কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নথি জালিয়াতির মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি), সাবেক জেলা ও দায়রা জজসহ পাঁচ জনের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের জজ মিজানুর রহমানের আদালত এ আদেশ দিয়েছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত একটি মামলার নথি জালিয়াতির অভিযোগে মামলা হয়।

আসামিরা হলেন- কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো.

রুহুল আমিন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার, আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ, আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল।

দুদকের পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাবলু জানান, দুদক ও আসামিপক্ষের শুনানির পর আদালত সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। আগামী ৩ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আদেশ দিয়ে ওই দিন মামলার বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন। ৩ আগস্ট পর্যন্ত আসামিদের অর্ন্তবতী জামিন মঞ্জুর করেছেন।

জানা যায়, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি এলাকায় কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে স্থানীয় বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর আদালতে মামলাটি করেছিলেন। এতে কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। কিন্তু তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার মামলার এক নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে নথিপত্র পাঠান দুদকের প্রধান কার্যালয়ে। জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা জানতে পেরে একই আদালতে বাদী কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, জেলা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ সাত জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত শেষে দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন ২০২৪ সালের ১ জুলাই আদালতে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তে নথি জালিয়াতির ঘটনায় সহযোগিতা করায় সাবেক জেলা প্রশাসক ও জেলা জজ ছাড়াও আসামি করা হয় বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং আদালতের  স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদকে। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি কক্সবাজারের বিশেষ জজ আদালতে জালিয়াতির বিষয়ে দুদকের দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হয়।

গত ২৩ জানুয়ারি আদালত ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অভিযুক্ত পাঁচ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে তারা আদালতে হাজির হয়ে অর্ন্তবতী জামিন পান। সম্প্রতি মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারের জন্য স্থানান্তর করা হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জন র ব র দ ধ র হ ল আম ন ল ইসল ম র জন য গ রহণ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

বিচার কার্যক্রম বিলম্ব করতে চাইলে ‘টুঁটি চেপে’ ধরবেন ট্রাইব্যুনাল

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম কেউ বিলম্ব করতে চাইলে ‘টুঁটি চেপে’ ধরবেন বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ আজ বুধবার এ কথা বলেন।

ট্রাইব্যুনাল-২-এর অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো.মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

ট্রাইব্যুনাল–২–এ আজ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ এই মামলার ১৬ আসামির অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁদের আইনজীবীরা। তাঁরা এ সময় বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। আড়াই ঘণ্টা পর বেলা ২টার দিকে শুনানি শেষ হয়।

শুনানির শেষের দিকে ট্রাইব্যুনালকে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সঙ্গে সংবিধানের সংঘর্ষ হলে এই আইন থাকবে। এটা সুপিরিয়র ল। আইন অনুযায়ী এই মামলায় হেয়ারিং (শুনানি) দ্রুততার সঙ্গে করা হবে, বিলম্ব হলে তাতে বাধা দেবেন ট্রাইব্যুনাল।

জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘এই ট্রাইব্যুনালের অ্যাকশন (পদক্ষেপ) দেখে বুঝেন নাই?ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম বিলম্ব হয় এমন কার্যক্রম করা যাবে না। করলে ট্রাইব্যুনাল টুঁটি চেপে ধরবে। ট্রাইব্যুনাল তাড়াহুড়া করছে না, আইনই এমন।’

‘পালিয়ে গেছে, মরেনি, এটাই কি অপরাধ’

সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.শাহিদুল ইসলামের আইনজীবী ছিলেন মাহাদী হাসান ও আসাদুজ্জামান বাবু। তাঁরা বলেন, এই মামলায় ৫৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। সাক্ষীদের কেউই জবানবন্দিতে শাহিদুলের সম্পৃক্ততার কথা বলেননি। এই মামলায় ২১টি জব্দ তালিকা আছে, সেখানেও তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। গণ–অভ্যুত্থানের ১ মাস পর চারটি জাতীয় গণমাধ্যম সংবাদ করে এই ঘটনায়, সেখানেও শাহিদুলের নাম আসেনি। সেই সঙ্গে এই আসামির পক্ষে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনো দালিলিক প্রমাণ আনুষ্ঠানিক অভিযোগে নেই। এসব কারণে এই মামলা থেকে শাহিদুলের অব্যাহতি চান তাঁরা।

কল রেকর্ডসহ কিছু তথ্য–প্রমাণ চেয়ে শাহিদুল ইসলামের পক্ষে এই আইনজীবীরা দুটি আবেদন করলে তা খারিজ করেন ট্রাইব্যুনাল।

এই মামলা থেকে ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো.আরাফাত হোসেনের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী এস এম মিরাজুল আলম। তিনি বলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট আরাফাত অন্য এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছেন। পরদিন ৫ আগস্ট তাঁর দায়িত্ব পড়েছিল আশুলিয়ায়। আরাফাত গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তাঁকে কখনো অস্ত্র দেওয়া হয়নি। ফলে গুলি করে কাউকে হত্যা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া তিনি ডিবির কর্মকর্তা হওয়ায় পুলিশের কাউকে লাশে আগুন দিতে নির্দেশ দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি সেখানে কোনো অপরাধ করেছেন এমন কোনো ভিডিও ফুটেজ বা অন্য কোনো প্রমাণও নেই।

আইনজীবী মিরাজুল আলম বলেন, ‘সেসময় অনেক পুলিশ মারা গেছেন। আরাফাত জীবন বাঁচাতে থানা থেকে পালিয়ে গেছেন, এমন ভিডিও আছে। আরাফাত মরেননি, সেটা কি তাঁর অপরাধ?’

এই মামলায় ১৬ জন আসামি। এই মামলা থেকে সব আসামির পক্ষেই অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে আটজন গ্রেপ্তার আছেন। তাঁরা হলেন সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান, শেখ আবজালুল হক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার।

সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ এ মামলার আট আসামি পলাতক।

এর আগে ৭ আগস্ট এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন করেছিল প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের এসব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য ২১ আগস্ট তারিখ ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হলে হঠাৎ অসুস্থ, হাসপাতালে মৃত্যু ঢাবি ছাত্রীর
  • আদালত প্রাঙ্গণে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদক বহনে নিষেধাজ্ঞা
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হলো ৭ কলেজ
  • দুদকের নতুন আইনজীবী শাহদীন মালিক
  • পৃথক হলো ঢাবি ও সাত কলেজ
  • রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানোর বিধান প্রশ্নে রুল শুনানিতে ৭ অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ
  • ইমাম বুখারির নিঃসঙ্গ মৃত্যু
  • প্রাণনাশের আশঙ্কায় রাহুল গান্ধী, আদালতে অভিযোগ
  • বিচার কার্যক্রম বিলম্ব করতে চাইলে ‘টুঁটি চেপে’ ধরবেন ট্রাইব্যুনাল
  • সিলেটে ছুকিরাঘাতে মাদরাসা শিক্ষক নিহত