Samakal:
2025-11-03@07:56:32 GMT

ঋণনীতির দুর্বলতা ও দাওয়াই 

Published: 23rd, May 2025 GMT

ঋণনীতির দুর্বলতা ও দাওয়াই 

দেশের অর্থনীতিতে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উপখাতের (সিএমএসএমই) অবদান বৃদ্ধি, বর্ধিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৭ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্ভুক্ত বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্তে এর সূচনায় উল্লিখিত তিন মূল লক্ষ্য (অর্থনীতিতে অবদান বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন) গতিশীলতা খুঁজে পাবে। বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি উভয় খাতের ব্যাংকের এ উপখাতে ঋণপ্রবাহ কিছুটা হলেও বাড়বে, যা এই মুহূর্তে চাপে থাকা অর্থনীতির জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি বিবেচনা থেকে দেখতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নীতিনির্দেশনায় থাকা ত্রুটি ও দুর্বলতা বহাল রেখে এ উপখাতের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অথচ উপেক্ষিত উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছা সম্ভব হবে না। অবশ্য মূল দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নয়; ত্রুটিপূর্ণ নীতিগুলো গৃহীত হয়েছে জাতীয় শিল্পনীতির নির্দেশনা অনুযায়ী। ফলে মূল দায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু দায় যারই হোক, ফলাফলই মূল বিবেচ্য।

সিএমএসএমই ঋণনীতির প্রথম ত্রুটি ধারণাগত; জাতীয় শিল্পনীতিতে শিল্প খাতকে বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র, মাইক্রো, কুটির– এমন বহুভাগে বিভক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জটিল করে তুলেছে। উদ্যোক্তাদের মধ্যেও বিভ্রান্তি ও অস্পষ্টতা সৃষ্টি করছে। এটিকে শুধু এসএমই উপখাত হিসেবে চিহ্নিত করাই ছিল যুক্তিযুক্ত। 

উল্লেখ্য, আগে শিল্প খাতে মাত্র তিনটি ভাগ ছিল– বৃহৎ, ক্ষুদ্র ও কুটির। কিন্তু ২০০১ সালে এসে বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র, মাইক্রো ও কুটির– এমন পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিটিকে আবার বিনিয়োগসীমা ও কর্মসংস্থান, এমন দ্বিবিধ মানদণ্ডে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে চরম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। তদুপরি রয়েছে উৎপাদন ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডের বিভাজন। জটিলতাপূর্ণ সংজ্ঞা ও সীমা বিভাজনে বাণিজ্য সনদ, নিবন্ধন, ঋণ, কর-শুল্ক মওকুফ সুবিধা, প্রণোদনা, নগদ ভর্তুকি ইত্যাদি দিতে গিয়ে নানা জটিলতায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ঋণদানকারী সংস্থা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮৫৪ বিলিয়ন টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর সিংহভাগেরই গ্রহীতা সেবা খাত। বিতরণকৃত ঋণের খুব সামান্য অংশই গিয়েছে উৎপাদন খাতে। এতে অবশ্য শিল্পনীতিতে উল্লিখিত সংজ্ঞা অনুযায়ী নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। মনে রাখা দরকার, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি বিকাশ ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে উৎপাদনমূলক শিল্পে বিনিয়োগই হওয়া উচিত অগ্রাধিকার।

শিল্পনীতিতে প্রদত্ত সংজ্ঞার ফাঁক গলিয়ে সিএমএসএমই উপখাতের সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার বঞ্চনার ঘটনা আরও রয়েছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী ৭৫ লাখ থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগধারী সব শিল্পই ক্ষুদ্র শিল্প। বেসিক ব্যাংকের গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতায় আছে যে, ব্যাংকটিকে তার বিনিয়োগযোগ্য ঋণ তহবিলের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে দিতে হবে। এখন বেসিক ব্যাংক যদি এ খাতে প্রদেয় ঋণের অধিকাংশই ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগসীমার প্রকল্পকে দেয়, তাহলেও এই বাধ্যবাধকতা পূরণ হয়ে যায়। বাস্তবে হচ্ছেও তাই। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকার নিম্ন পর্যায়ের বিনিয়োগে আগ্রহী যেসব নবীন বা গ্রামীণ উদ্যোক্তা রয়েছেন, তারা কোথায় ঋণ পাবেন? তারা তা পাচ্ছেনও না; রাষ্ট্র তাদের নিয়ে খুব একটা ভাবছেও না। একই ঘটনা ঘটছে অন্যান্য ব্যাংকেও। এ অবস্থায় ঋণনীতির এই ত্রুটি সংশোধনে ক্ষুদ্র শিল্পে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা ১৫ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৫ কোটি এবং মাঝারি শিল্পের ঊর্ধ্বসীমা ৩০ কোটি থেকে কমিয়ে ১৫ কোটি টাকা করা উচিত।

আবার শহর, উপশহর ও আধা শহরের উদ্যোক্তারাই ঋণদাতাদের পছন্দ ও অগ্রাধিকারের শীর্ষে। কারণ এটি প্রকল্প এলাকায় ব্যাংককর্মীদের যাতায়াতের ক্লেশ, সময় ও ব্যয় কমায়। যদিও তারা এর দায় চাপান গ্রামীণ অবকাঠামোর অনগ্রসরতার ওপর। পণ্য বা সেবার চাহিদা যাচাই কাজটি দক্ষতা ও দূরদৃষ্টির সঙ্গে করতে পারলে অবকাঠামোগত পশ্চাৎপদতা উতরে যাওয়া সম্ভব।

ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এটাও ভাবে, সৃজনশীল সম্ভাবনাময় প্রকল্পের চিন্তা শুধু উদ্যোক্তার কাছ থেকেই আসবে; ঋণকর্মীর কাজ শুধু ঋণ দেওয়া ও আদায় করা। কিন্তু ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থেও সম্ভাবনাময় সৃজনশীল প্রকল্প খুঁজে বের করা দরকার।

প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ঋণ দানকারী সংস্থা সিএমএসএমই উপখাতে অর্থায়নে ভালো বিনিয়োগ প্রস্তাব ও সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা খুঁজে পেতে পারে কীভাবে? একটি সম্ভাবনাময় প্রকল্পও সঠিক উদ্যোক্তার হাতে না পড়লে অলাভজনক হয়ে উঠতে পারে। আবার উদ্যোক্তা যত ভালোই হোক; প্রকল্প যদি যথেষ্ট সম্ভাবনাময় না হয় তাহলে তাঁর ব্যক্তিগত নিষ্ঠা ও দক্ষতা শেষ পর্যন্ত কোনো কাজেই আসবে না। অতএব, বিনিয়োগের আগে ভালো প্রকল্পের সঙ্গে ভালো উদ্যোক্তার সুসমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।

যেসব প্রকল্প নিয়ে ঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে আসে, সেটাকে আরও মানসম্মত করে তুলতে উদ্যোক্তাকে বাড়তি তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা যেতে পারে। সমস্যা হচ্ছে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কাছে এ ধরনের তথ্য ও পরামর্শ দেওয়ার মতো লোকবলই নেই।

সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে সিএমএসএমই উপখাতের অবদান বাড়াতে; বর্ধিত সংখ্যক গ্রামীণ উদ্যোক্তাকে যুক্ত করতে; শিক্ষিত তরুণদের উদ্যোক্তাবৃত্তিতে আকৃষ্ট করতে; সেবা খাতের তুলনায় উৎপাদন খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহদানে জাতীয় শিল্পনীতি তথা সিএমএসএমই ঋণনীতি সংশোধন জরুরি। কাজটি করতে 
পারলে সবচেয়ে লাভবান হবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উপখাতের উদ্যোক্তারা। বিশেষত শিক্ষিত তরুণ ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। কিন্তু বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী নীতিনির্ধারকরা নীতি কাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে রাজি হবেন তো?

আবু তাহের খান: অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি; সাবেক পরিচালক, বিসিক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল পকল স এমএসএমই প রকল প ১৫ ক ট

এছাড়াও পড়ুন:

সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্

ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র‌্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।

সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ

চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।

জিইও কী?

জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!

এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল

অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।

* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া

* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর

* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি

* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ

এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে। 

গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)

তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।

মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।

জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।

১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন

জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’

যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।

২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন

জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।

গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন-  ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।

বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।

E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।

এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন

এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন

এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন

ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র‌্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।

এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।

দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।

বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা

জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র‌্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।

আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে- 

‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’

অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’

যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।

বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।

এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।

জিইও’র ভবিষ্যৎ

খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।

তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।

উপসংহার

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।

এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।

‘ভবিষ্যতের সার্চে র‌্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’

লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