জুলাইকে কুক্ষিগত করেছে এনসিপি, তাদের অনেকেই দুর্নীতিগ্রস্ত: ইনকিলাব মঞ্চ
Published: 24th, May 2025 GMT
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী বলেছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাইকে কুক্ষিগত করেছে। তাঁদের অনেকেই দুর্নীতিগ্রস্ত। জুলাইয়ের ঐক্য মূলত নষ্ট করেছে এনসিপি।
আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ওসমান হাদী এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকার অথবা জাতীয় ঐক্য কাউন্সিল গঠনের দাবি জানান ওসমান হাদী। তিনি বলেন, এই সরকার জুলাই গণহত্যার বিচার, মৌলিক সংস্কার ও দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের আয়োজন করবে।
জাতীয় সরকারের রূপরেখা উল্লেখ করে ওসমান হাদী বলেন, এই সরকারের প্রধান থাকবেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। যেখানে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি থাকবেন। তাঁরা মন্ত্রী বা উপদেষ্টা নয়, বরং ওয়াচডগ (পর্যবেক্ষক) হিসেবে কাজ করবেন। জাতীয় সরকার বা জাতীয় কাউন্সিল গঠনে বিএনপি, জামায়াত বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল অসহযোগিতা করলে তাদের জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
এই মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে উল্লেখ করে ওসমান হাদী বলেন, এমন পরিস্থিতির দায় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে।
উপদেষ্টাদের অনেকে আওয়ামী লীগের হয়ে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে ওসমান হাদী বলেন, ফ্যাসিস্ট পালালেও তার দোসররা এখনো পুলিশ থেকে প্রশাসনে বিরাজমান। এমনকি উপদেষ্টাদের অনেকের বক্তব্য বিভিন্ন সময়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে। উপদেষ্টাদের অনেকে চাইছেন, কোনোভাবে যাতে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে নিয়ে আসা যায়।
জুলাই ঘোষণাপত্র জারি না হলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কার্যকারিতা তৈরি হবে না উল্লেখ করে ওসমান হাদী বলেন, তারা চূড়ান্ত নিষিদ্ধ হবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় ট্রাইব্যুনালের রায়ের মাধ্যমে। কিন্তু তার আগে নির্বাচন হয়ে গেলে পরবর্তী যেকোনো রাজনৈতিক দল দিল্লির পরামর্শে আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে। তখন জুলাই–যোদ্ধাদের ধরে ধরে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা এই বিপদ থেকে মুক্তি পেতে জুলাই ঘোষণাপত্র চাই। আগামী এক সপ্তাহজুড়ে জুলাই ঘোষণাপত্রের জন্য আমরা জনগণের দ্বারে দ্বারে যাব।’
সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের নিশ্চয়তা না দিলে বাংলাদেশের কোনো বিচারক আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের রায় দেবে না উল্লেখ করে ওসমান হাদী বলেন, ‘এই কাজ অত্যন্ত বিপজ্জনক। কিন্তু আমরা মনে করি, আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও যদি এই দেশ বেঁচে যায়, তাহলে আমাদের আর কোনো আফসোস থাকবে না।’
উপদেষ্টাদের কেউ কেউ অধ্যাপক ইউনূসের ভাবমূর্তিকে ব্যবহার করে পাঁচ বছর পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চায় উল্লেখ করে ওসমান হাদী বলেন, উপদেষ্টাদের এমন মনোভাবই সরকারের জন্য কাল হয়েছে। সরকার এত সংস্কার কাদের নিয়ে করবে? তাদের প্রধান দায়িত্ব হলো, জুলাই গণহত্যার বিচার, মৌলিক সংস্কার ও দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন। সরকারকে অন্য বক্তব্য থকে বের হয়ে এসে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট দ র ওসম ন হ দ জন ত ক দ দ র অন ক র জন ত ক সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)