বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের দিন ঠিক করা আছে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর। এটি একদিকে যেমন সম্মানজনক, অন্যদিকে আবার বিরাট চ্যালেঞ্জও বটে।

এলডিসি থেকে বের হলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে রপ্তানি খাত। এলডিসিভুক্ত দেশ হওয়ার কারণে বিশ্ববাণিজ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারসহ আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। বিদ্যমান নিয়মানুযায়ী উত্তরণের পর এসব সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ, ‘ফ্রি মিল’বা ‘মাগনা খাওয়ার’ দিন শেষ।

ফলে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতিতে মনোযোগ দিতে হবে। এ জন্য একটি উত্তরণকালীন কৌশল ঠিক করা প্রয়োজন।

প্রশাসনিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে প্রস্তুতি নিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে অর্থনীতির বৈচিত্র্য।

বলা হয়ে থাকে যে অর্থনীতির তিনটি স্তর আছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কৃষিনির্ভর অর্থনীতি, দ্বিতীয় পর্যায়ে শ্রমনির্ভর শিল্প এবং তৃতীয় তথা শেষ পর্যায়ে জ্ঞানভিত্তিক ও সেবামূলক অর্থনৈতিক কার্যাবলি প্রাধান্য পায়।

সত্তর বা আশির দশকে স্কুলে পড়তাম, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর এবং অর্থনীতিতে এর অবদান প্রায় ৮০ শতাংশ। অর্থকরী ফসল ‘পাট’কে তখন বলা হতো ‘স্বর্ণসূত্র’ বা ‘সোনালি আঁশ’ যা বৈদেশিক আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করত।

ঠিক এই মুহূর্তে চিত্রটি কেমন? অর্থনীতিতে কৃষির অবদান প্রায় ১২ শতাংশ আর এখানে মোট জনশক্তি নিয়োজিত প্রায় ৪৫ শতাংশ। ফলে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির প্রাথমিক পর্যায় উতরে ইতিমধ্যেই আমরা শ্রমনির্ভর শিল্প অর্থনীতিতে প্রবেশ করেছি।
শেষ পর্যায়ে এসে সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন হতে যাচ্ছে, তা হচ্ছে শ্রমনির্ভর অর্থনীতির পরিবর্তে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হওয়া।

বাংলাদেশের অর্থনীতি এই মুহূর্তে প্রায় সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল পোশাকশিল্প খাতের ওপর। শুধু তৈরি পোশাকশিল্প থেকেই বাংলাদেশের রপ্তানি আয় আসে প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানির ৮২ শতাংশ।

সব মিলিয়ে দেশে তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক রয়েছেন। পোশাকশিল্প আসলে একটি শ্রমনির্ভর শিল্প। এতে মেধার ব্যবহার তেমন একটা নেই। শুধু কায়িক শ্রম।

অন্যদিকে, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে কায়িক বা শারীরিক পরিশ্রমের চেয়ে মেধা বা জ্ঞানের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। যেমন প্রকৌশলীরা বিমান বা কম্পিউটার বানান, উঁচু দালান বা সেতুর নকশা করেন বা সফটওয়্যার তৈরি করেন। জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতিতে আয় অনেক বেশি সম্ভব। যেমন আপনি যে বিমান ১০০ কোটি টাকায় কিনেছেন, এর যে কাঁচামাল যেমন লোহা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদির বাজার মূল্য হয়তো ১০ কোটি টাকা। তাহলে বাকি ৯০ কোটি টাকা আসলে মেধার মূল্য!

অন্যদিকে, পোশাকশিল্পে ১০ কোটি টাকার কাঁচামাল, যেমন সুতা থেকে কাপড় এবং টি-শার্ট তৈরি করে আপনি বড়জোর ২০ কোটি টাকা আয় করতে পারেন। অর্থাৎ আপনার কাজের দ্বারা পণ্যটিতে ‘ভ্যালু অ্যাডিশন’–এর পরিমাণের ক্ষেত্রে এ দুটি শিল্পের বিস্তর ফারাক!

