Samakal:
2025-09-17@21:27:08 GMT

আলোচনায় সমাধান সম্ভব

Published: 20th, May 2025 GMT

আলোচনায় সমাধান সম্ভব

স্থলবন্দর দিয়া তৈয়ারি পোশাকসহ নির্দিষ্ট কিছু পণ্য রপ্তানিতে ভারত সরকার সম্প্রতি যেই নিষেধাজ্ঞা দিয়াছে, উহা স্বভাবতই বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলিবে। সিদ্ধান্তটি ঘোষণার অব্যবহিত পর দেশের কোনো কোনো অর্থনীতিবিদের এইরূপ আশঙ্কা বাস্তব হইয়া উঠিবার চিত্র মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্ট। প্রতিবেদনমতে, ভারত সরকার প্রদত্ত শর্ত অনুযায়ী তৈয়ারি পোশাক, ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত ও আসবাব রপ্তানি করিতে পারিতেছেন না ব্যবসায়ীরা। নিষেধাজ্ঞার পূর্বে যেই সকল স্থলবন্দরে বিভিন্ন পণ্যভর্তি রপ্তানিমুখী যানবাহনের দীর্ঘ সারি থাকিত, এখন তথায় কয়েকখানি দৃশ্যমান। 

বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ক্ষতি ইহাতেই সীমাবদ্ধ নহে। ইহার ফলে তৈয়ারি পোশাক যদ্রূপ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়া রপ্তানি করিতে হইবে, তদ্রূপ বাংলাদেশ হইতে ভারতের চার রাজ্য আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সকল স্থলবন্দর দিয়া বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ হইবার কারণে ঐ সকল পণ্যও সমুদ্রপথে পাঠাইতে হইবে। ইহাতে খাজনা অপেক্ষা বাজনা বেশি পড়িবে। সমুদ্রপথেও ভারত মাত্র দুটি বন্দর– পশ্চিমে মুম্বাইয়ের নভসেবা ও পূর্বে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়াছে, যথায় চট্টগ্রাম হইতে মুম্বাইয়ের নভসেবায় সরাসরি মালবাহী জাহাজ চলাচল করে না। চলাচল করিতে হয় শ্রীলঙ্কা হইয়া; আর চট্টগ্রাম-কলকাতা সমুদ্রপথেও জাহাজ চলাচল অনিয়মিত। এইভাবে পণ্য পরিবহনে যেই ব্যয় হইবে, তাহাতে ভারতীয় আমদানিকারকদের বাংলাদেশি পণ্য ক্রয় করিবার উৎসাহে ভাটা পড়িবে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও ভোজ্যপণ্য পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব ভারতসহ বেশ কিছু রাজ্যে জনপ্রিয়তা পাইয়াছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতে, বিশেষত ‘সপ্তভগিনি’খ্যাত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে তাহাদের পণ্যের বৃহৎ বাজার সৃষ্টি হইয়াছে। সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার কারণে উক্ত বাজার ধরিয়া রাখা কঠিন হইবে। উক্ত রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে ভারতের সহিত বাংলাদেশের বহুল চর্চিত বাণিজ্য ঘাটতি ধীরে হইলেও হ্রাস পাইতেছিল। এই প্রক্রিয়াটিও উক্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে থামিয়া যাইবে।

সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞাটি ভারত এমন সময়ে দিল যখন দেশটির স্থল ও বিমানবন্দর ব্যবহার করিয়া বাংলাদেশের তৈয়ারি পোশাক তৃতীয় দেশে যাইবার উপর নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান। ইহাতে বাংলাদেশের তৈয়ারি পোশাক ব্যবসায়ীরা দারুণ ক্ষতির সম্মুখীন। অর্থাৎ দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞা দিয়া ভারত বাংলাদেশের স্কন্ধের উপর তাহারই কারণে চাপিয়া বসা বোঝার উপর শাকের আঁটি চাপাইল। বিষয়টা এই কারণেও উদ্বেগজনক, প্রথম নিষেধাজ্ঞায় ভারত তাহার বন্দরগুলিতে পণ্যজটের দোহাই পাড়িলেও, দ্বিতীয় দফায় ঐরূপ খোঁড়া যুক্তি প্রদর্শনের প্রয়োজন মনে করে নাই। স্পষ্টত, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি যে কোনো প্রকারে হ্রাস করাই ভারতের উক্ত দুই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য। কিন্তু ইহার কুফল যে ভারতের জনগণকেও ভোগ করিতে হইবে, তাহা সম্ভবত ভারত সরকারের বিবেচনায় নাই। বাণিজ্যক্ষেত্রে বাংলাদেশ যতটা ভারতের উপর নির্ভরশীল, বাংলাদেশের উপর ভারতের নির্ভরতা তদপেক্ষা কম নহে, বরং অনেক বেশি। গত অর্থবৎসরে বাংলাদেশ ও ভারতের পরস্পরের বাজার হইতে লব্ধ রপ্তানি আয় তুলনা করিলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়। ঐ বৎসর বাংলাদেশ যথায় ভারতে রপ্তানি বাবদ মাত্র ১৫৭ কোটি ডলার আয় করিয়াছে, তথায় বাংলাদেশের বাজারে রপ্তানি করিয়া ভারতের আয় ছিল ৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ আমদানির বিকল্প উৎস সন্ধান করিলেই ভারত অসুবিধায় পড়িতে বাধ্য। তদুপরি বাংলাদেশের পণ্য ভারতে প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হইলে ভারতের সংশ্লিষ্ট ভোক্তাগণ অপেক্ষাকৃত সুলভ মূল্যে মানসম্মত পণ্য হইতে বঞ্চিত হইবেন। অর্থাৎ স্বীয় ভোক্তাসাধারণের স্বার্থের কথা বিবেচনা করিয়াও ভারত সরকারকে উক্ত নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।

কিন্তু প্রয়োজনটা যেহেতু আমাদেরও, তাই বাংরাদেশ সরকারকে উক্ত দুই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে ভারতকে সম্মত করাইতে দ্রুত আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। আমরা জানি, দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যে কোনো সমস্যা সমাধানে সরকারি চ্যানেল, তৎসহিত ট্র্যাক টু কূটনীতি বলিয়া পরিচিত দুই দেশের জনগণের মধ্যকার যোগাযোগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদেরও এই উভয় চ্যানেল ব্যবহার করিত হইবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র উপর

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন।‌ ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’

যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