দুই যুগেও হয়নি ডাম্পিং স্টেশন ময়লা-ধোঁয়ায় নাকাল মানুষ
Published: 23rd, May 2025 GMT
‘প্রতিদিন বাড়ি থেকে কাজে বের হয়ে পৌর এলাকার সবচেয়ে বড় ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় পার হতে হয়। এখানে বর্জ্য পোড়ানোর কারণে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। যাওয়া-আসার পথে ধোঁয়া আর দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয় পথচারীদের।’ কথাগুলো কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌরসভার সাইলচর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের। তাঁর প্রশ্ন, এ অবস্থা আর কতদিন চলবে?
উপজেলার দেবিদ্বার ইউনিয়ন নিয়ে ২০০২ সালে গঠিত হয় পৌরসভা। এর পর দুই যুগ পার হলেও নির্মাণ হয়নি ডাম্পিং স্টেশন। ফলে প্রতিদিন শহরের ঘরোয়া ও বাণিজ্যিক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খোলা জায়গা ও সড়কের পাশে। এসব জায়গা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ; বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
উন্মুক্ত স্থানে স্তূপ করে রাখা বর্জ্য আগুনে পোড়ানোর কারণে সৃষ্ট ধোঁয়া বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী বর্জ্য বা তার অংশ খোলা অবস্থায় সংরক্ষণ বা পোড়ানো নিষেধ। রাস্তা, সড়ক, মহাসড়কের পাশেও পোড়ানো যাবে না। এটি ভঙ্গ করলে শাস্তির বিধান রয়েছে।
পৌরসভা থেকে জানা গেছে, পৌর এলাকায় প্রতি বছর কঠিন বর্জ্য উৎপাদন হয় অন্তত তিন হাজার ৬৫০ টন। এর মধ্যে অব্যবস্থিত কঠিন বর্জ্য ১ হাজার ৮৮৫ টন। ৮৪ দশমিক ২৫ শতাংশ পরিবার তাদের বর্জ্য সরাসরি খোলা স্থানে ফেলে। মাত্র ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ পরিবার ডাস্টবিন ব্যবহার করে। পৌর কর্তৃপক্ষ বর্জ্য সংগ্রহ করে সাইলচর এলাকায় নির্ধারিত স্থানে পুড়িয়ে ফেলে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পৌর এলাকার ফতেহাবাদে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণে এক একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মাস্টার এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। চলতি বছরের জুন মাসে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও সরকারের পতনের পর কাজটি করতে অপারগতা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। এর পর টার্ন এন্টারপ্রাইজ নামে অপর প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সময়ও বাড়ানো হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিদিনপৌর এলাকায় বিপুল পরিমাণ বর্জ্য জমা হয়। এর বড় অংশ ফেলা হয় কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে। হাসপাতাল, শান্তি ও চান্দিনা রোড এলাকায়ও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ফলে মশা-মাছি ও পোকার উপদ্রব ভোগাচ্ছে মানুষের।
এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, প্রচণ্ড দুর্গন্ধে মানুষের চলাচল কষ্টকর হয়ে গেছে। বর্ষাকালে কাদায় ভরে যায়। বাড়ে মশার উপদ্রব। দুই যুগ ধরে বাসিন্দারা পৌর বর্জ্য, কাদা আর দুর্গন্ধ নিয়ে দিন কাটাচ্ছে বলে অভিযোগ নাগরিক অধিকার সংগঠন ‘হ্যালো ২১২’-এর সভাপতি কাজী নাছিরের। তাঁর ভাষ্য, ‘আধুনিক ডাম্পিং স্টেশন সময়ের দাবি।’
হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট সুদীপ রায় বলেন, হাসপাতাল ও শান্তি রোড এক সময় দেবিদ্বারের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন আবাসিক এলাকা ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর সংযোগস্থলে যত্রতত্র ময়লা ফেলার কারণে এলাকায় সারাবছর দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বর্ষাকালে ময়লা ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায়।
উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য পোড়ালে কার্বন মনোক্সাইড, ডাই-অক্সিনসহ বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা মানুষের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করে। এমন তথ্য জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা.
পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল হক বলেন, ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ সম্পন্ন হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরবে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী অর্জিন চাকমা বলেন, ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণে নতুন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প র এল ক এল ক য় বর জ য
এছাড়াও পড়ুন:
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এ অশ্লীলতার অভিযোগ, নির্মাতা-শিল্পীদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ
জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’–এর পঞ্চম সিজনের কয়েকটি পর্বে অশ্লীলতা, সামাজিক অবক্ষয় এবং নৈতিক বিচ্যুতির অভিযোগ তুলে নির্মাতা ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহি উদ্দিন গতকাল (৮ জুলাই) এ নোটিশটি পাঠান।
নোটিশে নাটকের নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি, অভিনেতা মারজুক রাসেল, জিয়াউল হক পলাশ, সাইদুর রহমান পাভেল, শিমুল শর্মা এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বুম ফিল্মস–এর নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট সিজন ৫’-এর প্রথম থেকে অষ্টম পর্ব পর্যন্ত এমন অনেক সংলাপ রয়েছে যা ‘অশ্লীল, ডাবল মিনিং এবং কিশোর-তরুণদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’
নোটিশে উদাহরণ হিসেবে নাটকের কিছু সংলাপ তুলে ধরা হয়েছে, যেমন, ‘ডেট’, ‘উনিশ/বিশ’, ‘টাকা হলে সীসা খেতে পারতাম’, ‘বাঙালি পোশাক লুঙ্গি’, ‘ফিমেল’, ‘কিডনি’, ‘দই’-এই শব্দ ও সংলাপগুলোকে ‘নৈতিকতা, শালীনতা ও পারিবারিক রুচির পরিপন্থী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনজীবীর দাবি, এগুলোর মাধ্যমে নারীদের অবমাননা করা হয়েছে এবং তরুণ প্রজন্মের মুখে এসব সংলাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা উদ্বেগজনক।
এছাড়া নোটিশে নির্মাতা কাজল আরেফিন অমির একটি পুরোনো সাক্ষাৎকারের কথা তুলে ধরা হয়, যেখানে তিনি বলেছিলেন—নাটকটি এখন সব বয়সী দর্শকের জন্য তৈরি হচ্ছে। তবে বাস্তবে নাটকের ভাষা, উপস্থাপন ও বিষয়বস্তু মোটেও পরিবারবান্ধব নয় বলে দাবি করেন নোটিশদাতা।
আইনি নোটিশে আরও বলা হয়, ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪’ এবং ‘জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৭’-এর আলোকে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে ক্ষতিকর কনটেন্ট প্রচার দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ এই নাটকের কিছু সংলাপ ও দৃশ্য সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে তরুণদের ভাষা ও আচরণে স্থায়ী ছাপ ফেলছে।
নোটিশে নাটকের বিতর্কিত সংলাপ ও ভিডিও ৭ কার্যদিবসের মধ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায়, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।