২০২৫ সালের বসন্তে লোহিত সাগর যুক্তরাষ্ট্র ও ইয়েমেনের হুতিদের মধ্যে একটা উত্তেজনাকর যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। তথাকথিত প্রতিরোধের অক্ষশক্তির অংশ হিসেবে হুতিরা আন্তর্জাতিক জাহাজে তাদের হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছিল।

পরিস্থিতি মোকবিলায় হুতিদের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘অপারেশন রাফ রাইডার’ নামে বড় সামরিক অভিযান শুরু করেন। এর খরচ হয় এক বিলিয়ন ডলার।

উদ্দেশ্য ছিল হুতিদের সক্ষমতা ধ্বংস করে দেওয়া। যাহোক, অভিযান শুরুর দুই মাসের মাথায় ৬ মে ট্রাম্প অপ্রত্যাশিতভাবে ইসরায়েলকে এড়িয়ে হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইয়েমেন সংঘাত কার্যত বন্ধ হয়ে গেল।

সামরিক ও কৌশলগত ব্যর্থতা

২০২৫ সালের মার্চ মাসে শুরু হওয়া মার্কিন সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত, ড্রোন ও সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু বিপুল অর্থ ব্যয় ও আধুনিক সমরাস্ত্র ব্যবহারের পরও এই অভিযান কৌশলগত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। ‘অপারেশন রাফ রাইডার’-এর অংশ হিসেবে ইয়েমেনে আট শতাধিক স্থানে হামলা চালানো হয়। এতে হুতিদের সামরিক সক্ষমতার ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।

ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি ও ইরানের সমর্থনের ওপর নির্ভর করে হুতিরা কেবল টিকেই ছিল তা নয়, বরং বাণিজ্যিক ও সামরিক জাহাজের ওপর হামলা আরও বাড়িয়ে দেয়। হুতিদের এই আক্রমণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক আধিপত্যের ওপর বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। হুতিরা আরও সাহসী হয়ে ওঠে। এমনকি মার্কিন যুদ্ধজাহাজও বারবার হুতিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

এই ব্যর্থতার একটি প্রধান কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র এটিকে পুরোপুরিভাবে সামরিক কৌশল দিয়েই মোকাবিলা করতে চেয়েছে। কিন্তু কেবল সামরিক পদক্ষেপ দিয়ে লোহিত সাগর সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। এর কারণ হলো, এই সংকটের শিকড় রয়েছে আঞ্চলিক উত্তেজনা ও ইয়েমেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের মধ্যে।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবও এই ব্যর্থতাকে আরও গভীর করেছে। এর আগে বাইডেনের আমলে পরিচালিত ‘অপারেশন প্রসপারিটি গার্ডিয়ান’ অভিযানটিও ব্যর্থ হয়েছিল।

আরও পড়ুনহুতিদের থামানো যে কারণে অসম্ভব ১৫ জানুয়ারি ২০২৪যুদ্ধবিরতি চুক্তি: একটি ব্যর্থতার কেসস্টাডি

৬ মে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, মার্কিন জাহাজে হামলা বন্ধের শর্তে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে বোমা হামলা বন্ধ করবে।

ওমানের মধ্যস্থতায় হওয়া এই চুক্তি প্রথমে উত্তেজনা প্রশমনের একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। কিন্তু দ্রুতই এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পরাজয় হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। হুতিরা মার্কিন জাহাজে হামলা বন্ধ করলেও ইসরায়েলের ওপর হামলা অব্যাহত রাখে। এটি চুক্তির সীমাবদ্ধতাকে স্পষ্ট করে। প্রধান মিত্র ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ের ঘাটতিকেও খোলাসা করে।

ইসরায়েল ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশ কাটিয়ে চুক্তির ঘোষণাটি ছিল নির্দিষ্টভাবেই বিস্ময়কর। এ সম্পর্কে ইসরায়েল একেবারেই কিছু জানত না। হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্রে তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইসরায়েল পাল্টা হিসেবে ইয়েমেনের হোদেইদা বন্দর ও সানা বিমানবন্দরে প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়।

ট্রাম্প এই চুক্তিকে ইয়েমেন সংকটের অন্ধগলি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে আসা হিসেবে চিত্রিত করলেও তিনি জোর দিয়েই বলেন, এই সংঘাত এখনই শেষ হচ্ছে না। হুতি নেতা আবদুল-মালিক আল-হুতি চুক্তিটিকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল এক পরাজয়’ বলে অভিহিত করেন এবং এটিকে তাদের বিজয় হিসেবে চিত্রিত করেন। দ্য ইকোনমিস্ট এটিকে ‘আত্মা বিক্রির চুক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে। পত্রিকাটি বলে এর মধ্য দিয়ে ইয়েমেনে হুতিদের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী হবে।

ব্যর্থতার কারণ

হুতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ট্রাম্পের ব্যর্থতার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, সামরিক সমাধানের ওপর অতিনির্ভরতার কারণে অঞ্চলটির ভূরাজনৈতিক জটিলতাকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা ইউরোপ ও উপসাগরীয় দেশগুলোকে ‘মুক্তভাবে চলাচলের’ সুযোগ করে দেয়। আর্থিক ও সামরিক দায়ভার অসংগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাঁধে গিয়ে পড়ে। অভিযানে আঞ্চলিক দেশগুলোর অংশগ্রহণে অনীহা এবং হুতিদের উচ্চমাত্রার প্রতিরোধক্ষমতা সংকটটিকে দীর্ঘস্থায়ী করে।

দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যকার সমন্বয়হীনতা ও অভিযান পরিচালনার অব্যবস্থাপনাও এর জন্য দায়ী। সামরিক পরিকল্পনা ভুলবশত সিগন্যাল অ্যাপে ফাঁস হয়ে যায়। এটি সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় একটা দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। এর ফলে লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলের পথ পুনরুদ্ধারের জরুরি বিষয়টিও কমে যায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে হুতিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এ যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কৌশলগত ব্যর্থতার একটি ধ্রুপদি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। অন্যদিকে হুতিরা আরও শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠল।

পিটার রজার্স মিডল ইস্ট মনিটরের লেখক

মিডল ইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক শলগত ইসর য র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজার থেকে পায়ে হেঁটে এভারেস্ট জয় শাকিলের

অনন্য নজির গড়ে সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেছেন ইকরামুল হাসান শাকিল। এত কম বয়সে এবং পদযাত্রার মাধ্যমে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট জয়ের নজির আগে আর কেউ দেখাতে পারেননি।

নেপালের স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে তিনি চূড়ায় পৌঁছান বলে তার ফেসবুক পেইজে জানানো হয়।

শাকিলের এবারের অভিযান ছিল ‘সি টু সামিট’, যেখানে তিনি সবচেয়ে কম সময়ে এবং পদযাত্রায় সর্বোচ্চ পথ পাড়ি দিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। শাকিল এই রেকর্ড গড়েছেন সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে।

পর্বতারোহী শাকিল গত ৯ মার্চ ঢাকার গুলশানে সংবাদ সম্মেলন করে তার ‘সি টু সামিট’ যাত্রার বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেছিলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্র সৈকত থেকে পায়ে হেঁটে তিনি ৯০ দিনের মধ্যে সামিট জয়ের লক্ষ্যে অভিযান শুরু করেছেন। ফেনী, কুমিল্লা ও মুন্সীগঞ্জের পথ ধরে তিনি তখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।

যাত্রাপথে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের ওপর দিয়ে প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তিনি এভারেস্টের ২৯ হাজার ৩১ ফুট উঁচু শিখরে আরোহণ করতে চান বলে জানিয়েছিলেন। তবে তিনি ৯০ দিনের মধ্যে সামিট জয়ের লক্ষ্য ঠিক করলেও তা ৮৪ দিনেই সম্পন্ন করেছেন।

এ অভিযানের আয়োজক ছিল বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব। ক্লাবটির সমন্বয়ক সাদিয়া সুলতানা শম্পা শাকিলে ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে জানান, শাকিল এভারেস্ট জয় করে ক্যাম্প ৪-এ ফিরে এসেছেন। সমুদ্র থেকে পদযাত্রা করে প্রায় ১৩শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দ্রুততম সময়ে শিখর স্পর্শ করেছেন। তবে যোগাযোগ সমস্যা থাকায় ঠিক কোন সময়ে শীর্ষে পৌঁছেছেন বা সঙ্গে কতজন ছিলেন-এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।  

পরে শাকিলের পেইজ থেকে আরেক পোস্টে জানানো হয়, পরিবেশ সচেতনতা, কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো এবং একক ব্যবহৃত প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশের সাহসী পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল সম্পন্ন করলেন ২০২৫ এর অন্যতম দুঃসাহসিক অভিযান “সি টু সামিট এভারেস্ট অভিযান ২০২৫”।

পোস্টে আরও বলা হয়, এই অভিযানের মূল বিষয়বস্তু ছিল বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্র সৈকতের সমুদ্র সমতল থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট শিখরে আরোহণ। ২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ইনানী সৈকত থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন শাকিল। এরপর ৬৪ দিনে প্রায় ১,৩৭৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পৌঁছান এভারেস্ট বেসক্যাম্পে। এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় তিনি সাঁতরে পার হন খরস্রোতা যমুনা নদীর প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ।

সবশেষে আজ, ১৯ মে সকাল পৌনে ৭টায় শাকিল আরোহণ করেন মাউন্ট এভারেস্টের শিখর এবং সেখানে তুলে ধরেন বাংলাদেশের পতাকা।
এই অভিযানে শাকিলের সহযাত্রী হিসেবে আছে তাঁর বন্ধু, খ্যাতনামা শেরপা গাইড তাশি গ্যালজেন। তিনিও এক বিশ্ব রেকর্ডের পথে। একই মৌসুমে মাত্র ২০ দিনের মধ্যে চারবার এভারেস্ট আরোহণের লক্ষ্য নিয়ে অভিযানে আছেন। ইতোমধ্যে তিনি সফলভাবে তৃতীয়বারের মতো শিখর আরোহণ করলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (২১ মে ২০২৫)
  • সন্ত্রাসবিরোধী অধ্যাদেশের একটি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ
  • সন্ত্রাসবিরোধী অধ্যাদেশ ২০২৫ নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ
  • হিমাদ্রির ৯ মাসে মুনাফা কমেছে ৮.৮৩ শতাংশ
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (২০ মে ২০২৫)
  • চট্টগ্রাম বন্দরের কৌশলগত সিদ্ধান্তে সতর্ক হওয়া জরুরি
  • কক্সবাজার থেকে হেঁটে এভারেস্ট জয় শাকিলের
  • কক্সবাজার থেকে পায়ে হেঁটে এভারেস্ট জয় শাকিলের
  • বন্দর পরিচালনা বিদেশিদের দেওয়া কতটা যৌক্তিক