চরাঞ্চলের জলজ জীবন ও ‘হুজুগের’ দিনগুলো
Published: 21st, May 2025 GMT
বঙ্গীয় বদ্বীপের প্রকৃতি যেন বিশেষভাবে ধরা দেয় ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা, তিস্তার মতো বড় নদীর মধ্য ও তীরবর্তী চরাঞ্চলে। চরাঞ্চলের বাইরের বাকি বাংলাদেশের কেন্দ্র ও প্রান্তের সংগ্রাম, সংঘাতের অভিঘাতও সেখানে উপস্থিত হয় ভিন্ন মাত্রা নিয়ে। এই প্রবণতা কেবল আজকের নয়, বরং স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনালগ্ন কিংবা তারও আগে থেকে। যেমন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠাকারী মুক্তিযুদ্ধকালে বঙ্গীয় বদ্বীপের চরাঞ্চলীয় প্রকৃতি আমাদের সামনে ধরা পড়ে লিখিত ও মৌখিক বর্ণনায়। তবে এ ইতিহাসচর্চায় জলপ্রকৃতিকে মানুষের তৈরি এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের সহ-উৎপাদনশীল বাস্তবতা হিসেবে ভাবনার ঘাটতি রয়েছে।
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার প্রায় সম্পূর্ণ অংশ, ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে সাড়ে পাঁচটিই বর্তমানে নদীতে বিলীন। সেখানে জেগে ওঠা চরগুলোতে দশক দশক ধরে মানুষের বসতি। চরবাসীরা দেশের অন্যান্য মানুষের মতো মুক্তিযুদ্ধের বৈরী সময়ের স্মৃতি বহন করে। তবে মূলধারার ইতিহাস যেখানে ৯ মাসের গণহত্যাকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত অধ্যায় বলে চিহ্নিত করে, সেখানে চরবাসী ‘হুজুগ’ শব্দটি ব্যবহার করে, কুড়িগ্রামের আঞ্চলিকতায় যার অর্থ প্রায়ই ‘দুর্যোগ’।
তারও আগে, ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ– এসব ঘটনা চরবাসীর চোখে একসূত্রে গাঁথা: ক্ষুধা, বঞ্চনা ও রাষ্ট্রের প্রান্তে অসুরক্ষিত জীবন। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মতো চরবাসীও রাজনৈতিক অস্থিরতার চরম ভোগান্তি সহ্য করেছে। তাদের ভাষায়, যখন নদীর গতিপথ সামলানোর স্বাভাবিক ছন্দ ভেঙে পড়ে, তখনই হুজুগের উদ্ভব ঘটে।
চরবাসীর কাছে নদীই প্রতিরোধ ও বাঁচার অবলম্বন। একদিক দিয়ে ‘জলপ্রকৃতি’ নিছক প্রকৃতি নয়; এটি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক রূপান্তরের ক্ষেত্রও বটে। চরবাসীর কাছে
নদীই একমাত্র আশ্রয় যখন অন্য সব পথ বন্ধ হয়ে যায়।
৮০ বছর বয়সী চরবাসী ফরিদ উদ্দিন স্মরণ করেন ১৯৬৫ সালের যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা। সে বছর সেপ্টেম্বর মাসে নদীর জলস্তর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। তিনি তখন পাশের এক চরে জমি চাষ করছিলেন। সন্ধ্যায় নৌকায় ফেরার সময় হঠাৎ আকাশে বিকট শব্দ বেজে ওঠে। যুদ্ধের কথা শুনলেও এ ধরনের সাইরেন তারা কখনও শোনেননি। এর পর চোখ ধাঁধানো আলো নৌকার চারপাশ ঘিরে ফেলে। একটি বিশালাকৃতির সামরিক জাহাজ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে উর্দু ভাষায় ঘোষণা আসে: ‘খতরা, খতরা। কাশতি ভেরাও’। অর্থাৎ বিপদ, বিপদ। নৌকা ঘোরাও। ভাষা, প্রযুক্তি ও পরিস্থিতির এই অচেনা অভিজ্ঞতা তাদের হতভম্ব করে দেয়।