বলা হয়ে থাকে, একটি দেশের মাথাপিছু আয় যখন বেড়ে যায়, তখন ধীরে ধীরে সে শ্রমনির্ভর শিল্প ছেড়ে দিয়ে জ্ঞাননির্ভর শিল্পের উৎপাদনে বেশি মনোনিবেশ করে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে আসলে তারাই প্রভুত্ব বিস্তার করে, যারা উন্নত প্রযুক্তির পণ্য উৎপাদন বা সেবা প্রদান করতে সক্ষম। ইন্টারনেট আর উন্নত যোগাযোগের যুগে, সারা বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসারের পরও আপনি দেখবেন, এমন অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আছে যা শুধু অল্প কিছু দেশই বানাতে সক্ষম।

কোনো প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়াই জাপানের পক্ষে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার পেছনে অন্যতম চালিকা শক্তি হচ্ছে এর দক্ষ জনশক্তি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে চরম উৎকর্ষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই দেশ কঠোর পরিশ্রম, সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার আর সর্বোচ্চ কারিগরি দক্ষতার বদৌলতে আজ উন্নতির চরম শিখরে উন্নীত হতে পেরেছে।

বিমানের কথাই ধরুন। সারা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে হাজার হাজার যাত্রীবাহী বিমান ওঠা-নামা করছে বিভিন্ন বিমানবন্দরে। অথচ এ ধরনের যাত্রীবাহী ভালো বিমান বানাতে পারে হাতে গোনা চার-পাঁচটি দেশ।

একটা এফ-১৬ বোমারু বিমানের দাম প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা! একইভাবে যে কম্পিউটার আর মুঠোফোন এখন সবার ঘরে ঘরে, কিংবা নিত্যদিনের চলাচলের জন্য যেসব গাড়ি, খুব অল্প কটি দেশই ভালো মানের এ ধরনের পণ্য প্রস্তুত করতে সক্ষম।

কিন্তু কেউ চাইলেই নিজ দেশে আগামীকাল থেকে বিমান বানানো শুরু করে দিতে পারেন না। বিষয়টি এত সহজ নয়। জ্ঞানভিত্তিক এই অর্থনীতির মূল স্তম্ভ হচ্ছে, উন্নত শিক্ষা ও গবেষণা। অর্থাৎ দক্ষ ও উন্নত মানবসম্পদ। প্রকৃত অর্থে তেল, গ্যাস কিংবা সোনার মতো প্রত্যেক মানুষই কিন্তু একেকটা সম্পদ। অনেক ক্ষেত্রে তা হাজার গুণ বেশি দামি।

কোনো প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়াই জাপানের পক্ষে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার পেছনে অন্যতম চালিকা শক্তি হচ্ছে এর দক্ষ জনশক্তি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে চরম উৎকর্ষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই দেশ কঠোর পরিশ্রম, সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার আর সর্বোচ্চ কারিগরি দক্ষতার বদৌলতে আজ উন্নতির চরম শিখরে উন্নীত হতে পেরেছে।

মোট জনসংখ্যা ও সমতলভূমি বিবেচনায় জাপান ও বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় সমান। সবকিছুতে প্রায় মিল থাকার পরও দুটি দেশের অর্থনীতির বিস্তর ফারাকের কারণ মানুষের যোগ্যতার হেরফের; তাদের জ্ঞান, শিক্ষা, সময়ানুবর্তিতা ও কর্মদক্ষতার বিস্তর পার্থক্য! জাপানের মতো বাংলাদেশেরও আছে একটি বিশাল জনসম্পদ।

কিন্তু আমরা একে বোঝা মনে করছি। কারণ, এই জনসংখ্যাকে আমরা জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারিনি। আমাদের আয়ের আরেকটি বড় উৎস হলো বিদেশিদের পাঠানো আয়। সেখানেও বাংলাদেশিরা যা করছেন, তা হচ্ছে শ্রমিকের কাজ। একটু দক্ষ হলে এই আয় বাড়তে পারত বহুগুণ।

অন্যদিকে, নিজ দেশের তৈরি পোশাক খাত থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে বিদেশিরা। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একমাত্র সম্বল তৈরি পোশাকশিল্প। এই কম মেধানির্ভর তথা শ্রমনির্ভর তৈরি পোশাকশিল্পের ঊর্ধ্বতন পদগুলো দখল করে আছে বিদেশিরা—শ্রীলঙ্কান, ভারতীয়, চায়নিজ কিংবা কোরিয়ান।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের তো কথাই নেই। খবরে দেখেছিলাম, প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের অর্থ প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বাইরে চলে যায় বিদেশিদের বেতন বাবদ। ৪০ বছরের তৈরি পোশাকশিল্পের ইতিহাস বাংলাদেশের। এত দিনেও আমরা এ শিল্পে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে ব্যর্থ। আমরা শুধু শ্রমিকের কাজই করছি। একটিমাত্র টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় আছে—বুটেক্স। সেটির আধুনিকায়নের কোনো উদ্যোগ সরকার কখনো নিয়েছে কি?

