লেখক ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ  জুলাই আন্দোলনকে ‘উঠতি মধ্যবিত্ত বনাম বনেদি মধ্যবিত্তের লড়াইয়ের বিরাট মাইলফলক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া একক দীর্ঘ পোস্টে তিনি মোটাদাগে যে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন তাহলো একাত্তরের শত্রু-মিত্র দিয়ে জুলাই আন্দোলন বোঝা সম্ভব না।

ফারুক ওয়াসিফ লিখেছেন, ‘‘রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের চোখে জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের উঠতি মধ্যবিত্তের সাথে বনেদি মধ্যবিত্তের দ্বন্দ্বের একটা বিষ্ফোরণ। এই দেশে প্রলেতারিয়েতের বা কৃষকের শ্রেণী সংগ্রাম ইতিহাসের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল না। ছিল বনেদি মধ্যবিত্তের সাথে উঠতি মধ্যবিত্তের শ্রেণী সংগ্রাম। ’’

ফারুক ওয়াসিফ উল্লেখ করেন, এই দ্বন্দ্বে জমিদারকুলজাত কলকাত্তাই বনেদি মধ্যবিত্তের সাথে জোতের মালিকের উঠতি মধ্যবিত্ত সন্তানদের দ্বন্দ্বে ১৯৪৭ এর বাংলাভাগ হয়। একে শক্তি যোগায় কৃষকপ্রজা পার্টির মাধ্যমে সংগঠিত পূর্ব বাংলার মফস্বলী শক্তি। 

‘‘পাকিস্তান হয়ে যাবার পরে দ্বন্দ্বটা নতুন চেহারা নেয়। পাকিস্তানের পাঞ্জাবি এলিটদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে তৈরি হয় ঢাকার উঠতি মধ্যবিত্ত--কৃষকের প্রথম প্রজন্মের শিক্ষিত সন্তানেরা। সংগ্রামটা মুক্তিযুদ্ধে পরিণত হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বাংলাদেশ আন্দোলনের নেতা ছিল এই উঠতি মধ্যবিত্ত। ছয়দফা ছিল তাদেরই আত্মপ্রতিষ্ঠার বাসনা।’’— পোস্টে যোগ করেছেন ফারুক ওয়াসিফ

এই সাংবাদিকের বিশ্লেষণে, ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ছিল উন্নয়নের বঞ্চনার শিকার উঠতি মধ্যবিত্তের আরেক বিজয়। প্রথম প্রজন্মে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা গ্রাম-মফস্বলের সন্তানদের সাথে দেশবোধ হারিয়ে ফেলা, সমাজকে অস্বীকার করা লুটেরা এলিটদের জানানো চ্যালেঞ্জ থেকেই পতন হয় বিদেশমুখী বনেদী মধ্যবিত্ত সাম্রাজ্যের। কিন্তু সংগঠন, পুঁজি, আন্তর্জাতিক কানেকশন ও মতাদর্শে জোরে শক্তিশালী লুটেরা এলিটরা দ্রুতই নতুন করে সংগঠিত হতে থাকছে। বৈষ্যম্য অবসান তারা ঘটতে দিবে না। তারাই বিপ্লবের মুখে ঠুলি পরাতে সফল। কিন্তু কোটি কোটি তরুণ-তরুণী, পপুলেশন ডিভিডেন্টে জনগণের ৬০-৭০ ভাগ, ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশটা কিন্তু নিজেদের সক্ষমতা টের পেয়ে গেছে। 

ফারুক ওয়াসিফের ভাষায়, ‘‘জুলাই বেহাত হতে থাকলেও তাদের ঘুরে দাঁড়াবার সম্ভাবনা তাই থাকছে। এটা ঘটবে সোশ্যাল ডাইনামিকস থেকে, অর্থনীতির অসংগতি থেকে, রাজনীতির ‘রাজচাতুরীর’ প্রতি ঘৃণা থেকে। জুলাই হয়তো এভাবেই চলতে থাকবে। ’’

