Samakal:
2025-07-12@02:13:46 GMT

আলোচনায় সমাধান সম্ভব

Published: 20th, May 2025 GMT

আলোচনায় সমাধান সম্ভব

স্থলবন্দর দিয়া তৈয়ারি পোশাকসহ নির্দিষ্ট কিছু পণ্য রপ্তানিতে ভারত সরকার সম্প্রতি যেই নিষেধাজ্ঞা দিয়াছে, উহা স্বভাবতই বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলিবে। সিদ্ধান্তটি ঘোষণার অব্যবহিত পর দেশের কোনো কোনো অর্থনীতিবিদের এইরূপ আশঙ্কা বাস্তব হইয়া উঠিবার চিত্র মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্ট। প্রতিবেদনমতে, ভারত সরকার প্রদত্ত শর্ত অনুযায়ী তৈয়ারি পোশাক, ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত ও আসবাব রপ্তানি করিতে পারিতেছেন না ব্যবসায়ীরা। নিষেধাজ্ঞার পূর্বে যেই সকল স্থলবন্দরে বিভিন্ন পণ্যভর্তি রপ্তানিমুখী যানবাহনের দীর্ঘ সারি থাকিত, এখন তথায় কয়েকখানি দৃশ্যমান। 

বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ক্ষতি ইহাতেই সীমাবদ্ধ নহে। ইহার ফলে তৈয়ারি পোশাক যদ্রূপ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়া রপ্তানি করিতে হইবে, তদ্রূপ বাংলাদেশ হইতে ভারতের চার রাজ্য আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সকল স্থলবন্দর দিয়া বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ হইবার কারণে ঐ সকল পণ্যও সমুদ্রপথে পাঠাইতে হইবে। ইহাতে খাজনা অপেক্ষা বাজনা বেশি পড়িবে। সমুদ্রপথেও ভারত মাত্র দুটি বন্দর– পশ্চিমে মুম্বাইয়ের নভসেবা ও পূর্বে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়াছে, যথায় চট্টগ্রাম হইতে মুম্বাইয়ের নভসেবায় সরাসরি মালবাহী জাহাজ চলাচল করে না। চলাচল করিতে হয় শ্রীলঙ্কা হইয়া; আর চট্টগ্রাম-কলকাতা সমুদ্রপথেও জাহাজ চলাচল অনিয়মিত। এইভাবে পণ্য পরিবহনে যেই ব্যয় হইবে, তাহাতে ভারতীয় আমদানিকারকদের বাংলাদেশি পণ্য ক্রয় করিবার উৎসাহে ভাটা পড়িবে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও ভোজ্যপণ্য পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব ভারতসহ বেশ কিছু রাজ্যে জনপ্রিয়তা পাইয়াছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতে, বিশেষত ‘সপ্তভগিনি’খ্যাত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে তাহাদের পণ্যের বৃহৎ বাজার সৃষ্টি হইয়াছে। সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার কারণে উক্ত বাজার ধরিয়া রাখা কঠিন হইবে। উক্ত রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে ভারতের সহিত বাংলাদেশের বহুল চর্চিত বাণিজ্য ঘাটতি ধীরে হইলেও হ্রাস পাইতেছিল। এই প্রক্রিয়াটিও উক্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে থামিয়া যাইবে।

সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞাটি ভারত এমন সময়ে দিল যখন দেশটির স্থল ও বিমানবন্দর ব্যবহার করিয়া বাংলাদেশের তৈয়ারি পোশাক তৃতীয় দেশে যাইবার উপর নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান। ইহাতে বাংলাদেশের তৈয়ারি পোশাক ব্যবসায়ীরা দারুণ ক্ষতির সম্মুখীন। অর্থাৎ দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞা দিয়া ভারত বাংলাদেশের স্কন্ধের উপর তাহারই কারণে চাপিয়া বসা বোঝার উপর শাকের আঁটি চাপাইল। বিষয়টা এই কারণেও উদ্বেগজনক, প্রথম নিষেধাজ্ঞায় ভারত তাহার বন্দরগুলিতে পণ্যজটের দোহাই পাড়িলেও, দ্বিতীয় দফায় ঐরূপ খোঁড়া যুক্তি প্রদর্শনের প্রয়োজন মনে করে নাই। স্পষ্টত, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি যে কোনো প্রকারে হ্রাস করাই ভারতের উক্ত দুই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য। কিন্তু ইহার কুফল যে ভারতের জনগণকেও ভোগ করিতে হইবে, তাহা সম্ভবত ভারত সরকারের বিবেচনায় নাই। বাণিজ্যক্ষেত্রে বাংলাদেশ যতটা ভারতের উপর নির্ভরশীল, বাংলাদেশের উপর ভারতের নির্ভরতা তদপেক্ষা কম নহে, বরং অনেক বেশি। গত অর্থবৎসরে বাংলাদেশ ও ভারতের পরস্পরের বাজার হইতে লব্ধ রপ্তানি আয় তুলনা করিলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়। ঐ বৎসর বাংলাদেশ যথায় ভারতে রপ্তানি বাবদ মাত্র ১৫৭ কোটি ডলার আয় করিয়াছে, তথায় বাংলাদেশের বাজারে রপ্তানি করিয়া ভারতের আয় ছিল ৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ আমদানির বিকল্প উৎস সন্ধান করিলেই ভারত অসুবিধায় পড়িতে বাধ্য। তদুপরি বাংলাদেশের পণ্য ভারতে প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হইলে ভারতের সংশ্লিষ্ট ভোক্তাগণ অপেক্ষাকৃত সুলভ মূল্যে মানসম্মত পণ্য হইতে বঞ্চিত হইবেন। অর্থাৎ স্বীয় ভোক্তাসাধারণের স্বার্থের কথা বিবেচনা করিয়াও ভারত সরকারকে উক্ত নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।

