গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সেনানিবাসে আশ্রয় গ্রহণকারী প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর অবস্থান
Published: 22nd, May 2025 GMT
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সেনানিবাসে আশ্রয় গ্রহণকারী প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে সেনাবাহিনী।
বৃহস্পতিবার আইএসপিরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতনের পর কতিপয় কুচক্রী মহলের তৎপরতায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। ফলশ্রুতিতে, সরকারি দপ্তর, থানাসমূহে হামলা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপর আক্রমণ ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মব জাস্টিস, চুরি, ডাকাতিসহ বিবিধ বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এ ধরনের সংবেদনশীল ও নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকদের মনে নিরাপত্তাহীনতার জন্ম নেয়।এমতাবস্থায়, ঢাকাসহ দেশের প্রায় সকল সেনানিবাসে প্রাণ রক্ষার্থে কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার নাগরিকগণ আশ্রয় প্রার্থনা করেন। উদ্ভূত আকস্মিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সেনানিবাসে আশ্রয়প্রার্থীদের পরিচয় যাচাই বাছাই করার চাইতে তাদের জীবন রক্ষা করা প্রাধান্য পেয়েছিল। এ প্রেক্ষিতে, ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ০৫ জন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিবিধ ১২ জন ও ৫১ জন পরিবার পরিজন (স্ত্রী ও শিশু) সহ সর্বমোট ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় প্রদান করা হয়েছিল।’
এতে বলা হয়, সেসময়ে শুধু মানবিক দায়বদ্ধতার কারণে আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন রক্ষা করাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। পরিস্থিতি উন্নয়ন সাপেক্ষে, আশ্রয় গ্রহণকারীদের বেশিরভাগই ১/২ দিনের মধ্যেই সেনানিবাস ত্যাগ করেন এবং এর মধ্যে ০৫ জনকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ/মামলার ভিত্তিতে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট হস্তান্তর করা হয়।’
এতে বলা হয়, ‘সেনানিবাসে অবস্থানকারী ও আশ্রয় প্রার্থীদের ব্যাপারে গত ১৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে আইএসপিআর আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং একই দিনে ১৯৩ জন ব্যক্তিবর্গের একটি তালিকা (৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্য ব্যতীত) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করা হয়- যা ছিল একটি মীমাংসিত বিষয়। সেনানিবাসে আশ্রয়প্রার্থী এসব ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা ও জীবন রক্ষার্থে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাময়িক আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল।’
আইএসপিরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তৎকালীন বিরাজমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়িয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সেনানিবাসের অভ্যন্তরে প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয় গ্রহণকারী ৬২৬ জন ব্যক্তিবর্গের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা (৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্যসহ) এই প্রেস বিজ্ঞপ্তির সাথে সংযুক্ত করা হলো।’
এতে আরও বলা হয়, এমতাবস্থায় সকলকে এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও আস্থার সাথে জাতির পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন পর স থ ত রক ষ র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
টেলিযোগাযোগ লাইসেন্স নিয়ে মাফিয়াদের রোষানলে পড়েছি: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ফয়েজ আহমদ তৈয়ব অভিযোগ করে বলেছেন, টেলিযোগাযোগ লাইসেন্সকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষী মাফিয়াদের রোষানলে পড়েছি।
সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, বিটিআরসি এবং ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগ বর্তমানে একটি নতুন প্রজন্মের টেলিকম লাইসেন্স পলিসি নিয়ে কাজ করছে, যা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন আইটিইউ এবং জিএসএমএসহ প্রত্যেক আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থার প্রধানতম নির্দেশনা। এখানে বিশ্বে অপ্রচলিত এ রকম লাইসেন্সসমূহকে ডিসকন্টিনিউ করার এবং বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ লাইসেন্স কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার একটা চেষ্টা হচ্ছে। এরপর থেকেই, কতিপয় মিডিয়া এবং স্বার্থান্বেষী কমিউনিকেশন মাফিয়াদের রোষানলে পড়েছি।’
ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘বিগত সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক লং ডিসট্যান্স টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিসেস (আইএলডিটিএস) নীতি চালু করে। এই নীতি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের (এমএনও) কার্যক্রমের সুযোগকে ব্যাপকভাবে সীমিত করে। তৎকালীন আওয়ামী সরকার মূলত রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে একের পর এক লাইসেন্স প্রদান করে, যারা এখনো সক্রিয় রয়েছে।’
টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসির খসড়া সম্পর্কে বলা তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি-২০২৫ নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে, নতুন খসড়ায় সেগুলোর সুস্পষ্ট উত্তর রয়েছে। যেমন, এসএমইদের (ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা) প্রোটেকশন করা, আইএসপিদের যথাসম্ভব ডিরেগুলেট (নিয়ন্ত্রণমুক্ত) করে লাইট টাচ লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আমরা তাদের (আইএসপি) পুরোপুরি ডিরেগুলেট (নিয়ন্ত্রণমুক্ত) চেয়েছিলাম, কিন্তু তারাই (আইএসপি) আবার এটা চাচ্ছে না। কারণ, তারা (আইএসপি) লাইসেন্সের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণের সুবিধাটা পেতে চায়। সে জন্য তারা পুরোপুরি ডিরেগুলেট হতে চায় না। তাদের অনুরোধেই আমরা একটা লাইট টাচ লাইসেন্সের আওতায় তাদের এনেছি। এ ছাড়া, ডেটা সেন্টার, ক্লাউড পলিসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে আমরা ডিরেগুলেশনে গিয়েছি।’
ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘ডেটা স্ট্রাকচারের অনেকগুলো স্তরে সামান্য বিনিয়োগ করে, সামান্য ভ্যালু অ্যাড করে যারা অনেক অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল, তাদের আমরা বাদ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছি। অর্থাৎ, সামান্য কিছু টাকার অবকাঠামো নিয়ে যারা অনেক টাকা সরিয়ে নিচ্ছিল এই খাত থেকে, আমরা সেই লাইসেন্সগুলো যৌক্তিকভাবে রিমুভ করার চেষ্টা করেছি।’
ফয়েজ আহমদ দাবি করেন, বাংলাদেশে যে পলিসি আছে এ ধরনের পলিসি বিশ্বের কোথাও নেই। তিনি বলেন, ‘আইসিএক্স নামে যে লাইসেন্সগুলো আছে বা নিক্স নামে একটা লাইসেন্স আছে, এই ধরনের লাইসেন্স বিশ্বের কোথাও নেই। এগুলো হয়েছে ২০০৭-০৮ সময়ে বিটিআরসির মনিটরিংয়ের অক্ষমতা ছিল, সেই কারণে কোম্পানিগুলো চুরি-জালিয়াতি করেছে। সেগুলোকে অজুহাত করে কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি স্থাপন করে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
বিশেষ সহকারী জানান, আইসিএক্স স্তর থাকার জন্য গ্রাহকের প্রতি কলে প্রতি মিনিটে ৫ পয়সা করে খরচ বেড়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা এমএনওদের অনুরোধ জানাব যেন তারা গ্রাহকের কলের রেট অ্যাডজাস্ট করেন। কারণ সাপ্লাই ডিমান্ড কার্ভ ইকোনমিকস এর একটি বেসিক ল। এভাবে আমরা টেলিকম পলিসি ২০২৫-এর মাধ্যমে প্রতিটি স্তরের সুবিধা গ্রাহকদের কাছে দৃশ্যমান করতে চাই।’
ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে আইটিইউ (আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন) এবং জিএসএমএ (মোবাইল অপারেটরদের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম) একটা সহজ লাইসেন্সিং ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের সরকারকে ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সেটা করেনি।’
টেলি যোগাযোগ খাতে বিগত সরকারের অনিয়ম দুর্নীতির উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ‘২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে সাতটি আইজিডব্লিউ অপারেটর আইওএফ (IGW Operators Forum) নামে একটি কার্টেল গঠন করে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ওই সময় বিটিআরসি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আইওএফকে বৈধতা দিতে এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালু রাখে, যা প্রায় ১২ বছরব্যাপী পরীক্ষামূলকই ছিল। মোবাইল অপারেটরদের সরাসরি আন্তর্জাতিক কল আনতে নিষিদ্ধ করা হয়, যেখানে আইওএফগুলো প্রতি মিনিটে ০.০৩ ডলারে কল টার্মিনেট করলেও রাজস্ব ঘোষণা করত মাত্র ০.০০৬ ডলার। ২০২৪ সাল নাগাদ প্রকৃত টার্মিনেশন রেট ০.০০১ ডলারে নেমে এলেও আইওএফগুলো প্রতি মিনিটে মাত্র ০.০০০৪ ডলারই ঘোষণা করতে থাকে। এই ব্যবধান গত ১২ বছরে সরকারের ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব ক্ষতির কারণ হয়েছে। এ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতির পুরোটাই সালমান এফ রহমান গংদের পকেটে ঢুকেছে।’
ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘অতিসম্প্রতি একটি পত্রিকায় ডিও লেটার দিয়ে দুদকের তদন্ত থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। বিষয়টি আদৌ সত্য নয়। মূলত সেই ডিও লেটার দিয়ে দুদকের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।’