ফারুক ওয়াসিফ মোটাদাগে একটি বিষয় উত্থাপন করেছেন। এই সাংবাদিক দেখাতে চেয়েছেন, একাত্তরের শত্রুমিত্র দিয়ে জুলাইকে বোঝা যাবে না।

তিনি লিখেছেন, ‘‘২০১৫-১৮ সালের মধ্যেই এই গতিসূত্রটা আমার চোখে ধরা পড়ে। ২০২১ এ লিখেছিলাম যে, একটা গণঅভ্যুত্থান আসন্ন। ফ্যাসিবাদের কলাকৌশল আর বিরোধীদলগুলির লক্ষ্যহীনতার কারণে সেই ঘটনাটা দেরিতে হলেও ২০২৪ এর জুলাইয়ে ঘটলো। এ দিক থেকে ৪৭-৭১ আর ২৪ একটা ধারাবাহিকতা, জুলাই মানে একাত্তরের সাথে বিচ্ছেদ যেমন না, তেমনি একাত্তরের শত্রুমিত্র দিয়ে জুলাইকে বোঝা যাবে না। 

একটা কষ্টকর, ক্লান্তিকর ও দীর্ঘ বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হবে। জুলাইয়ের প্লাবন ছোটো হয়ে আসছে, কিন্তু সমাজের অজস্র খাত দিয়ে তার প্রবাহ চলমান থাকবে। জুলাইয়ের আগুন ধিকি ধিকি জলবে বহুদিন।’’

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ বন দ ব কর ছ ন র উঠত

এছাড়াও পড়ুন:

হৃদয় থেকে বলছি, শেখ হাসিনা খালাস পেলে খুশি হব: রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী

জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় নিজের মক্কেলের খালাস পাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রনিযুক্ত শেখ হাসিনার আইনজীবী আমির হোসেন। 

সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

রায় শুনতে ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধারা 

জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি

আইনজীবী আমির বলেন, “আমি তো সবসময় আশা করি আমার মক্কেল [শেখ হাসিনা] খালাস পাবে। এটা আমার আশা, এটা আমার প্রত্যাশা। এটাই স্বাভাবিক কথা, আমার তো প্রত্যাশা থাকতেই হবে। এটা হৃদয় থেকেই বলছি। আমি একজনের জন্য এত এত মাস ধরে মামলা করেছি, তা সে যদি খালাস পায় তা আমার চাইতে বেশি খুশি আর কে হবে।”

শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনো যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, '“আমি চেষ্টা করি নাই। চেষ্টা করার কোনো বিধানও নাই। ওনারাও আমার সঙ্গে কোনো চেষ্টা করে নাই এবং কোনো রকমের কোনো সহায়তাও করে নাই।” 

তবে মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমার দেখামতে [বিচারে] তেমন কিছু দেখছি না। ভালোভাবে বিচার হয়েছে বলেই আমি মনে করি।”

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঘোষণা করবেন বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা প্রথম মামলা হিসেবে এর রায় হতে যাচ্ছে আজ।

ঢাকা/রায়হান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি নবজন্ম লাভ করবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • হৃদয় থেকে বলছি, শেখ হাসিনা খালাস পেলে খুশি হব: রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী
  • রায় শুনতে ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধারা 
  • ঢাকায় বড় পর্দায় দেখা যাবে শেখ হাসিনার মামলার রায়
  • নীরবতা ভেঙে হঠাৎ রাজনীতিকে ‘না’ বলে দিলেন শমসের মুবিন চৌধুরী
  • শেখ হাসিনার মামলার রায়: ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার দাবি ফখরুলের
  • পাড়ার মঞ্চ থেকে বড় পর্দায় 
  • বেওয়ারিশ জুলাই শহীদদের শনাক্তে আসছে বিদেশি ফরেনসিক টিম
  • বিকল্প শক্তির উত্থানে নভেম্বরের শেষে ‘জাতীয় কনভেনশন’ করবে বাম ঘরানার দলগুলো
  • থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%