পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, শিল্প কারখানায় ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে দাম পরিশোধ করতে হবে। জলাধার ও নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং শিল্প কারখানার ব্যবহৃত পানি রি-ইউজ করতে বাধ্য করতে এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

শনিবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় গাজীপুর শহরের পিটিআই অডিটোরিয়ামে নদী ও জলাভূমি সিম্পোজিয়াম ২০২৫ এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ সব বলেন।

উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘আমরা ঢাকার চারটি নদী দখল-দূষণমুক্ত করার চুক্তি করে কর্মপরিকল্পনা দিয়ে যাব। কারণ এগুলো আমাদের সময় করতে পারব না৷ তবে আমাদের সময়ের মধ্যে তুরাগ নদীর পুনরুদ্ধার শুরু হবে।’’

আরো পড়ুন:

কিশোরগঞ্জে পানি উঠছে না নলকূপে, খাবার পানির তীব্র সংকট

ময়মনসিংহে বন্যা
ভারত সীমান্তবর্তী ৫০ গ্রাম প্লাবিত, আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ শতাধিক মানুষ

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতে নদী নিয়ে তথ্যবহুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘‘গাজীপুরের উপর দিয়ে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, বানার, চিলাই, লবণদহ, শালদহ, গোয়ালী, তুরাগ, বংশী, বালু, গোয়াল্লার, পারুলীসহ কয়েকটি ছোট নদী বয়ে গেছে। রয়েছে অনিন্দ সুন্দর বোলাই, মকশ বিলসহ কয়েকটি স্বাদু পানির জলাধার। দখলে-দূষণে বিপর্যস্ত থাকা সত্ত্বেও এখনো এসব নদী ও জলাধার নিজ জেলা তো বটেই আশপাশের অঞ্চলগুলোর সমাজ-সংস্কৃতিতে প্রভাব রেখে চলেছে। সমৃদ্ধ করছে ভূগর্ভস্থ পানি। সব ধরনের প্যারামিটারে গ্রহণযোগ্য মাত্রা এবং স্বাদের আলাদা ধরন ছিল এ অঞ্চলের পানির অনন্য বৈশিষ্ট। এছাড়া এসব নদী ছিল মৎস্য সম্পদের বিশাল ভাণ্ডার। গবেষণায় দেখা গেছে, এই জেলার পানির গুণগত মান কমছে। কোথাও কোথাও পানিতে দ্রবণীয় অক্সিজেনের পরিমান শূন্যের ঘরেও চলে যাচ্ছে। এরজন্য নদী দূষণ সর্বাংশে দায়ী। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নদী ও জলাভূমিকে রক্ষা করার পথ খুজতে আজকের এই আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’ 

এ সময় নদী ও জলাভূমি সিম্পোজিয়াম থেকে ১৬টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়৷ সেটির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ  অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড.

মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষেরে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান, গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. জাবের সাদেক, বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতিরি সভাপতি মো. রাশেদুল করিম মুন্না প্রমুখ। 
 

ঢাকা/রেজাউল/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ ব প ন দ বস ম হ ম মদ অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে বিএনপি নেতা ‘ইজারাদার’, দ্বিগুণ খাজনা আদায়

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী আটঘর-কুড়িয়ানা নৌকা ও সবজির হাটে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি হারে খাজনা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নৌকা বেচাকেনায় খাজনা নির্ধারিত আছে মূল দামের ৫ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে প্রায় ১২ শতাংশ। নির্ধারিত টোলের তালিকা প্রদর্শনের কথা থাকলেও তা কখনো টাঙানো হয়নি।

শরিফ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘সরকারি হার সম্পর্কে জানতে চাইলে ইজারাদারদের লোকজন আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা যা ধার্য করেন, তা–ই দিই।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বেশির ভাগ সরকারি হাটবাজার এখন রাজনৈতিক  দলের নেতা-কর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করেন। আমরা সরকারি রেট চাইলে হুমকি দেন বা অপমানিত হই।’

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, হাটটির মূল ইজারাদার আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। কিন্তু চলতি বছর তিনি নতুন করে হাটের ইজারা নেওয়ার পর আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা হাটটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে খাজনা তুলছেন।

ইজারাদার আবদুর রহিম মিয়ার অভিযোগ, ‘আমি ৩৮ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে হুমায়ুন মোল্লাসহ অন্যরা এক দিনের জন্যও খাজনা তুলতে দেননি। জোরজবরদস্তির পরে তাঁদের খাজনা আদায় করতে দিয়েছি। সরকার নির্ধারিত খাজনা ৫ শতাংশ হলেও বর্তমানে আমার ছাপানো রসিদ বাদ দিয়ে তাঁরা নিজেদের ছাপানো রসিদে দ্বিগুণ হারে খাজনা নিচ্ছেন। আমি ৩৮ লাখ টাকায় বাজার ইজারা নিয়েছি, তাঁরা আমাকে দিয়েছেন মাত্র ১৫ লাখ টাকা। শিগগিরই আমি এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেব।’

ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন মোল্লা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছি না। আগের ইজারাদার যে হারে আদায় করেছেন, আমরাও সেই হারেই আদায় করছি।’ কত হারে খাজনা আদায় করছেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নৌকার হাট থেকে ৮ শতাংশ এবং সবজির বাজার থেকে নির্ধারিত ৫ শতাংশের কম আদায় করছি। আমরা জোরজবরদস্তি করে হাটের দখল নিইনি। তাঁকে আমরা ইজারার টাকা দিয়ে দিয়েছি এবং সেটা থানায় বসে ফয়সালা হয়েছে, এর লিখিতও রয়েছে।’

আমরা জোরজবরদস্তি করে হাটের দখল নিইনি। তাঁকে (ইজারাদার) আমরা ইজারার টাকা দিয়ে দিয়েছি এবং সেটা থানায় বসে ফয়সালা হয়েছে, এর লিখিতও রয়েছে।হুমায়ুন মোল্লা, আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক

এ প্রসঙ্গে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ইজারা নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল, যা আপাতত সমাধান হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত হারের বাইরে খাজনা আদায় আইনগতভাবে অপরাধ। কেউ অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, আটঘর-কুড়িয়ানা বাজারটি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজি ও নৌকার বাজার। এ এলাকায় প্রচুর আমড়া, লেবু, পেয়ারা ও অন্যান্য সবজি উৎপাদন হয়। পাইকারেরা এ হাটে এসব পণ্য কেনেন এবং দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