আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা
Published: 1st, July 2025 GMT
দিনের ভোট রাতে করাসহ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে করা মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) জিয়াদুর রহমান এই জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে নূরুল হুদাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চার দিন রিমান্ড শেষে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে আজ দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় হাজির করা হয়। পরে তাঁর ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সৈয়দ সাজেদুর রহমান।
আবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিনের ভোট রাতে করে ব্যালট বাক্স ভর্তি রাখার ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন নূরুল হুদা। তিনিসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে সংবিধানপরিপন্থী কাজ করেছেন। নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের দ্বারা দিনের ভোট রাতে করে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়। আর ভোটের দিন আওয়ামী লীগ ও তাঁদের সহযোগী অঙ্গসংগঠনের ক্যাডারদের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নূরুল হুদার নির্দেশে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা ভোটকেন্দ্রে বিএনপি ও ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রবেশ করতে বাধা দেন।
এই আবেদন করার পর বেলা দুইটার দিকে নূরুল হুদাকে বিচারকের খাস কামরায় নেওয়া হয়। সেখানে রাত সাতটা পর্যন্ত তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
গত ২২ জুন সন্ধ্যার দিকে ‘মব’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিশৃঙ্খলা) তৈরি করে নূরুল হুদাকে হেনস্তার পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়। রাজধানীর উত্তরার বাসায় ঢুকে একদল লোক তাঁকে বের করে আনেন, জুতার মালা পরিয়ে দেন। ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ জানায়, বিএনপির করা একটি মামলায় নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
উল্লেখ্য, সেদিনই বিএনপি রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি করে। মামলায় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে দিনের ভোট রাতে করাসহ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ আনা হয়। পরের দিন সাবেক এই সিইসির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগ রয়েছে, যা পরে ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিতি পায়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রিয়া মনির মামলায় জামিন পেলেন হিরো আলম
রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় হত্যাচেষ্টা, মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে সাবেক স্ত্রী রিয়া মনির করা মামলায় আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসান আজ শনিবার এই আদেশ দেন।
বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে হাতিরঝিল থানা থেকে হিরো আলমকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাঁকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় তাঁকে সিএমএম আদালতের ৯তলার এজলাসে নেওয়া হয়।
হিরো আলমের পক্ষের আইনজীবীরা তাঁর জামিন চেয়ে শুনানি করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক ২০০ টাকা মুচলেকায় তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
এদিকে হিরো আলমের মামলার শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন এই মামলার বাদী রিয়া মনি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘হিরো আলমের একটা শিক্ষা হওয়া দরকার। আমাকে যেমন বিনা কারণে জেল খাটিয়েছে, তারও জেলে থাকা উচিত।’
এর আগে শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিল থানাধীন এলাকা থেকে সাবেক স্ত্রী রিয়া মনির দায়ের করা মামলায় হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামানের আদালত হিরো আলম ও তাঁর সহযোগী আহসান হাবিব সেলিমের বিরুদ্ধে ১২ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই পরোয়ানা অনুসারেই হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ২৩ জুন হাতিরঝিল থানায় রিয়া মনি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি হিরো আলম ও বাদী রিয়া মনির মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। এরপর হিরো আলম বাদীকে তালাক দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেন। গত ২১ জুন বাদীর পরিবারের সঙ্গে মীমাংসার কথা বলে হাতিরঝিল থানাধীন এলাকায় একটি বাসায় ডাকা হয়। ওই সময়ে হিরো আলমসহ ১০ থেকে ১২ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। পরে তাঁরা বাদীর বর্তমান বাসায় বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কাঠের লাঠি দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করেন। এতে বাদীর শরীরে জখম হয়। এ সময় তাঁর গলায় থাকা দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের হার চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুনরিয়া মনির মামলায় হিরো আলম গ্রেপ্তার২ ঘণ্টা আগে