আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়তি শুল্ক কার্যকর হবে না
Published: 5th, July 2025 GMT
বেশ কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক যাতে আরোপ না হয়, তার জন্য সম্ভাব্য এ চুক্তির বিষয়ে দর-কষাকষি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। ৯ জুলাইয়ের মধ্যে সবকিছু চূড়ান্ত করে চুক্তি করা না গেলেও ঢাকার ওপর বাড়তি শুল্ক কার্যকর না করার আশ্বাস দিয়েছে ওয়াশিংটন। গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের বৈঠকে এ আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সব দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ শেষ হচ্ছে ৯ জুলাই।
ইউএসটিআরের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড.
গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন দেশের ওপর ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করা হয় ৩৭ শতাংশ। তবে ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শুল্ক ইস্যুতে চুক্তির খসড়া নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে বাজেটে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে ইউএসটিআরের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে চুক্তির খসড়া নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্ক কার্যকর করা হবে না। এ ছাড়া বৈঠকে ইউএসটিআর আশ্বাস দিয়েছে যে ছাড় পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগীদের চেয়ে পিছিয়ে থাকবে না বাংলাদেশ ।
বৈঠকে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কোন কোন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চায়, তার একটি তালিকা দেবে। তবে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ সংক্রান্ত তালিকা পায়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, তালিকা হাতে পেলে সেটি সরকারের অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে চূড়ান্ত করে তা সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। ৯ অথবা
১০ জুলাই শুল্ক চুক্তি নিয়ে ইউএসটিআরের সঙ্গে আরও একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র শ ল ক ক র যকর র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়নি, আলোচনা চলবে
বেশকিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক চুক্তির প্রস্তাবিত খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আরও দরকষাকষি চলবে। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের বৈঠকে খসড়া চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানসহ ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। সভায় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ৮ জুলাই ইউএসটিআরের সঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা এ ইস্যুতে আরও একটি বৈঠক করবেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে ওই বৈঠকে অংশ নিতে শনিবার ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। তাছাড়া ৯ জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে এ বিষয়ে ইউএসটিআরসহ দেশটির বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা ও সচিব।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটি পাল্টা শুল্ক চুক্তি করার আগ্রহের কথা জানিয়ে সম্প্রতি একটি খসড়া পাঠায়। তবে এতে এমন কিছু শর্ত রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে করছে বাংলাদেশ। তাই প্রচলিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চর্চা ও দ্বিপাক্ষিক সুবিধার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ঢাকা।
দেশের স্বার্থ রক্ষার বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে উভয় পক্ষের মতপার্থক্য কাটিয়ে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করতে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার বৈঠকের আগেই খসড়া সংশোধন করে তিন দফা মতামত পাঠানো হয়েছে। খসড়া নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আরও তিনটি বৈঠক হয়েছে। চুক্তি হলে ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার বা কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুল্ক চুক্তির খসড়ার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব সংশোধনী আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তার কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সম্মত হয়েছে। তবে এতে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষা হয় না– এমন বিষয় নিয়ে আলাপ–আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী দেশটি অন্য কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা বাড়তি শুল্ক আরোপ করলে, বাংলাদেশকেও তা অনুসরণ করতে হবে। এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াশিংটনকে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট দেশের নিজস্ব আইন বাংলাদেশের পক্ষে অনুসরণ করা সম্ভব নয়।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শর্তারোপ করা হয়, সে দেশের যেসব পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ছাড় দেবে, সেসব পণ্যের ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশকে ছাড় দেওয়া যাবে না। তবে এটি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মোস্ট-ফেভার্ড ন্যাশন (এমএফএন) নীতির বিরোধী হওয়ায় মানতে নারাজ বাংলাদেশ।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ দরকষাকষির চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তিন দফা খসড়া বিনিময় হয়েছে। খসড়ার ওপর চারটি বৈঠক হলো। আরও একটি হতে যাচ্ছে। এছাড়া গত ২ এপ্রিলের পর এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ দফা বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছে। অন্য কোনো দেশ এত যোগাযোগ করেছে বলে আমারা জানা নেই। দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই উভয় দেশের সম্মতিতে চুক্তি করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন শর্তের কারণেই এখন পর্যন্ত কোনো দেশই চুক্তি করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
ইন্দোনেশিয়া চুক্তির বিষয়ে এগিয়ে থাকলেও কঠিন শর্তের কারণে দুই সপ্তাহ আগে তারা জানিয়ে দিয়েছে, এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা কোনো চুক্তি করবে না। তবে বিবিসি ও সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, শুল্ক ইস্যুতে ভিয়েতনামের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত বুধবার ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছেন, ভিয়েতনাম থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। অন্যদিকে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে কোনো শুল্ক আরোপ করবে না।
গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করা হয় ৩৭ শতাংশ। তবে ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট। এর মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৮ জুলাই। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে।
আলোচনা চলমান থাকায় স্থগিতাদেশ আগামী ৮ জুলাই শেষ হয়ে গেলেও বাড়তি শুল্ক কর্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।