‘আপনারা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে গেছেন?’
Published: 20th, May 2025 GMT
পটুয়াখালী বাউফল উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি এ এইচ এম শহীদুল হককে (এমরান হাসান সোহেল) জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘আপনারা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে গেছেন? আমি আপনার ফোন ধরতে বাধ্য না।’’
বাউফল গার্লস স্কুলে দুর্নীতি দমন কমিশন পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, বাউফল উপজেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে স্কুল পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব চলাকালে গতকাল সোমবার (১৯ মে) দুপুরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও বাউফল দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি সূত্রে জানা যায়, সোমবার ওই বিদ্যালয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে স্কুল পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে ইউএনওকে আমন্ত্রণ জানাতে গত বৃহস্পতিবার, শনিবার ও রবিবার তিন দফায় তার কার্যালয়ে যান সাংবাদিক সোহেলসহ উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা।
তবে তাকে না পেয়ে তিন দফাই তারা ফেরত আসেন। এছাড়া প্রতিবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। রবিবার সন্ধ্যায় ফোন করলেও ইউএনও ফোন কেটে দেন। শেষ পর্যন্ত সোমবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম সরাসরি ইউএনওকে আমন্ত্রণ জানানোর পর তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। সেখানেই ইউএনও ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিক সোহেলকে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন।
বাউফল উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপিত ও সাংবাদিক সোহেল বলেন, “সোমবার দুপুরে বিতর্ক প্রতিযোগিতার স্থানে এসে ইউএনও আমিনুল ইসলাম আয়োজক কমিটির সভাপতির কাছে কৈফিয়ত চান, কেন তাকে পূর্বে অবহিত করা হয়নি। তাঁর প্রশ্নের জবাবে আমি বলি, আপনাকে একাধিকবার কার্যালয়ে গিয়ে পাইনি। এমনকি আপনাকে তিনদিন বিভিন্ন সময় ফোন করেছি আপনি রিসিভ করেননি। এতে হঠাৎ করে ইউএনও উত্তেজিত হয়ে যান।”
এসময় ইউএনও আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, “আপনারা একটা অ্যারেজমেন্ট করতেছেন ইউএনও জানে না। আপনারা কিসের অ্যারেজমেন্ট করতেছেন? আশ্চর্য ব্যাপার! ইউএনওকে অবহিত না করে আপনাকে এ আয়োজন করার এখতিয়ার কে দিয়েছে?’’
এসময় ওই সাংবাদিক জবাব দেন, ‘‘আপনাকে আমন্ত্রণের জন্য আপনার কমপ্লেক্সে তিনদিন যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনাকে পাইনি।’’
জবাবে ইউএনও বলেন, “উপজেলা কমপ্লেক্সে কে গেছে? কমপ্লেক্সে তো কাউয়া-বক থাকে। আপনি আমার বাংলোতে গেলেন না কেন? আমার বাংলো একটা অফিস।’’
এমন প্রশ্নে সাংবাদিক সোহেল বলেন, ‘‘আপনার বাংলোতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।” এর জবাবে ইউএনও বলেন, ‘‘বাংলোতে যখন অ্যালাউ করব তখন ঢুকবেন। আপনারা প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হয়ে মনে করছেন রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে গেছেন? আমি আপনার ফোন ধরতে বাধ্য না। আপনি আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ফোন দিলে আমি ধরব কেন?’’
এসময় সোহেল বলেন, ‘‘আপনি ফোনই ধরলেন না, তাহলে ব্যক্তিগত স্বার্থ, নাকি রাষ্ট্রীয় কোনো কাজ বুঝলেন কীভাবে? আপনি একজন কৃষকের ফোনও ধরতে বাধ্য।’’
এরপর ইউএনও আমিনুল আবার বলেন, ‘‘আমি প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর, মালিককেও শাস্তি দিতে পারি।’’
তখন সোহেল বলেন, ‘‘ক্ষমতা আছে, আপনি দেন শাস্তি।’’
এসময় ইউএনও খবরপত্রের সাংবাদিক এইচ বাবলুকে তার পিয়ন দিয়ে ভয়ভীতিও দেখান। ওই সাংবাদিককে দেখা করে ‘সরি’ বলতে চাপ প্রয়োগ করেন ইউএনওর গাড়ি চালক।
এ বিষয়ে জানতে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেনি।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, “আমার কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য এখনও আসেনি। তথ্য পেলে মন্তব্য করতে পারব।”
ঢাকা/ইমরান/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম ন ল ইসল ম ব উফল উপজ ল স হ ল বল ন স মব র কম ট র আপন ক আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিলেন ইশরাকের সমর্থকরা
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে আগামীকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এই সময়ের মধ্যে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইশরাকের সমর্থকরা।
ঢাকাবাসীর পক্ষে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাবেক সচিব মশিউর রহমান। মঙ্গলবার বিকেলে ৬ষ্ঠ দিনের অবস্থান কর্মসুচি থেকে এই ঘোষণা দেন তিনি।
এসময় মশিউর রহমান বলেন, আমরা আগামীকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো এর মধ্যে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না আসলে আবারও সকাল ১০টায় একত্রিত হয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দেব। একইসঙ্গে ঢাকা অচলেরও হুমকি দেন তিনি।
এসময়, কর্মসূচি ঘোষণার মঞ্চে এই আন্দোলন এবং দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সর্বস্তরের কর্মচারী ইউনিয়ন। তাদের পক্ষ থেকে নগরবাসীর প্রত্যেক নাগরিক সেবা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এসময়, সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত হয়ে ঢাকাবাসীর এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তারা ঘোষণা করেন- আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে দাবি মানা না হলে এরপর থেকে পরিচ্ছন্নতা সেবা, ময়লা পরিবহনসেবা এবং বিদ্যুৎ সেবাসহ সকল ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেয়া হবে।
এর আগে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে নগর ভবনের সামনের সড়কে বসে অবরোধ করেছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। নগর ভবনের প্রধান ফটকের সামনে একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে জাতীয় সঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গান বাজানো হচ্ছে।
গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচির কারণে নগর ভবন কার্যত অচল। সেখানে কোনো ধরনের দাপ্তরিক কাজ হচ্ছে না। দুর্ভোগে পড়েছেন সেবা নিতে আসা লোকজন। সিটি করপোরেশন নগরবাসীকে ২৮ ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। এসব নাগরিক সেবা এখন বন্ধ রয়েছে।