একাত্তরের শত্রু-মিত্র দিয়ে জুলাইকে বোঝা সম্ভব না: ফারুক ওয়াসিফ
Published: 1st, July 2025 GMT
লেখক ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ জুলাই আন্দোলনকে ‘উঠতি মধ্যবিত্ত বনাম বনেদি মধ্যবিত্তের লড়াইয়ের বিরাট মাইলফলক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া একক দীর্ঘ পোস্টে তিনি মোটাদাগে যে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন তাহলো একাত্তরের শত্রু-মিত্র দিয়ে জুলাই আন্দোলন বোঝা সম্ভব না।
ফারুক ওয়াসিফ লিখেছেন, ‘‘রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের চোখে জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের উঠতি মধ্যবিত্তের সাথে বনেদি মধ্যবিত্তের দ্বন্দ্বের একটা বিষ্ফোরণ। এই দেশে প্রলেতারিয়েতের বা কৃষকের শ্রেণী সংগ্রাম ইতিহাসের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল না। ছিল বনেদি মধ্যবিত্তের সাথে উঠতি মধ্যবিত্তের শ্রেণী সংগ্রাম। ’’
ফারুক ওয়াসিফ উল্লেখ করেন, এই দ্বন্দ্বে জমিদারকুলজাত কলকাত্তাই বনেদি মধ্যবিত্তের সাথে জোতের মালিকের উঠতি মধ্যবিত্ত সন্তানদের দ্বন্দ্বে ১৯৪৭ এর বাংলাভাগ হয়। একে শক্তি যোগায় কৃষকপ্রজা পার্টির মাধ্যমে সংগঠিত পূর্ব বাংলার মফস্বলী শক্তি।
‘‘পাকিস্তান হয়ে যাবার পরে দ্বন্দ্বটা নতুন চেহারা নেয়। পাকিস্তানের পাঞ্জাবি এলিটদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে তৈরি হয় ঢাকার উঠতি মধ্যবিত্ত--কৃষকের প্রথম প্রজন্মের শিক্ষিত সন্তানেরা। সংগ্রামটা মুক্তিযুদ্ধে পরিণত হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বাংলাদেশ আন্দোলনের নেতা ছিল এই উঠতি মধ্যবিত্ত। ছয়দফা ছিল তাদেরই আত্মপ্রতিষ্ঠার বাসনা।’’— পোস্টে যোগ করেছেন ফারুক ওয়াসিফ
এই সাংবাদিকের বিশ্লেষণে, ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ছিল উন্নয়নের বঞ্চনার শিকার উঠতি মধ্যবিত্তের আরেক বিজয়। প্রথম প্রজন্মে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা গ্রাম-মফস্বলের সন্তানদের সাথে দেশবোধ হারিয়ে ফেলা, সমাজকে অস্বীকার করা লুটেরা এলিটদের জানানো চ্যালেঞ্জ থেকেই পতন হয় বিদেশমুখী বনেদী মধ্যবিত্ত সাম্রাজ্যের। কিন্তু সংগঠন, পুঁজি, আন্তর্জাতিক কানেকশন ও মতাদর্শে জোরে শক্তিশালী লুটেরা এলিটরা দ্রুতই নতুন করে সংগঠিত হতে থাকছে। বৈষ্যম্য অবসান তারা ঘটতে দিবে না। তারাই বিপ্লবের মুখে ঠুলি পরাতে সফল। কিন্তু কোটি কোটি তরুণ-তরুণী, পপুলেশন ডিভিডেন্টে জনগণের ৬০-৭০ ভাগ, ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশটা কিন্তু নিজেদের সক্ষমতা টের পেয়ে গেছে।
ফারুক ওয়াসিফের ভাষায়, ‘‘জুলাই বেহাত হতে থাকলেও তাদের ঘুরে দাঁড়াবার সম্ভাবনা তাই থাকছে। এটা ঘটবে সোশ্যাল ডাইনামিকস থেকে, অর্থনীতির অসংগতি থেকে, রাজনীতির ‘রাজচাতুরীর’ প্রতি ঘৃণা থেকে। জুলাই হয়তো এভাবেই চলতে থাকবে। ’’
ফারুক ওয়াসিফ মোটাদাগে একটি বিষয় উত্থাপন করেছেন। এই সাংবাদিক দেখাতে চেয়েছেন, একাত্তরের শত্রুমিত্র দিয়ে জুলাইকে বোঝা যাবে না।
তিনি লিখেছেন, ‘‘২০১৫-১৮ সালের মধ্যেই এই গতিসূত্রটা আমার চোখে ধরা পড়ে। ২০২১ এ লিখেছিলাম যে, একটা গণঅভ্যুত্থান আসন্ন। ফ্যাসিবাদের কলাকৌশল আর বিরোধীদলগুলির লক্ষ্যহীনতার কারণে সেই ঘটনাটা দেরিতে হলেও ২০২৪ এর জুলাইয়ে ঘটলো। এ দিক থেকে ৪৭-৭১ আর ২৪ একটা ধারাবাহিকতা, জুলাই মানে একাত্তরের সাথে বিচ্ছেদ যেমন না, তেমনি একাত্তরের শত্রুমিত্র দিয়ে জুলাইকে বোঝা যাবে না।
একটা কষ্টকর, ক্লান্তিকর ও দীর্ঘ বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হবে। জুলাইয়ের প্লাবন ছোটো হয়ে আসছে, কিন্তু সমাজের অজস্র খাত দিয়ে তার প্রবাহ চলমান থাকবে। জুলাইয়ের আগুন ধিকি ধিকি জলবে বহুদিন।’’
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ বন দ ব কর ছ ন র উঠত
এছাড়াও পড়ুন:
কুবিতে র্যাগিং: ২ শিক্ষার্থী বহিষ্কারসহ বিভাগীয় প্রধান ও ছাত্র উ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও ১৭ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ছাত্র পরামর্শককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, গত ২ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের দ্বারা ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীরা নিয়মিত র্যাগিংয়ের শিকার হন। পরে ১৬ জুলাই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রক্টরিয়াল বডি র্যাগিং চলাকালে হাতেনাতে অভিযুক্তদের আটক করেন। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
আরো পড়ুন:
ডাকসু নির্বাচনে নারী ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্র
জাবিতে পোষ্য কোটা বহাল, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের দুই শিক্ষার্থীকে এক সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার ও আজীবন হল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া একই শিক্ষাবর্ষের আরো ১৭ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর পাশাপাশি মুচলেকা দিতে বলা হয়েছে।
বহিষ্কৃতরা হলেন- লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের আবদুল্লাহ আরাফাত ও রিফা সানজিদা।
মুচলেকা এবং শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে- আবদুল্লাহ আরাফাত, রিফা সানজিদা, সাবিয়া সুলতানা, আনোয়ারুল ইসলাম, মো. শাহ মখদুম, মোহাম্মদ আয়াতুল্লাহ, মো. জাহিদুল ইসলাম, রাজিয়া সুলতানা লুৎফা, মো. হাসিবুর রহমান, মো. মাহমুদুর রহমান, আফতাব উল হক খান, মো. আশিকুর রহমান (সি. আর), শিপন চন্দ্র সরকার, মাহমুদুল হাসান তামিম, শেখ সৌরভ উদ্দিন জয়, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. সুমন রানা, জিনাত জাহান ও সাবিকুন নাহার মিমকে।
শৃঙ্খলা বোর্ডের সুপারিশে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বিভাগীয় প্রধান ও ছাত্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনে অবহেলা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় তাদের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোসা. শামসুন্নাহারের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিভাগের তৎকালীন ছাত্র উপদেষ্টা ও সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহিন উদ্দিন বলেন, “প্রথমেই বলে রাখি, আমি দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি। আমি দায়িত্বে থাকাকালে আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। আমি সিআরদের গ্রুপে মেসেজ দিয়েছি, কথা বলেছি সবার সঙ্গে। তারপরেও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে।”
শোকজের বিষয়ে তিনি বলেন, “শোকজের বিষয়টি আমি দেখেছি। দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরও এমন সিদ্ধান্ত আমার জন্য অপমানজনক। আমরা শোকজের জবাব দেব।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হাকিম বলেন, “তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই সুপারিশ করা হয়েছে। র্যাগিং একটি বিকৃত মানসিকতার কাজ। র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি। ভবিষ্যতে র্যাগিং হবে একটি নোংরা শব্দ।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী