও কোনো নতুন কাজের খবর জানতে পারি?
হ্যাঁ, আমি এখন নিজের লেখা ও পরিচালনায় একটি ছবি প্রস্তুত করছি। গল্পটা আমার বহুদিনের স্বপ্ন। সেইসঙ্গে একটা আন্তর্জাতিক প্রজেক্টের কথাবার্তাও চলছে। তবে আমি কখনো তাড়াহুড়া করি না। ভালো কিছুই করতে চাই।

বর্তামান সময়ের বলিউডের প্রজেক্ট নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা হয়। এখনকার বলিউডকে আপনি কীভাবে দেখেন?
বলিউড এখন একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গল্পভিত্তিক সিনেমার চাহিদা বেড়েছে। দর্শক এখন কনটেন্ট-চালিত ছবি দেখতে চায়, বড় নাম নয়। এটা খুবই ইতিবাচক পরিবর্তন। ওটিটি প্ল্যাটফর্মও অনেক নতুন প্রতিভাকে জায়গা দিচ্ছে। সব ইন্ডাষ্ট্রিতেই পরিবর্তন ও থমকে যাওয়ার ব্যাপারটি থাকে। সেটা সাময়িক। বলিউড তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।

আপনি তরুণদের জন্য “স্পাইরাল বাউন্ড” নামে এক স্ক্রিপ্ট রাইটিং ইনিশিয়েটিভও চালাচ্ছেন। একটু বলবেন?
হ্যাঁ, স্ক্রিপ্ট লেখার গুরুত্ব আমি বুঝি। “স্পাইরাল বাউন্ড” একটা এমন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে লেখকরা শিখতে পারে কীভাবে আন্তর্জাতিক মানের স্ক্রিপ্ট তৈরি করা যায়। আমি চাই, নতুন প্রজন্ম গল্প বলার ক্ষমতা অর্জন করুক– এই শিল্পটা তাঁদের হাতেই এগিয়ে যাবে।

জীবনের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে, আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে পান?
আমি এখনও শিখছি। প্রতিটি দিন, প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি সেট– সবই আমাকে নতুন কিছু শেখায়। আমি শুধু চাই ভালো গল্পে কাজ করে যেতে, নতুন প্রজন্মকে উৎসাহ দিতে এবং ভালো মানুষ হিসেবে বাঁচতে।

আপনার কথাগুলো অনুপ্রেরণাদায়ক। ধন্যবাদ এত সুন্দর সময় ও অনুভূতির জন্য। বাংলাদেশের দর্শকদের নিয়ে কিছু বলার আছে?
ধন্যবাদ। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী। বাংলাদেশের সব দর্শককে আমার ভালোবাসা জানিয়ে দিও।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব চর ত র পর চ ল আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

রামবুটান চাষে তাক লাগানো সাফল্য

একসময় শুধু ক্লাসরুমেই ব্যস্ত থাকতেন। এখন তার পরিচয় একজন সফল উদ্যোক্তা। শখ থেকে শুরু করা রামবুটান চাষে নরসিংদীর শিবপুরের সাধারাচর ইউনিয়নের শিক্ষক মাওলানা আবদুল রশিদের জীবনের মোড় ঘুরে গেছে।

মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বর্তমানে একজন পরিচিত রামবুটান চাষি। রামবুটান থেকে যার বার্ষিক আয় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।

২০১৫ সালে ইউটিউবে ভিডিও দেখে রামবুটান ফল সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে নিজ বাড়ির মাত্র ৬৫ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করেন কয়েকটি রামবুটান গাছ। তখন তিনি ভাবতেও পারেননি এই উদ্যোগ একদিন তাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল করে তুলবে এবং অনুপ্রেরণা জোগাবে আশপাশের বহু তরুণকে।

পরিকল্পনা, ধৈর্য, নিয়মিত পরিচর্যা ও পরিশ্রম- এই চারটি মূল স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আবদুল রশিদের রামবুটান বাগান এখন বিস্তৃত হয়েছে ১৭০ শতাংশ জমিতে। চাষ শুরুর প্রায় পাঁচ বছর পর থেকেই গাছে নিয়মিত ফল আসা শুরু হয়। বর্তমানে তার বাগান থেকে উৎপাদিত রামবুটান দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে, যেখানে বাজারদর কেজিপ্রতি এক হাজার থেকে বারোশ’ টাকা পর্যন্ত।

শুধু ফল নয়, তার বাগান থেকেই উৎপাদিত চারা সংগ্রহ করছেন দেশের বিভিন্ন জেলার আগ্রহী কৃষক ও উদ্যোক্তারা। রামবুটানের প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। দেখতে অনেকটা লিচুর মতো হলেও এর লোমশ খোসা ও ভিন্ন স্বাদের কারণে এই বিদেশি ফল এখন বাংলাদেশের মাটিতেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

মূলত মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় চাষ হওয়া এই ফল এখন বাংলাদেশের কৃষি খাতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।

স্থানীয় যুবকদের মধ্যে ইতোমধ্যে এই বাগান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ও আলামিন জানান, একজন শিক্ষক এত বড় উদ্যোক্তা হয়েছেন সেটা তাদের জন্য গর্বের বিষয়। রামবুটান ফল খেতে খুব সুস্বাদু। এতে অনেক পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। বিশেষ করে এই ধরনের উদ্যোগ কৃষিকে আবারও একটি আকর্ষণীয় ও লাভজনক পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। একজন শিক্ষক, একজন চাষি, একজন উদ্যোক্তা—মাওলানা আবদুল রশিদের এই পরিচয় এখন সমাজে দৃষ্টান্ত।

চাষি আবদুল রশিদ বলেন, “শুধু ফল বিক্রি করেই নয়, চারা বিক্রি করেও আমি ভালো আয় করছি। আমি চাই, দেশের আরও অনেক জায়গায় রামবুটান চাষ ছড়িয়ে পড়ুক। এজন্য আমি নিজ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছি আগ্রহী নতুন উদ্যোক্তাদের।”

তিনি আরো বলেন, “শুধু অর্থ উপার্জনের দিক দিয়েই নয়, এই উদ্যোগে রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা-পরিশ্রম, চিন্তার ভিন্নতা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত একজন সাধারণ মানুষকেও অনন্য করে তুলতে পারে। কৃষি খাতে এমন উদ্ভাবনী চিন্তা ও সফলতার গল্প দেশের প্রতিটি তরুণদের জন্য নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প হোক সেটাই আমার চাওয়া।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, “বাংলাদেশের জলবায়ু রামবুটান চাষের জন্য উপযোগী। যারা আগ্রহী, তাদের আমরা সরকারি পর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিতে প্রস্তুত।”

ঢাকা/হৃদয়/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গুণী মানুষের কদর বোঝে না সমাজ: জামায়াত আমির
  • সেন্ট্রাল রোডে তরুণকে কোপানোর ভিডিও ভাইরাল, ভুক্তভোগী বিএনপির কর্মী
  • সোনারগাঁয়ে জামায়াত নেতার উদ্যোগে খাল খনন
  • ডেঙ্গুতে এক দিনে শতাধিক আক্রান্ত, মৃত্যু ১ জনের
  • কাতারের কাছ থেকে উড়োজাহাজ ‘উপহারের’ প্রস্তাব পাওয়ার ট্রাম্পের দাবি কি সত্য
  • পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হয়নি:
  • আমি ৪০-এর কাছাকাছি বয়সে বলিউডে কাজ শুরু করেছি
  • আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে: মিষ্টি জান্নাত
  • রামবুটান চাষে তাক লাগানো সাফল্য