ফরিদরা অবশেষে ছোট ছোট খাল ঘুরে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারলেও সেই অভিজ্ঞতা তাদের মনে নদীর নতুন তাৎপর্য গেঁথে দেয়– বাঁচতে হলে নদীর নাড়ি-নক্ষত্র আরও গভীরভাবে বুঝতে হবে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে একই অভিজ্ঞতা আরও তীব্রভাবে ফিরে আসে। ১৯৭১ সালের দীর্ঘ কয়েক মাসের উত্তাল রাজনৈতিক অবস্থার পর চরবাসী আবারও নদীকে ব্যবহার করার আহ্বান শুনল। বাজারে বাজারে তারা শুনতে পেল, দেশের নানা অঞ্চলে বাঙালি হিন্দুদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে। পাশাপাশি জানা গেল, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সীমান্ত খুলে দিয়েছে এবং উদ্বাস্তু শিবির স্থাপন করেছে। যদিও ফরিদ স্বয়ং মুসলমান, তাঁর হিন্দু প্রতিবেশীরা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠার আতঙ্কে ছিল।
ফরিদ খুঁজে বের করেছিলেন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রৌমারী হয়ে ভারতীয় জনপদ মানকারচরে যাওয়ার দীর্ঘতর পথ, যেখানে আশপাশের অনেকে ইতোমধ্যে পালিয়ে গিয়েছিল। পথটি দীর্ঘ হলেও নদীর পূর্বপারে পাকিস্তানি বাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা ছিল না বললেই চলে।
পশ্চিমপারের চিলমারীতে অবশ্য এমন বিপদ ছিল অহরহ। একবার পাকিস্তানি মিলিটারি নদীতীরে গুলি চালানোর জন্য সার বেঁধে বাংকার খুঁড়ে তৈরি ছিল। কিছু ভুক্তভোগী, যারা নদী সম্পর্কে প্রতিপক্ষের চেয়ে অধিক অভিজ্ঞ, জলে ঝাঁপ দিয়ে স্রোতের টানে নিরাপদে সরে যেতে সক্ষম হয়।
চরবাসী মনে করে, প্রবল ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি করে ব্রহ্মপুত্র নদই একাত্তরে পাকিস্তানের নৃশংস সৈন্যদের হাত থেকে তাদের বাঁচিয়েছিল। চরবাসী মনে করত, সৈন্যদের নদী সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। এমন চিন্তা পুনরায় নদীর প্রাণসঞ্চারী শক্তির বিশ্বাসকে দৃঢ় করেছিল, বিশেষ করে মৃত্যুশঙ্কা যখন ঘনিয়ে আসে। ফরিদ চার-পাঁচবার যাতায়াত করে বহু পরিবারকে নিরাপদে পার করে দিয়েছিলেন। কেউ কেউ সীমান্ত পার হওয়ার পর এতটাই কৃতজ্ঞ হয়েছিল; কৃতজ্ঞতাবশত ফরিদকে তাদের জমিই দিয়েছিল। ‘আমি বিনিময়ে কিছুই চাইনি। আমি শুধু নদীকে চিনতে শুরু করেছিলাম, আর তারা আমাকে বিশ্বাস করেছিল।’ মূলত তারা ফরিদের নদীপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দক্ষতায় আস্থা রেখেছিল।
মুক্তিযুদ্ধ শেষে উদ্বাস্তু চরবাসী ফিরেছিল বদলে যাওয়া আর্থসামাজিক বাস্তবতায়। তাদের স্মৃতির শুরু থেকে জমি যদিও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন, রাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু ফিরে এসে দেখে, সেই সম্পর্ক ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বহু জমির মালিক, যাদের অধিকাংশই ছিল উচ্চবর্ণের হিন্দু, আর ফিরে আসেনি। এতে সামাজিক সাম্যাবস্থা ভেঙে পড়ে। দখলদারি, মালিকানা কিংবা উত্তরাধিকারের বিরোধের মীমাংসা করার উদ্যোগ সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রেও কার্যকর ছিল না।
