ম্যানইউ-এর বাতিল ম্যাকটমিনের ফ্রেম ম্যারাডোনার পাশে
Published: 24th, May 2025 GMT
জহুরি হোসে মরিনহো ঠিকই চিনেছিলেন স্কটিশ মিডফিল্ডার স্কট ম্যাকটমিনেকে। ‘বিশেষ চরিত্র’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। ম্যানইউ একাডেমির ছাত্র হয়েও রেড ডেলিভসরা তার কদর বোঝেনি। গত মৌসুমে ৪৩ ম্যাচে ১০ গোল করা মিডফিল্ডারকে ৩০ মিলিয়নে বিক্রি করে দিয়েছিল তারা।
ওই ম্যাকটমিনে নাপোলির হয়ে সিরি এ শিরোপা স্কুদিত্তো জিতেছেন। শুধু শিরোপা জিতেছেন বললে ভুল হবে। নাপোলির হয়ে ৩৪ লিগ ম্যাচ খেলে ১২ গোল করেছেন তিনি। মৌসুমে করেছেন ১৩ গোল। ছয় গোলে সহায়তা দিয়েছেন। নাপোলির লিগ শিরোপা জয়ে ইতালির মৌসুমে সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন।
দল হিসেবে নাপোলি ও কোচ অ্যান্তোকিও কন্তের জন্য মৌসুম মোটেও সহজ ছিল না। কড়া হেড মাস্টার তিনি। সময়ের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে বেবেচিত ও দারুণ ফর্মে থাকা ভিক্টর ওসিমহেন প্রিমিয়ারি লিগে যেতে চেয়েও দলবদলের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পারেননি।
কন্তে তাকে নাপোলিতে রাখেনওনি। ধারে ১০০ মিলিয়ন দামের স্ট্রাইকারকে তুরস্কের লিগে ছেড়ে দেন বিনা দ্বিধায়। নাপোলির ভার বহনের দায়িত্ব এরপর পড়েছিল কাভিচা কাভারাস্তকেলিয়ার ওপর। তিনি শীতকালীন দলবদলের মৌসুমে পিএসজি চলে আসেন।
ওই দলের ভার বহনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন ম্যাকটমিনে এবং বেলজিয়াম স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু। ১৪ গোলের সঙ্গে ১০ গোলে সহায়তা দেন লুকাকু। তবে মূল দায়িত্ব পালন করেছেন ম্যাকটমিনেই। ৯৮ বছরের ইতিহাসে নাপোলিকে চতুর্থ সিরি এ জিততে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
নাপোলির ইতিহাস সেরা ফুটবলার হিসেবে বিবেচিত হন সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিয়াগো ম্যারাডোনা। ১৯৮৬-৮৭ ও ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তিনি। তৃতীয় শিরোপা নাপোলি জিতেছে ম্যারাডোনার মৃত্যুর পরের বছর ২০২২-২৩ মৌসুমে। সেবার ওসিমহেন-কাভিচারা ছিলেন নাপোলিতে।
ম্যারাডোনার ফ্রেমের পাশে নিজের ফটোফ্রেম বাঁধিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন ওসিমহেন। ৩২ লিগ ম্যাচ খেলে ২৬ গোল করেছিলেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল নাপোলি। এবার ইতালি লিগের সেরা ফুটবলার হয়ে এবং শিরোপা জিতে ম্যারাডোনার পাশে ফটোফ্রেম বাঁধানোর কীর্তি গড়লেন ম্যাকটমিনে।
নাপোলির এই শিরোপা জয়ে হৃদয় ভেঙেছে সিমোন ইনজাঘির ইন্টার মিলানের। মৌসুম জুড়ে পয়েন্ট টেবিলের লিডে ছিল দলটি। ট্রেবল জয়ের আশায় ছিল। কিন্তু এসি মিলানের কাছে কোপা ইতালিয়ানো হারের পর মাত্র ১ পয়েন্টের ব্যবধানে লিগ শিরোপা হারাল লওতারো মার্টিনেজ, মেখিতেরিয়ানরা। ইন্টারের সামনে এখনো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের সুযোগ আছে। ফাইনালে পিএসজির মুখোমুখি হবে তারা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।