নেত্রকোনায় পোস্টার লাগানো নিয়ে বিএনপির দলীয় কোন্দলে একজন নিহত, আহত ৬
Published: 23rd, May 2025 GMT
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে বিএনপির এক পক্ষের হামলায় অন্য পক্ষের একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ছয়জন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের আব্বাছনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম শফিকুল ইসলাম ওরফে সফু (৪০)। তিনি আব্বাছনগর গ্রামের বাসিন্দা এবং কাঠের মিলে কাজ করতেন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হামিদুর রহমান (রাশেদ) আসন্ন ঈদ উপলক্ষে দুর্গাপুরে শুভেচ্ছা পোস্টার ও ছোট ছোট বিলবোর্ড পাঠান। তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা গতকাল দুপুরে দুর্গাপুর বাজারসহ স্থানীয় বিএনপি কার্যালয়ে সেই পোস্টার ও বিলবোর্ড লাগাতে যান। দুর্গাপুর পৌরসভার পুলিশ মোড় এলাকায় বিলবোর্ড টানানোর সময় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন এতে বাধা দেন। পরে হামিদুর রহমান বিষয়টি দুর্গাপুর থানা পুলিশকে লিখিতভাবে জানান। এতে জামাল উদ্দিন আরও ক্ষিপ্ত হন। পরে তাঁর নেতৃত্বে রাত সাড়ে আটটার দিকে ২৫-৩০টি মোটরসাইকেলে এক দল লোক আব্বাছনগর গ্রামে গিয়ে হামিদুর রহমানের গ্রামের বাড়িতে হামলা চালান। তাঁরা আব্বাছনগর বাজারেও হামলা এবং ভাঙচুর করে। হামলায় হামিদুর রহমানের ভাতিজা শফিকুল ইসলাম নিহত হন। এ সময় আরও ছয়জন আহত হন।
নিহত ব্যক্তির স্বজনদের অভিযোগ, জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে মোটরসাইকেল ও একটি পিকআপে করে দেশি অস্ত্র এনে হামলা চালানো হয়। একপর্যায়ে তাঁরা গুলি ছোড়েন। শফিকুল পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। খবর পেয়ে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানসহ পুলিশ সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
শাকিল নামের হামিদুর রহমানের এক ভাতিজা বলেন, ‘গতকাল বেলা দেড়টার দিকে দুর্গাপুর পৌরসভার পুলিশ মোড় এলাকায় বিলবোর্ড টানাতে গেলে জামাল উদ্দিন ও তাঁর লোকজন বাধা দেন। তাঁরা আমাদের ৪০টি বেলবোর্ড ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন। এরপর আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিই। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে রাতে জামাল উদ্দিন ও তাঁর সহযোগীরা আমাদের বাড়িঘরে হামলা ও আমার চাচাতো ভাই শফিকুলকে গুলি করে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
হামিদুর রহমান বিএনপির সাবেক হুইপ (পরে এলডিপি নেতা) আইনজীবী আবদুল করিম আব্বাছীর ভাতিজা। অপর পক্ষের জামাল উদ্দিন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইমাম হোসেন আবু চানের ছেলে।
এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত জামাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ওসি মাহমুদুলের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, গুলির ঘটনা ঘটেছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ ম দ র রহম ন ব এনপ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে চক্রান্ত করা হচ্ছে
অন্তর্বর্তী সরকারকে নানাভাবে ব্যর্থ করে দিতে ভারতীয় আধিপত্যবাদের দোসররা চক্রান্ত চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জুলাই ঐক্য নামের একটি প্ল্যাটফর্মের সংগঠকেরা। একই সঙ্গে সচিবালয় থেকে ভারতীয় আধিপত্যবাদীদের অপসারণ, ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালানো উপদেষ্টাদের অপসারণ এবং কালবিলম্ব না করে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদানের দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জুলাই ঐক্য আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়েছে।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে নানাভাবে ব্যর্থ করে দিতে চক্রান্ত চালাচ্ছে ভারতীয় আধিপত্যবাদের দোসররা। তারা এই সরকারকে ব্যর্থ করে দিয়ে জুলাইয়ের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে এই দেশকে আবারও ভারতীয় কর্তৃত্ববাদীদের হাতে তুলে দিতে চায়।
জুলাই ঐক্যের একজন কর্মী বা একজন জুলাই যোদ্ধা বেঁচে থাকতে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না মন্তব্য করে মুসাদ্দিক আলী বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ড. ইউনূস সাহেব (প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে থাকবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ড. ইউনূস সাহেবের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। আমরা আশা রাখি, তিনি ছাত্র–জনতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে উপদেষ্টা পরিষদকে সংস্কার করবেন।’
জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক মুসাদ্দিক আলী আরও বলেন, ‘কালবিলম্ব না করে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদান করতে হবে এবং এটাকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কোনো ধরনের টালবাহানা সারা দেশের ছাত্র–জনতা মেনে নেবে না।’
জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক আপ বাংলাদেশের প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, ‘আজকে জুলাই বিপ্লবের এতগুলো মাস পার হয়ে যাওয়ার পরেও আমাদেরকে রাজপথে কেন নামতে হচ্ছে, সেটা সবার কাছে পরিষ্কার। জুলাই যোদ্ধাদের যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা ছিল, সেগুলোর দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে, আমরা দেখতে পাচ্ছি তাঁরা ক্ষমতার কামড়াকামড়িতে লিপ্ত হয়েছেন।’
আবদুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলব, জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা শুধু নির্বাচন নির্বাচন করেন, আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতের ব্যাপারে আপনাদের মুখে কোনো কথা আমরা শুনছি না। আপনাদের এই নির্বাচনের স্বপ্ন, আমরা জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাস্তবায়ন হতে দেব না।’