আইন অনুসারে, ভাঙন ও চর জাগার পরিমাপ জরিপকারীরা নির্ধারণ করে। চরবাসীর স্মৃতি অনুসারে, ১৯৭২ সালে তেমন জরিপ সম্পন্ন হয়নি। বহিরাগতরা, যাদের জমির সঙ্গে পূর্ব সম্পর্ক ছিল না, নিজেদের মালিক দাবি করে চাষাবাদ শুরু করে। জেলেরা তাদের দৈনন্দিন মাছ বিক্রির জন্য দালালদের ওপর নির্ভর করত, যারা মাছ বাজারে নিয়ে যেত। পুরোনো বাজার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সেই দালালরাও অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রথম কয়েক মাসে সবাই শুধু টিকে থাকার সংগ্রাম করতে বাধ্য হয়।
১৯৭২ সালে প্রথম যে সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে, চরবাসী চিরায়ত সমাজ ব্যবস্থার চাপে পড়েছিল। তারা ভাবতে শুরু করে– আমরা কী শ্রম দেব, সময়-শক্তি ব্যয় করব, যদি ফসল ও মজুরি ভাগাভাগি করা না যায়। কেউ কেউ নতুন পৃষ্ঠপোষকতায় চলে যায়; কেউ কেউ আয়ের উৎস খুঁজে পায় না। দ্বিতীয়ত, ১৯৭২ সালে বিপর্যস্ত সামাজিক কাঠামো কৃষি উৎপাদনের ন্যূনতম উপকরণ সংগ্রহের পথ রুদ্ধ করে দেয়। বীজের অভাব দেখা দেয়। প্রচলিতভাবে বীজ ঘরেই সংরক্ষিত থাকত, কিন্তু যুদ্ধকালে সেগুলো লুট হয়ে গিয়েছিল; নতুন বীজ সংগ্রহে কয়েক মৌসুম লেগে যেত। পর্যাপ্ত লাঙল, কাস্তেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে ক্ষুদ্র চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের সম্ভাবনা সংকুচিত হতে থাকে। যুদ্ধের পরিণতি দৈনন্দিন জীবনে প্রকট হয়।
চরবাসীর দৃষ্টিতে অর্থনীতি তখন সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিতে পর্যবসিত। পৃষ্ঠপোষকতার ধারা পুনর্গঠিত হয়ে অনাহারের এক সুস্পষ্ট পথ তৈরি হয়। নতুন রাষ্ট্রও তখন দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। যদিও ১৯৭৪ সালে ফলন ভালো হয়েছিল; কিন্তু চিলমারী অঞ্চলে ব্যাপক বন্যা আঘাত হানে। খাদ্যশস্য সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকে। এমনিতেই দুর্দশাগ্রস্ত জনগণ অনাহারের নতুন পর্বের মুখোমুখি। এই সময়ে আবারও নদীর সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক স্পষ্ট হয়। অনেকে ভারতে গিয়ে ফিরে আসে। এক নারী স্মরণ করেন, অনাহারে ক্লান্ত হয়ে নদীতীরে গিয়ে জলে পড়ে গিয়েছিলেন। ছোট মাছ গিলে বাঁচার শেষ চেষ্টা করেছিলেন। সাহায্যকর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান। তাঁর স্মৃতি যাই হোক না কেন, তাঁর মনে নদীর সঙ্গেই জীবনের সংযোগ দৃঢ় হয়।
আরও একটি কথা প্রচলিত; দুর্ভিক্ষকালে পোশাকহীন নারীরা গভীর বনঘেরা চরে আশ্রয় নেয়। সাহায্যকর্মীরা জামাকাপড় নদীতীরে রেখে গেলে তারা সেই পোশাক পরে ঘরে ফেরে।
চরবাসী এখনও স্মরণ করে সেই বিক্ষিপ্ত দিনগুলোকে। তাদের কাছে নদী এখনও জীবনদাতা; বিপদে রক্ষাকর্তা। যখন রাষ্ট্র বা সমাজের অন্যান্য সহায়তা ব্যর্থ হয়, তখন জলপ্রকৃতিই হয়ে ওঠে প্রতিরক্ষার হাতিয়ার। চিলমারীর মতো জনপদের ইতিহাস তাই যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতেও নদী ও জীবনের অন্তর্গত সম্পর্কের কথাও বলে।
ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সম জ চরব স র প রক ত কর ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত