দেশের অর্থনীতিতে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উপখাতের (সিএমএসএমই) অবদান বৃদ্ধি, বর্ধিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৭ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্ভুক্ত বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্তে এর সূচনায় উল্লিখিত তিন মূল লক্ষ্য (অর্থনীতিতে অবদান বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন) গতিশীলতা খুঁজে পাবে। বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি উভয় খাতের ব্যাংকের এ উপখাতে ঋণপ্রবাহ কিছুটা হলেও বাড়বে, যা এই মুহূর্তে চাপে থাকা অর্থনীতির জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি বিবেচনা থেকে দেখতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নীতিনির্দেশনায় থাকা ত্রুটি ও দুর্বলতা বহাল রেখে এ উপখাতের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অথচ উপেক্ষিত উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছা সম্ভব হবে না। অবশ্য মূল দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নয়; ত্রুটিপূর্ণ নীতিগুলো গৃহীত হয়েছে জাতীয় শিল্পনীতির নির্দেশনা অনুযায়ী। ফলে মূল দায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু দায় যারই হোক, ফলাফলই মূল বিবেচ্য।
সিএমএসএমই ঋণনীতির প্রথম ত্রুটি ধারণাগত; জাতীয় শিল্পনীতিতে শিল্প খাতকে বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র, মাইক্রো, কুটির– এমন বহুভাগে বিভক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জটিল করে তুলেছে। উদ্যোক্তাদের মধ্যেও বিভ্রান্তি ও অস্পষ্টতা সৃষ্টি করছে। এটিকে শুধু এসএমই উপখাত হিসেবে চিহ্নিত করাই ছিল যুক্তিযুক্ত।
উল্লেখ্য, আগে শিল্প খাতে মাত্র তিনটি ভাগ ছিল– বৃহৎ, ক্ষুদ্র ও কুটির। কিন্তু ২০০১ সালে এসে বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র, মাইক্রো ও কুটির– এমন পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিটিকে আবার বিনিয়োগসীমা ও কর্মসংস্থান, এমন দ্বিবিধ মানদণ্ডে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে চরম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। তদুপরি রয়েছে উৎপাদন ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডের বিভাজন। জটিলতাপূর্ণ সংজ্ঞা ও সীমা বিভাজনে বাণিজ্য সনদ, নিবন্ধন, ঋণ, কর-শুল্ক মওকুফ সুবিধা, প্রণোদনা, নগদ ভর্তুকি ইত্যাদি দিতে গিয়ে নানা জটিলতায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ঋণদানকারী সংস্থা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮৫৪ বিলিয়ন টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর সিংহভাগেরই গ্রহীতা সেবা খাত। বিতরণকৃত ঋণের খুব সামান্য অংশই গিয়েছে উৎপাদন খাতে। এতে অবশ্য শিল্পনীতিতে উল্লিখিত সংজ্ঞা অনুযায়ী নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। মনে রাখা দরকার, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি বিকাশ ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে উৎপাদনমূলক শিল্পে বিনিয়োগই হওয়া উচিত অগ্রাধিকার।
শিল্পনীতিতে প্রদত্ত সংজ্ঞার ফাঁক গলিয়ে সিএমএসএমই উপখাতের সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার বঞ্চনার ঘটনা আরও রয়েছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী ৭৫ লাখ থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগধারী সব শিল্পই ক্ষুদ্র শিল্প। বেসিক ব্যাংকের গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতায় আছে যে, ব্যাংকটিকে তার বিনিয়োগযোগ্য ঋণ তহবিলের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে দিতে হবে। এখন বেসিক ব্যাংক যদি এ খাতে প্রদেয় ঋণের অধিকাংশই ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগসীমার প্রকল্পকে দেয়, তাহলেও এই বাধ্যবাধকতা পূরণ হয়ে যায়। বাস্তবে হচ্ছেও তাই। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকার নিম্ন পর্যায়ের বিনিয়োগে আগ্রহী যেসব নবীন বা গ্রামীণ উদ্যোক্তা রয়েছেন, তারা কোথায় ঋণ পাবেন? তারা তা পাচ্ছেনও না; রাষ্ট্র তাদের নিয়ে খুব একটা ভাবছেও না। একই ঘটনা ঘটছে অন্যান্য ব্যাংকেও। এ অবস্থায় ঋণনীতির এই ত্রুটি সংশোধনে ক্ষুদ্র শিল্পে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা ১৫ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৫ কোটি এবং মাঝারি শিল্পের ঊর্ধ্বসীমা ৩০ কোটি থেকে কমিয়ে ১৫ কোটি টাকা করা উচিত।
আবার শহর, উপশহর ও আধা শহরের উদ্যোক্তারাই ঋণদাতাদের পছন্দ ও অগ্রাধিকারের শীর্ষে। কারণ এটি প্রকল্প এলাকায় ব্যাংককর্মীদের যাতায়াতের ক্লেশ, সময় ও ব্যয় কমায়। যদিও তারা এর দায় চাপান গ্রামীণ অবকাঠামোর অনগ্রসরতার ওপর। পণ্য বা সেবার চাহিদা যাচাই কাজটি দক্ষতা ও দূরদৃষ্টির সঙ্গে করতে পারলে অবকাঠামোগত পশ্চাৎপদতা উতরে যাওয়া সম্ভব।
ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এটাও ভাবে, সৃজনশীল সম্ভাবনাময় প্রকল্পের চিন্তা শুধু উদ্যোক্তার কাছ থেকেই আসবে; ঋণকর্মীর কাজ শুধু ঋণ দেওয়া ও আদায় করা। কিন্তু ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থেও সম্ভাবনাময় সৃজনশীল প্রকল্প খুঁজে বের করা দরকার।
প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ঋণ দানকারী সংস্থা সিএমএসএমই উপখাতে অর্থায়নে ভালো বিনিয়োগ প্রস্তাব ও সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা খুঁজে পেতে পারে কীভাবে? একটি সম্ভাবনাময় প্রকল্পও সঠিক উদ্যোক্তার হাতে না পড়লে অলাভজনক হয়ে উঠতে পারে। আবার উদ্যোক্তা যত ভালোই হোক; প্রকল্প যদি যথেষ্ট সম্ভাবনাময় না হয় তাহলে তাঁর ব্যক্তিগত নিষ্ঠা ও দক্ষতা শেষ পর্যন্ত কোনো কাজেই আসবে না। অতএব, বিনিয়োগের আগে ভালো প্রকল্পের সঙ্গে ভালো উদ্যোক্তার সুসমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।
যেসব প্রকল্প নিয়ে ঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে আসে, সেটাকে আরও মানসম্মত করে তুলতে উদ্যোক্তাকে বাড়তি তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা যেতে পারে। সমস্যা হচ্ছে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কাছে এ ধরনের তথ্য ও পরামর্শ দেওয়ার মতো লোকবলই নেই।
সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে সিএমএসএমই উপখাতের অবদান বাড়াতে; বর্ধিত সংখ্যক গ্রামীণ উদ্যোক্তাকে যুক্ত করতে; শিক্ষিত তরুণদের উদ্যোক্তাবৃত্তিতে আকৃষ্ট করতে; সেবা খাতের তুলনায় উৎপাদন খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহদানে জাতীয় শিল্পনীতি তথা সিএমএসএমই ঋণনীতি সংশোধন জরুরি। কাজটি করতে
পারলে সবচেয়ে লাভবান হবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উপখাতের উদ্যোক্তারা। বিশেষত শিক্ষিত তরুণ ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। কিন্তু বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী নীতিনির্ধারকরা নীতি কাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে রাজি হবেন তো?
আবু তাহের খান: অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি; সাবেক পরিচালক, বিসিক
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল পকল স এমএসএমই প রকল প ১৫ ক ট
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণনীতির দুর্বলতা ও দাওয়াই
দেশের অর্থনীতিতে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উপখাতের (সিএমএসএমই) অবদান বৃদ্ধি, বর্ধিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৭ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্ভুক্ত বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্তে এর সূচনায় উল্লিখিত তিন মূল লক্ষ্য (অর্থনীতিতে অবদান বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন) গতিশীলতা খুঁজে পাবে। বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি উভয় খাতের ব্যাংকের এ উপখাতে ঋণপ্রবাহ কিছুটা হলেও বাড়বে, যা এই মুহূর্তে চাপে থাকা অর্থনীতির জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি বিবেচনা থেকে দেখতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নীতিনির্দেশনায় থাকা ত্রুটি ও দুর্বলতা বহাল রেখে এ উপখাতের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অথচ উপেক্ষিত উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছা সম্ভব হবে না। অবশ্য মূল দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নয়; ত্রুটিপূর্ণ নীতিগুলো গৃহীত হয়েছে জাতীয় শিল্পনীতির নির্দেশনা অনুযায়ী। ফলে মূল দায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু দায় যারই হোক, ফলাফলই মূল বিবেচ্য।
সিএমএসএমই ঋণনীতির প্রথম ত্রুটি ধারণাগত; জাতীয় শিল্পনীতিতে শিল্প খাতকে বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র, মাইক্রো, কুটির– এমন বহুভাগে বিভক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জটিল করে তুলেছে। উদ্যোক্তাদের মধ্যেও বিভ্রান্তি ও অস্পষ্টতা সৃষ্টি করছে। এটিকে শুধু এসএমই উপখাত হিসেবে চিহ্নিত করাই ছিল যুক্তিযুক্ত।
উল্লেখ্য, আগে শিল্প খাতে মাত্র তিনটি ভাগ ছিল– বৃহৎ, ক্ষুদ্র ও কুটির। কিন্তু ২০০১ সালে এসে বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র, মাইক্রো ও কুটির– এমন পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিটিকে আবার বিনিয়োগসীমা ও কর্মসংস্থান, এমন দ্বিবিধ মানদণ্ডে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে চরম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। তদুপরি রয়েছে উৎপাদন ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডের বিভাজন। জটিলতাপূর্ণ সংজ্ঞা ও সীমা বিভাজনে বাণিজ্য সনদ, নিবন্ধন, ঋণ, কর-শুল্ক মওকুফ সুবিধা, প্রণোদনা, নগদ ভর্তুকি ইত্যাদি দিতে গিয়ে নানা জটিলতায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ঋণদানকারী সংস্থা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮৫৪ বিলিয়ন টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর সিংহভাগেরই গ্রহীতা সেবা খাত। বিতরণকৃত ঋণের খুব সামান্য অংশই গিয়েছে উৎপাদন খাতে। এতে অবশ্য শিল্পনীতিতে উল্লিখিত সংজ্ঞা অনুযায়ী নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। মনে রাখা দরকার, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি বিকাশ ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে উৎপাদনমূলক শিল্পে বিনিয়োগই হওয়া উচিত অগ্রাধিকার।
শিল্পনীতিতে প্রদত্ত সংজ্ঞার ফাঁক গলিয়ে সিএমএসএমই উপখাতের সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার বঞ্চনার ঘটনা আরও রয়েছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী ৭৫ লাখ থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগধারী সব শিল্পই ক্ষুদ্র শিল্প। বেসিক ব্যাংকের গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতায় আছে যে, ব্যাংকটিকে তার বিনিয়োগযোগ্য ঋণ তহবিলের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে দিতে হবে। এখন বেসিক ব্যাংক যদি এ খাতে প্রদেয় ঋণের অধিকাংশই ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগসীমার প্রকল্পকে দেয়, তাহলেও এই বাধ্যবাধকতা পূরণ হয়ে যায়। বাস্তবে হচ্ছেও তাই। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকার নিম্ন পর্যায়ের বিনিয়োগে আগ্রহী যেসব নবীন বা গ্রামীণ উদ্যোক্তা রয়েছেন, তারা কোথায় ঋণ পাবেন? তারা তা পাচ্ছেনও না; রাষ্ট্র তাদের নিয়ে খুব একটা ভাবছেও না। একই ঘটনা ঘটছে অন্যান্য ব্যাংকেও। এ অবস্থায় ঋণনীতির এই ত্রুটি সংশোধনে ক্ষুদ্র শিল্পে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা ১৫ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৫ কোটি এবং মাঝারি শিল্পের ঊর্ধ্বসীমা ৩০ কোটি থেকে কমিয়ে ১৫ কোটি টাকা করা উচিত।
আবার শহর, উপশহর ও আধা শহরের উদ্যোক্তারাই ঋণদাতাদের পছন্দ ও অগ্রাধিকারের শীর্ষে। কারণ এটি প্রকল্প এলাকায় ব্যাংককর্মীদের যাতায়াতের ক্লেশ, সময় ও ব্যয় কমায়। যদিও তারা এর দায় চাপান গ্রামীণ অবকাঠামোর অনগ্রসরতার ওপর। পণ্য বা সেবার চাহিদা যাচাই কাজটি দক্ষতা ও দূরদৃষ্টির সঙ্গে করতে পারলে অবকাঠামোগত পশ্চাৎপদতা উতরে যাওয়া সম্ভব।
ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এটাও ভাবে, সৃজনশীল সম্ভাবনাময় প্রকল্পের চিন্তা শুধু উদ্যোক্তার কাছ থেকেই আসবে; ঋণকর্মীর কাজ শুধু ঋণ দেওয়া ও আদায় করা। কিন্তু ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থেও সম্ভাবনাময় সৃজনশীল প্রকল্প খুঁজে বের করা দরকার।
প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ঋণ দানকারী সংস্থা সিএমএসএমই উপখাতে অর্থায়নে ভালো বিনিয়োগ প্রস্তাব ও সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা খুঁজে পেতে পারে কীভাবে? একটি সম্ভাবনাময় প্রকল্পও সঠিক উদ্যোক্তার হাতে না পড়লে অলাভজনক হয়ে উঠতে পারে। আবার উদ্যোক্তা যত ভালোই হোক; প্রকল্প যদি যথেষ্ট সম্ভাবনাময় না হয় তাহলে তাঁর ব্যক্তিগত নিষ্ঠা ও দক্ষতা শেষ পর্যন্ত কোনো কাজেই আসবে না। অতএব, বিনিয়োগের আগে ভালো প্রকল্পের সঙ্গে ভালো উদ্যোক্তার সুসমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।
যেসব প্রকল্প নিয়ে ঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে আসে, সেটাকে আরও মানসম্মত করে তুলতে উদ্যোক্তাকে বাড়তি তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা যেতে পারে। সমস্যা হচ্ছে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কাছে এ ধরনের তথ্য ও পরামর্শ দেওয়ার মতো লোকবলই নেই।
সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে সিএমএসএমই উপখাতের অবদান বাড়াতে; বর্ধিত সংখ্যক গ্রামীণ উদ্যোক্তাকে যুক্ত করতে; শিক্ষিত তরুণদের উদ্যোক্তাবৃত্তিতে আকৃষ্ট করতে; সেবা খাতের তুলনায় উৎপাদন খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহদানে জাতীয় শিল্পনীতি তথা সিএমএসএমই ঋণনীতি সংশোধন জরুরি। কাজটি করতে
পারলে সবচেয়ে লাভবান হবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উপখাতের উদ্যোক্তারা। বিশেষত শিক্ষিত তরুণ ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। কিন্তু বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী নীতিনির্ধারকরা নীতি কাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে রাজি হবেন তো?
আবু তাহের খান: অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি; সাবেক পরিচালক, বিসিক