কিন্তু প্রয়োজনটা যেহেতু আমাদেরও, তাই বাংরাদেশ সরকারকে উক্ত দুই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে ভারতকে সম্মত করাইতে দ্রুত আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। আমরা জানি, দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যে কোনো সমস্যা সমাধানে সরকারি চ্যানেল, তৎসহিত ট্র্যাক টু কূটনীতি বলিয়া পরিচিত দুই দেশের জনগণের মধ্যকার যোগাযোগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদেরও এই উভয় চ্যানেল ব্যবহার করিত হইবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র উপর

এছাড়াও পড়ুন:

যশোর-খুলনা মহাসড়ক যেন চাষের জমি

দেখলে মনে হবে চাষ দেওয়া কোনো জমি। এবড়োখেবড়ো কাদামাটির স্তূপ, তাতে বড় বড় গাড়ির চাকার দাগ। কোথাও গভীর গর্ত হয়ে জমে আছে পানি। যশোরের অভয়নগরে যশোর-খুলনা মহাসড়কের চিত্র এখন এমনই। এতে নওয়াপাড়া নদীবন্দরের কার্যক্রমেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। 
বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর অভয়নগরের প্রেমবাগ থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত যশোর-খুলনা মহাসড়ক চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে সড়কটির প্রায় এক কিলোমিটার অংশ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। গর্তে জমা পানি, কাদামাটির কারণে রাস্তাটি চেনার উপায় নেই। এর মধ্য দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে থেমে থেমে চলছে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী বড় বড় ট্রাক। খানাখন্দে চাকা পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক উল্টে পাশের খাদে পড়ে যায়।
নওয়াপাড়া নদীবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের বিভিন্ন পণ্য এ সড়ক দিয়ে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো হয়। দেশের চাহিদার ৬০ ভাগ আমদানীকৃত সার মোংলা থেকে নদীপথে নওয়াপাড়া নদীবন্দরে এনে খালাস করা হয়। সেই সার ট্রাকের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। বেহাল সড়কের কারণে নদীবন্দরে যেতে অনীহা দেখাচ্ছেন ট্রাকচালকরা। ফলে আমনের ভরা মৌসুমে সঠিক সময়ে সার কৃষকের কাছে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 
নওয়াপাড়া সার সিমেন্ট খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নুরে আলম পাটোয়ারী বলেন, সড়কটির কারণে নওয়াপাড়া মোকাম থেকে সারসহ পণ্য পরিবহনে চালকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে বন্দরের বার্জ কার্গো থেকে সারসহ বিভিন্ন পণ্য সঠিক সময়ে খালাস করা যাচ্ছে না। এতে অতিরিক্ত সময় লাগায় ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। ভুক্তভোগী উজ্জ্বল কুমার কুণ্ডু বলেন, বৃষ্টি হলেই সড়কটি কাদামাটিতে একাকার হয়ে যায়। সড়কের গর্তে পানি জমে। আর বৃষ্টি না হলে গাড়ির চাকার সঙ্গে ওড়ে ধুলা। মোটরসাইকেলচালকরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। 
যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহজাদা ফিরোজ মোবাইল ফোনে জানান, ঠিকাদারদের ডাকা হয়েছিল, তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা এই সমস্যার সমাধান করব। ভারী বর্ষণের কারণে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আপাতত ইট ফেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।
মোংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দর এবং নওয়াপাড়া নদীবন্দরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এই মহাসড়ক। খুলনা থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহনের বাসও অভয়নগর হয়ে যাতায়াত করে। খুলনা থেকে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়ায় যাতায়াতের এটিই প্রধান সড়ক। এখন বাসগুলোকে মনিরামপুর, সাতক্ষীরা ঘুরে যেতে হয়। 
বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে সড়কটির বিভিন্ন অংশে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ চলছে। ২ হাজার ৩৫২ মিটার কাজের মধ্যে ৭০২ মিটার পড়েছে যশোর মুরলী মোড়ে। বাকিটা নওয়াপাড়া থেকে প্রেমবাগ গেট পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে। কাজটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ কোটি ৬৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। কাজটি শুরু হয়েছে গত ২৩ মার্চ। 
এর আগে ২০১৮ সালে দু’জন ঠিকাদার ৩২১ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের অভয়নগরের রাজঘাট থেকে যশোরের পালবাড়ি মোড় পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। কাজটি ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। ওই সময় কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তিন বছরের মধ্যেই সড়কটির বিভিন্ন অংশ বেহাল হয়ে পড়ায় আবার সংস্কারকাজ করতে হচ্ছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টানা বৃষ্টিতে লাফিয়ে বাড়ছে কাঁচামরিচের দাম
  • আট মাস পর ভারত থেকে এল কাঁচা মরিচ
  • তিন মাস বন্ধ আমদানি-রপ্তানি
  • যশোর-খুলনা মহাসড়ক যেন চাষের জমি
  • যানজটে দিনভর নাকাল মানুষ
  • হিলি বন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু
  • ভারত থেকে এলো ১০ টন কাঁচা মরিচ
  • ভারতের ত্রিপুরায় হাঁড়িভাঙ্গা আম উপহার পাঠালেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ত্রিপুরা রাজ্য সরকারকে আম উপহার পাঠালেন প্রধান উপদেষ্টা