বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম বলেছেন, সাংবাদিকতা পেশাকে অবশ্যই দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। গণমাধ্যম কর্মীকে বর্জন করতে হবে তার নিজস্ব মতামত প্রচার-প্রকাশ। গণমাধ্যমে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করলে গ্রহণযোগ্যতা পায় না। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা প্রতিষ্ঠিত করে। মানুষের মনে আস্থা তৈরি হয়। এর মধ্য দিয়ে একটি দেশের গণমাধ্যম পরিণত হয় মানুষের কণ্ঠস্বরে।

শনিবার যশোর সার্কিট হাউস মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমে অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধ এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিচারপতি আব্দুল হাকিম বলেন, ‘সাংবাদিকদের মর্যাদা নিশ্চিত করা না গেলে গণমাধ্যমকে কার্যত রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভে পরিণত করা যাবে না। এ জন্য স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দরকার। এসব বিবেচনা করেই সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে।’

গণমাধ্যমে তথ্য প্রচার-প্রকাশে ভুলভ্রান্তির বিষয়ে প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভুল সংশোধন, দুঃখ প্রকাশ করার সংস্কৃতি আমাদের গণমাধ্যমগুলোকে গড়ে তুলতে হবে। এতে গণমাধ্যম আরও শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য হয়। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিও সন্তুষ্ট হয়। এটাই গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা।

বিচারপতি আব্দুল হাকিম বলেন, অপসাংবাদিকতা বন্ধে সাংবাদিকতা করতে পরীক্ষার মাধ্যমে সনদ প্রদানের জন্য আইন করার ব্যাপারে প্রেস কাউন্সিলে একটি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ ছাড়া প্রেস কাউন্সিল গণমাধ্যমের কোনো সংবাদে সাংবাদিকতার মান ও নীতির বিষয়ে ব্যত্যয় ঘটলে সে ব্যাপারে যাতে স্বপ্রণোদিত হয়ে ওই গণমাধ্যম বা সাংবাদিককে জবাবদিহি করতে পারে, সে ক্ষমতাও সেই আইনে থাকবে বলে উল্লেখ করেন।

জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রেস কাউন্সিলের সচিব (উপসচিব) আবদুস সবুর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী, যশোরের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম বক্তব্য দেন। কর্মশালায় প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমে যশোরে কর্মরত কর্মীরা অংশ নেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণম ধ যমকর ম প র স ক উন স ল প রক শ ব দ কত

এছাড়াও পড়ুন:

জটিলতা সৃষ্টি করে মান-অভিমান, এটা গ্রহণযোগ্য না: আনু মুহাম্মদ

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মতাদর্শিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করা বলে মনে করেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, সরকার সেই কাজের দিকে না গিয়ে, অন্যদিকে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে তারপর মান–অভিমান করা, এটা তো কোনো গ্রহণযোগ্য কাজ না।

‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ: কেমন বাজেট চাই?’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপ্রধানের বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ কথাগুলো বলেন। আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভার আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।

অন্তর্বর্তী সরকার অস্থায়ী উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকারের স্থায়ী কোনো ‘ম্যান্ডেট’ নেই। এই সরকার দীর্ঘদিন থাকবে না। তাই তার পক্ষে অনেক কিছুই সম্ভব না। তবে সরকার বৈষম্যহীন বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছু কিছু পরিবর্তনের গতিমুখ তৈরি করতে পারে।

মানুষ পরিশ্রম করছে, সম্পদ তৈরি হচ্ছে, ফলে টাকাপয়সার অভাব নেই উল্লেখ করে অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, সম্পদের ওপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার পর। সরকারের এটা প্রতিশ্রুতির অঙ্গীকার। সেই অঙ্গীকারের দিকে না গিয়ে বিদেশি কোম্পানি, বিদেশি বিনিয়োগ, স্টারলিংক, এলএনজি আমদানি—এসব দিকে মনোযোগ দেওয়া তো এই সরকারের দায়িত্ব না। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে বৈষম্যহীন বাংলাদেশে অগ্রসর হওয়ার জন্য জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা, কৃষি–শিল্পের ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা এবং জনগণের জন্য পরিবেশবান্ধব যে পথ, সেই পথটাই যাতে শক্তিশালী হয়, সেটার জন্য প্রয়োজনীয় মতাদর্শিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করা। সরকার সেই কাজটা করবে। সেই কাজের দিকে না গিয়ে, অন্যদিকে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে, তারপর মান–অভিমান করা, এটা তো কোনো গ্রহণযোগ্য পথ না।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা না করে, ধরেন চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে দিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা এমনভাবে ঘোষণা করলেন এটা দিতেই হবে, যেকোনো মূল্যে দিতে হবে। হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ (প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি) এর নতুন নাম দিয়েছে ত্রাণ চ্যানেল। দুটির ঘটনা তো একই। এগুলো করতে হবে। কিংবা স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। সবগুলোই কোনো না কোনোভাবে জাতীয় সক্ষমতার বিকল্প হিসেবে হাজির করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব দুর্বলতা আছে, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব আছে—সেগুলো দূর করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় তৎপরতা বাড়াতে পারত। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার জন্য পাঠাতে পারত। চট্টগ্রাম বন্দরে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো হলে সেটার স্থায়ী ও স্থিতিশীল প্রভাব ভবিষ্যতের জন্য থাকত।

আরও পড়ুনপ্রধান উপদেষ্টা হতাশ–ক্ষুব্ধ, ‘পদত্যাগ’ নিয়ে আলোচনা১৫ ঘণ্টা আগে

বাজেটে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, বিডার চেয়ারম্যান হঠাৎ করে এলএনজি আমদানির জন্য চুক্তি করে এলেন। পেট্রোবাংলা জানে না। এটা তো হওয়ার কথা না। দেশের দরকার ছিল গ্যাস উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো। সেটার জন্য গত ৯ মাসে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সামনের বাজেটে এই জিনিসগুলো থাকতে হবে। জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিগত অবস্থানের একটা পরিবর্তন করতে হবে। সেটা হলে সস্তায় গ্যাস, বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। আমদানির জন্য এত ব্যয়, ভর্তুকি দিতে হবে না।

সৈয়দপুর, পার্বতীপুর ও চট্টগ্রামে রেলওয়ের যেসব ওয়ার্কশপ ছিল, সেগুলোর জনবল কমানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ওয়ার্কশপের সক্ষমতা কমিয়ে রেলের ইঞ্জিন, বগি, ওয়াগন—সবকিছু আমদানি করা হয়েছে। অথচ ওয়ার্কশপ শক্তিশালী করা হলে বাংলাদেশে বগি, ইঞ্জিন—সবই নির্মাণ করা সম্ভব হতো।

‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ: কেমন বাজেট চাই?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় (বাঁ থেকে) ড. হারুন উর রশীদ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও মোশাহিদা সুলতানা। আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি সাংবাদিকদের উচিত ফিলিস্তিনি সহকর্মীদের পাশে থাকা
  • জটিলতা সৃষ্টি করে মান-অভিমান, এটা গ্রহণযোগ্য না: আনু মুহাম্মদ
  • বাংলাদেশ যেন পরাশক্তির ছায়া যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত না হয়: এবি পার্টি
  • যে ৬ ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না
  • জেনিনে কূটনীতিকদের ওপর ইসরায়েলের গুলিবর্ষণ ‘অগ্রহণযোগ্য’: ইইউ