৫ বছরে সাতছড়িতে গাড়িচাপায় শতাধিক প্রাণির মৃত্যু
Published: 23rd, May 2025 GMT
গত পাঁচ বছরে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া পুরাতন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়িচাপায় শতাধিক প্রাণি মারা গেছে। বহু প্রাণি আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছে।
সবশেষ মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেল ৩টার দিকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বিপন্ন প্রজাতির মুখপোড়া হনুমানের একটি বাচ্চা গাড়ির চাপায় মারা যায়। আহত হয় মা হনুমানটি। বন বিভাগ মৃত বাচ্চাটি উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। তবে আহত মা হনুমানটিকে খুঁজে পায়নি।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক এক সদস্য বলেন, “কয়েক বছরের মধ্যে গাড়িচাপায় ১২ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কিং কোবরা, একটি শঙ্খিনী সাপ, একটি কালনাগিনী সাপ, একটি চশমাপরা হনুমান, একটি মুখপোড়া হনুমান, একটি মায়া হরিণ ও কয়েকটি বানর মারা যাওয়ার পর আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এছাড়া আরও অনেক প্রাণি মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। গত পাঁচ বছরে দুর্ঘটনাজনিত কারণে মারা যাওয়া প্রাণির সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “স্থানীয়দের মতে-গাড়িচাপায় সবচেয়ে বেশি মারা যায় বানর। কারণ এরা রাস্তার পাশে বেশি ঘোরাফেরা করে। এছাড়া মারা যায় হনুমান, বন মোরগ, সজারু, বনরুই ও বিভিন্ন প্রজাতির সাপ।”
প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বর্তমানে ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তুর বসবাস। এর মধ্যে ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর প্রাণি এবং আরও প্রায় ২০০ প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে।
প্রাণির মৃত্যুর বিষয়ে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ সোসাইটির (ডব্লিউসিএস) সমন্বয়কারী সামিউল মোহসেনিন বলেন, “বনের ভেতর দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা থাকলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক রোড সাইন নেই। চালকরাও প্রাণির প্রতি সদয় আচরণ করেন না। ফলে দিন দিন প্রাণি মৃত্যুর হার বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে রোড সাইন বাড়ানোসহ জরুরি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই।”
তিনি আরও বলেন, “একটি জার্মান আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা সাতছড়িতে প্রাণি মৃত্যুর হার নির্ধারণে কাজ করছে। তারা এখানকার পরিস্থিতি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।”
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মীর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “সাতছড়িতে ঠিক কত প্রাণি মারা গেছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে অনেক প্রাণি যে গাড়িচাপায় মারা যাচ্ছে, তা সত্যি। মূলত সড়ক পরিবহন আইনে স্পিড ব্রেকার নির্মাণের বিধান না থাকায় এমনটা ঘটছে।”
তিনি দাবি করেন, “গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার প্রাণি মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান স্যারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিয়ে কিছু করার চেষ্টা করব।”
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন কয়েক শতাধিক বালু ও পাথরবোঝাই ট্রাক সাতছড়ি সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করে। এছাড়া বাস, ট্রাক ও ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন যানবাহন বেপরোয়া গতিতে বনের মধ্যবর্তী সড়ক ব্যবহার করছে, যা প্রাণি মৃত্যুর জন্য দায়ী।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ছয় মাস আগেও যানবাহনের নিচে চাপা পড়ে মুখপোড়া হনুমান মারা গিয়েছিল। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে মাত্র কয়েক জোড়া বিপন্ন হনুমান টিকে আছে। এভাবে একের পর এক হনুমান মারা গেলে সাতছড়ি থেকে বিলীন হয়ে যাবে এ প্রাণিটি।”
ঢাকা/মামুন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ স রক ষ হন ম ন স তছড়
এছাড়াও পড়ুন:
হাঁটা এবং সাইকেলবান্ধব সড়ক তৈরিতে তরুণ পদযাত্রা
হাঁটা এবং সাইকেলবান্ধব সড়ক তৈরিতে তরুণ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্ব সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আয়োজনে শুক্রবার (২৩ মে) সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সংসদ ভবনের দক্ষিণ দিকে (আসাদগেট-খামার বাড়ি মোড়) পর্যন্ত প্রধান সড়কে এই তরুণ পদযাত্রা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) রোড সেফটি পরিচালক শীতাংশু শেখর বিশ্বাস, উপ-পরিচালক মো. নাজমুল হক, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের উপ-পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের উপ-পরিচালক মুনতাসির মাহমুদ, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের রোড সেফটি প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প সমন্বয়কারী শরিফুল ইসলামসহ বিএরটিএ, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
আরো পড়ুন:
কোমর ব্যথা: নিয়মিত হাঁটার পরামর্শ ফিজিওথেরাপিস্টের
জাপানিজদের স্বাস্থ্য ভালো থাকার দুই কারণ
এছাড়া বিভিন্ন ইয়ুথ গ্রুপ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০০ তরুণ ও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, সড়কে যানজটের কারণে প্রতিদিন কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে হাঁটা ও সাইকেল চালানো একটি ভালো সমাধান হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন পথচারী ও সাইকেলবান্ধব নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো এবং তা নিশ্চতে ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
বক্তারা আরো বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ভালো রাখতে এবং সড়ক রোডক্র্যাশ হ্রাসে হাঁটা এবং সাইকেল চালানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
পদযাত্রায় আহ্ছানিয়া মিশন ইয়ুথ ফোরাম ফর হেল্থ এন্ড ওয়েলবিংয়ের সদস্য এস জেড অপু ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় সদর দপ্তর যুব কমিটির আহ্বায়ক মো. রায়হান রহমানের নেতৃত্বে উপস্থিত তরুণ সদস্যরা বিআরটিএ পরিচালক শীতাংশু শেখর বিশ্বাসের হাতে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের দাবি উত্তাপন এবং এ সংক্রান্ত স্বারকলিপি হস্তান্তর করেন।
ঢাকা/হাসান/সাইফ