এ খাতে গবেষণার জন্য কখনো কি বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে? বরং বাস্তবে যা দেখেছি, তা হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা বুটেক্স থেকে পাস করে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ক্ষমতা আর অর্থবিত্তে সরকারি প্রশাসন অনেক আকর্ষণীয়। বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদেরা হয় সেই পথ বেছে নিয়ে আমলা হচ্ছেন বা ‘ব্রেইন ড্রেইন’–এর শিকার হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছেন এবং সেখানেই থেকে যাচ্ছেন।

একইভাবে, বাংলাদেশের প্রায় সমান সময়ে, অর্থাৎ ১৯৬৫ সালে স্বাধীন হয়েও সিঙ্গাপুরের ইতিমধ্যে বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পেছনে যেসব কারণ কাজ করেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, শিক্ষার বিস্তার এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে চরম উৎকর্ষ সাধন। সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী লি কিউআন তাঁর প্রায় ৩০ বছরের শাসনামলে যে বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, তা হলো, প্রাকৃতিক সম্পদহীন সিঙ্গাপুরের প্রত্যেক নাগরিককে সম্পদে পরিণত করা।

প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব পর্যায়ে সর্বোচ্চ মানের শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এটি সম্ভব করেছিলেন লি কিউআন। একসময়ের একটি সাধারণ মানের বিশ্ববিদ্যালয় ‘ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর’কে তাই সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদান করে আজ বিশ্বের প্রথম ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিতে পরিণত করা হয়েছে। কোনো এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।

আমার সৌভাগ্য যে উচ্চশিক্ষার্থে এ দুটি দেশেই গমন ও লম্বা সময় অবস্থানের সুযোগ পেয়েছিলাম। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ও পোস্ট-ডক্টরাল আর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর থেকে মাস্টার্স। প্রকৃত অর্থে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বলতে যা বোঝায়, তার পরিপূর্ণ বিস্তারের চেষ্টা করা হয়েছে এ দুটি দেশে। সামগ্রিক বিবেচনায়, বাংলাদেশের অবস্থার কাছাকাছি হওয়ায়, এ দুটি দেশকে আমরা উদাহরণ হিসেবে অনুকরণ করতে পারি।

এ প্রসঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার একসময়কার একটি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড.

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বিগত সরকারের অবকাঠামোনির্ভর উন্নয়ন নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে একবার বলেছিলেন, মানবসম্পদের উন্নয়ন ব্যতীত এসব সুদৃশ্য অবকাঠামো ‘কঙ্কালসদৃশ’। নিঃসন্দেহে কঙ্কাল দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি ছাড়া আপনি দাঁড়াতে পারবেন না। কিন্তু রক্ত মাংস ছাড়া একটি কঙ্কাল মৃত মানুষেরই প্রতীক। তেমনি একটি দেশের উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন অবশ্যই প্রয়োজনীয়।

তবে জনগণের করের টাকা কিংবা ঋণ—বহু কষ্ট করে এই যে অবকাঠামো নির্মাণ, পরবর্তীকালে এর সঠিক ব্যবহারের জন্য সৎ ও দক্ষ জনশক্তি যদি তৈরি করা না হয়, তাহলে তা বেহাল কিংবা মৃতপ্রায় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কিন্তু আফসোসের বিষয়, তিনি শিক্ষা উপদেষ্টা থাকাকালীন এবং পরবর্তীকালে পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ও একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন বা মানবসম্পদ উন্নয়নের রোডম্যাপ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখিনি।

আমার মতে, এই মুহূর্তে দেশে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, মানবসম্পদ উন্নয়নে সর্বাত্মক মনোনিবেশ করা। অনেকেই দাবি করছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তথা প্রযুক্তিশিক্ষা নিয়ে কমিশন গঠনের। এটি এখন সময়ের দাবি।

ঊনবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ মানবসম্পদই হবে একটি দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। শুধু অর্থবিত্ত আর বড় বড় অবকাঠামো থাকলেই বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব নয়, যদি না জ্ঞান-বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে উৎকর্ষ সাধন সম্ভব হয়।

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশের জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, জ্ঞানের ভিত্তিতেই এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে একটি উৎপাদনশীল জনশক্তিতে পরিণত করা সম্ভব, যা হতে পারে সোনা, রুপা কিংবা হীরার চেয়ে বেশি দামি সম্পদ।

ড. মো. সিরাজুল ইসলাম অধ্যাপক, সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও পরিচালক, সেন্টার ফর ইনফ্রাস্ট্রাকচার রিসার্চ অ্যান্ড সার্ভিসেস (সিআইআরএস), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই ম হ র ত প রস ত ত অবক ঠ ম ব যবহ র জনশক ত উৎকর ষ অর থ ৎ পর য য় র অর থ র জন য হওয় র সময় র এলড স র একট সরক র সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

জাপানে জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত সরকারের

জাপানে জনশক্তি প্রেরণের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত ‘জাপান সেল’ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রেরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সভায় এ সব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। খবর বাসসের।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশে জাপানের সহযোগিতা বাড়াতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

প্রবাসীদের রেমিট্যান্সেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা

সভায় বলা হয়, জাপান সেলের কার্যক্রমকে জনগণের কাছে তুলে ধরতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো হবে। ফেসবুক পোস্টে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং জাপানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের উদ্ধৃতি প্রকাশ করা হবে, যা প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল পেজে প্রচারিত হবে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাপান বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার। জাপান টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে দেশটিতে ১ কোটি ১০ লাখ কর্মক্ষম মানুষের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য বিভিন্ন ভিসা ক্যাটাগরি খোলা রাখা হয়েছে।প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের অনুপ্রেরণায় জাপানে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কো-অপারেটিভ ফেডারেশন (এনবিসিসি), জাপান-বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সি লিমিটেড (জেবিবিআরএ) এবং কাইকোম ড্রিম স্ট্রিট বিডি কোম্পানি লিমিটেডের (কেডিএস) সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এসব চুক্তির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ‘জাপান ডেস্ক’ চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শ্রমবাজারের চাহিদা যাচাই, কর্মসংস্থানের সুযোগ চিহ্নিত ও প্রচারণা, কর্মীদের ভাষা প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল টেস্ট, তথ্যসংগ্রহ এবং জাপানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করা হবে।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, “জনশক্তি রপ্তানির মূল লক্ষ্য হলো কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন। জাপান ডেস্কের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।”

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জানান, জাপান সরকার এখন দক্ষতা ও মানসম্পন্ন কর্মী নিয়োগে জোর দিচ্ছে। এজন্য জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ ও টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কেডিএস নার্সিং সেক্টরে দক্ষ কর্মী পাঠাতে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পাস গড়ে তুলবে।

ইতিমধ্যে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— জাপান সেলের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ চালু, যোগাযোগের জন্য বিশেষ ই-মেইল খোলা, জাপানি ভাষা শেখার মোবাইল অ্যাপস প্রচার, কর্মপ্রার্থীদের জন্য শিক্ষাঋণ চালু, অতিরিক্ত পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, অনলাইন ভাষা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু, ভাষা পরীক্ষার্থীদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে তদারকি কমিটি গঠন। এছাড়া ভাষা শিক্ষকদের সম্মানি বৃদ্ধি, ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার সমস্যা সমাধান এবং জাপানের সহায়তায় ১ লাখ কর্মী প্রশিক্ষণের প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে।

বর্তমানে স্পেসিফায়েড স্কিলড ওয়ার্কার (এসএসডব্লিউ) ক্যাটাগরির ছয়টি খাতে—কৃষি, নির্মাণ, কেয়ার ওয়ার্কার, বিল্ডিং ক্লিনিং, অটোমোবাইল পরিবহন ও শিল্প খাতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম চলছে।ভবিষ্যতে ১৬টি খাতেই এ সুযোগ বাড়ানো হবে। ২০২৭ সাল থেকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের (টিআইটিপি) পরিবর্তে এমপ্লয়মেন্ট ফর স্কিল ডেভেলপমেন্ট (ইএসডি) চালু হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে এবং জাপান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় নতুন প্রশিক্ষক পাঠানো হবে।

অন্যদিকে, আগামী নভেম্বর মাসে টোকিও ও নাগোইয়াতে বাংলাদেশি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান ও জাপানি নিয়োগকর্তাদের মধ্যে ‘ম্যাচ মেকিং ইভেন্ট’ অনুষ্ঠিত হবে।এতে বাংলাদেশ থেকে জাপানে কর্মী নিয়োগের নতুন সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাপানে জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত সরকারের