সমাবর্তনের ব্যস্ততা শেষ হতেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। চাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির নিয়মিত কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সংহতের চেষ্টা করছে। দুটি ছাত্র সংগঠনই কর্মী সংগ্রহ করছে। পাশাপাশি সক্রিয় হতে শুরু করেছে নতুন গঠিত সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদও। সংগঠনটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা অন্তর্ভুক্ত। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন পর চাকসু নির্বাচন কেন্দ্র করে জমে উঠেছে ছাত্ররাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী জুনে চাকসু নির্বাচন হওয়ার ইঙ্গিত মেলার পর থেকেই ছাত্রসংগঠনগুলো শক্তি প্রদর্শনে নেমেছে।
এদিকে, নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের তৎপরতা জানান দিচ্ছে ইসলামী ছাত্র মজলিস, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (স্যাড), ছাত্র অধিকার পরিষদ, গাউছিয়া কমিটি, ক্লাব অ্যালায়েন্সসহ নানা সংগঠন।
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ৯ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন, আবাসন, খাবার ও একাডেমিক সেবাসহ নানা বিষয়ে সংস্কারের দাবি তুলে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন আন্দোলন করেছে। এখন সংগঠনগুলোর সব আয়োজন চাকসু নির্বাচন ঘিরেই। প্রায় তিন যুগ পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড.

মো. সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘আমরা বরাবরই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে এসেছি এবং তাদের দাবির ভিত্তিতে কাজও করেছি। চাকসু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের কেন্দ্রবিন্দু। সুতরাং চাকসুকেন্দ্রিক প্রশাসনের যেসব কার্যক্রম হওয়া দরকার, সেগুলো চলমান আছে। যতদিন না চাকসু সক্রিয় হবে, ততদিন পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চাকসু নির্বাচনের আগে কিছু প্রস্তুতি থাকে, সেগুলো নিয়ে প্রশাসন কাজ করছে। আমরা যখন মনে করব, চাকসু নির্বাচন দেওয়া উচিত, তখনই নির্বাচন আয়োজন করব।’
এদিকে, নির্বাচনী হাওয়া বইতেই চাকসুর খসড়া গঠনতন্ত্র উপস্থাপন করেছে প্রশাসন। গত ২২ মে এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হয়, যেখানে ৩১টি পদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গঠনতন্ত্রে কোনো সংশোধনী থাকলে আগামী ২৬ মে’র মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) ড. কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন করা হবে।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় প্রভাব দেখা গেছে। ওই সময় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই ধীরে ধীরে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের বিভিন্ন কার্যক্রম দেখা যায়। নিয়মিত সমাবেশ, রাজনৈতিক সভা, আলোচনা সভা, নবীনবরণ, পাঠচক্র ও ইফতার মাহফিল করতে দেখা গেছে এই দুই ছাত্র সংগঠনকে। এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারাও।
অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কার্যক্রম না চালালেও বর্তমানে তারা বেশ সক্রিয়। অঙ্গসংগঠনের মাধ্যমেও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে দেখা গেছে শিবিরকে। গত রমজান মাসে ২০ দিনব্যাপী গণ-ইফতার আয়োজন করে শিবিরের সামাজিক সংগঠন ‘মিনার’।
ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী সমকালকে বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তা ইতিবাচক। ১৯৯০ সালের পর থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল এবং অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ছাত্র সংসদ কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। চাকসুর মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্ব তৈরি হবে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে, এটা আমাদের আশা। অভ্যুত্থানের পর থেকেই আমরা চাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি এবং সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এখন নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনে আগ্রহী।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম সব সময়ই ছিল। ৫ আগস্টের পর ক্যাম্পাস স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, আমরাও সক্রিয়ভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছি। নিয়মিত পাঠচক্র, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। হল ও ফ্যাকাল্টিভিত্তিক সদস্যরা সক্রিয় রয়েছেন। শুধু শোডাউনের রাজনীতি ছাড়াও শিক্ষার্থীদের কল্যাণমূলক রাজনীতি কীভাবে করা যায়, তা আমরা দেখিয়েছি। চাকসুতে আমাদের সমর্থন থাকবে।’
পাঁচ আগস্টের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরব অবস্থান দেখা গিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের উপস্থিতি কমেছে। চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি ঘোষণা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি হয়নি। আবার 


গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদেরও কমিটি নেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটি হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম নেই। একটি ইফতার মাহফিল ছাড়া আর কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি সংগঠনটির।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব আল মাশনূন বলেন, ‘আমরা শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ চালুর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আজও অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী জানে না চাকসু কী, বা তারা কীভাবে এর অংশ হতে পারে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন সুবিধা রয়েছে, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ক্লাস শেষে শাটল ট্রেনে শহরে ফিরে যায়। এই বাস্তবতায় তাদের মধ্যে চাকসুবিষয়ক সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি বিগত সময়ে কেন চাকসু হয়নি। সেই কারণগুলো ভুলে গেলে চলবে না। যারা এই প্রতিষ্ঠানের পথ রুদ্ধ করেছিল, তাদেরও এর দায় নিতে হবে।’
অভ্যুত্থানের পর থেকে ছাত্রদল প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। প্রথম দিকে প্রশাসনের প্রতি তাদের অনাস্থা থাকলেও বর্তমান সময়ে, চাকসু নির্বাচন নিয়ে সংগঠনটি বেশ সক্রিয়। ছাত্রদলের নেতারা চাকসু বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন বলেন, ‘চাকসু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। বছরের পর বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন সক্রিয় থাকলেও প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে চাকসু নির্বাচন হয়নি। এখন চাকসু নির্বিাচনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং সংগঠনকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে আমাদের নেতাকর্মীরা সেভাবে ক্যাম্পাসে আসতে পারেনি। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা সাংগঠনিকভাবে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছি এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাচ্ছি। চাকসু নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার নিয়ে আরও বেশি সচেতন ও সক্রিয় হবে।’
ছাত্র কাউন্সিলের নেতা ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসন পক্ষপাতিত্ব করে। প্রশাসনের পরিশোধনের মাধ্যমে আমরা চাকসু নির্বাচন চাই। চাকসু নির্বাচন যেন কোনো বিশেষ সংগঠনের স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ থাকে, তবে আমরাও নির্বাচনে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করতে পারব। আমরা চাই সকলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক র পর থ ক আগস ট র ছ ত রদল র স গঠন ন র পর আম দ র গঠন ক আরও ব

এছাড়াও পড়ুন:

রণবীরের জোড়াতালির ভাইরাল শার্টের দাম কত?

রণবীর কাপুরের পরনে নীল রঙের জিন্স। গায়ে শার্ট, মাথায় ক্যাপ। তার গায়ের শার্ট একদম আলাদা। কারণ তাতে কয়েকটি জোড়াতালি রয়েছে। কিছু অংশ এমনভাবে ছেঁড়া, প্রথম দেখায় মনে হবে— জামাটি ইঁদুরে কেটেছে। এমন পোশাকে একটি বাড়ি থেকে বের হতে দেখা যায় রণবীরকে। হাস্যোজ্জ্বল মুখে ক্যামেরার সামনে পোজও দেন এই তারকা। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিও ক্লিপে এমন লুকে ধরা দিয়েছেন ‘অ্যানিমেল’ তারকা রণবীর। মূলত, ভিডিওটি এক মাস আগের। সম্প্রতি পুরোনো সেই ভিডিও নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। চর্চায় মেতেছেন নেটিজেনরা। 

রণবীর কাপুরে শার্টটি নিয়ে রসিকতা করছেন নেটিজেনরা। দেবজ্যোতি লেখেন, “গরীব, মহা গরীব।” রিয়া লেখেন, “ওনারা এমন পোশাক পরলে, সেটা ফ্যাশন। আর আমরা পরতে গেলে লজ্জা পাই।” আশুতোষ লেখেন, “অভিনেতা ধনী-গরীব।” প্রকৃতি লেখেন, “এটি ভিখারি শার্ট, স্টাইলিস্ট না।” এমন অসংখ্য মন্তব্য করেছেন নেটিজেনরা। কেউ কেউ আবার কড়া ভাষায় রণবীরের ফ্যাশন সেন্স নিয়েও সমালোচনা করেছেন।

আরো পড়ুন:

কত কোটি টাকার মালিক রণবীর কাপুর?

রামায়ণ: রাম-সীতা হতে কত কোটি টাকা নিলেন রণবীর-সাই পল্লবী?

রণবীরের জোড়াতালির শার্ট নিয়ে হাসি-তামাশা চললেও দাম জানলে অনেকে ভড়কে যেতে পারেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শার্টটি তৈরি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড কিথ। দেশটির লস অ্যাঞ্জেলেসে তৈরি হয়েছে এটি। 

এ ব্র্যান্ডের অফিশিয়াল ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে, শার্টটি তৈরিতে সুতি কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। স্প্লিট সাইড সেলাই, ক্যাঙ্গারু পকেট, ভিনটেজ বোতাম ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় শার্টটির দাম ১ লাখ ২৪ হাজার ৩০০ টাকা।

রণবীর কাপুরের পরবর্তী সিনেমা ‘রামায়ণ’। নীতেশ তিওয়ারি নির্মিত এ সিনেমায় রাম চরিত্রে অভিনয় করছেন। তার বিপরীতে রয়েছেন সাই পল্লবী; সীতা রূপে দেখা যাবে তাকে। রণবীর এ সিনেমার এক পার্টের জন্য ৭৫ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন বলে জানা যায়। হিন্দি, তামিল, তেলেগু ছাড়া আরো বেশ কিছু ভাষায় সিনেমাটি মুক্তি পাবে। ২০২৬ সালের দীপাবলিতে সিনেমাটির প্রথম পার্ট মুক্তির পরিকল্পনা করেছেন নির্মাতারা।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